জিপিটি (GPT) এবং এমবিআর (MBR) হার্ড ড্রাইভ পার্টিশনের মধ্যে পার্থক্য কি?

আপনি যদি হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন করে থাকেন বা কোন কারণে ফরম্যাট করে থাকেন, হতে পারে সেটা ডুয়াল বুট অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার জন্য—অবশ্যই আপনি জিপিটি (GPT) বা এমবিআর (MBR) পার্টিশন সম্পর্কে জেনে থাকবেন। এমনকি নতুন উইন্ডোজ ইন্সটল করার সময়ও অনেক সময় জিপিটি আর এমবিআর টার্মটি চলে আসে, এখন অবশ্যই আপনি জানতে চাইবেন এই টার্মটি কি এবং এদের মধ্যের পার্থক্য কি। আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন, বিস্তারিত সবকিছু জেনে যাবেন!


হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন

আপনি একটি হার্ড ড্রাইভ যেকোনো স্টোরেজ কম্পিউটারে লাগালে ডিফল্টভাবে সেটা একটি ড্রাইভ হিসেবে প্রদর্শিত হয়। কিন্তু হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন করার মাধ্যমে একটি ড্রাইভ থেকে একাধিক ড্রাইভ বানানো যায়, কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম ঐ সিঙ্গেল ড্রাইভকে একাধিক ড্রাইভ হিসেবে দেখতে পায় এবং প্রত্যেকটি ড্রাইভ এক একটি স্বাধীন ড্রাইভের ন্যায় আচরণ করে। জিপিটি (GPT) বা এমবিআর (MBR) হচ্ছে পার্টিশন স্ট্র্যাকচার, যেটা বুঝায় কিভাবে একটি পার্টিশনে কোন তথ্য স্টোর থাকবে এবং কিভাবে অপারেটিং সিস্টেম সেই তথ্য গুলোকে অ্যাক্সেস করবে।

 

যদি হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন স্ট্র্যাকচার সিস্টেম না থাকতো, অপারেটিং সিস্টেম কখনোই পার্টিশনে থাকা তথ্য গুলো রীড করতে পারতো না। আজকের আলোচ্য এই দুই পার্টিশন স্ট্র্যাকচারই একই কাজ করে থাকে, কিন্তু তারপরেও এদের মধ্যে কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে, কিছু পার্থক্য রয়েছে। এখানে জিপিটি একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড, যার ফলে এতে অনেক টাইপের সুবিধা রয়েছে আর এমবিআর পুরাতন স্ট্যান্ডার্ড তাই এতে কিছু বাঁধা রয়েছে। যেহেতু এমবিআর পুরাতন স্ট্যান্ডার্ড, তাই বেশি অপারেটিং সিস্টেম এটিকে সমর্থন করে, যদিও উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স এরা জিপিটি’কেও সমর্থন করে।

মাস্টার বুট রেকর্ড

এমবিআর বা মাস্টার বুট রেকর্ড অনেক পুরাতন হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন স্ট্র্যাকচার স্ট্যান্ডার্ড। এটি সর্বপ্রথম ১৯৮৩ সালে আমাদের মাঝে পরিচিত হয়েছিলো। মাস্টার বুট রেকর্ড তখনোই ডিস্কে তৈরি হয় যখন পার্টিশন তৈরি করা হয়। মানে এটি আগে থেকেই ডিস্কে থাকে না, যেমন ফ্ল্যোপি ডিস্ক যেটা পার্টিশন হয় না, এতে মাস্টার বুট রেকর্ড থাকে না। ডিস্কের প্রথম সেক্টরে মাস্টার বুট রেকর্ড অবস্থিত হয়। একে সংক্ষেপে এমবিআর, মাস্টার বুট সেক্টর, সেক্টর জিরো, মাস্টার বুট ব্লক, মাস্টার পার্টিশন বুট সেক্টর ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে।

 

মাস্টার বুট রেকর্ড তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর অবস্থিত। প্রথমত, মাস্টার পার্টিশন টেবিল, দ্বিতীয়ত ডিস্ক সিগনেচার, এবং তৃতীয়ত মাস্টার বুট কোড। আপনার কম্পিউটার প্রথম স্টার্ট নেওয়ার সময় থেকেই মাস্টার বুট রেকর্ডের কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রথমে BIOS যে ড্রাইভ বা ডিস্ক থেকে কম্পিউটার বুট করতে চায়, সেখানে মাস্টার বুট রেকর্ডের জন্য অনুসন্ধান করে। এর পরে এমবিআর বুট কোড সিস্টেম পার্টিশন খুঁজে পাওয়ার জন্য অনুসন্ধান করে। এবার ঐ পার্টিশন বুট সেক্টর অপারেটিং সিস্টেমকে স্টার্ট করে রান করিয়ে দেয়। তো বুঝতেই পাড়ছেন, মাস্টার বুট রেকর্ড আপনার কম্পিউটার অন হওয়ার সময় কিভাবে সাহায্য করে থাকে।

আগেই বলেছি, এটি পুরাতন স্ট্যান্ডার্ড তাই এতে মাত্র চারটি প্রাইমারী পার্টিশন তৈরি করা সম্ভব। যদি আরো পার্টিশন তৈরি করতে চান সেক্ষেত্রে ৪ নাম্বার পার্টিশনটিকে এক্সটেন্ড করে আরো সাব-পার্টিশন তৈরি করা যায়, যেগুলোকে লজিক্যাল ড্রাইভ বলতে পারেন। এমবিআর ৩২-বিট পার্টিশন সিস্টেম ব্যবহার করে, এবং প্রত্যেকটি পার্টিশন ২ টেরাবাইটের উপর তৈরি করতে পাড়বেন না। মানে আপনার হার্ড ড্রাইভে মোট চারটি পার্টিশন থাকবে এবং প্রত্যেকটি পার্টিশন ২ টেরাবাইটের উপর হওয়া সম্ভব হবে না। এখন যদি আপনার কাছে ২০ টেরাবাইটের হার্ড ড্রাইভ থাকে, সেক্ষেত্রে এই স্ট্যান্ডার্ডের সাথে একটু সমস্যায় পরে যাবেন।

জিপিটি

জিপিটি একটি নতুন পার্টিশন স্ট্র্যাকচার স্ট্যান্ডার্ড, যেটা আমি পূর্বেই উল্লেখিত করেছি। জিপিটিকে GUID পার্টিশন টেবিল ও বলা হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই এটি একটি ফিউচার প্রুফ স্ট্যান্ডার্ড যেটি এমবিআর’কে সহজেই রিপ্লেস করে দিয়েছে, কেনোনা এতে অনেক কম লিমিটেসন রয়েছে। যেখানে এমবিআর এ কেবল একটি সিগন্যাল পার্টিশন ২ টেরাবাইট পর্যন্ত হতে পারে, সেখানে জিপিটি’তে ৯.৪৪ জেটাবাইট পর্যন্ত এক একটি পার্টিশন তৈরি করা সম্ভব (১ জেটাবাইট = ১ বিলিয়ন টেরাবাইট)—তবে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ কেবল ২৫৬ টেরাবাইট পর্যন্তই একটি সিঙ্গেল পার্টিশন সমর্থন করতে পারে।

 

এমবিআর এর আরেকটি লিমিটেসন হচ্ছে এটি কেবল ৪টি প্রাইমারী পার্টিশন হোল্ড করতে পারে এবং আলাদা পার্টিশন তৈরি করার জন্য এটি এক্সটেডেড বা লজিক্যাল পার্টিশন তৈরি করে, কিন্তু জিপিটি স্ট্যান্ডার্ডে কোন লজিক্যাল পার্টিশন তৈরি না করে ১২৮টি পর্যন্ত পার্টিশন ড্রাইভ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে তৈরি করা সম্ভব।

এমবিআর তার বুট ইনফরমেশন গুলোকে এক জায়গায় রেখে দেয় ফলে ডাটা গুলো খুব সহজেই করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে, কিন্তু জিপিটি বুট ইনফরমেশনকে সম্পূর্ণ ড্রাইভের বিভিন্ন জায়গায় রেখে দেয়, ফলে ডাটা রিকভার করার সময় অনেক সুবিধা হয়ে যায়। যেকোনো ছোটখাটো এরর জিপিটি ডিস্ক নিজে থেকেই সামাধান করতে পারে, এবং ডাটা লস হওয়ার চান্স এখানে অনেক কম। জিপিটি UEFI এর মাধ্যমে কাজ করে, যেটা BIOS কে রিপ্লেস করে দিয়েছে।

ওএস সাপোর্ট

উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের কেবল ৬৪-বিট ভার্সন গুলো জিপিটি সমর্থন করে, মানে UEFI সিস্টেম কম্পিউটারে রান হয়। আপনার ল্যাপটপে যদি কেনার সময় থেকে ডিফল্টভাবে উইন্ডোজ ১০ বা উইন্ডোজ ৮ এর ৬৪-বিট ভার্সন ইন্সটল করা থাকে, তবে অবশ্যই এটি জিপিটি সিস্টেমেই রয়েছে। আলাদা মডার্ন অপারেটিং সিস্টেম গুলোও জিপিটি সমর্থন করে। লিনাক্স বিল্ডইন ভাবে জিপিটি সমর্থন করে, আর ম্যাক ওএস এক্স বর্তমানে এপিটি বাদ দিয়ে জিপিটি ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছে।


তো এতক্ষণের আলোচনার পরে নিশ্চয় আপনি নতুন হার্ড ড্রাইভ সেটআপ করার সময় জিপিটি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করবেন, কেনোনা এটি অবশ্যই মডার্ন এবং অনেক বেশি সুবিধা প্রদান করে। যদি আপনার কম্পিউটার পুরাতন হয়ে থাকে আর BIOS ছাড়া কোন উপায় না থাকে, তবে আপনাকে পুরাতন এমবিআর নিয়েই পরে থাকতে হবে। তো বর্তমানে আপনি কোন পার্টিশন স্ট্র্যাকচার স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করেন? — আমাদের সবকিছু নিচে কমেন্ট করে জানান!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories