অ্যাবানডানওয়্যার কি? এটি ব্যবহার করা কি বৈধ? আপনার যা জানা প্রয়োজনীয়!

এই দুনিয়াতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়, কোন জিনিষ হয়তো ১ মাস টিকে আবার কোন কিছু ১ যুগ! কম্পিউটিং ওয়ার্ল্ডেও এই একই সূত্র কাজে লাগানো যায়, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার গুলোর যেমন একটি নির্দিষ্ট লাইফ টাইম থাকে, ঠিক তেমনি সফটওয়্যার গুলোর ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়। সফটওয়্যার যেহেতু ভার্চুয়াল জিনিষ, তাই তাত্ত্বিকভাবে এর কোন লাইফ টাইম নেই, কিন্তু অনেক সময় সফটওয়্যার ডেভেলপার’রা নানান কারণে তাদের সফটওয়্যারের সকল প্রকারের সাপোর্ট বন্ধ করে দেন, এতে সফটওয়্যারটি ডেড না হয়ে গেলেও সময়ের সাথে সাথে ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠে। যে সফটওয়্যার গুলোর তার নির্মাতা কোম্পানি দ্বারা সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় তাদের অ্যাবানডানওয়্যার সফটওয়্যার (Abandonware) বলা হয়।

এই আর্টিকেলে, অ্যাবানডানওয়্যার কি, কীভাবে কোন সফটওয়্যার অ্যাবানডানওয়্যারে পরিনত হয়ে যায়, এটি ব্যবহার করা বৈধ কিনা, এটি কি ফ্রী, এই টাইপের সফটওয়্যার ব্যাবহারে ইউজারদের উপর কিরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারে — ইত্যাদি সকল বিষয় গুলো নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা করা হয়েছে।


অ্যাবানডানওয়্যার কি?

সাধারণভাবে বলতে, অ্যাবানডানওয়্যার হলো সেই সফটওয়্যার গুলো, যেগুলো থেকে তাদের নির্মাতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। হতে পারে সেটা কোন ফ্রী সফটওয়্যার, শেয়ারওয়্যার, ফ্রীওয়্যার, ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, বা পেইড সফটওয়্যার — যেকোনো টাইপের সফটওয়্যারের যদি সাপোর্ট, আপডেট, প্যাচ ফিক্সিং বন্ধ করে দেওয়া হয় সেটা অ্যাবানডানওয়্যারে পরিনত হয়ে যায়। এখানে “অ্যাবানডান” শব্দের অর্থই হচ্ছে, বর্জিত করা বা পরিত্যাগ করা

অনেক সময় সফটওয়্যার কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় বা অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অনেক সফটওয়্যারের সাপোর্ট বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া অনেক সময় সফটওয়্যার কোম্পানি তাদের নতুন প্রোডাক্ট প্রমোশন এবং সকলকে ফোর্স ইউজ করানোর লক্ষে সেইম ক্যাটাগরির পুরাতন সফটওয়্যারের সাপোর্ট বন্ধ করে দেয়। উদাহরণ সরূপ, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এক্সপি বর্তমানে অ্যাবানডানওয়্যারে পরিনত হয়ে গেছে। আপনি উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করলে সেটা নিজের দায়িত্বে করতে হবে, মাইক্রোসফট এই অপারেটিং সিস্টেম থেকে আর কোন টাকা ইনকাম করছে না, সাথে কোন সাপোর্টও প্রদান করছে না। এভাবে অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে যেকোনো টাইপের সফটওয়্যার অ্যাবানডানওয়্যারে পরিনত হয়ে যেতে পারে।

আবার অনেক প্রোগ্রাম রয়েছে, যেগুলোকে ডেভেলপার বহুদিন ধরে আপডেট করেনি, আর আপডেট করার প্রয়োজনও বোধ করছে না। অনেক সফটওয়্যার রয়েছে সেগুলো অনেক পুরাতন হার্ডওয়্যারের উপর কাজ করতো, বর্তমানে ঐ হার্ডওয়্যার গুলো আর পাওয়া যাচ্ছে না। অথবা হতে পারে ডেভেলপার সম্পূর্ণ নতুন ভার্সনের একটি সফটওয়্যার তৈরি করলো, ইত্যাদি বিভিন্নভাবে যেকোনো সফটওয়্যার অ্যাবানডানওয়্যারে পরিনত হয়ে যেতে পারে। কোন সফটওয়্যার অ্যাবানডানওয়্যার হয়ে যাওয়ার কিন্তু এটা অর্থ নয় যে আপনি সেটা ইউজ করতে পাড়বেন না, ডাউনলোড করতে পাড়বেন না, বা পারচেজ করতে পাড়বেন না। বরং সেখানে এটাই বুঝানো হবে, সফটওয়্যারটি আর ডেভেলপার দ্বারা সমর্থিত নয়, আপনি কোনই টেকনিক্যাল বা যেকোনো টাইপের সাপোর্ট পাবেন না। তবে আপনি নিজের রিস্কে অবশ্যই ব্যবহার করতে পাড়বেন।

অ্যাবানডানওয়্যার কি বৈধ?

এক কথায় বলতে আপনি যদি কোন পেইড অ্যাবানডানওয়্যার ফ্রী’তে ডাউনলোড করেন বা ক্র্যাক করে ব্যবহার করেন, অবশ্যই সেটা অবৈধ। কপিরাইট রুল অনুসারে কোন সফটওয়্যার ডেভেলপার দ্বারা সাপোর্ট বন্ধ করে দিলেই সেটা পাবলিক প্রোপার্টি হয়ে যায় না। যেকোনো কপিরাইট প্রোডাক্ট ডাউনলোড করা সম্পূর্ণ অবৈধ। তাহলে কি অ্যাবানডানওয়্যার ফ্রীতে ব্যবহার করা যাবে না? আসলে বেশিরভাবে অ্যাবানডানওয়্যারের কোম্পানি আর অবস্থান করে না, তাই আপনি সেটাকে অবৈধভাবে ব্যবহার করলেও কেউ নেই যে আপনাকে কোটে হাজির করাবে।

এক্ষেত্রে ডাউনলোড করা হয়তো অবৈধই হবে, কিন্তু এতে কোন সমস্যা হবে না। এখন যদি কথা বলি ফ্রী সফটওয়্যার, ফ্রীওয়্যার বা ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের কথা — তো এগুলো শুরু থেকেই ফ্রী, যদি ডেভেলপার তাদের সফটওয়্যার ক্রিয়েটিভ কমন লাইসেন্সে পাবলিশ করে অবশ্যই সেটার সাপোর্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও আপনি তেমন করেই ব্যবহার করতে পাড়বেন যেমনটা পূর্বে ব্যবহার করতেন। তবে অ্যাবানডানওয়্যার মানেই কিন্তু ফ্রী সফটওয়্যার নয়, হ্যাঁ আপনি ক্র্যাক প্যাচ করে হয়তো ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু সেটা এক আলাদা কাহিনী। তবে যদি সফটওয়্যারটির কোম্পানি অবস্থান করে তার ঐ সফটওয়্যারটি অবৈধভাবে ব্যবহার করার জন্য আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, অবশ্যই আপনার সাজা হতে পারে।

ইউজারের উপর প্রভাব

অ্যাবানডানওয়্যার ব্যবহারে আরো অনেক সমস্যা থাকলেও সবচাইতে বড় সমস্যাটি হচ্ছে, সিকিউরিটি রিস্ক। মানে সফটওয়্যারটির বিপক্ষে যদি কোন ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায়, সেটা আর ফিক্স হবে না, কেনোনা ডেভেলপার আর কোনই আপডেট রিলিজ করবে না, এতে যেকোনো ইউজার সহজেই সিকিউরিটি রিস্কের কবলে পরে যেতে পারে। দিন যাবে সফটওয়্যারটির আরো অনেক ত্রুটি হয়তো ধরা পড়বে আর অ্যাটাকের জন্য ততোই অনুকূল হয় উঠতে পারে সফটওয়্যারটি।

যেহেতু আপনি কোন প্রকারের আপডেটই পাবেন না, এর মানে বছরের পর বছর ধরে একই ফিচার একই ইন্টারফেস থেকে যাবে। ধীরেধীরে এটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে উঠবে, কেনোনা নতুন অপারেটিং সিস্টেম আপডেট আসবে বা আলাদা নতুন হার্ডওয়্যার যুক্ত হবে, এতে আগের পুরাতন সফটওয়্যারটি আর কাজ করতে পাড়বে না, এভাবে ধীরেধীরে সফটওয়্যারটি ডেড হয়ে যাবে। আপনি পূর্বের ইউজার হলে আর সফটওয়্যার কোম্পানিটি এখনো অবস্থান করলে হয়তো সফটওয়্যারটি রি-ডাউনলোড করতে পাড়বেন। কিন্তু নতুন ইউজার’রা অ্যাবানডানওয়্যার পারজেচ বা ডাউনলোড করতে পারে না, অন্তত অফিশিয়াল সোর্স থেকে ডাউনলোড বা পারচেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাথে আপনি সাপোর্ট, আপডেট, রিফান্ড ইত্যাদি কিছুই পাবেন না।


অ্যাবানডানওয়্যার বা আলাদা মোবাইল পিসি সফটওয়্যার বা গেমের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই, জাস্ট এগুলোর সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই আপনি এখনো ইউজ করতে পাড়বেন, আর কথায় ইউজ করতে পাড়বেন সেগুলো সম্পর্কে তো উপরের প্যারাগ্রাফে বিস্তারিত আলোচনা করলাম ই। তবে কোন কমার্শিয়াল সফটওয়্যার যদি কোম্পানি সাপোর্ট বন্ধ করে দেয়, সেটাকে সরাসরি অ্যাবানডানওয়্যার বলা যায় না, এখনো ঐ সফটওয়্যারের কপিরাইট আইন ঠিক থাকে। যদি কোম্পানি অফিশিয়াল ভাবে বলে দেয় তারা সফটওয়্যারটি একেবারেই বন্ধ করে দিতে যাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে সেটা অ্যাবানডানওয়্যারে পরিনত হয়ে যায়, যেমন- উইন্ডোজ এক্সপি।

আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক সাহায্যপূর্ণ ছিল এবং আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো সম্পর্কে অবগত হলেন। অ্যাবানডানওয়্যার নিয়ে আপনার যেকোনো প্রশ্ন থাকলে, আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

stuff04@wirebd

Add comment

Categories