আপনার হার্ড ড্রাইভ ফেল হওয়ার উপক্রম হলে কি করবেন?

দুনিয়ার প্রত্যেকটি জিনিসের একটি নির্দিষ্ট লাইফ টাইম রয়েছে, কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সম্পূর্ণই এক, প্রত্যেকটি হার্ডওয়্যারের একটি জীবনকাল রয়েছে। মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভের মধ্যে মুভিং পার্ট থাকে, মানে সেটা ফেল হওয়া অনেক স্বাভাবিক ব্যাপার, যেখানে এসএসডি বা র‍্যাম ফ্ল্যাশ নির্ভর মেমোরি, কিন্তু সেগুলোও ফেল হওয়া থেকে বিরত নয়। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার গুলোর মধ্যে হার্ড ড্রাইভ ফেল হলে, আপনাকে সবচাইতে বেশি ঝামেলা পোহাতে হতে পারে, কেনোনা সেখানেই আপনার সকল গুরুত্বপূর্ণ ডাটা গুলো স্টোরড থাকে। এজন্যই প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো নির্দিষ্ট শিডিউল অনুসারে ব্যাকআপ করে রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় — কেনোনা আপনি যতোদামী হার্ড ড্রাইভই ব্যবহার করুণ না কেন, সেটা একদিন না একদিন ফেল হবে এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু আপনার ড্রাইভ ফেল হওয়ার আগে কিছু লক্ষন অবশ্যই প্রকাশ করে, যেগুলো থেকে আপনি সতর্ক হয়ে যেতে পারেন, আপনার ড্রাইভ ফেল করবে। এই আর্টিকেলে, ড্রাইভ ফেল হওয়ার আগের সম্ভাব্য লক্ষন গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি এবং সাথে আলোচনা করেছি, আপনার হার্ড ড্রাইভ ফেল হওয়ার উপক্রম হলে সে অবস্থায় কি করবেন! তো চলুন, সবকিছু জেনে নেওয়া যাক…


কীভাবে বুঝবেন, হার্ড ড্রাইভ ফেল হওয়ার পথে?

হার্ড ড্রাইভ হঠাৎ করে ফেল হয়ে খুবই মর্মান্তিক ব্যাপারের সৃষ্টি করতে পারে, তবে সৌভাগ্যবশত, হার্ড ড্রাইভ ফেল হওয়ার আগে প্রায় সবসময়ই কিছু লক্ষন প্রকাশ করে থাকে, যেখান থেকে আপনাকে বুঝে নিতে হবে ড্রাইভটি ফেল হতে চেলেছে। কম্পিউটার একেবারেই বুট নিচ্ছে না, বা হার্ড ড্রাইভ নট ফাউন্ড ম্যাসেজ শো করছে, এর মানে আপনার ড্রাইভটি হয়তো অলরেডি ডেড হয়েই গেছে, আর তাতে খুববেশি কিছু করার থাকবে না হয়তো। তবে ফেল হওয়ার আরো অনেক লক্ষন প্রকাশ করতে পারে। যেমন ধরুন, আপনার কম্পিউটার আচানক স্লো হয়ে যাবে, মাঝেমাঝে কাজ করতে করতে প্রোগ্রাম ফ্রিজ হয়ে যেতে পারে, ধপ করে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা ব্লু স্ক্রীন অফ ডেথ প্রবলেম শুরু হয়ে যেতে পারে। এরকম আরো বহু টাইপের প্রবলেম শুরু হয়ে যেতে পারে। এখন অবশ্যই এই প্রবলেম গুলো হচ্ছে মানে, হার্ড ড্রাইভই নষ্ট হবে এমনটা নয়, আরো কারণ থাকতে পারে, তবে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে হার্ড ড্রাইভও যেতে পারে।

হার্ড ড্রাইভ ফেল হওয়ার আগে বিশেষ করে অনেক ব্যাড সেক্টর তৈরি হয়, সাথে ডাটা করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। বেশি ব্যাড সেক্টর তৈরি হওয়া বা ডাটা আচানক নষ্ট হয়ে যাওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হার্ড ড্রাইভ ডেড হয়ে যাওয়ার পূর্বের লক্ষন। তবে ফিজিক্যালভাবেও অনেক লক্ষন দেখা দিতে পারে, যেমন হার্ড ড্রাইভ থেকে আজব বা বিকট শব্দ আসতে পারে, বিশেষ করে ড্রাইভ হেডার থেকে এরকম শব্দ শোনা যায়, যা মোটেও ভালো লক্ষন নয়। আমি অবশ্যই সর্বদা রেকমেন্ড করি, আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোর একাধিক ব্যাকআপ তৈরি করে রাখতে, কেনোনা যেকোনো সময় আপনার ড্রাইভ ফেল করতে পারে। এতে অনেক সমস্যার তৈরি হতে পারে। যখনই ড্রাইভ থেকে বিশেষ করে আজব টাইপের আওয়াজ আসবে, আমি রেকমেন্ড করবো ড্রাইভটি আর ব্যবহার না করতে, কেননা যতোবেশি ব্যবহার করবেন, ড্রাইভটির আয়ুকাল ততোই কমে আসবে। তাই ড্রাইভটি খুলে ফেলা উচিৎ। তারপরে আপনি ড্রাইভটি আলাদা কম্পিউটারে লাগিয়ে বা ঐ কম্পিউটার থেকেই যতোদ্রুত সম্ভব সকল প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো ব্যাকআপ করে নিতে পারেন।

S.M.A.R.T. স্ট্যাটাস চেক করুণ

আপনি আপনার ড্রাইভের S.M.A.R.T. (Self-Monitoring, Analysis, and Reporting Technology) — স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন, যেটার মাধ্যমে আপনি জানতে পাড়বেন, ড্রাইভটির বর্তমান কি অবস্থা। এটি আপনার ড্রাইভকে অত্যন্ত গভীর থেকে অ্যানালাইজ করতে পারে এবং আপনাকে রিপোর্ট প্রদর্শিত করে। CrystalDiskInfo মানের একটি সফটওয়্যার দ্বারা আপনি ড্রাইভের S.M.A.R.T. স্ট্যাটাস চেক করতে পাড়বেন। তবে এখানেও কিছু বিষয় রয়েছে, যেমন- S.M.A.R.T. স্ট্যাটাস আপনার ড্রাইভ ব্যাস্তবিকভাবে খারাপ হয়ে যাওয়ার পরেও গুড S.M.A.R.T. স্ট্যাটাস প্রদান করতে পারে।

তবে যদি ব্যাড হেলথ রিপোর্ট প্রদান করে, এর মানে আপনার ড্রাইভটির পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ, আর আপনাকে যতোদ্রুত সম্ভব ডাটাব্যাক নিতে হবে এবং ড্রাইভটি কমপ্লিট ডেড হয়ে যাওয়া এড়াতে আপনাকে ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। তবে আপনার ড্রাইভটি যদি সম্পূর্ণ সাপোর্টই করা বন্ধ করে দেয়, এতে তো আর S.M.A.R.T. স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন না, তবে বায়োস মেন্যু থেকে যদি কোন বিপদজনক ম্যাসেজ শো করে, এতেও বুঝে নিতে হবে সমস্যা রয়েছে।

আপনার হার্ড ড্রাইভ সাপোর্ট করা বন্ধ করে দিয়েছে, এর মানে কিন্তু সবসময়ই এই নয়, আপনার ড্রাইভটি ডেড হয়েছে। আমার প্রথম কম্পিউটারের একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, আচানক একদিন কম্পিউটার অফ হয়ে যায় তারপরে বুট করার পরে দেখি হার্ড ড্রাইভ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এরকম এরর ম্যাসেজ শো করছিলো। আমি বুঝতে পেড়েছিলাম, হয়তো ড্রাইভটি ডেড হয়ে গেছে। কিন্তু সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরে দেখি, জাস্ট PATA কানেক্টর পরিবর্তন করার মাধ্যমেই ড্রাইভটি আবার কাজ করতে আরম্ভ করে দিয়েছিল। অনেক সময় কম্পিউটারের মধ্যের কানেকশন গুলোর সমস্যা হয়ে যেতে পারে। হয়তো বা কানেক্টর ইন্টারফেস বা পাওয়ারেরও প্রবলেম থাকতে পারে। যদি ড্রাইভটি সাপোর্ট করা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়, পূর্বে অবশ্যই কম্পিউটারটি খুলে ড্রাইভ থেকে কানেক্টর গুলো খুলে মুছে আবার লাগানো প্রয়োজনীয়। এতে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।

হ্যাঁ, অনেক সময় আপনার ড্রাইভ সত্যিই ফেল হয়ে যেতে পারে, এর মানে এটা নয় আপনি আর কোন ডাটাই উদ্ধার করতে পাড়বেন না। যদি ড্রাইভ পায়, কিন্তু কম্পিউটার বুট না হয়, হতে পারে আপনার অপারেটিং সিস্টেম করাপ্টেড হয়ে গেছে, নতুন উইন্ডোজ ইন্সটল করার চেষ্টা করুণ। অথবা যদি আপনার ড্রাইভটি অপারেটিং সিস্টেম বুট করতে পাড়ছে না, সাথে আওয়াজও করছে, এতে উইন্ডোজ ডিস্ক প্রবেশ করিয়ে রিকভারি মুড থেকে কাজের ডাটা গুলোকে ব্যাকআপ করে নিতে পারেন। অথবা লিনাক্স লাইভ ইউএসবি বা সিডি থেকে সহজেই আপনার কাজের ডাটা গুলো অ্যাক্সেস করে ব্যাকআপ করে নিতে পারেন।

ডাটা ব্যাকআপ

হার্ড ড্রাইভ ডেড হওয়ার আগে যেকোনো লক্ষন দেখা দেওয়া মাত্রই ড্রাইভটি ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ, আপনি যতো ব্যবহার করবেন ডেড হওয়ার সুযোগ ততোই বেড়ে যাবে। উপরে তো আলোচনা করলামই, আপনি উইন্ডোজ ডিস্ক বা লিনাক্স লাইভ সিডি ব্যবহার করে অপারেটিং সিস্টেম বুট না করেও আপনার কাজের ডাটা গুলো অ্যাক্সেস করতে পাড়বেন এবং ব্যাকআপ নিতে পাড়বেন। অথবা আপনি চাইলে ড্রাইভটি আপনার কম্পিউটার থেকে খুলে আরেকটি কম্পিউটারে লাগিয়ে ডাটা ব্যাকআপ করে নিতে পাড়বেন।

ড্রাইভটি যদি যথেষ্ট ড্যামেজ হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে recuva সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে ডাটা রিকভার করার চেষ্টা করতে পারেন। এরা ড্যামেজ ড্রাইভ থেকেও ডাটা রিকভার করতে পারে বলে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করে থাকে। যদি রিকভারি সফটওয়্যার ব্যবহার করেও কোন কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে আপনার ড্রাইভটি অনেকবেশি ড্যামেজ হয়ে গেছে আর আপনার বিশেষ কিছু করারই থাকবে না। যদি ড্রাইভে তখনো কোন প্রয়োজনীয় ডাটা থাকে আর ডাটা যদি অনেক মূল্যবান হয়, সেক্ষেত্রে প্রফেশনাল ডাটা রিকভারি করার সার্ভিস নিতে পারেন, তবে আগেই বলে রাখছি, এরা অনেকবেশি ব্যয়বহুল। আপনার ড্রাইভকে ফিজিক্যালভাবে পরিষ্কার করা হবে, হেড পরিবর্তন করে এবং আরো অনেক কিছু পরিবর্তন করে ড্রাইভটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়, বুঝতেই পাড়ছেন এতে সার্ভিস চার্জ কিরকম লেগে যেতে পারে। কিন্তু যদি সত্যিই অনেক মূল্যবান ডাটা থাকে, সেক্ষেত্রে চার্জ কোন ব্যাপার না। তবে এরাও কোন গ্যারেন্টি দিতে পাড়বে না যে ১০০% আপনাকে রিকভার করেই দেবে।


হার্ড ড্রাইভকে কমপ্লিট ফেল হওয়া থেকে আটকানোর কোনই ম্যাথড নেই, আজ নতুবা কাল তো ফেল হবেই। কিন্তু কাজের ডাটা গুলোকে ব্যাকআপ করে নেওয়া অলওয়েজ বুদ্ধিমানের কাজ। যদি আগে থেকে ব্যাকআপ নাও থাকে, ফেল হওয়ার সাইন প্রদর্শনের সাথে সাথে ব্যাকআপ করে নেওয়া উচিৎ। হার্ড ড্রাইভ ফেল হওয়া সত্যিই দুঃস্বপ্নের মতো! — আপনার সাথে কি একরম ঘটনা কখনো ঘটেছে? আমাদের কমেন্ট করে নিচে জানাতে পারেন!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories