আদিকালের মতো কাগজে ব্রাশ ঘুরিয়ে আর রঙ মাখিয়ে ফটো পেইন্ট করার আইডিয়াকে ডিজিটাল ক্যামেরা সম্পূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। পুরাতন ফিল্ম ক্যামেরাতে কোন ছবি প্যাটার্ন আর রঙ ব্যবহার করে ক্যাপচার করা হতো; কিন্তু বর্তমানে ছবি গুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাম্বারের মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়। আর ফটোকে নাম্বার হিসেবে সংরক্ষিত করে রাখার অনেক সুবিধা রয়েছে; ইনস্ট্যান্ট ফটো প্রিন্ট করা যায়, যেকোনো ডিভাইজে শেয়ার করা যায়, এডিট করা যায়, এবং ইমেইল বা ওয়েবসাইটে আপলোড করা যায়। তো এটি কীভাবে কাজ করে? চলুন এই প্রযুক্তি সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…
ডিজিটাল ক্যামেরা
ডিজিটাল-ক্যামেরা গুলো দেখতে একেবারেই সাধারন বা ফিল্ম ক্যামেরা গুলোর মতো; যদিও এটি সম্পূর্ণ আলাদাভাবে কাজ করে। এই ক্যামেরাতে ফটো উঠানোর জন্য যখন বাটন প্রেস করা হয় তখন ক্যামেরার সামনে থাকা রন্ধ্রটি (অ্যাপারচার) খুলে যায় এবং লেন্সের ভেতর দিয়ে আলো ক্যামেরার ভেতরে প্রবেশ করে। যদিও এই বিষয়টি পুরাতন ফিল্ম ক্যামেরাতেও একই হয়ে থাকে, কিন্তু বাকী কাজ গুলো সম্পূর্ণ আলাদা। ডিজিটাল ক্যামেরার ভেতরে পুরাতন ফিল্ম ক্যামেরার মতো কোন প্ল্যাস্টিক ফিল্ম লাগানো থাকে না—বরং এর মধ্যে অনেক গুলো ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রের টুকরা থাকে। এই ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র গুলো লাইট ক্যাপচার করে এবং সেগুলোকে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালে পরিবর্তিত করে। ক্যামেরাতে দুই ধরনের লাইট ডিটেক্টর দেখতে পাওয়া যায়; একটি চার্জ-কাপোল্ড ডিভাইজ (সিসিডি) অথবা একটি সিমোস ইমেজ সেন্সর।
আপনি যদি টেলিভিশনকে একদম কাছ থেকে দেখেন, তবে লাখ লাখ ডট ডট কালার দেখতে পাবেন, যেগুলোকে পিক্সেল বলা হয়। ল্যাপটপ বা যেকোনো কম্পিউটার মনিটর ও পিক্সেল দ্বারা ইমেজ গঠন করে। যদিও এক একটি পিক্সেল আঁকারে অনেক ছোট হয়ে থাকে, তারপরেও একসাথে লাখো পিক্সেল মিলে একটি সম্পূর্ণ ইমেজ তৈরি করে। কম্পিউটার/টিভি স্ক্রীনের এই ডট ডট পিক্সেল গুলো থেকে কালার একত্রে আমাদের চোখ দিয়ে মস্তিষ্কের কাছে গিয়ে পৌঁছায়, আর মস্তিষ্ক আমাদের বোকা বানিয়ে বোঝায় এটি একটি চলন্ত পিকচার।
তো টিভিতে কি হচ্ছে, টিভির পিক্সেল গুলো ছবি তৈরি করছে এবং আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। ডিজিটাল ক্যামেরাতে ঠিক উল্টা জিনিষ ঘটে; এখানে বাইরের আসল আলো লেন্স দিয়ে ক্যামেরার মধ্যে প্রবেশ করে এবং এই ইনকামিং পিকচার ইমেজ সেন্সর চিপকে হিট করে, এবং বাইরে থেকে আসা আলো বা পিকচারটি মিলিয়ন পিক্সেলে ছড়িয়ে পড়ে। সেন্সর প্রত্যেকটি পিক্সেলের কালার এবং ব্রাইটনেস নাম্বার হিসেবে স্টোর করে। আপনার ডিজিটাল যেকোনো ফটো আসলে এক বিশাল সারিবদ্ধ নাম্বার যাতে প্রত্যেকটি পিক্সেল সম্পর্কে তথ্য জমা থাকে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার
যখন একবার কোন ফটো নাম্বার আঁকারে সেভ করা সম্ভব হবে, সেটা থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব হবে। আপনার ডিজিটাল ক্যামেরাটি কম্পিউটারে লাগান আর ফটো গুলো ডাউনলোড করে নিন, তারপরে শেয়ার করুন, ফটোশপে এডিট করুন অথবা ফেসবুকে আপলোড করুন। আপনার ফটো গুলো খুব সহজেই এক ডিভাইজ থেকে আরেক ডিভাইজে পাঠানো সম্ভব হয়, কেনোনা এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে থাকে। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে একটি ভাষা মনে করুন যা আজকের সকল গ্যাজেট; কম্পিউটার, সেলফোন, প্রিন্টার, ইন্টারনেট ইত্যাদি বোঝে। চিন্তা করে দেখেছেন, ফটো গুলো যদি ডিজিটালি না থেকে কাগজের উপর থাকতো, মানে অ্যানালগ ভাবে? তখন হয়তো ফেসবুক অফিসের নামে আপনার সেলফি গুলোকে ডাক যোগে পাঠাতে হতো, আজ পাঠালেন আর ১ মাস পরে ফেসবুকে আসলো 😀
যদি আপনি ইমেজ এডিটিং প্রোগ্রাম ওপেন করেন তবে ডিজিটাল ফটোগ্রাফকে আপনি যেকোনো ভাবে পরিবর্তন করতে পারবেন। ফটো এডিটিং প্রোগ্রাম আপনার ইমেজের নাম্বার গুলোকে নতুনভাবে মডিফাই করে। ধরুন আপনার ফটোর ব্রাইটনেস ২০% বৃদ্ধি করে দিলেন, তবে ইমেজ এডিটিং সফটওয়্যারটি ইমেজের সকল পিক্সেল গুলোর তথ্যে ২০% ব্রাইটনেস এডিট করে দেবে এবং নাম্বার পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ধরুন আপনি আপনার ফটোটি উল্টিয়ে (আয়না ইফেক্ট) দিলেন, তবে ইমেজ এডিটর আপনার ফটোর নাম্বার গুলোকে একাধারে উল্টে লিখবে, ফলে ইমেজটি উল্টে যাবে, সিমপ্ল!
আবার ক্যামেরাতে ডিজিটাল জুম এবং অপটিক্যাল জুম মানে এই দুটি টার্ম নিশ্চয় শুনে থাকবেন। অপটিক্যাল জুম এর ক্ষেত্রে ক্যামেরার লেন্স ফিজিক্যালি আগে পিছে সরানোরা করে কোন ফটোকে ছোট বা বড় করে সেন্সরে এর আলোকে হিট করায়। ডিজিটাল জুম এর ক্ষেত্রে ক্যামেরার ভেতর থাকা একটি মাইক্রো চিপ ফটোর তথ্য গুলোকে বড় করে দেয়, এতে ফিজিক্যালি লেন্স সরানোরা করে না। ডিজিটাল জুম অনেকটা দূর থেকে টিভি দেখতে দেখতে কাছে সড়ে এসে টিভি দেখা, যেটা কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়। অপটিক্যাল জুমে ইমেজ আরো বড় হয়ে যায় এবং কোয়ালিটি পরিষ্কার থাকে কিন্তু ডিজিটাল জুমে ইমেজ বড় হয় সাথে ঘোলা হয়ে যায়।
ইমেজ কমপ্রেশন
এবার ধরুন আপনি নিজেই একটি সিসিডি বা সিমোস ইমেজ সেন্সিং চিপ। তো আপনার সামনের দিকের জানালার দিকে দেখুন এবং ভাবুন আপনি কতোটুকু দেখতে পাচ্ছেন এবং এগুলোকে কীভাবে আঁকবেন। প্রথমে আপনাকে সামনের দৃশ্যটিকে ডট ডট চারকোনা পিক্সেলে বিভক্ত করতে হবে। তারপরে আপনাকে প্রত্যেকটি পিক্সেলের কালার এবং ব্রাইটনেস মেপে তা নাম্বার আঁকারে লিখে রাখতে হবে। ধরুন একটি দৃশ্যকে পিক্সেল ভিত্তিক ফটোতে পরিণত করতে আপনার মোট ৮ মিলিয়ন পিক্সেল প্রয়োজনীয় হলো এবং আপনি প্রত্যেকটি পিক্সেলের বিবরণ নাম্বার হিসেবে লিখে রাখলেন, তো সকল নাম্বার একসাথে কয়েক মিলিয়ন নাম্বারের সাড়ি হয়ে দাঁড়াবে। আর এই জন্যই হাই রেজুলেসন ডিজিটাল ইমেজ অনেক বেশি জায়গা নেয় সেভ হতে, অনেক সময় কয়েক মেগাবাইট হয়ে যেতে পারে।
এই ডাটা সাইজকে কম করার জন্য এক ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যাকে কম্প্রেশন বলা হয়। কম্প্রেশন মূলত একটি গাণিতিক হিসেব, যার ব্যাবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল ফটোকে পিষণ করা হয়, যাতে এটি কম জায়গার মধ্যে স্টোর হতে পারে। ইমেজ কম্প্রেশনের সবচাইতে জনপ্রিয় ফরম্যাটটি হলো জেপ্যাগ (JPEG); এটি মূলত একটি লসি কমপ্রেশন—কেনোনা এতে কমপ্রেস করার সময় ইমেজের কিছু তথ্য নষ্ট হয়ে যায়। হাই রেজুলেসন জেপ্যাগ ইমেজ অনেক বেশি পরিষ্কার হয় কিন্তু এটি অনেক জায়গা নেয়, লো রেজুলেসন জেপ্যাগ ইমেজ মধ্যম কোয়ালিটি দেয় (হালকা ঘোলা) কিন্তু জায়গা অনেক কম নেয়।
শেষ কথা
আজকের দিনে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই স্মার্টফোন রয়েছে, আর এজন্য একটি প্রশ্ন সচরাচর সামনে আসে, “অঝথা ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার কি দরকার”? এই আর্টিকেলের উপসংহারে এসে আমি ডিজিটাল ক্যামেরা আর সেলফোন ক্যামেরার মধ্যে যুদ্ধ লাগাবো না, তবে এটি বিভিন্ন ইউজার এবং কাজের উপর নির্ভর করে। ধরুন আপনি শখ করে নিজের ফটো উঠাচ্ছেন আর সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করছেন, এই কাজের জন্য সেলফোন ক্যামেরায় যথেষ্ট। কিন্তু আপনি যদি আরো প্রফেশনাল কোয়ালিটির ফটো উঠাতে চান তবে সেলফোন ক্যামেরা থেকে ডিএসএলএর ক্যামেরা অনেক বেশি ভালো হবে। ডিএসএলআর ক্যামেরায় আরো বেশি উন্নত ইমেজ সেন্সর থাকে এবং এর সেন্সরের আঁকার স্মার্টফোন ক্যামেরার চাইতে ৫০ গুন বেশি বড় হয়, সাথে অবশ্যই আরো বেশি উন্নত লেন্স থাকে। তাছাড়া ডিএসএলআর ক্যামেরা র্যো ইমেজ (RAW) ক্যাপচার করতে পারে, যেটা হাই কোয়ালিটি প্রদানের সাথে প্রফেশনাল এডিটিং এর কাজে লাগে। “এই পর্যায়ে এসে সত্যিই মনে হচ্ছে ডিএসএলআর নিয়ে আরেকটি আর্টিকেল লেখা জরুরী!”
WiREBD এখন ইউটিউবে, নিয়মিত টেক/বিজ্ঞান/লাইফ স্টাইল বিষয়ক ভিডিও গুলো পেতে WiREBD ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুণ! জাস্ট, youtube.com/wirebd — এই লিংকে চলে যান এবং সাবস্ক্রাইব বাটনটি হিট করুণ!
তো আপনি কি ক্যামেরা প্রেমি, তাহলে আজ জানলেন আপনার পছন্দের ডিজিটাল ক্যামেরা কীভাবে কাজ করে। এই নিয়ে আপনার যেকোনো প্রশ্ন আমাদের কাছে পৌঁছাতে নিচে কমেন্ট করতে পারেন, আমি সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
ডিএসএলআর Vs ক্যামকরডার Vs স্মার্টফোন ক্যামেরা নিয়ে শীঘ্রই পোষ্ট আসছে 🙂
❤
অসাধারণ হয়েছে বোরহান ভাই।অনেক ভালো লাগলো তথ্য গুলো জেনে।
ধন্যবাদ 🙂 সাথেই থাকবেন 🙂
ভাই ক্যামেরা কোয়ালিটির দিক থেকে কোনটি বেস্ট?
হনর ৬এক্স/রেডমি নোট ৪?
কোনটা কিনবো?
হনর ৬এক্স/জিআর৫ ২০১৭ | নিঃসন্দেহে 🙂
আবার আরেকটা মাস্টার পিস ছাপাইলেন! অসাধারণ!
ডিএসএলআর Vs ক্যামকরডার Vs স্মার্টফোন ক্যামেরা নিয়ে লেখার আগেই কমেন্ট (অসাধারণ, মাথা নষ্ট তুলনা মূলক পোষ্ট হবে)
😀
🙂
❤️ ? ? ? ?
এতো মজার ইমোজি দৈনিক কই পান আপনি? অসাধারণ 🙂
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤OSADHARON~OSADHARON~OSADHARON❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤Next post er jonno ekhon thekei interested ami!!
Apnar solution dekhlam. Kintu bhai mail pathale(contact us from) reply asena. Apnar email ID ta FB te inbox kore deben pls.❤❤❤❤
আপনার মেইল আমি পেয়েছিলাম, রিপ্লাই করা হয় নি। আপনি wirebd.com[at]gmail.com এ মেইল করতে পারেন।
কমেন্ট করার ভাষা নেই
😀
কমেন্টে দেখছি সবাই ভালোবাসার বন্যা বইয়েছে 😀 আমিও পাঠালাম ❤❤❤
খুব ভালো হয়েছে।
আপনাদের জন্যও রইল আমার আন্তরিক অসংখ্য ভালোবাসা 🙂
আপনারা এতোটা সাথ না দিলে আর এতোটা উৎসাহ না যোগালে সামনে এগোনো সম্ভব হতো না।
for gaming monitor what should most important?
high refresh rate or high regulation?
এইটা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কমেন্টে এতো বলতে গেলে লম্বা হয়ে যাবে, আমি পোষ্ট করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো 🙂
what kind of genius are you boss?
ভাই আমি কোন প্রতিভাবান নয় 🙂
টেক নিয়ে লিখতে, পড়তে, জানতে, জানাতে, ঘুমাতে, উঠতে, বসতে ভালো লাগে এই আর কি 🙂