আপনার অজ্ঞাতে কেউ আপনার পিসি ব্যবহার করছে? ধরে ফেলুন! [কমপ্লিট গাইড!]

আপনি কি কম্পিউটার সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি নিয়ে চিন্তিত? যদি না হয়ে থাকেন, তো এক্ষুনি চিন্তা শুরু করে দিন! বর্তমানে কম্পিউটার আমাদের ম্যানিবাগের চাইতেও পার্সোনাল জিনিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে আমরা সকল প্রাইভেট আর কাজের ডাটা গুলো স্টোর করে রাখি, ব্যাংকিং করি, প্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্ট লগইন করা থাকে—কম্পিউটার হ্যাক হওয়া তো দুরের কথা, আমরা চাইনা কোন আত্মীয়ও এই মেশিনকে ফিজিক্যালি অ্যাক্সেস করুক। পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ফিজিক্যালি পিসি ইউজ করা থেকে যে কাউকে আটকানো সম্ভব, কিন্তু আপনি যদি কোন ফ্যামিলি কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তো না চাওয়া শর্তেও আপনার কম্পিউটারকে ভাগ করতে হয়। তাছাড়া বাড়িতে ছোট ভাই, বোন থাকলে পাসওয়ার্ডটা বলে দিতেই হয়। তাই আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার কম্পিউটার কখন কে কিভাবে ইউজ করছে, সেটা জানা প্রয়োজনীয় ব্যাপার হয়ে উঠে। এই আর্টিকেলে আমি এমন কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাকে পরিচিত করিয়ে দেবো, আপনি সহজেই ধরতে পাড়বেন, আপনার অনুপস্থিতিতে কে আপনার কম্পিউটার’কে কিভাবে ব্যবহার করছে।


স্প্যাই ক্যাম ব্যবহার করুণ

আপনার কম্পিউটারে যদি ওয়েবক্যাম লাগানো থাকে বা যদি আপনি ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, সেখানে নিশ্চয় ওয়েবক্যাম লাগানো রয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই সেই ক্যামেরা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা যেকোনো ব্যক্তির ছবি উঠাতে সম্ভব। কিন্তু এই ওয়েবক্যামকে আপনার দাসত্ব করাবেন কিভাবে, মানে কিভাবে আপনার ঘোঁচর বানাবেন? খুবই সহজ ব্যাপার, আইস্প্যাই নামক সফটওয়্যারটি এখান থেকে ফ্রী ডাউনলোড করে নিন।

 

ইন্সটল করার পরেই বুঝতে পারবেন, এটা আসলে কতোটা কাজের জিনিষ। এই সফটওয়্যারটিতে বহু পাওয়ারফুল ফিচার রয়েছে, আর হয়তো এরকম কিছুই আপনি এতোদিন ধরে খুঁজছিলেন। সফটওয়্যারটি ভিডিও রেকর্ড, অডিও রেকর্ড, অনলাইন থেকে আপনার রেকর্ড করা ফাইল গুলো অ্যাক্সেস করা সহ আরো অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকে। সফটওয়্যারটি ইউজ করা একেবারেই সহজ, ওপেন করার সাথেই এর বিভিন্ন অপশন গুলোকে ট্যাব আকারে দেখতে পাবেন। আপনি সকল সেটিং এর উপর হস্তক্ষেপ করে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া এই সফটওয়্যারটি ম্যাল্টি ভিডিও স্ট্রিম সমর্থন করে। আবার আপনি চাইলে ভিডিও বিটরেট এবং রেজুলেসনকে ইচ্ছা মতো সেট করতে পারবেন। সফটওয়্যারটির একটি মারাত্মক ফিচার হচ্ছে মোশান ডিটেকশন। যেহেতু আপনার ওয়েবক্যামকে সেট করে রেখেছেন, আপনার কম্পিউটারে কেউ বসছে কিনা সেটা মনিটর করার জন্য, তাই ক্যামেরা রেকর্ড সর্বদা অন না থেকে শুধু কেউ কম্পিউটারের সামনে আসলে তবেই রেকর্ড চালু হলে কেমন হয়? এই ফিচারটি ঠিক এইভাবেই কাজ করে। আপনার ক্যামেরা সেটিংস থেকে সেন্সিভিটি সেট করে রাখতে পারেন, যদি কোন অবজেক্টকে সেন্সিভিটি অনুসারে নড়াচড়া করতে দেখে, ক্যামেরা তার রেকর্ডিং চালু করে দেবে।

তাছাড়া এই সফটওয়্যারটি রেকর্ডকৃত ভিডিওকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউটিউবে আপলোড করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে এই ফিচার চালু করার আগে, একটু ভেবে নেবেন, আপনি নিশ্চয় চাইবেন না বাড়ির এমন কোন ভিডিও টেলিকাস্ট হয়ে যাক যেটা হওয়া উচিৎ ছিল না! (বুঝছেন তো, কি বলতে চাচ্ছি?)। তবে মানতেই হবে ফিচারটি অনেক পাওয়ারফুল, এর চেয়ে অনলাইনে ভিডিও অ্যাক্সেস করার সময় মাধ্যম আর কিছুই হতে পারে না। ইউটিউবে আপলোড অপশন চালু করার আগে দেখে নিন, আপনার ফায়ারওয়াল জেনো আপলোডিং ব্লক করে না দেয়। সত্যি বলতে সফটওয়্যারটির আরো বহু মজার মজার কাজ রয়েছে, কিন্তু সেগুলো সব উল্লেখ্য করতে গেলে এই পুরো আর্টিকেলটিই শুধু এই সফটওয়্যারের জন্য হয়ে যাবে। আপনি ইন্সটল করে ফিচার গুলো নিজে নিজে এক্সপ্লোর করুণ। যদি কোন সমস্যা হয়, বা কিছু বুঝতে না পারেন, সেই ক্ষেত্রে আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

লগ চেক করুণ

আজকের বড়রা তো দুরের কথা, বাচ্চারাও বহুত চালাক হয়ে গেছে। সবাই জানে যে, উইন্ডোজ কম্পিউটারে কি করা হচ্ছে সেটা লগ আর রিসেন্ট আইটেমে জমা হয়ে থাকে, তাই কেউ যদি চুরি করে আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করে আগে লগ আর রিসেন্ট ফাইলই পরিষ্কার করে দেবে। কিন্তু তারপরও লগ এবং রিসেন্ট ফাইল চেক করা বুদ্ধিমানের কাজ।

উইন্ডোজ কম্পিউটারের লগ চেক করার জন্য চলে যান, কম্পিউটার ম্যানেজমেন্ট টুলটিতে, সেখান থেকে যেতে হতে ইভেন্ট ভিউয়ার এবং তার আন্ডারে রয়েছে উইন্ডোজ লগস। আর এখান থেকেই আপনি সকল কম্পিউটার অ্যাক্সেস হওয়া তথ্য গুলো স্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন। আপনি কম্পিউটার কখন লগইন করা হয়েছিলো, ফাইল এক্সপ্লোরারে কি কী-ওয়ার্ড সার্চ করা হয়েছে, ইউজার কখন লগ-অফ করেছে, ইত্যাদি সকল তথ্য। যদিও বেশিরভাগ সময় এই লগ গুলো ডিলিট করে দেওয়ারই কথা, কিন্তু আপনার কপাল যদি সত্যিই ভালো হয়, পেয়ে যেতে পারেন সব তথ্য গুলো।

রিসেন্ট ফাইল দেখা আরো সহজ ব্যাপার, আর তার চেয়েও সহজ ব্যাপার হচ্ছে সেগুলোকে ডিলিট করে দেওয়া। উইন্ডোজ এক্সপির আমল থেকেই দেখে আসছি, মানুষ কম্পিউটার ফাস্ট করার লক্ষে রিসেন্ট অ্যাক্সেস ফাইল লগ গুলোকে ডিলিট করে দেয় (যদিও এগুলো ডিলিট করলে কিছুই হয়না, মানে কম্পিউটার ফাস্ট হয়না)। আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করেন, তো স্টার্ট মেন্যু বা টাস্ক বার থেকে যেকোনো সফটওয়্যারের আইকনের উপর রাইট ক্লিক করুণ, দেখবেন একটি লিস্ট নিয়ে মেন্যু ওপেন হবে, যেখানে সফটওয়্যারটি দ্বারা কোন ফাইল রিসেন্টলি খোলা হয়েছে দেখতে পাওয়া যাবে।

কি-লগার

আসলে সবকিছুর ব্যবহারটা নিজের কাছে, আপনি কোন জিনিষকে খারাপ কাজে লাগাবেন, নাকি ভালো কাজে লাগাবেন। বম যেমন মানুষ মারে আবার পাহাড় ভেঙ্গে রেল লাইন বানাতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনি কি-লগার ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটার মনিটর করা সম্ভব, যদিও এটি একটি হ্যাক টুল। কি-লগার এমন একটি সফটওয়্যার (ম্যালওয়্যার) যেটি আপনার কম্পিউটারের কী-বোর্ডে কি প্রেস করা হচ্ছে, সকল ডাটা গুলোকে সেভ করে রাখে। এই টিউনের প্রথমের দিকে যে ওয়েবক্যাম সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করেছি, সেটা এই ম্যাথডের কাছে পুরাই বাচ্চা। কেনোনা ওয়েবক্যামকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলে মাস্তানি শেষ। কিন্তু কি-লগারকে বিশেষভাবে লুকিয়ে চলার জন্যই তৈরি করা হয়। কি-লগার হিডেন প্রসেস তৈরি করে এবং লুকিয়ে কী-বোর্ডের ডাটা গুলো ক্যাপচার করতে থাকে।

যেহেতু সকল কি-লগার ম্যালওয়্যার হিসেবে কলঙ্কিত, তাই এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ঝামেলা করতে পারে। তাই এটি ইন্সটল করার সময় এন্টিভাইরাসকে ডিসেবল করে নিতে হবে। অনেক ফ্রী কি-লগার রয়েছে যেগুলোকে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমি ই-লাইট কি-লগার ব্যবহার করতে রেকোমেন্ড করবো।

স্বয়ংক্রিয় স্ক্রীনসট

এন্টিভাইরাস প্রবলেমের জন্য যদি কি-লগার ব্যবহার না করতে চান, সেক্ষেত্রে এই অপশনটি আপনার জন্য ভালো হতে পারে। টাইম স্ন্যাপার নামক একটি টুল কিছু সেকেন্ড পরপর আপনার কম্পিউটার স্ক্রীনের ছবি তুলতে থাকে। এই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করা একেবারেই জলভাত। আপনি ইন্সটল করার পরেই এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের কাজ শুরু করে দেবে। কিন্তু এই সফটওয়্যারটি সিস্টেম ট্রেতে দেখতে পাওয়া যায়, তাই কেউ সিস্টেম ট্রে খুলে দেখলে, সফটওয়্যারটি ধরা খেয়ে যেতে পারে।

আমার মতো কোন ব্যাক্তি যদি আপনার কম্পিউটার চুরি করে ওপেন করে, তাহলে সবার আগে ওয়েব ব্রাউজার ওপেন করেই কর্মকাণ্ড স্টার্ট করবে। তাই ব্রাউজিং হিস্টোরি গুলো এক নজরে দেখে নেওয়া ভালো ব্যাপার। ভাগ্য ভালো হলে ব্রাউজিং হিস্টরি থেকে তথ্য পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু না পাওয়ারই সম্ভবনা বেশি।

তো এই ছিল আজকের আর্টিকেল, যেখানে কিছু সম্ভাব্য পদ্ধতি আলোচিত করলাম, যে গুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার অনুপস্থিতিতে কে কিভাবে আপনার কম্পিউটার ব্যবহার করছে। তো আপনি কোন পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে চলেছেন? নাকি আপনার কাছে আরো কোন পদ্ধতি রয়েছে? নিচে আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories