সেলফোন থেকে ক্যান্সার: ওয়াইফাই বা সেলফোন থেকে ক্যান্সারের ঝুঁকি কতোটুকু?

বন্ধুরা আপনাদের সকলের মনে কখনো না কখনো অবশ্যই এই প্রশ্নটি এসেছে, যে স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলে কি ক্যান্সার হতে পারে? প্রশ্নটি মনে আসা অনেকটাই স্বাভাবিক। কেনোনা স্মার্টফোন একটি ওয়ারলেস টেকনোলজি এবং স্মার্টফোন ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিভ ওয়েভস এর ভিত্তিতে কাজ করে। তাই এই অবস্থায় আপনার অবশ্যই জানা প্রয়োজন যে সত্যিই স্মার্টফোন ক্যান্সার ঘটাতে পারে কি না। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন, এবং আমি আজ আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তরটি দিতে চলেছি।


স্মার্টফোন রেডিয়েশন কি ক্যান্সার ঘটায়?

স্মার্টফোন থেকে ক্যান্সার হয় কি না এই বিষয়ের উপর আমরা অনেক দিন যাবত বিভিন্ন গবেষণা করে আসছি। এই অবস্থায় একজন সাধারন ব্যবহারকারীর মনে একটি টার্ম বের হয়ে আসে, আর তা হলো রেডিয়েশন। আর রেডিয়েশনের নাম শুনতেই একজন সাধারন ব্যবহারকারী প্রায়ই ঘাবরিয়ে যায়, কে জানে কি ধরনের রেডিয়েশন, কি ধরনের তরঙ্গ, কে জানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে করতে ক্যান্সার হয়ে যায় কি না। এই অবস্থায় একটি কথা মাথায় রাখুন।

দেখুন হাঁ, এটি সম্ভব যে রেডিয়েশনের ফলে ক্যান্সার হতে পারে কিন্তু সকল ধরনের রেডিয়েশনের ফলে ক্যান্সার হয় না। এবং স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের ফলে কখনোয় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা নেই।

মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয় রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভস। এবং রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভসে অনেক লো এনার্জি থাকে। আপনার মোবাইল অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্কের এর জন্য যে ৭০০ মেগাহার্জ বা ৮০০ মেগাহার্জ বা ২০০০ মেগাহার্জ বা অন্যান্য আলাদা আলদা ব্যান্ডস ব্যবহার করে থাকে তা সবই  রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভস এর উপর হয়ে থাকে। আর এই রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভসে এমন ক্ষমতা থাকে না যা আপনার শরীরের কোন অংশের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

ছবিঃ Mirion.com

রেডিয়েশন প্রধানত ২ ধরনের হয়ে থাকে। নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন এবং আয়োনাইজিং রেডিয়েশন। নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন কম ফ্রিকুএন্সির হয়ে থাকে এবং কম ফ্রিকুএন্সি মানে কম এনার্জি। কিন্তু রেডিয়েশনের ফ্রিকুএন্সি যতো বাড়ে এটি ততো বেশি এনার্জি সম্পূর্ণ হয়ে উঠে এবং হাই ফ্রিকুএন্সি রেডিয়েশনকে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন বলা হয়।

উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন যে, পাওয়ার লাইনস, রেডিও এবং সেলফোন, মাইক্রোওয়েভস ইত্যাদি নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ এগুলো কম ক্ষমতা সম্পূর্ণ এবং আপনার জন্য একদম ক্ষতিকর নয়। ক্ষতিকর রেডিয়েশন শুরু হয়ে থাকে আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি থেকে। এবং এর উপর যে এক্সরে বা গামা রে আছে তা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু এগুলো এতো ক্ষতিকর কেন? চলুন এ বিষয়ে কিছু জ্ঞান নিয়ে নেওয়া যাক।

দেখুন, যেকোনো অ্যাটমের উপর কোন উৎস থেকে যদি অনেক উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ কোন ওয়েভস নিক্ষেপ করা হয় তবে উচ্চ ক্ষমতার কারণে ঐ অ্যাটম থেকে কিছু ইলেকট্রন বেড় হয়ে যেতে পারে। ইলেকট্রন বেড় হয়ে যাওয়ার কারণে ঐ অ্যাটমটি আয়োনাইজ হয়ে যায় এবং ঐ তরঙ্গের ভেতর আয়োনাইজিং সক্ষমতা প্রমান পাওয়া যায় এবং এই আয়োনাইজিং সক্ষমতা শুরু হয়ে থাকে আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি থেকে এবং এর আরো উপরের উচ্চ ফ্রিকুএন্সির রেডিয়েশনে।

আর এজন্য আমরা বলে থাকি যে বাহিরে সূর্যের আলো থেকে আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি এসে আমাদের স্কিন ক্যান্সার ঘটাতে পারে, আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি থেকে চোখের সমস্যা হতে পারে।

কিন্তু এর নিচের যেসব রেডিয়েশন আছে যেমন রেডিও এবং সেলফোন, মাইক্রোওয়েভস ইত্যাদি থেকে অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন ক্ষতির সম্ভবনা নাই। তো এখানে একটি কথা পরিষ্কার যে আপনার মোবাইল ফোন থেকে আপনার কোন প্রকারের ক্ষতি একদমই হবে না।

আপনার ফোন ব্যবহার করতে করতে যদি আপনার মাথা ব্যাথা করে তবে অবশ্যই তা আপনার ফোনের জন্য নয় বরং হয়তো অন্য কোন কারণে তা হচ্ছে। অথবা আপনার যদি কোন প্রকারের অসুখও হয়ে থাকে, (আল্লাহ্‌ আপনাকে সুস্থ রাখুন 🙂 ) তো সেটার জন্য আপনার ফোন কোন ভাবেই দায়ী নয়।

আরেকটি কথা বন্ধুরা, বাজারে অনেক অ্যান্টি রেডিয়েশন চিপ কিনতে পাওয়া যায়। যারা বলে থাকে যে এটি আপনার ফোনের পেছনে লাগানোর ফলে আপনার ফোনের রেডিয়েশন কমে যাবে। আসলে এই সকল চিপ একদম অঝথা। এটি একদমই আপনার কেনার প্রয়োজন নেই। কেনোনা প্রথম কথা হলো ফোনের রেডিয়েশন থেকে আপনার একদমই সমস্যা নেই।

দ্বিতীয়ত যদি মনেও করি যে ফোন রেডিয়েশন থেকে সমস্যা হতে পারে তারপরেও শুধু কোন চিপ লাগানোর জন্য তা বাধা পেয়ে যাবে না। বরং চিপ লাগানোর ফলে রেডিয়েশনের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে। তো এই সকল অঝথা চিপ কখনো কিনবেন না। আপনি যেমন ভাবে আপনার ফোন ব্যবহার করছিলেন ঠিক তেমন ভাবেই করতে থাকুন, এতে কোন প্রকারের রোগ ব্যাধি আপনার সামনে আসবে না।

আজ পর্যন্ত যতো গুলো গবেষণা হয়েছে এই বিষয় নিয়ে তাদের প্রত্যেকটি গবেষণা সর্বশেষে এটিই বলেছে যে, মোবাইল ফোন থেকে কোন প্রকারের কোন ঝুঁকি একদমই নেই। মোবাইল ফোন ছাড়াও আমরা যদি কথা বলে থাকি ওয়াইফাই নিয়ে ব্লুটুথ নিয়ে বা মাইক্রোওয়েভ নিয়ে তবে এইসকল প্রযুক্তিও আপনার কোন প্রকারের ক্ষতি করে থাকে না। অনেকে আবার ওয়াইফাই নিয়ে অনেক প্রকারের ভয় মনে পুষে রেখেছেন। অনেকে বলে থাকেন যে ওয়াইফাই ক্ষতিকর কেনোনা এটি অনেক হাই এনার্জি ব্যবহার করে। গিগাহার্জ! ওয়াইফাই গিগাহার্জ ফ্রিকুএন্সি ব্যবহার করে।

গিগাহার্জ মানে ১ সেকেন্ডে বিলিয়ন বার। তো এটি নিয়ে অনেকে ভাবে যে ওয়াইফাই সিগন্যালের কাছে থাকলে এটি আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এরকম র‍্যায় আপনি নিজেও বানানোর আগে জেনে নিন যে ওয়াইফাই একটি নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন। আপনার ওয়াইফাই থেকে অনেক বেশি, প্রায় হাজার গুন বেশি রেডিয়েশন থাকে আপনার ঘরে জ্বলে থাকা বাল্বটিতে। তো আপনি যদি বাল্বের রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তত না হয়ে থাকেন তবে কেন ওয়াইফাই রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তা করছেন। আপনি জানেন কি সাধারন আলোতে টেরাহার্জ ফ্রিকুএন্সি থাকে। যেটি ওয়াইফাই ফ্রিকুএন্সি থেকে হাজার গুন বেশি।

শেষ কথা

শেষ কথা হলো এটাই যে, আপনি আপনার ফোন দিনে ১ ঘণ্টা ব্যবহার করুন আর ১০ ঘণ্টা, এতে আপনার কখনই কোন সমস্যা হবে না। ক্যান্সার হওয়া তো অনেক দুরের কথা। সারাদিন ওয়াইফাই ব্যবহার করুন আর যতো খুশি ইন্টারনেট আর ডাটা আদান প্রদান করুন, কখনই কোন সমস্যা হবে না।

এই বিষয়টি তো আমি সুত্র অনুসারে বুঝিয়েই দিলামই এবং এটি বিজ্ঞানিক ভাবেও প্রমানিত হয়েছে যে, নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন থেকে আপনার শরীরের কোন প্রকারের ক্ষতি হওয়া সম্ভব নয়। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে, এবং সম্ভবত আপনার মনের কোনে বসে থাকা আসঙ্খাকেও দূর করতে সক্ষম হয়েছে।

আমার মতে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আলোচনা ছিল তাই দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করে সকলকে জানিয়ে দিন। এবং যেকোনো প্রশ্নে বা মতামত জানাতে অবশ্যই কমেন্ট করুন।

Feature Image: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories