ওয়াইফাই ডাইরেক্ট কি, এটি কীভাবে কাজ করে? [বিস্তারিত!]

নতুন স্মার্টফোন গুলোতে একটি ফিচার প্রায় বেশ কমন হয়ে উঠেছে, ওয়াইফাই ডাইরেক্ট (Wi-Fi Direct) — যেটাকে আপনি সরাসরি ব্লুটুথ টেকনোলজির সাথে তুলনা করতে পারেন। ওয়াইফাই অ্যালায়েন্স (Wi-Fi Alliance) ২০১০ এর শেষের দিকে এই নতুন নাম এবং টেকনোলজি সামনে নিয়ে আসে, যেটা সহজ, ফাস্ট এবং সিকিউরভাবে যেকোনো কনটেন্ট, প্রিন্টার, আলাদা ডিভাইজ গুলোর মধ্যে ইন্টারনেট শেয়ারিং করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। এই আর্টিকেলে ওয়াইফাই ডাইরেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ওরা হয়েছে।

ওয়াইফাই ডাইরেক্ট

যদি একেবারে সহজ ভাষায় বলি, তো ওয়াইফাই ডাইরেক্ট হলো এমন ধরণের টেকনোলজি, যেটা ওয়াইফাই ডাইরেক্ট সমর্থন করা ডিভাইজ গুলোকে পিয়ার-টু-পিয়ার কানেকশনে কানেক্ট করতে পারে, মানে সাধারন ওয়াইফাই কানেকশন যেমন কোন ওয়্যারলেস রাউটার বা অ্যাক্সেস পয়েন্টের উপর নির্ভরশীল থাকে, তেমনটা মোটেও ওয়াইফাই ডাইরেক্টের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হয় না। যেমন আপনি ডিভাইজে ব্লুটুথ অন করে, আরেকটি ডিভাইজ সার্চ করতে শুরু করে দেন, তারপরে খুঁজে পেলে সরাসরি কানেক্ট করে ফাইল শেয়ারিং শুরু করতে পারেন, ঠিক এমনভাবেই ওয়াইফাই ডাইরেক্ট কাজ করে থাকে।

ওয়াইফাই ডাইরেক্ট অনেকটা অ্যাড-হক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মতোই, কিন্তু এখানে ব্লুটুথের মতো সরাসরি ডিভাইজ সার্চ করা যায় এবং কানেক্ট করা যায়, যেটা অ্যাড-হক নেটওয়ার্কে করা যায় না। সাধারণ ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকে ওয়াইফাই ডাইরেক্ট অনেক বেশি পোর্টেবল এবং ব্যাবহার করা অনেক ইজি। যেহেতু সরাসরি যেকোনো ডিভাইজ একে ওপরের সাথে কানেক্ট হতে পারে সরাসরি, সেক্ষেত্রে আপনার রাউটারের প্রয়োজন পড়বে না। এটি দ্বারা কনটেন্ট শেয়ারিং, ফাইল শেয়ারিং, প্রিন্টিং, গেমিং, স্ক্রীন শেয়ারিং, ইন্টারনেট কানেকশন শেয়ারিং ইত্যাদি করা সম্ভব, যদিও আপনার ডিভাইজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি হিসেবে আপনি কোন ফিচার পেতে পারেন আবার নাও পেতে পারেন।

একে তো সরাসরি সার্চ করার মাধ্যমে ডিভাইজ ডিস্কভার করতে পাড়বেন, দ্বিতীয়ত, এটি অ্যাড-হক নেটওয়ার্কের মতো পুরাতন এবং অনিরাপদ WEP ব্যবহার না করে WPA2 সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে। অ্যাড-হক নেটওয়ার্ক 802.11g স্ট্যান্ডার্ড এর উপর সীমাবদ্ধ, সেখানে ওয়াইফাই ডাইরেক্ট 802.11n স্ট্যান্ডার্ডের উপর কাজ করে, মানে আপনি ৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড+ হাই স্পীড কানেকশন তৈরি করতে পাড়বেন। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ/ট্যাবলেটে তো মেন্যু থেকেই নতুন ডিভাইজ সার্চ/কানেক্ট করার অপশন পেয়ে যাবেন, কিন্তু যে ডিভাইজ গুলো স্ক্রীন নেই, কেবল মাত্র একটি বাটন প্রেস করার মাধ্যমেই আপনি ওয়াইফাই ডাইরেক্ট কানেক্ট করতে পাড়বেন।

স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বিশেষ সুবিধার একটি ফিচার। আগের দিকে ফাইল শেয়ারিং এর জন্য ব্লুটুথ অনেক জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু বর্তমানে ওয়াইফাই টেকনোলজি অনেকবেশি জনপ্রিয় কেনোনা ওয়াইফাই দিয়ে হাই ব্যান্ডউইথ রেটে ফাইল ট্র্যান্সফার করা যায়। বর্তমানে সবাই নানান ফাইল ট্র্যান্সফার অ্যাপ ব্যবহার করে ওয়াইফাই টেকনোলজি দিয়ে ফাইল ট্র্যান্সফার করে থাকে, সেটা কিন্তু ওয়াইফাই ডাইরেক্ট নয়। যেমন আপনি যখন শেয়ারইট অ্যাপ ব্যবহার করে ফাইল ট্র্যান্সফার করেন, সেক্ষেত্রে উভয়ের ফোনে একই অ্যাপ ইন্সটল থাকতে হয়, তারপরে ঐ অ্যাপ একটি ভার্চুয়াল হটস্পট তৈরি করে, তারপরে ফাইল শেয়ারিং শুরু হয়। কিন্তু ওয়াইফাই ডাইরেক্টের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। আপনার ফোনে কোনই আলাদা অ্যাপ থাকতে হবে না, যদি আপনার ডিভাইজ ওয়াইফাই ডাইরেক্ট ফিচারটি সমর্থন করে, জাস্ট মেন্যু থেকে অন করে দিন, তারপরে আরেকটি ডিভাইজ সার্চ হতে শুরু হবে এবং কানেক্ট হয়ে গেলে ফাইল ট্র্যান্সফার করতে শুরু করতে পাড়বেন, এতে মোটেও কোন অ্যাড-হক নেটওয়ার্ক বা হটস্পট তৈরি হবে না।

এখানে কোন রাউটার বা অ্যাক্সেস পয়েন্ট প্রয়োজনীয় হয় না, কেনোনা যখন আপনার ডিভাইজে ওয়াইফাই ডাইরেক্ট অন করবেন, সেটাই অ্যাক্সেস পয়েন্ট রুপে আচরণ করতে শুরু করবে। কিন্তু এই টেকনোলজি সম্পূর্ণই আলাদা ওয়াইফাই টেকনোলজির মতোই কাজ করে, একই সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে এবং একই স্পীড স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে, শুধু কানেকশনের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধাসহ আরো কিছু স্পেশাল ফিচার যুক্ত করা রয়েছে এখানে।

এই টেকনোলজি কোথায় ব্যবহৃত হয়?

আপনার ডিভাইজ এবং যন্ত্রপাতি গুলো যদি এই টেকনোলজির উপর কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো আপনি আপনার নলেজের বাইরেই এই প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে আসছেন। অনেক অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স রয়েছে, যেগুলোর রিমোট কন্ট্রোল ওয়াইফাই নির্ভর হয়ে থাকে, তো সেখানে কিন্তু ডিভাইজ এবং রিমোট কন্ট্রোলের মধ্যে হটস্পট তৈরি করে কানেকশন হয় না, বরং ওয়াইফাই ডাইরেক্ট টেকনোলজি ব্যবহার করে রিমোট কন্ট্রোল এবং টিভি বক্স নিজেদের মধ্যের কানেকশন তৈরি করে।

মোবাইল ডিভাইজ গুলোর ক্ষেত্রে এটি কতোটা সুবিধাজনক হতে পারে সেটা তো উপরের প্যারাগ্রাফে আলোচনা করলামই। অফিসের ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে, যেমন আপনি ক্লায়েন্টের ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন থেকে কোন ডাটা ট্র্যান্সফার করতে চান, সেক্ষেত্রে টেম্পোরারি ইউজের জন্য আপনার অফিস ওয়াইফাই হটস্পটে কানেক্ট করার প্রয়োজন পড়বে না, আপনি ওয়াইফাই ডাইরেক্ট ব্যবহার করে সহজেই প্রয়োজনীয় ফাইল ট্র্যান্সফার করে নিতে পাড়বেন। আর যেহেতু এটি ক্রস প্ল্যাটফর্ম সমর্থন করে, তাই যে ডিভাইজ বা যে অপারেটিং সিস্টেমই হোক, আপনি সহজেই যেকোনো ডিভাইজ কানেক্ট এবং এর ফিচার গুলো উপভোগ করতে পাড়বেন।


ওয়াইফাই ডাইরেক্ট যে ফিচার গুলো কথা উল্লেখ্য করেছে, রিয়াল লাইফ ইউজে প্রত্যেকটি ফিচারই কিন্তু বিদ্যমান রয়েছে। সকল স্মার্টফোন বা যেকোনো ডিভাইজে এই স্ট্যান্ডার্ড কমন হতে হয়তো একটু দেরি লাগতে পারে, তবে ইতিমধ্যেই অনেক মডার্ন স্মার্টফোনে এই ফিচার বিদ্যমান রয়েছে। ব্লুটুথ লো পাওয়ার ব্যবহার করে, সেটা ভালো কথা, কিন্তু যখন স্পীডের কথা চিন্তা করবেন, ওয়াইফাই ডাইরেক্ট আপনাকে অনেকভাবে স্বাধীনতা প্রদান করতে পাড়বে

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories