বিটকয়েন মাইনিং : উপযোগী নাকি সময়ের অপচয়?

এখন পর্যন্ত বিটকয়েন শব্দটি আপনি হয়ত আপনি শত শত বার শুনেছেন। আপনাদের মধ্যে আবার অনেকে ভালভাবেই জানেন যে বিটকয়েন কি এবং এটি কি কাজে ব্যাবহার করা হয়। আবার অনেকে হয়ত অনেক আগে থেকে বিটকয়েন মাইনিং করেও আসছেন। আবার হয়ত অনেকে আছেন যারা কখনো শোনেন নি বিটকয়েন কি এবং এটার কাজ কি এবং বিটকয়েন সম্পর্কিত সবধরনের কাজ কিভাবে করা হয় এবং লাভই বা কি এসব করে।

আপনার যদি আগে থেকেই বিটকয়েন এবং বিটকয়েন মাইনিং সম্পর্কে ভাল ধারনা থেকে থাকে বা আপনি যদি এই বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্ভবত আপনার জন্য নয়। আপনি চাইলে আর্টিকেলটি পড়ে দেখে নিতে পারেন যে আমি কিছু ভুল বলেছি কিনা। আমার লেখায় কোথাও কোন ভুল হলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। এবং আপনি যদি আগে থেকে বিটকয়েন মাইনিং করেন, তাহলে এই বিষয়ে আপনার মতামত এবং আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্ট সেকশনে শেয়ার করতে পারেন। আর, আপনার যদি বিটকয়েন এবং বিটকয়েন মাইনিং বিষয়ে একেবারেই কোন ধারণা না থাকে বা যদি ভালভাবে না জেনে থাকেন, তাহলে আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ার পরে আপনার এই বিষয়ে কিছুটা হলেও ধারণা হবে।

আর হ্যাঁ, ভয় নেই ! যারা আগে থেকে বিটকয়েন মাইনিং করছেন বা বিটকয়েন আয় করছেন, তারা চাইলে এই আর্টিকেলটি নির্দ্বিধায় পড়তে পারেন। কারণ, আমি এখানে আমার নিজের কোন ধরনের রেফারেল লিংক দেবনা। 🙂

তো, আর কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার শুরু করা যাক। আমি ধরে নিলাম আপনি শুধুমাত্র বিটকয়েনের নাম শুনেছেন। এর বেশি আপনি আর কিচ্ছু জানেন না। যদি এর বেশি কিছু জেনে থাকেন এই বিষয়ে, তাহলে আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী স্ক্রল করে নিচে চলে যেতে পারেন। আর যদি সত্যিই না জেনে থাকেন, তাহলে-

বিটকয়েন কি?

সোজা কথায় বলতে হলে, বিটকয়েন হচ্ছে এক ধরনের কারেন্সি। আমাদের দেশের টাকা যেমন একটি কারেন্সি, ইউএস ডলার যেমন এক ধরনের কারেন্সি, বিটকয়েনও তেমন একটি কারেন্সি। একে সাধারনত ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অনেকসময় ক্রিপ্টোকয়েনও বলা হয়ে থাকে। তাহলে আমদের দেশের টাকা বা ইউএস ডলারের সাথে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সির পার্থক্যটি কি? পার্থক্যটি হচ্ছে বিটকয়েনের কোন ফিজিক্যাল অস্তিত্ব নেই। অর্থাৎ এটিকে আপনি দেখতে পাবেন না এবং ছুঁতেও পারবেন না। এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল কারেন্সি। অর্থাৎ, এটি শুধুমাত্র ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার নির্ভর একটি কারেন্সি। বিটকয়েনের প্রচলন সর্বপ্রথম শুরু হয় ২০০৮ সালে এবং যিনি বা যে অজানা ব্যাক্তি বা গ্রুপ এই কারেন্সির প্রচলন করেন, তার নাম সাতোশি নাকামোটো। এখন বিটকয়েন তৈরি করা হয় মাইনিং এর রিওয়ার্ড বা পুরষ্কার হিসেবে। এই বিষয়ে নিচে আরও বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বিটকয়েন লেনদেন করার জন্য কোন আলাদা প্রতিষ্ঠান বা অরগানাইজেশনের প্রয়োজন হয়না। আপনি যদি কারো সাথে বিটকয়েন লেনদেন করেন তাহলে আপনাদের লেনদেনটি কেউ কখনো ট্র্যাক করতে পারবে না। একে পিয়ার টু পিয়ার লেনদেন বলা হয়। এই কারনেই এখনকার যুগে বিটকয়েন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি বিটকয়েন লেনদেন সম্পূর্ণভাবে প্রোসেস এবং অ্যাপ্রুভ হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন তৈরি হয়। নতুন যেসব বিটকয়েন তৈরি করা হয়, সেসব বিটকয়েন প্রত্যেক ৪ বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসে। আর, নতুন বিটকয়েন তৈরির কাজটি চলবে ২১৪০ সাল পর্যন্ত। এরপরে আর নতুন কোন বিটকয়েন তৈরি করা হবেনা। এই বিষয়ে আরও বেশি ডিটেইলস জানতে চাইলে এখানে দেখতে পারেন।

আর হ্যাঁ, বিটকয়েনের মার্কেট প্রাইস প্রায় প্রত্যেকদিনই আপ-ডাউন করে,  অনেকটা স্টক মার্কেটের মত। যে মুহূর্তে আমি এই আর্টিকেলটি লিখছি, তখন ১ বিটকয়েনের মূল্য ৫ হাজার ৬৬৬ ইউএস ডলারের সমান। অর্থাৎ বর্তমানে ১ বিটকয়েনের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার সমান। আপনি যেকোনো সময় এই লিংকে গিয়ে ঠিক সেই সময়ে বিটকয়েনের মূল্য কত ইউএস ডলার, তা দেখতে পারবেন।

এখন আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন যে, বিটকয়েন দিয়ে কি হবে? হ্যাঁ। বিটকয়েন দিয়ে অনেক কিছুই হবে। আপনার কাছে যদি কিছু বিটকয়েন থাকে, তবে যদি কিছুদিন পরে বিটকয়েনের দাম বেড়ে যায়, তখন আপনি ওই বিটকয়েনগুলো আরও বেশি দামে সেল করে দিতে পারবেন, যার থেকে আপনি বেশ ভাল পরিমান লাভ করতে পারবেন। এছাড়া এখন বিভিন্ন বড় বড় ই-কমার্স সাইট বা অনলাইন শপ (যেমনঃ Expedia)  বিটকয়েনে পেমেন্ট নেয়। তাই বিটকয়েনের সাহায্যে আপনি চাইলে অনলাইন শপিং ও করতে পারবেন। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পেমেন্ট সুইচ বা ই-ওয়ালেট, Payza অফিশিয়ালি বিটকয়েন সমর্থন করে। তাই আপনি চাইলে বিটকয়েন খরচ করে আপনার Payza অ্যাকাউন্টে ফান্ড অ্যাড করতে পারবেন এবং সেটি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উইথড্র করতেও পারবেন।

বিটকয়েন ওয়ালেট কি?

আমরা সাধারনত আমাদের সব টাকা-পয়সা কোথায় জমা রাখি? নিশ্চই ব্যাংকে জমা রাখি এবং প্রাথমিকভাবে যখন তখন ব্যাবহার করার জন্য আমাদের মানি ব্যাগ বা ওয়ালেটে জমা রাখি। বিটকয়েন ওয়ালেটটিও একই কাজেই ব্যাবহার করা হয়, কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে। বিটকয়েন কি সেটা আমরা জানলাম। কিন্তু আপনি যদি নিজের কাছে কিছু বিটকয়েন জমা রাখতে চান, তাহলে আপনার অবশ্যই দরকার হবে একটি ওয়ালেট বা ভারচুয়াল ব্যাংক যেখানে আপনি আপনার সব বিটকয়েন জমা রাখতে পারবেন।

বিটকয়েন ওয়ালেটের ক্ষেত্রে Coinbase এবং BlockChain বেশ জনপ্রিয়। আপনি এই দুটির যেকোনো একটিতে অ্যাকাউন্ট করলে একটি ভারচুয়াল অ্যাকাউন্ট বা ওয়ালেট পাবেন যেখানে আপনি আপনার সব বিটকয়েন নিরাপদভাবে জমা রাখতে পারবেন। এছাড়া একটি অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য আরেকটি অ্যাকাউন্টে বিটকয়েন সেন্ড এবং রিসিভও করতে পারবেন। অনেকটা ই-ওয়ালেট এবং অনলাইন ব্যাংকিং এর মত। এই দুটির যেকোনোটিতে আপনি পাবেন আনলিমিটেড বিটকয়েন অ্যাড্রেস। বিটকয়েক অ্যাড্রেস হচ্ছে একটি পারসোনাল অ্যাড্রেস যেখানে আপনি আপনার সব বিটকয়েন রিসিভ করতে পারবেন এবং চাইলে অন্য কারো বিটকয়েন অ্যাড্রেসে নিজের ওয়ালেট থেকে বিটকয়েন সেন্ডও কর‍তে পারবেন।

বিটকয়েন মাইনিং কি?

বিটকয়েন মাইনিং মুলত সোজা কথায় বলতে গেলে বিটকয়েনের লেনদেনগুলোকে প্রোসেস করা এবং অ্যাপ্রুভ করা। অর্থাৎ যখন দুই প্রান্তের দুজন মানুষ বা দুটি কম্পিউটারের মধ্যে বিটকয়েনের লেনদেন হয়, তখন এই লেনদেনটি প্রোসেস করার কাজই হচ্ছে বিটকয়েন মাইনিং। এই মাইনিং এর কাজটি করে থাকে অন্য একটি মেশিন বা অন্য একটি কম্পিউটার। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে যে শুধুমাত্র লেনদেন টি প্রোসেসই যখন করা হচ্ছে, তাহলে এই প্রক্রিয়াটিকে বিটকয়েন ” মাইনিং ” কেন বলা হচ্ছে ? কারন, আগেই বলেছি, একটি এমাউন্টের বিটকয়েন লেনদেন সম্পূর্ণ হলে সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন তৈরি হয়। তার মানে, আপনি যদি এই বিটকয়েন লেনদেনের রেকর্ড তৈরি করা এবং এই বিটকয়েন লেনদেনটিকে প্রোসেস করার কাজ করেন, তার মানে আপনি মুলত নতুন বিটকয়েন তৈরিতে সাহায্য করছেন এবং এর ফলে আপনি নিজেও নতুন তৈরি হওয়া বিটকয়েনের থেকে কিছুটা এমাউন্ট রিওয়ার্ড হিসেবে পাচ্ছেন। ঠিক এই কারনেই একে মাইনিং নাম দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু আপনি যদি মনে করে থাকেন যে বিটকয়েন লেনদেন প্রোসেস করার বা অ্যাপ্রুভ করার কাজটি খুবই সহজ, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। এই সম্পূর্ণ কাজটিই যেহেতু কম্পিউটার করে থাকে, তাই আপনার কাছে এটি সহজ মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে তা নয়। একটি বিটকয়েন ট্র্যানজেকশন প্রোসেস এবং অ্যাপ্রুভ করতে হলে যে কম্পিউটার বা যে হার্ডওয়্যার বা যে মেশিনে এই কাজটি করা হবে ওই মেশিনটির যথেষ্ট প্রোসেসিং পাওয়ার থাকার প্রয়োজন হয় এবং অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। কারন, এই ট্র্যানজেকশন প্রোসেস করার কাজটি শুধুমাত্র লেনদেনটি সম্পূর্ণ হিসেবে মার্ক করা এবং ট্র্যানজেকশন রিপোর্ট তৈরি করার মত এতটা সহজ কোন কাজ নয়। এই কাজটি করতে হলে আপনার কম্পিউটারকে অনেক জটিল অ্যালগরিদমের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয় এবং অনেক জটিল ম্যাথ প্রবলেমও সল্ভ করতে হয়। এছাড়া এই ট্র্যানজেকশনটি কমপ্লিট করার মাধ্যমে নতুন বিটকয়েনের রিওয়ার্ড পাওয়া নির্ভর করে মাইনিং ডিফিক্যলিটির ওপরে। যত বেশি কমপ্লেক্স প্রবলেম, সেটি সল্ভ করে একটি ট্র্যানজেকশন সম্পূর্ণ করার পরে তার রিওয়ার্ডও ততই বেশি।

বিটকয়েন মাইনিং এর কাজ করতে হলে আপনার দরকার যথেষ্ট শক্তিশালি হার্ডওয়্যারযুক্ত একটি কম্পিউটার। আগে যারা বিটকয়েন মাইনিং এর কাজ করত, তারা তাদের কম্পিউটারের প্রোসসরের প্রোসেসিং পাওয়ারের মাধ্যমে এসব ম্যাথ প্রবলেম সল্ভ করত। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা বুঝলো যে, বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য এবং এসব ম্যাথ প্রবলেম সল্ভ করার জন্য প্রোসেসরের থেকে হাই এন্ড জিপিইউ অনেক বেশি উপযোগী। তাই এখন বিটকয়েন মাইনিং এর কাজে প্রধানত জিপিউ ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনার দরকার হবে যথেষ্ট পাওয়ারফুল একটি জিপিউ। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য স্পেশাল হার্ডওয়্যার তৈরি করে থাকে। যেমন, Asic (Application-Specific Integrated Circuit Chip) স্পেশালি বিটকয়েন মাইনিং করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এসব হাই এন্ড হার্ডওয়্যার ইউজ করে আপনি সহজেই নিজে কোন কাজ না করেই বিটকয়েন মাইনিং করতে পারবেন।

কিন্তু এখানে আরেকটি বিষয় চলে আসে, তা হচ্ছে ইলেকট্রিসিটি। এসব হাই এন্ড হার্ডওয়্যার ব্যাবহার করে আপনি বিটকয়েন ঠিকই মাইনিং করতে পারবেন, কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে এই কাজের জন্য আপনার প্রচুর পরিমান ইলেকট্রিসিটির বা এনার্জির দরকার হবে। আপনি হয়ত ভাবছেন যে একটি কম্পিউটার চালাতে আর কতই বা ইলেকট্রিসিটির দরকার হবে? কিন্তু না, আপনি যখন বিটকয়েন মাইনিং এর কাজ করবেন তখন আপনার পিসির অনেক বেশি প্রোসেসিং পাওয়ারের দরকার হবে। আপনার সিপিউ, জিপিউ এবং প্রোসেসর তখন প্রায় ১০০% কার্যক্ষমতায় কাজ করতে থাকবে। যার ফলে আপনার হার্ডওয়্যার সাধারনের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়ার হাংরি হয়ে পড়বে। তখন আপনার ইলেকট্রিসিটি বিল আরেকটি বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আচ্ছা, বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কারভাবে বলা যাক।

ধরা যাক, বিটকয়েন মাইনিং করার জন্য আপনার একটি হাই এন্ড পিসি বা একটি হাই এন্ড সেটাপ আছে। আপনি প্রত্যেকদিন সেখানে বিটকয়েন মাইনিং করেন। ধরা যাক, আপনি এই সেটাপ থেকে প্রত্যেকদিন যেটুকু বিটকয়েন আয় করেন তার মূল্য ৫ ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৪১৫ টাকার মত। অর্থাৎ, এই সেটাপ থেকে আপনি প্রত্যেকমাসে যেটুকু বিটকয়েন আয় করতে পারবেন তার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ১২ হাজার ৪৫০ টাকা। কিন্তু, এবার ধরুন, এই হাই এন্ড সেটাপটি প্রতিদিন আপনার যেটুকু ইলেকট্রিসিটি খরচ করে, তার দাম প্রায় ৪২০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিমাসে আপনার এই সেটআপটি ১২ হাজার ৬০০ টাকার ইলেকট্রিসিটি খরচ করে। এবার আপনিই ভেবে দেখুন আপনার ঠিক কতটুকু লাভ হল এবং আদৌ কোন লাভ হল কিনা।

বাংলাদেশের মত একটি দেশে বিটকয়েন মাইনিং করার সবথেকে বড় সমস্যা এটাই। আমি ওপরে শুধুমাত্র একটি উদাহরন দিয়েছি। হ্যাঁ, তবে সবক্ষেত্রে বিটকয়েন মাইনিং করে আপনি টাকা লস করবেন তেমনটাও নয়। আপনি হয়ত লাভ করবেন। কিন্তু ইলেকট্রিসিটি বিল দেওয়ার পরে আপনি যতটা লাভ করবেন বা যত সামান্য লাভ করবেন তা আপনার কাছে যথেষ্ট মনে হবেনা। তাই বিটকয়েন মাইনিং এর কাজ করা উচিৎ এমন জায়গায় বা এমন দেশে যেখানে ইলেকট্রিসিটির দাম কম। তবুও যদি আপনি বিটকয়েন মাইনিং করতে চান, তাহলে অবশ্যই আগে থেকে হিসাব করে দেখে নেবেন যে, আপনি যে হার্ডওয়্যার ব্যাবহার করছেন তার পেছনে আপনাকে প্রতি মাসে কতটা খরচ কর‍তে হবে এবং প্রতিমাসে আপনি যতটুকু বিটকয়েন আয় করবেন, সেটা আপনার খরচের তুলনায় আপনার কাছে যথেষ্ট কিনা। যদি যথেষ্ট মনে হয়, তবেই বিটকয়েন মাইনিং করুন।

আর, বিটকয়েন মাইনিং করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আপনাকে শুধুমাত্র যে কম্পিউটারে মাইনিং করবেন, ওই কম্পিউটারে একটি ট্রাস্টেড মাইনিং প্রোগ্রাম ইন্সটল করতে হবে। যেমন, NiceHash। এরপরে জাস্ট আপনাকে সাধারনভাবে প্রোগ্রামটি পিসিতে ইন্সটল করতে হবে এবং সফটওয়্যারটি রান করিয়ে আপনার বিটকয়েন অ্যাড্রেসটি দিতে হবে। এরপর শুধুমাত্র পিসি এবং আপনার প্রোগ্রামটি রানিং রাখলেই চলবে, যতক্ষন আপনি মাইনিং করতে চান। আপনি যতটুকু বিটকয়েন প্রোফিট পাবেন, তা আপনার বিটকয়েন অ্যাড্রেসে নির্দিষ্ট সময় পরপর পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

বিটকয়েন ক্লাউড মাইনিং

ওপরে যে সমস্যাটির কথা বলা হল, সেই সমস্যার সমাধানের জন্যই ক্লাউড মাইনিং এর উৎপত্তি। এখানে মুলত আপনি নিজেই নিজের সেটাপে মাইন না করে, আপনি কোন থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠান বা কোন কোম্পানিতে তথা ওয়েবসাইটে বিটকয়েন ইনভেস্ট করবেন এবং তারা আপনার জন্য তাদের হার্ডওয়্যার এবং মাইনিং সেটাপ ব্যাবহার করে বিটকয়েন মাইন করবে এবং আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমান প্রোফিট দেবে। যেমন ধরুন, আপনি যদি ওদের কাছে ১ বছরের কন্টাক্টে ১০০ ডলার মুল্যের সমান বিটকয়েন ইনভেস্ট করেন, তবে তারা আপনাকে পরের এক বছর যাবত প্রতি মাসে আপনাকে ১০ ডলার প্রোফিট দেবে। যার ফলে আপনার বছর শেষে বেশ ভালোই লাভ হবে। বিষয়টা শুনতে বেশ ভাল মনে হলেও এটাতে আরও বড় সমস্যা রয়েছে। তা হল, স্ক্যাম।

কারন, এই ধরনের লেজিট ক্লাউড মাইনার সাইট পাওয়া খুবই কঠিন। এই ধরনের ক্লাউড মাইনিং এর ৯০% ওয়েবসাইটই স্ক্যাম। তারা আপনার কাছ থেকে বিটকয়েনে ইনভেস্টমেন্ট নিবে এবং কয়েকদিন আপনাকে হালকা কিছু প্রোফিট সেন্ড করবে এবং এরপর আরো বেশি প্রোফিট দেওয়ার নামে আপনার কাছ থেকে আরও বেশি ইনভেস্টমেন্ট নিবে এবং সর্বশেষে আপনার সব ইনভেস্টমেন্ট তারা আত্মসাৎ করবে এবং আপনাকে স্ক্যাম করে চলে যাবে বা সাইট ডাউন করে দেবে। যার ফলে, আপনি যদি ইনভেস্ট করে থাকেন, তাহলে আপনি মোটা অংকের টাকা হারিয়ে ফেলবেন। কিন্তু তার মানে এই না যে পৃথিবীর সব ক্লাউড মাইনিং সাইটই স্ক্যাম। কয়েকটি লেজিট ক্লাউড মাইনিং ওয়েবসাইটও আছে যাদেরকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। যেমন, ক্লাউড মাইনিং সাইট হিসেবে HashFlare বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু তার মানে এই না যে আপনি এদেরকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতে পারেন। কারন, হয়ত এরা এতদিন স্ক্যাম করেনি, কিন্তু ভবিষ্যতে স্ক্যাম করতেই পারে। কোন ক্লাউড মাইনিং সাইট কখনো স্ক্যাম করবে না এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।

যদি ক্লাউড মাইনিং করতে চান, তবে যে ওয়েবসাইট টি ব্যাবহার করতে যাচ্ছেন, সেটি সম্পর্কে আগে ভাল করে জানুন এবং অন্যান্য ইউজারদের মতামত নিন। যদি সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে কখনোই ইনভেস্ট করবেন না। আর কোন সাইট সম্পর্কে ১০০% নিশ্চিত না হতে পারলে ক্লাউড মাইনিং এর দিকে পা বাড়াবেন না। ব্যাক্তিগতভাবে আমি কাউকেই ক্লাউড মাইনিং করতে উৎসাহিত করবো না।

শেষ কথা

এখন নিশ্চই আপনি কিছুটা ধারণা পেয়েছেন যে আপনার বিটকয়েন মাইনিং করা উচিৎ নাকি উচিৎ নয় এবং কোন ক্ষেত্রে এটা সময়ের অপচয় এবং কোন ক্ষেত্রে উপযোগী। যদি এখনো বিষয়টি আপনার কাছে পরিষ্কার না হয়ে থাকে তাহলে আবার বলি,

যদি নিজেই নিজের সেটআপ ব্যাবহার করে মাইনিং করতে চান, অবশ্যই আগে থেকে হিসাব করে দেখে নেবেন যে,  আপনি যে হার্ডওয়্যার ব্যাবহার করছেন তার পেছনে আপনাকে প্রতি মাসে কতটা খরচ কর‍তে হবে  এবং প্রতিমাসে আপনি যতটুকু বিটকয়েন আয় করবেন, সেটা আপনার খরচের তুলনায় আপনার কাছে যথেষ্ট কিনা। যদি যথেষ্ট মনে হয়, তবেই বিটকয়েন মাইনিং করুন।

যদি ক্লাউড মাইনিং করতে চান, তবে যে ওয়েবসাইট টি ব্যাবহার করতে যাচ্ছেন, সেটি সম্পর্কে আগে ভাল করে জানুন এবং অন্যান্য ইউজারদের মতামত নিন। যদি সন্দেহজনক মনে হয়, তাহলে কখনোই ইনভেস্ট করবেন না। আর কোন সাইট সম্পর্কে ১০০% নিশ্চিত না হতে পারলে ক্লাউড মাইনিং এর দিকে পা বাড়াবেন না। ব্যাক্তিগতভাবে আমি কাউকেই ক্লাউড মাইনিং করতে উৎসাহিত করবো না।

আর আরেকটা কথা মনে রাখবেন,

বাংলাদেশ সরকার বিটকয়েনকে সমর্থন করেনা। অর্থাৎ বিটকয়েন অন্যান্য অনেক দেশে লিগ্যাল হলেও বাংলাদেশে বিটকয়েন লিগ্যাল নয়। তাই আপনি আপনার মাইন করা বিটকয়েন নিয়ে কোন ধরনের কোন সমস্যায় পড়লে তার জন্য আপনি কোনো ধরনের আইনি সহায়তা পাবেন না।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনার কোন ধরনের প্রশ্ন বা কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। ভালো থাকবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories