ওয়ার্ডপ্রেস গীকঃ পর্ব ৪; সেলফ হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের ক্ষেত্রে হোস্টিং নির্বাচন!

ইতিপূর্বে আমরা ওয়ার্ডপ্রেস এর ইনস্টলেশন এবং ওয়ার্ডপ্রেসে থীমস এবং প্লাগিনস ইনস্টলেশন সম্পর্কে জেনেছি। আর আজকের পর্বে আমরা ওয়ার্ডপ্রেসের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় দিয়ে আলোচনা করব, আর সেটা হল ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং। সেলফ হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে ভালো হোস্টিং বাছাই করা খুবই জরুরী। ওয়েবসাইট দীর্ঘদিন সুন্দরভাবে চালাতে এবং সার্চ ইঞ্জিনে একটা ভালো অবস্হানে ওয়েবসাইট টিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যান্ত প্রয়োজনীয়।

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট হোস্ট করার ক্ষেত্রে আপনার কাছে বেশকয়েক অপশন রয়েছে। শেয়ার্ড হোস্টিং, ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (VPS), ডেডিকেটেড সার্ভার, ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং এমনকি বহু ফ্রী ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিংও ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ওয়েবসাইট এর ধরন এবং ট্রাফিক এর অপর বিবেচনা করে, আপনি এখান থেকে যেকোনো একটি বাছাই করতে পারেন এবং আজ আমি এই বিষয়ে আলোচনা করব।


ওয়ার্ডপ্রেস ব্যান্ডউইথ

আসলে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট মাসে কি পরিমান ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করে আপনি কি ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং বাছাই করবেন। এখানে সহজ ভাষায় ওয়ার্ডপ্রেস ব্যান্ডউইথ বলতে বুঝায়, ঠিক যে পরিমান দর্শক আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করছে এবং এতে করে যে পরিমান ডাটা ভিজিটর এবং ওয়েবসাইট এর মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ট্রান্সফার হচ্ছে। আপনি ওয়্যারবিডিের একটি আর্টিকেল পেজ ভিজিট করলেন, ধরলাম সেই পেজে কনটেন্ট সহ টোটাল পেজের সাইজ ৮০০ কেবি। সেক্ষেত্রে আপনি একবার সেই পেজ ভিজিট করার ক্ষেত্রে ওয়্যারবিডিের ব্যান্ডউইথ লিমিট থেকে ৮০০ কেবি খরচ হয়ে গেল। সুতরাং সাইটের ভিজিটর তথা দর্শক যত বেশি হয় তত বেশি ডাটা ফ্লো হয়। আর যত বেশি ডাটা ফ্লো তত বেশি ব্যান্ডউইথ চাহিদা।

আপনি আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে যদি আপনি বেশি সাইজের ছবি বা ভিডিও ফাইল যদি আপলোড করেছেন। এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটে প্রতি ভিজিটে বেশি ডাটা ফ্লো হবে , যার ফলে আপনার ব্যান্ডউইথ চাহিদা বেড়ে যাবে। সুতরাং আপনার কি পরিমান ব্যান্ডউইথ খরচ হবে তার ওপর ভিত্তি করে আপনাকে ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং এর ক্ষেত্রে কোনটা ভালো বাছাই করতে হবে। তুলনামূলক বেশি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যান্ডউইথ চাহিদার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের ম্যানেজড হোস্টিং অথবা VPS এমনকি ডেডিকেটেড সার্ভার ব্যবহার করা লাগতে পারে।

ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য স্ট্যান্ডার্ড রিকুয়ারমেন্ট

ওয়ার্ডপ্রেস এর ক্ষেত্রে ওয়েব হোস্টিং এর জন্য কিছু সিস্টেম রিকুয়ারমেন্ট প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে হোস্টিং সার্ভার বা হোস্টিং প্রোভাইডারের PHP 7 ভার্সন  অবশ্যই তার ওপরে হতে হবে। আর MySQL ভার্সন 5.6 বা তার ওপরে ওপরে হতে হবে।
ওয়ার্সপ্রেস খুবই লাইট-ওয়েট স্ক্রিপ্ট হওয়ার কারনে পৃথিবীর অলমোস্ট সব হোস্টিং প্রোভাইডার এটি সাপোর্ট করে। অনেকসময় PHP 5.6 ভার্সনের সার্ভারেও ওয়ার্ডপ্রেস চলে, তবে অবশ্যই উচিত PHP ভার্সন অন্তত 7 হওয়া। পৃথিবীর বড় বড় সব হোস্টিং প্রোভাইডারেরা ওয়ার্ডপ্রেসের প্রতি বিশেষ নজর রাখে এবং আধুনিক প্রায় সবগুলোতেই এক চাপে ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল এর সুবিধা পাওয়া যায়। cPanel ওয়েব হোস্টিং প্যানেলে সফট্যাকুলাস অ্যাপ ইনস্টলার এর ব্যবহারে একচাপে সেকেন্ডেই ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করা যায়।

প্রথমেই বলেছি আপনার যা চাহিদা অর্থাত ব্যান্ডউইথ চাহিদার ওপর কি হোস্টিং দরকার তা নির্ভর করে।আপনি কত মিডিয়া ফাইল আপলোড করবেন, তারওপর নির্ভর করবে কত স্টোরেজ বাছাই করবেন। তাছাড়াও আরো যে বিষয় নজর দেওয়া দরকার তা হল, সার্ভার রেসপন্স স্পীড, সিকিউরিটি এবং হোস্টিং কোম্পানির প্রতি নির্ভরযোগ্যতা ; হোস্টিং কোম্পানিটি আপনার প্রিয় ওয়েবসাইটের জন্য কতটা বিশ্বাসযোগ্য। এখন আমি বিভিন্ন রকম ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং সম্পর্কে জানাবো।

শেয়ার্ড হোস্টিং

শেয়ার্ড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং শুরুর জন্য বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় অপশন। ৯০% যারা ওয়ার্ডপ্রেসে প্রোজেক্ট শুরু করে তারা শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে শুরু করে। এখানে মূলত হোস্টিং প্রোভাইডার একটি বড় সার্ভারের জায়গাকে ভাগ ভাগ করে তা গ্রাহকদের মাঝে শেয়ার করে থাকে। শেয়ার্ড হোস্টিং এ ব্যবহারকারী যা যা সুবিধা পায় তা হল,

  1. এখানে সচরাচর cPanel এর মত হোস্টিং কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়, যা ব্যবহার করা খুবই সহজ। এখানে ব্যবহারকারীকে বেশি টেকনিক্যাল বিষয় জানার প্রয়োজন পড়ে না, খুবই সহজ।
  2. একটি সার্ভারে অনেকগুলো সাইট ব্যবহৃত হচ্ছে ফলে, হোস্টিং প্রোভাইডার এগুলোকে অ্যাফোর্ডেবল দামে গ্রাহককে হোস্টিং ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। তাই গ্রাহক কমদামে শেয়ার্ড হোস্টিং কিনতে পারে।

তো ছোট ব্লগার এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিং হতে পারে সেরা পছন্দ।

ম্যানেজড হোস্টিং

ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং ওয়ার্সপ্রেস এর জন্য আরেকটি জনপ্রিয় হোস্টিং সেবা। আর এক্ষেত্রে হোস্টিং প্রোভাইডার মূলত ওয়ার্ডপ্রেস এর জনপ্রিয়তা এবং এর বিশাল ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে ; প্যাকেজটি বিশেষভাবে ডিজাইন করে থাকে। একটি ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং প্যাকেজকে কেবল ওয়ার্ডপ্রেস নির্ভর যেকোনো ওয়েবসাইটই তৈরি করা যায় । এখানে ওয়েবসাইট এর জন্য কোন চিন্তা করতে হয় না। সার্ভার ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে ইনস্টল হয়ে থাকা প্লাগিনস, থীমস এগুলোর সিস্টেম রিকুয়ারমেন্ট বুঝে নিজেকে আপগ্রেড করতে পারে। এই হোস্টিং সেবায় সার্ভার প্রতিনিয়ত সাইটের ওপর ভিত্তি করে নিজেকে অপটিমাইজ করে থাকে। তাছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেসের সর্বশেষ আপডেটের সাথে মিল রেখে প্রোভাইডারেরা এখানে সার্ভার সাইডে সিকিউরিটি ব্যবস্হাও হালনাগাদ করে থাকে, তাই নিরাপত্তা বিষয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যায়। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী রিসোর্স এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকমের ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং পাওয়া যায়।

ম্যানেজড হোস্টিংএ সর্বদা ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের ব্যাকআপ নেয়া হয়। অনেক সময় সাপোর্ট স্টাফ পাওয়া যায় হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে। অনেকসময় কোন প্লাগিন যদি সার্ভারে খারাপ প্রভাব ফেলে, তবে তারা আপনাকে সেটি সরিয়ে ফেলার বা ফিক্স করার পরামর্শ দিবে। যেসব ওয়েবসাইট এর মালিকের ভালো ভিজিটর এবং সাইট সর্বদা একটিভ ; তবে তিনি ওয়েবসাইট এর টেকনিকাল ব্যাপার স্যাপার বোঝেন না ; অথবা কোন সমস্যা এলে তা সমাধান করার ঝামেলা নিতে চাননা তাদের জন্য ম্যানেজড হোস্টিং সেবা বেস্ট। ম্যানেজড হোস্টিং সেবা নিতে আপনাকে একটু বেশি টাকা গুনতে হতে পারে। পপুলার সব ম্যানেজড হোস্টিং প্রোভাইডারদের কাছে ৩০$ মাসিক থেকে এসব সার্ভিস পাওয়া যায়।

ডেডিকেটেড সার্ভার হোস্টিং

এখানে আপনি হোস্টিং প্রোভাইডার বা কোম্পানি থেকে টাকার বিমিময়ে একটি ফিজিক্যাল বা বাস্তব সার্ভার ভাড়া নিচ্ছেন। এখানে সার্ভারের হার্ডওয়্যার কি হবে, অপারেটিং সিস্টেম কি হবে ; তার ওপর পুরোপুরিভাবে আপনার নিয়ন্ত্রন থাকবে। এখানে ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের ওপর ভিত্তি করে সার্ভার স্কেলিং, সার্ভারে বিভিন্ন এক্সটেনশন যুক্ত করন ইত্যাদি বিষয় তথা গ্রাহককে হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা থাকতে হবে। সুতরাং এখানে টেকনিক্যাল দিক থেকে খুবই স্কিলড হইতে হবে।

আমার মতে যেসব সাইটের ভিজিটর অনেক বেশি তাদের ডেডিকেটেড সার্ভার হোস্টিং ব্যবহার করা উচিত। বড় বড় অনলাইন নিউজপেপার সাধারনত ভিপিএস এবং ডেডিকেটেড সার্ভার ব্যবহার করে থাকে। অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে, ওয়্যারবিডি কি ব্যবহার করে? ওয়্যারবিডি গুগল ক্লাউড এর ডেডিকেটেড সার্ভার ব্যবহার করে থাকে। ওয়্যারবিডিও ওয়ার্ডপ্রেস চালিত একটি ব্লগ তথা ওয়েবসাইট।

এসব ডেডিকেটেড সার্ভার হোস্টিং এর ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো হল, টেকনিক্যাল দিক দিয়ে স্কিলড হতে হয় এবং এগুলোর মাসিক চার্জ তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।

ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (VPS)

এখানে ফিজিক্যাল সার্ভারের বদলে এটি হল আপনার জন্য একটি ভার্চুয়াল মেশিন। অনেকগুলো ফিজিক্যাল সার্ভার এক করে, তা ভাগ ভাগ করে একেক ক্ষমতার ভার্চুয়াল সার্ভার তৈরি করা হয়। আর এখানে আপনি ডেডিকেটেড সার্ভারের মত অনেকটা কন্ট্রোল পান।

আমরা জানি ভিপিএস হল এক বা একাধিক ফিজিক্যাল সার্ভারের স্বতন্ত্র পার্টিশন। আর এই পার্টিশন গুলো পুরোপুরি ডেডিকেটেড সার্ভারের মত কনট্রোল করা যায় না। তবে কম দামে এটি ডেডিকেটেড সার্ভারের অনেকটা সুবিধা দেয়। যখন শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়েও ওয়েবসাইট কভার করা যাচ্ছে না ; তখন VPS এ আপগ্রেড করা যেতে পারে। অনেকে আছেন যাদের হয়ত ভিপিএস দরকার তবে টেকনিক্যাল বিষয় অত বোঝেন না বা হ্যান্ডেল করতে চান না। তাদের জন্য ম্যানেজড হোস্টিং এর মত ম্যানেজড ভিপিএস সার্ভিসও বিদ্যমান। ম্যানেজড ভিপিএস ব্যবহার করেও অাপনি অনেকটা সময় টেনশন মুক্ত থাকতে পারেন।

ভিপিএস ও ডেডিকেটেড এর সুবিধা-অসুবিধা

তুলনামূলক বেশি ভিজিটরের ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের জন্য এগুলো খুবই ভালো পছন্দ। কেননা এখানে পুরোপুরিভাবে একটা ওয়েবসাইটে যা যা করা সম্ভব সকল কন্ট্রোল পাওয়া যায়। এখানে সার্ভার কনফিগারেশন সেটিংস পরিবর্তন থেকে শুরু করে, আপনার সাইটের জন্য কাস্টম কেন সফটওয়্যার ইনস্টল সব এখানে করতে পারবেন। আবার ইচ্ছামত একাধিক ওয়ার্ডপ্রেস ভিত্তিক বা অন্যান্য ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজ তৈরি করতে পারবেন, প্রয়োজন পড়লে।

অসুবিধা গুলো হল, এগুলোর দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। যেখানে আপনি মাসে ৩০০ টাকা থেকে শেয়ার্ড হোস্টিং পেতে পারেন ;সেখানে এসব ভালো মানের সার্ভার প্লান শুরু হয় মাসে অন্তত ৩০০০ টাকা থেকে। যাই হোক, এর পাশাপাশি আপনার থাকা প্রয়োজন যথেষ্ঠ টেকনিক্যাল স্কিল, যা এই পর্যন্ত অনেকবার বললাম।

আশা করি ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য কোন ওয়েব হোস্টিং আপনার জন্য সেরা হতে পারে তা সম্পর্কে আইডিয়া পেয়েছেন। অনেকে বলবেন ভালো হোস্টিং কোম্পানি কোনটা? এবিষয়ে পরবর্তীতে একটা ডিটেইলস আর্টিকেল দেয়া যাবে, কেননা নিজস্ব এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া এখানে বলা যায় না। তবে ওয়্যারবিডি ইতিমধ্যে ডিজিটাল অসান এবং বর্তমানে গুগল ক্লাউড ব্যবহার করছে। এই দুটি যথেষ্ঠ ভালো, গুগল ক্লাউডে পে-পার-ইউজ সুবিদা থাকার কারনে যতটুকু সার্ভার খরচ হচ্ছে ততটুকু বিল পরিশোধ করার সুবিধা থাকছে। অন্যদিকে ডিজিটাল অসান মাস শেষে নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন এর সার্ভারের জন্য একটা নির্দিষ্ঠ বিল পরিশোধ করতে হয়।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories