এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ বা পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ | কেনার আগে আপনার যেগুলো জানতে হবে!

আপনি যদি হার্ডকোর কম্পিউটিং ম্যান হয়ে থাকেন—কিংবা আপনার কাছে যদি এমন গুরুত্বপূর্ণ ডাটা থাকে যেগুলোকে সত্যিই নিরাপদে স্টোর করা চান, হতে পারে ১০,০০০ ফটো বা ২০০ কাজের ফাইল, বা হতে পারে আপনার কাছে বিশাল মুভি আর মিউজিকের কালেকশন রয়েছে আর কিছু কালেকশনের আলাদা ব্যাকআপ নিতে চান—তাহলে এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ অবশ্যই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইন্টারনাল হার্ড ড্রাইভের মতোই এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনেক টার্ম, যেগুলো এটি কেনার আগে আপনার বিস্তারিত জানা প্রয়োজনীয়। এই আর্টিকেল থেকে জানতে পাড়বেন, এক্সটার্নাল হার্ড কি, কেন এটি ব্যবহার করা প্রয়োজনীয়, এবং এটি কেনার আগে কোন কোন বিষয় ভালোভাবে জেনে নেওয়া প্রয়োজনীয়।


এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ

যদি কথা বলি, এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কি—এই প্রসঙ্গে; নিশ্চয় এটি সাধারণ হার্ড ড্রাইভের মতোই একটি হার্ড ড্রাইভ। যেহেতু এটি পোর্টেবল এবং সাধারণত কম্পিউটারের বাইরে অবস্থিত হয়ে থাকে, তাই একে এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ বলা হয়ে থাকে। সাধারণ হার্ড ড্রাইভের মতো এরও দুই টাইপ রয়েছে, এইচডিডি এবং এসএসডি (সলিড স্টেট ড্রাইভ)। এখনকার মডার্ন পোর্টেবল ড্রাইভ গুলোতে আলাদা পাওয়ার সাপ্লাই করার প্রয়োজন নেই, ডাটা কেবল থেকেই পাওয়ার নিয়ে কাজ করতে পারে। কিন্তু কিছু ড্রাইভ রয়েছে যেগুলোতে আলাদা পাওয়ার ইনপুট করতে হয়, সাধারণত এদের ল্যাপটপের মতো এসি ওয়াল কানেকশন থাকে।

 

যদি আরেকভাবে ভাবা হয়, তাহলে পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ গুলো একেবারেই ফিক্সড হার্ড ড্রাইভের মতোই, জাস্ট এটিকে বাহিরে লাগিয়ে কাজ করা যায়, কাজ শেষে খুলে নেওয়া যায়, এর নিজের প্রোটেকশন কেসিং থাকে, এবং আপনি চাইলে হার্ড ড্রাইভ এনক্লোসার ব্যবহার করে, পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভকে ইন্টারনাল হার্ড ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। যদি কথা বলি এক্সটারনাল ড্রাইভের কানেকশন টাইপ নিয়ে, সেক্ষেত্রে অনেক টাইপের ড্রাইভ রয়েছে। বেশিরভাগ ড্রাইভ ইউএসবি এর উপর কাজ করে, হতে পারে ইউএসবি ২.০ বা ৩.০। আজকের অনেক মডার্ন ড্রাইভে ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, সাথে ফায়ারঅয়্যার, eSATA, অথবা ওয়্যারলেস কানেক্টরও দেখতে পাওয়া যায়।

এক্সটার্নাল ড্রাইভকে পোর্টেবল ড্রাইভও বলা হয়ে থাকে। আপনি নিশ্চয় ফ্ল্যাশ ড্রাইভ (পেন ড্রাইভ) ব্যবহার করেন—এটি সবচাইতে ছোট সাইজের পোর্টেবল ড্রাইভ।

কেন এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ?

কারণ তো বহু রয়েছে, কিন্তু আসল উদ্দেশ্য যদি খোলাসা করতে চাই—দেখুন, ডাটা অনেক মুল্যবান জিনিষ। আর মূল্যবান ডাটাগুলোর কেবল মাত্র এক কপি সম্পূর্ণ বোকামু ছাড়া আর কিছুই নয়। হার্ড ড্রাইভ যেকোনো সময় ক্র্যাশ করতে পারে, ডাটা করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে, তাছাড়া আপনার ডাটা সহ হার্ড ড্রাইভ চুরিও হয়ে যেতে পারে। যদি অনলাইন ডাটা ব্যাকআপ রাখেন সেটা আলাদা কথা, কিন্তু আমি সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ডাটা গুলোকে অফলাইন ব্যাকআপ করতে বলি, কেনোনা ক্লাউডে থাকা আপনার পার্সোনাল ডাটা গুলো কতোটা নিরাপদ সেক্ষেত্রে বিশেষ প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়েছে।

এখন যদি কথা বলি অফলাইন ব্যাকআপ নিয়ে, তো এখানেও অনেক অপশন রয়েছে, যেমন সিডি, ডিভিডি, পেন ড্রাইভ—কিন্তু আপনার ডাটার পরিমান যদি বড় হয়ে থাকে এবং আপনি সেই ডাটা গুলোকে যদি অত্যন্ত দ্রুত অ্যাক্সেস করতে চান সেক্ষেত্রে সবচাইতে ঝামেলা বিহীন পদ্ধতি হচ্ছে এই এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ। শুধু ব্যাকআপ নয়, পাশাপাশি এর বহু টাইপের ব্যবহার থাকতে পারে। বড় পরিমানে ডাটা কোথাও বহন করে নিয়ে যাওয়া বা আপনার বন্ধুর পিসি থেকে মিউজিক, মুভি আর সফটওয়্যার কালেকশন আপনার পিসিতে লোড করা, প্রয়োজনীয় এবং গোপন ফটো আর ভিডিও ফুটেজ গুলোকে কমপ্রেস করে নিরাপদে স্টোর করা এবং এরকম আরো হাজারো কাজের জন্য এক্সটারনাল ড্রাইভ আপনার জন্য আদর্শ হিসেবে প্রমানিত হতে পারে।

যদি কথা বলি ল্যাপটপ নিয়ে, যেখানে হার্ড ড্রাইভ পরিবর্তন করা অনেক ঝামেলার ব্যাপার হতে পারে, বা আপনি ল্যাপটপ খুলতে চান না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই পোর্টেবল ড্রাইভই বেস্ট পন্থা। এক্সটারনাল ড্রাইভ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক স্টোরেজ ডিভাইজ তৈরি করা সম্ভব, যেখানে এক লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড থেকে সকল প্রকারের ডিভাইজ থেকে এই ড্রাইভ অ্যাক্সেস করা সম্ভব হতে পারে।

এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কেনার আগে

তো এতক্ষণে নিশ্চয় পোর্টেবল ড্রাইভ কেনার জন্য উপযুক্ত কারণ সমুহ জেনে গেছেন, হতে পারে এবার মনঃস্থির করেই ফেলেছেন পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ কিনবেন! কিন্তু কেনার ব্যাপারটির সাথে অনেক গুলো টার্ম জরিয়ে রয়েছে, যেগুলো আপনাকে সহজেই বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে। আপনার কোন টাইপের কানেক্টর প্রয়োজনীয়, কতো ক্যাপাসিটি প্রয়োজনীয়, কতোটা পোর্টাবিলিটি প্রয়োজনীয়, কোন ড্রাইভের স্পীড কেমন হবে—ইত্যাদি অনেক টার্ম সম্পর্কে আপনার বিস্তারিত জেনে রাখা প্রয়োজনীয়, তো চলুন, এ সমস্ত বিষয় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া যাক।

 

টাইপ

উপরেই বলেছি, সাধারণ ইন্টারনাল ড্রাইভের মতোই পোর্টেবল ড্রাইভ প্রধানত দুই টাইপের হয়ে থাকে, এইচডিডি (হার্ড ড্রাইভ) এবং এসএসডি (সলিড স্টেস্ট ড্রাইভ)। তো আপনি কোন টাইপের সাথে ডিল করবেন। দেখুন আপনি অবশ্যই জেনে থাকবেন, সলিড স্টেস্ট ড্রাইভ সাধারণ মাকানিক্যাল ড্রাইভ থেকে অনেক বেশি ফাস্ট এবং দক্ষ হয়ে থাকে। এখানে কোন মুভিং পার্টস থাকে না বলে অলমোস্ট যেকোনো ডাটা ইনস্ট্যান্ট অ্যাক্সেস করা সম্ভব। কিন্তু দামের দিকে এবং ক্যাপাসিটির দিকে নজর রাখতে গেলে হার্ড ড্রাইভ অনেক সস্তা হবে। মাকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ একটি সিঙ্গেল ড্রাইভে সহজেই কতিপয় টেরাবাইট পর্যন্ত পেয়ে যাবেন, যেখানে ১টেরাবাইট সলিড স্টেট কিনতে গেলে প্রায় ৩গুন বেশি দাম লেগে যেতে পারে। যদি আপনার আলট্রা ফাস্ট স্পীড প্রয়োজনীয় হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই এসএসডিতে টাকা ইনভেস্ট করা বেস্ট হবে, যদি প্রচুর ক্যাপাসিটি এবং কম দামে সেটা পেতে চান, সেক্ষেত্রে এইচডিডি বেস্ট হবে। যদি আপনি অনেক ট্রাভেল করেন, সেক্ষেত্রে আমি বলবো অবশ্যই দেখে নিন, আপনার ড্রাইভটিতে এক্সট্রা শক প্রোটেকশন রয়েছে কিনা।

সাইজ

যেকোনো স্টোরেজ মিডিয়া ডিভাইজ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাইজ একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্ম। তবে আপনি কতো বড় বা ছোট ক্যাপাসিটি নির্বাচন করবেন, সেটা নির্ভর করে আপনার ডাটা স্টোর করার চাহিদার উপরে। যদি শুধু গুরুত্বপূর্ণ ডাটা গুলকে ব্যাকআপ নিতে চান আর সেগুলো যদি খুব বেশি বড় সাইজের না হয়ে থাকে, অবশ্যই ২৫০-৩৫০ জিবি স্পেস আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। যদি আপনি মুভিজ আর মিউজিক বা বড় বড় ফাইল স্টোর করতে চান, সেক্ষেত্রে ১ টেরাবাইট থেকে শুরু করে কতিপয় টেরাবাইটের ড্রাইভ কিনে ফেলতে পারেন। ডাউনলোডিং করা অনেকের বিশেষ অভ্যাস রয়েছে, আর তাদের জন্য তো যতোবড় ড্রাইভই কেনা হোক, ততোই কম।

স্পীড

ড্রাইভের ক্ষেত্রে স্পীড বলতে বোঝানো হয়, ড্রাইভটিতে সেকেন্ডে কতোটুকু ডাটা রীড বা রাইট করানো সম্ভব। যদি আপনি উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, অবশ্যই আপনার জন্য ইউএসবি বা ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টর বেস্ট হবে। সাধারণ ড্রাইভ গুলো ইউএসবি ২.০ হয়ে থাকে, তবে বর্তমান ড্রাইভ গুলোতে ইউএসবি ৩.০ স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করা হয়, এতে অনেক ফাস্ট কানেকশন স্পীড পাওয়া সম্ভব। যদি আপনি ম্যাক ইউজার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ফায়ারঅয়্যার (FireWire) বা থান্ডারবোল্ড কানেক্টরের দিকে নজর দিতে পারেন। কিন্তু আমি বলবো সকল ক্ষেত্রে ইউএসবি বেশি ইউনিভার্সাল হবে। যদি অনেক বড় সাইজের ফাইল পোর্টেবল ড্রাইভের ট্র্যান্সফার করতে চান, সেক্ষেত্রে eSATA কানেক্টর বেস্ট হবে, এতে অনেক ফাস্ট স্পীড পেতে পাড়বেন।

নেটওয়ার্ক ড্রাইভ

যদি আপনি সে টাইপের ব্যাক্তি হয়ে থাকেন, সবকিছু ওয়্যারলেস পছন্দ করেন,সেক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক অ্যাটাচ স্টোরেজ (NAS) বা রেইড (RAID) সলিউশন আপনার জন্য বেস্ট হবে। NAS এবং RAID বিশেষ করে বড় পরিমানে ডাটা হ্যান্ডেল করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে আপনি একসাথে অনেক কম্পিউটারের ডাটা ব্যাকআপ নিতে পাড়বেন। হতে পারে একা ব্যাক্তির জন্য এই সেটআপ প্রয়োজনীয় না, কিন্তু অফিসের জন্য কিংবা বড় ডাটা ব্যাকআপ প্লানের জন্য এটি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। RAID সিস্টেমে আপনি একসাথে অনেক গুলো এক্সটারনাল ডারিভ লাগিয়ে বিশাল ডাটা ব্যাকআপ সেন্টার তৈরি করতে পাড়বেন, বিশেষ করে ১৫-২০ টেরাবাইট বা আরো যতোবেশি প্রয়োজন। তাছাড়া NAS এর সাথে ড্রাইভ কানেক্ট করে সহজেই ওয়াইফাই বা লোকাল নেটওয়ার্ক থেকে যেকোনো ডিভাইজ ব্যবহার করে আপনার এক্সটারনাল ড্রাইভ অ্যাক্সেস করতে পাড়বেন।

মনে রাখবেন, ডাটা ব্যাকআপ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি টাস্ক। প্রয়োজনীয় ডাটা লস হয়ে যাওয়ার পরে ডাটা রিকভারি কোম্পানিকে হাজার হাজার টাকা না খাওয়ায়ে, কতিপয় হাজার খরচ করে এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কেনা বেটার সলিউসন!

আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। তো, আপনি কি এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করে ডাটা ব্যাকআপ রাখেন, নাকি অনলাইন নির্ভর ব্যাকআপ সার্ভিস ব্যবহার করেন? নিচে কমেন্ট করে আমাদের বিস্তারিত সবকিছু জানিয়ে দিন!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories