কমান্ড প্রম্পট ট্রিকস : ৫ টি দরকারি উইন্ডোজ সিএমডি ট্রিকস!

আপনি যদি উইন্ডোজ পিসি বা উইন্ডোজ ল্যাপটপ বা যেকোনো উইন্ডোজ ডিভাইস ব্যবহার করে থাকে  অবশ্যই কমান্ড প্রম্পট জিনিসটির সাথে ভালোভাবেই পরিচিত। কমান্ড প্রম্পট নামের এই ছোট ব্ল্যাক স্ক্রিনে বিভিন্ন ধরণের ছোট ছোট কমান্ড লিখে উইন্ডোজ এর প্রায় অনেক কাজই সহজে করে ফেলা যায়। অনেকসময় আপনার অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাশ করলে এই কমান্ড প্রম্পট লাইফ সেভার হিসেবে কাজ করে। আমরা সব উইন্ডোজ ইউজাররাই কম-বেশি কিছু কিছু কমান্ড প্রম্পট এর কমান্ড জানি এবং মাঝে মাঝে দরকার হলে ব্যবহারও করি। যাইহোক, আজকে এমন পাঁচটি কমান্ড প্রম্পট ট্রিক্স নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো অনেকসময় খুব বেশি দরকার হতে পারে আবার কয়েকটি বেশ মজার এবং যেগুলো আপনার জানা উচিত যদি আপনি উইন্ডোজ ইউজার হয়ে থাকেন। এর জন্য আপনার যা যা দরকার হবে তা হচ্ছে,

  1. উইন্ডোজ পিসি বা ল্যাপটপ
  2. উইন্ডোজ ১০ (লেটেস্ট ভার্সন হলে ভালো হয়) এছাড়া উইন্ডোজ ৮ এবং ৭ ও কাজ করতে পারে (নিশ্চিত না)।
  3. কমন সেন্স ????

ড্রাইভ ফরম্যাট

সিএমডির সাহায্যে আপনি চাইলে সহজেই আপনার পিসির যেকোনো রিমুভেবল ড্রাইভ কিংবা ইন্টারনাল ড্রাইভ ফরম্যাট করতে পারবেন। যেমন, আপনি চাইলে আপনার পিসির হার্ডড্রাইভ ফরম্যাট করতে পারবেন এবং চাইলে আপনার পিসিতে কানেক্ট করা কোনো রিমুভেবল পেনড্রাইভ বা এসডি কার্ডও ফরম্যাট করতে পারবেন। এসব ফরম্যাট এর কাজ সাধারণভাবে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার থেকেই করা যায়। তাহলে কেন সিএমডি ইউজ করতে হবে এই সিম্পল কাজের জন্য? কারণ সিএমডির সাহায্যে ফরম্যাট করলে আপনার ড্রাইভটি নিশ্চিতভাবেই ফরম্যাট হবে। আপনি অনেকসময় খেয়াল করলে দেখবেন যে অনেক করাপ্টেড পেনড্রাইভ উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার দিয়ে সাধারণ মেথডে ফরম্যাট হতে চায়না। অথবা পেনড্রাইভে আরো অনেকধরণের ইস্যু থাকলেও অনেকসময় বিভিন্ন ধরণের এরর মেসেজ শো করে এবং সাধারন মেথডে ফরম্যাট হয়না। কিন্তু আপনি যদি সিএমদডি ব্যবহার করে ড্রাইভটি ফরম্যাট করেন, তাহলে ৯৯% সময়ই ড্রাইভটি স্মুথলি ফরম্যাট হয়ে যাবে যত ইস্যুই থাকুক না কেন।

কমান্ড প্রম্পট দিয়ে কোনো ড্রাইভ ফরম্যাট করতে চাইলে প্রথমেই কমান্ড প্রম্পটি ওপেন করে টাইপ করুন Diskpart এবং ইন্টার প্রেস করুন। অ্যাডমিন পারমিশন চাইলে পারমিশন দিন। এরপর নতুন একটি সিএমডি উইন্ডো ওপেন হলে টাইপ করুন list disk এবং ইন্টার প্রেস করুন। এবার আপনাকে আপনার পিসির সাথে কানেক্টেড সকল ইন্টারনাল এবং রিমুভেবল ডিস্কগুলোর লিস্ট দেখানো হবে সেগুলোর ক্যাপাসিটিসহ। এখান থেকে আপনার কমন সেন্স ব্যবহার করে বুঝে নিন যে আপনি যে ড্রাইভটি ফরম্যাট করতে চাচ্ছেন সেটি কত নাম্বারে আছে। আপনি মূলত ড্রাইভের সাইজ লক্ষ্য করলেই বুঝবেন কোনটি কোন ড্রাইভ। বুঝে গেলে এবার টাইপ করুন select disk 1 লিখে ইন্টার চাপুন, যদি আপনার কাঙ্খিত ড্রাইভটি disk 1 হয়ে থাকে। যদি অন্য কোনোটি হয়ে থাকে তাহলে সেভাবেই লিখবেন select disk 2 বা disk 3 বা disk 4 বা অন্যকিছু। আশা করি বোঝাতে পেরেছি। এবার যদি আপনি ড্রাইভটি ফরম্যাট করতে চান, তাহলে টাইপ করুন Clean এবং ইন্টার প্রেস করুন। আপনার ড্রাইভের সাইজের ওপর ভিত্তি করে একটু সময় নিতে পারে। এরপর ফরম্যাট হয়ে গেলে নিচের লাইনে আপনাকে DiskPart succeeded in cleaning the disk  বলা হবে। এখনো কাজ শেষ না কিন্তু ! এবার টাইপ করবেন create partition primary এবং আবার ইন্টার প্রেস করবেন। ব্যাস।

কমান্ড প্রম্পট কালার চেঞ্জ

আপনি হয়তো এতোদিনেও জানতেন না যে আপনি চাইলেই কমান্ড প্রম্পটকে নিজের ইচ্ছামতো রং করতে পারবেন। অর্থাৎ কমান্ড প্রম্পট এর যে ডিফল্ট কালো ব্যাগ্রাউন্ড  এর ওপরে সাদা অক্ষরের টেক্সট এই থিমটি চেঞ্জ করে কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপরে আপনার নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো কালারের টেক্সট দেখতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে জাস্ট কমান্ড প্রম্পট ওপেন করে টাইপ করতে হবে help color এবং ইন্টার প্রেস করতে হবে। তাহলেই আপনি অনেকগুলো প্রিসেট কালারের চয়েজ পাবেন প্রত্যেকটির ক্রমিক নাম্বারের সাথে। নিচের স্ক্রিনশটটি লক্ষ্য করুন। এখানে লিস্ট থেকে আপনার যে কালারটি পছন্দ হয় সেটির ক্রমিক নাম্বারের সাথে নিচে এভাবে লিখুন colo 01 বা color 02 ইত্যাদি এবং আবার ইন্টার প্রেস করুন। আপনি সাথে সাথেই কাঙ্খিত চেঞ্জটি দেখতে পারবেন। যেমন, আমি যে কালারটি পছন্দ করেছি সেটির ক্রমিক নাম্বার ৫। তাই আমি টাইপ করেছি color 05।

কমান্ড প্রম্পট টাইটেল চেঞ্জ

আপনি চাইলে কমান্ড প্রম্পট এর টাইটেল টেক্সটও চেঞ্জ করতে পারবেন। অর্থাৎ, কমান্ড প্রম্পট ওপেন করলে উইন্ডো টাইটেলে যে Command Prompt লেখা থাকে, এই লেখাটি চেঞ্জ করে নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো টেক্সট দিতে পারবেন। এর জন্য জাস্ট কমান্ড প্রম্পট ওপেন করে টাইপ করুন title your desired text যেমন, আমি চেয়েছি কমান্ড প্রম্পট টাইটেলে Siam@TecHubs টেক্সটটি দিতে। তাই আমি কমান্ড প্রম্পট ওপেন করে টাইপ করেছি title Siam@TecHubs এবং ইন্টার প্রেস করেছি।

নির্দিষ্ট লোকেশনে কমান্ড প্রম্পট ওপেন

আপনি যদি অনেক বেশি ইউজ করেন সিএমডি তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন যে কমান্ড প্রম্পট থেকে প্রত্যেকটি ড্রাইভ থেকে নেভিগেট করে আপনার কাঙ্খিত লোকেশনে গিয়ে কোনো কাজ করা কতটা পেইনফুল একটা প্রোসেস। একটি ড্রাইভের লেটার ভুল হলেই আপনি আর ফাইল খুঁজে পাবেন না, একটি সিম্বল ভুল হলেই আপনি লোকেশনে যেতে পারবেন না। তাছাড়া সি ড্রাইভ, ডি ড্রাইভ,হাইফেন, স্ল্যাশ ইত্যাদি টাইপ করতে করতেই কাজটি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। তবে আপনি হয়তো জানতেন না যে নির্দিষ্ট একটি লোকেশনে কমান্ড প্রম্পট ওপেন করতে হলে আপনাকে আগে কমান্ড প্রম্পট ওপেন করে তারপরে নেভিগেট করে ওই ফোল্ডারে যেতে হবেনা। আপনি সাধারণভাবে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার ব্যবহার করে আপনার কাঙ্খিত ফোল্ডারে গিয়ে তারপরে সেখানে ওই লোকেশনে সরাসরি সিএমডি ওপেন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে শুধুমাত্র উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে ওপরে যেখানে ফাইলটির লোকেশন টাইপ করা থাকে, সেখানে ক্লিক করে টাইপ করতে হবে cmd এবং ইন্টার প্রেস করলেই সরাসরি ওই ড্রাইভের ওই লোকেশনেই কমান্ড প্রম্পট উইন্ডো ওপেন হবে।

সিস্টেম ফাইল স্ক্যানিং

আপনি চাইলে কমান্ড প্রম্পট ব্যবহার করে আপনার পিসির সিস্টেম ফাইল স্ক্যানও করতে পারবেন। আপনার সিস্টেম ফাইলগুলোতে কোনো ধরণের ইস্যু আছে কিনা বা আপনার সিস্টেম ফাইলগুলোর কোনো প্রব্লেম ফিক্স করার দরকার কিনা এসবই মূলত স্ক্যান করে কমান্ড প্রম্পট। স্ক্যান নামটি শুনেই এটিকে এন্টিভাইরাস এর মতো কিছু মনে করবেন না। এটি কোনো ভাইরাস স্ক্যানার বা ম্যালওয়্যার স্ক্যনার না। এটি শুধুমাত্র আপনার সিস্টেম ফাইলগুলোকে স্ক্যান করবে কোনো ইস্যু আছে কিনা দেখার জন্য এবং ইস্যু থাকলে সেটি ফিক্স করার জন্য। এর জন্য আপনাকে শুধুমাত্র কমান্ড প্রম্পটি এডমিনিস্ট্রেটর মোডে ওপেন করতে হবে এবং টাইপ করতে হবে fc /scannow এবং ইন্টার প্রেস করতে হবে। তাহলেই কমান্ড প্রম্পট আপনার পিসির সিস্টেম ফাইলগুলোকে ভেরিফাই করা শুরু করবে এবং আপনাকে ভেরিফিকেশন প্রোগ্রেস শো করবে। এবং ভেরিফিকেশনের শেষে আপনাকে রেজাল্ট শো করবে। সবকিছু ঠিক থাকলেও আপনাকে রেজাল্টে দেখানো হবে এবং কোনো ইস্যু থাকলে সেটি ফিক্স করা হলো কিনা এবং কি কি ইস্যু ফিক্স করা হলো সেগুলোও রেজাল্টে দেখানো হবে।

তো এই ছিল পাঁচটি কমান্ড প্রম্পট ট্রিকস যেগুলোর কয়েকটি বেশ দরকারি এবং কয়েকটি মজার। এমন আরো অনেক কমান্ড প্রম্পট ট্রিকস আছে যেগুলো আপনার জানা উচিত যদি আপনি উইন্ডোজ ইউজার হয়ে থাকেন। সেসব ট্রিকস নিয়ে আগামী কোনো একদিন আবার আলোচনা করা যাবে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। আপনি যদি এমন আরো কমান্ড প্রম্পট ট্রিকস জেনে থাকেন, তাহলেও নিচে কমেন্ট সেকশনে আমাদের সাথে শেয়ার করুন। 🙂

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories