উইন্ডোজ ১০ কে প্রথম দিনের মতো ফাস্ট রাখতে এই টিপসগুলো অবশ্যই ফলো করুন!

এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে উইন্ডোজ পিসি বা ল্যাপটপ ইউজারদের অন্যতম একটি চিন্তার বিষয় হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে পিসি স্লো হয়ে যাওয়া এবং পিসির পারফর্মেন্স দুর্বল হয়ে যাওয়া। আপনি অনেক হাই এন্ড পিসি ব্যবহার করলেও সময়ের সাথে সাথে আপনিও এই সমস্যায় পড়বেন। মাঝে মাঝে যারা পিসিতে অনেক বেশি ইনটেনসিভ টাস্ক করেন, তাদের পিসি সময়ের সাথে সাথে এতটাই স্লো হয়ে যায় যে সেটি প্রায় আনইউজেবল পর্যায়ে চলে যায়। হয়তো এমন পর্যায়ে চলে যায় যে পিসি বুট আপ হতেও ৫-৭ মিনিট সময়ে লেগে যায়। আপনি হয়তো অনেক চেষ্টা করলেও পিসির এই সময়ের সাথে সাথে স্লো হয়ে যাওয়ার প্রবলেমটি একেবারে ফিক্স করে ফেলতে পারবেন না, তবে আপনি অবশ্যই এই প্রবলেমের পরিমান অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবেন কিছু টিপস ফলো করলে। এসব টিপস ফলো করলে হয়তো আপনার পিসি একেবারে ১০০% প্রথম দিনের মতো ফাস্ট এবং রেসপনসিভ হয়ে যাবেনা, তবে প্রথমদিনের মতো পিসির ওভারঅল স্মুথনেস এবং রেসপনসিভনেসে অনেকটা ইম্প্রুভমেন্ট পাবেন নিশ্চিতভাবেই।


পিসিতে অবশ্যই এসএসডি ব্যবহার করুন

পিসিকে ফাস্ট এবং রেসপনসিভ রাখার পূর্বশর্ত বলতে পারেন এটাই। আপনার পিসিতে ট্রেডিশনাল হার্ডড্রাইভের পাশাপাশি একটি এসএসডিও (SSD) ব্যবহার করুন। এসএসডি এর সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে সলিড স্টেট ড্রাইভ। এটিকে আপনি একটি স্পেশাল ধরণের হার্ড ড্রাইভই বলতে পারেন যেটির ট্রান্সফার স্পিড সাধারণ যেকোনো হার্ড ড্রাইভের থেকে অনেক বেশি। এর ফলে এসএসডি এর দামও সাধারণ হার্ড ড্রাইভের থেকে অনেক বেশি। এসএসডির ট্রান্সফার স্পিড অনেক বেশি হওয়ায়, আপনি যদি পিসিতে এটি ব্যবহার করেন এবং উইন্ডোজ এসএসডিতে ইনস্টল করেন, তাহলে আপনি অনেক ফাস্ট বুট টাইম এবং আরো ফাস্ট এবং রেসপনসিভ পারফর্মেন্স পাবেন। এসএসডি ব্যবহার করলে আপনি পিসির পারফর্মেন্স এর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারবেন। এসএসডি নিয়ে বিস্তারিত এখানে আলোচনা করছি না আজকে। এসএসডি এবং হার্ড ডিস্কের মধ্যে পার্থক্য এবং এসএসডি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।

উইন্ডোজ সবসময় আপ টু ডেট রাখুন

এই বিষয়টি এখানে ইনক্লুড করলাম কারণ আমাদের দেশে উইন্ডোজ ইউজাররা এই জিনিসটিকেই সবথেকে বেশি অবহেলা করে। উইন্ডোজ আপডেট কখনোই ইগনোর করা উচিত নয়। কারণ, উইন্ডোজ আপডেট শুধুমাত্র নতুন ফিচারস যোগ করে তাই নয়, বরং তার থেকেও বেশি ওএস এর ওভারঅল পারফর্মেন্স ইম্প্রুভ করে এবং স্ট্যাবিলিটি ইমপ্রুভমেন্ট করে যেগুলোকে আন্ডার দ্যা হুড ইমপ্রুভমেন্ট বলা হয়। যারা একবার উইন্ডোজ ইনস্টল করার পরে সারা জীবনের মতো উইন্ডোজ আপডেট ডিজেবল করে রেখে দেন, তাদের সিস্টেমই সবথেকে বেশি স্লো হয়। এমনকি আমি বলবো, আপনি যদি উইন্ডোজ ইনস্টল করেন আপনার পিসিতে, আপনার সর্বপ্রথম  কাজ হওয়া উচিত উইন্ডোজ আপডেট করা। এর ফলে আপনি সকল সিকিউরিটি প্যাচ এবং ফিচার ইমপ্রুভমেন্ট আপডেটগুলো সোহো সকল আন্ডার দ্যা হুড আপডেটও পাবেন যেগুলো আপনার সিস্টেমকে আরো স্ট্যাবল এবং রিলায়েবল করে তুলবে।

অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম আনইনস্টল করে দিন

আপনি যদি আরো অধিকাংশ উইন্ডোজ ইউজারের মতো হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি পিসিতে হাজার হাজার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার ইনস্টল করে রেখে দেন যেগুলোর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া আর কোনোটি কখনো ভুলেও ওপেন করে দেখেন না। এই কাজটি কখনোই করা উচিত নয় যদি আপনি পিসির পারফর্মেন্স নিয়ে চিন্তিত হন। আপনার যেসব প্রোগ্রাম দরকার শুধুমাত্র সেসব প্রোগ্রামই ইনস্টল করে রাখুন। যেসব প্রোগ্রাম আপনি জানেন যে আপনি কখনোই ওপেন করবেন না, সেগুলো সব আনইনস্টল করে দিন। কারণ, হয়তো সেসব প্রোগাম ব্যাকগ্রাউন্ডে সবসময়ই কোনো প্রোসেস ওপেন করে রেখেছে যেগুলো আপনার পিসির পারফরমেন্সে ইফেক্ট ফেলছে অথবা অযথাই আপনার কিছুটা মেমোরি অপচয় করছে। তাই এগুলো খুঁজে খুঁজে আনইনস্টল করে দেওয়াই বেটার। আর আনইনস্টল করার জন্য একটি ডেডিকেটেড আনইনস্টলার প্রোগ্রাম যেমন IObit Uninstaller ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়। কারণ এটার সাহায্যে আপনি উইন্ডোজ এর প্রিলোডেড ব্লোটওয়্যার প্রোগ্রামগুলোও আনইনস্টল করতে পারবেন যেগুলো সাধারণভাবে আনইনস্টল করা সম্ভব হয়না। এছাড়া এটি ব্যবহার করলে প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম আনইনস্টল করার সাথে সাথে সেটির তৈরী করা সকল রেজিস্ট্রি এন্ট্রিগুলোও ক্লিয়ার হলো কিনা সেটাও নিশ্চিত করবে।

ব্যাকগ্রাউন্ড প্রোগ্রামস ডিজেবল করে দিন

আপনি হয়তো জানতেনও না যে আপনার চোখের আড়ালেও উইন্ডোজ ১০ এর অনেক বিল্ট ইন প্রোগ্রাম সবসময় ব্যাকগ্রউন্ডে চলতেই থাকে। সেগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ডিজেবল না করে দেওয়া পর্যন্ত ব্যাকগ্রাউন্ডে তাদের প্রোসেস চলতেই থাকে সবসময়। যেমন, ক্যামেরা এপ্লিকেশন, ক্যালকুলেটর এপ্লিকেশন ইত্যাদি আরো অনেক ধরণের প্রোসেস যেগুলো আপনার ব্যাকগ্রউন্ডে চালিয়ে রাখার কোনোই দরকার নেই। এসব প্রোগ্রামস এবং প্রোসেস একইসাথে আপনার সিপিইউ এবং মেমোরি ব্যবহার করতে থাকে। তাই এগুলোর মধ্যে যেসব প্রোগ্রামস ব্যাকগ্রউন্ডে চালিয়ে রাখার দরকার নেই বলে আপনার মনে হয় সেগুলোকে ডিজেবল করে দিন। ডিজেবল করার জন্য আপনার পিসির সেটিংস মেনুতে গিয়ে Privacy অপশনে চলে যান এবং এখান থেকে Background Apps সেকশন থেকে যেসব এপ্লিকেশন ব্যাকগ্রউন্ডে চালিয়ে রাখার দরকার নেই বলে আপনার মনে হয় সেগুলোকে ডিজেবল করে দিন।

অপ্রয়োজনীয় স্টার্টআপ প্রোগ্রামস ডিজেবল করুন

আপনি যদি আরো অধিকাংশ উইন্ডোজ ইউজার এর মতো হয়ে থাকেন তাহলে আপনিও আপনার ইচ্ছামতো প্রয়োজনীয় সব প্রোগ্রামস এবং সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন এবং এরপর সেগুলো ব্যবহার করতে থাকেন কোনোকিছু আর না ভেবেই। কিন্তু অনেকেই হয়তো খেয়াল করে দেখেননি যে এগুলোর মধ্যে অনেক প্রোগ্রামস আপনার সিস্টেম বুটআপের সাথে সাথেই ওপেন হয়ে যায় যেগুলোর সিস্টেম স্টার্টআপের সময় ওপেন হয়ে থাকার কোনো প্রয়োজনই নেই। এসব প্রোগ্রামস এবং এগুলোর প্রোসেস আপনার সিস্টেম বুট আপের সময় ওপেন হয়ে আপনার পিসির বুট টাইম অনেক বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে আপনার পিসি ও হতে সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি সময় নেয়। এসব স্টার্টআপ প্রোগামস ডিজেবল করে দিলে আপনি আরো ফাস্ট বুট টাইম পাবেন। স্টার্টআপ প্রোগ্রাম ডিজেবল করতে টাস্ক ম্যানেজার ওপেন করুন এবং স্টার্টআপ ট্যাবে গিয়ে যেসব প্রোগ্রামস আপনি মনে করেন সিস্টেম বুটআপের সময় ওপেন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই, সেগুলো ডিজেবল করে দিন।

ডিস্ক ডিফ্র্যাগার ব্যবহার করুন

এই বিষয়টি সম্পর্কে হয়তো অনেকের খুব বেশি আইডিয়া নেই। ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট বলে একটি ব্যাপার আছে যেটি আপনার হার্ড ড্রাইভ বা আপনার পিসির প্রায় সব ইন্টারনাল ড্রাইভকে অপ্টিমাইজ করে যাতে সেগুলো ফ্র্যাগমেন্টেড না হয়। ডিস্ক ফ্র্যাগমেন্টেড হলে আপনার ড্রাইভ এর ট্রান্সফার স্পিড স্লো হয়ে যেতে পারে এবং যদি আপনার সি ড্রাইভ ফ্র্যাগমেন্টেড হয়, তাহলে আপনার পিসির পারফর্মেন্স সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি খারাপ হতে থাকবে। তাই কিছুদিন পরপরই ডিস্ক ডিফ্র্যাগার টুল ব্যবহার করে আপনার ড্রাইভগুলোকে অপ্টিমাইজ করা প্রয়োজন। এর জন্য সিম্পলি আপনার উইন্ডোজ স্টার্ট মেনুতে গিয়ে টাইপ করুন Disk Defragger, তাহলেই আপনি ওপরে উইন্ডোজ এর একটি ডিফল্ট টুল পাবেন যার নাম Defragment and Optimize Drives। এই টুলটি ওপেন করে আপনি আপনার পিসির সকল ড্রাইভ অপ্টিমাইজ করতে পারবেন। আর আমি রিকমেন্ড করবো এই কাজটি কিছুদিন পরপরই করতে।

ডেডিকেটেড ম্যালওয়্যার স্ক্যানার ব্যবহার করুন

যদিও উইন্ডোজ ২০ এর ডিফল্ট এন্টিভাইরাস, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ম্যালওয়্যার এর বিরুদ্ধে কিছুটা প্রটেকশন দেয়, কিন্তু ম্যালওয়্যার এর ক্ষেত্রে এটির ওপর ভরসা করা কখনোই বেস্ট সলুশন নয়। এমনকি এন্টিভাইরাস হিসেবেও এটির ওপর সম্পূর্ণ ভরসা করা উচিত না। পিসিতে থার্ড পার্টি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত, তবে অবশ্যই একটি লাইটওয়েট এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন। অনেক ভারী এন্টিভাইরাস আপনার পিসির পারফর্মেন্স এর ওপর ইফেক্ট ফেলতে পারে। লাইটওয়েট এন্টিভাইরাস হিসেবে Eset Nod32 ব্যবহার করতে পারেন। এবং অবশ্যই সম্ভব হলে পেইড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন। তবে এন্টিভাইরাস এর পাশাপাশি একটি ডেডিকেটেড ম্যালওয়্যার স্ক্যানারও ব্যবহার করা উচিত। কারণ, অধিকাংশ এন্টিভাইরাস ওভারঅল প্রটেকশনের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরী করা হয়, ম্যালওয়্যার এর ক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ প্রটেকশন নাও দিতে পারে। এন্টিভাইরাস থাকতেও কেন একটি ডেডিকেটেড ম্যালওয়্যার স্ক্যানার ব্যবহার করা উচিত তা বিস্তারিত এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন। ডেডিকেটেড ম্যালওয়্যার স্ক্যানার হিসেবে Malwarebytes বেশ জনপ্রিয়। পেইড ভার্সন ব্যবহার করতে না চাইলে ফ্রি ভার্সনটিও যথেষ্ট ভালো।

ড্রাইভারস সবসময় আপডেটেড রাখার চেষ্টা করুন

আপনি সাধারণত উইন্ডোজ আপডেট করলেই একইসাথে আপনার পিসির দরকারি ড্রাইভারগুলো আপডেট এবং ইনস্টল হয়ে যায়। কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় যে এসব ড্রাইভার এর লেটেস্ট ভার্সন ইনস্টল হয়না। অর্থাৎ আউটডেটেড ড্রাইভার ইনস্টল হয়। কিন্তু আপনার পিসির বেস্ট পারফর্মেন্স নিশ্চিত করার জন্য ড্রাইভার আপডেটেড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকসময় দেখা যায় আউটডেটেড ড্রাইভারের কারণে উইন্ডোজ এর অনেক ফিচারস ভালোভাবে কাজ করছে না এবং অনেকসময় দেখা যায় পিসিতে কানেক্টেড ডিভাইসগুলো ভালোভাবে রেস্পন্স করছে না এবং এই ধরণের আরো অনেক প্রবলেম হতে পারে আউটডেটেড ড্রাইভারের কারণে। আপনি আপনার পিসির সব ড্রাইভার চাইলে ম্যানুয়ালি ম্যানুফ্যাকচারার এর ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিতে পারেন বা আপডেট করে নিতে পারেন। তবে আমি রিকমেন্ড করবো কোনো ডেডিকেটেড ড্রাইভার আপডেটর সফটওয়্যার ব্যবহার করতে যার সাহায্যে আপনি সহজেই এক ক্লিকে আপনার পিসির সকল প্রয়োজনীয় ড্রাইভার আপডেট করে নিতে পারবেন। এর জন্য আপনি IObit Driver Booster ব্যবহার করতে পারেন। আর হ্যা, ড্রাইভার আপডেটর সফটওয়্যারটি স্টার্টআপ থেকে ডিজেবল করে দিতে ভুলবেন না। কারণ এটা আপনার সবসময় দরকার হবেনা।


তো এগুলোই ছিল কিছু টিপস যেগুলো ফলো করলে আপনার উইন্ডোজ পিসির পারফর্মেন্স অনেকটাই ইম্প্রুভ হবে। একেবারে অভাবনীয় রকম ইম্প্রুভ না হলেও অনেকটাই প্রথম দিনের মতোই পারফর্মেন্স পাবেন যদি আপনি এসব টিপস প্রথম যেদিন উইন্ডোজ ইনস্টল করবেন সেদিন থেকেই ফলো করেন। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories