বাজেট স্মার্টফোন : ২০১৭ তে যেগুলো আপনি কিনতে পারেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে হাই এন্ড এক্সপেনসিভ ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনগুলোর তুলনায় মিড রেঞ্জের বাজেট স্মার্টফোনগুলোরই জনপ্রিয়তা বেশি। এর একটি বড় কারণ বাংলাদেশের মানুষের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা এবং একইসাথে একটি স্মার্টফোন থেকে তাদের চাহিদা। অর্থাৎ, আপনার স্মার্টফোন থেকে যেসব চাহিদা আছে, সেসবকিছুই যদি একটি মিড রেঞ্জের বাজেট স্মার্টফোন পূরণ করতে পারে, তাহলে কেনই বা আপনি আরও বেশি দাম দিয়ে হাই এন্ড ফোন কিনবেন? এক্ষেত্রে এই যুক্তিটি সবথেকে বেশি পারফেক্ট। কিন্তু আপনি যদি স্মার্টফোনের ফ্যান হন এবং সবসময় সবথেকে ভাল স্মার্টফোনটি ইউজ করে দেখা আপনার ইচ্ছা হয়, তাহলে সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আপনি যদি এই ধরনের টেক এবং লাক্সারিয়াস স্মার্টফোনপ্রেমী মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে কিছুক্ষনের জন্য তা ভুলে যান। কারণ, আজকে আমরা আলোচনা করবো এবছর রিলিজ হওয়া ৫ টি বাজেট স্মার্টফোন নিয়ে, যেগুলোর দাম মোটামোটি কম হওয়া সত্ত্বেও আপনার ” প্রায় ” সব চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

” বাজেট ” স্মার্টফোন টার্মটি অনেকের কাছে অনেকরকম হতে পারে। কারণ, প্রত্যেকের কাছে বাজেট স্মার্টফোন একেকরকম হতে পারে তাদের আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু আমরা সাধারনত ৩০ হাজার টাকার ওপরের স্মার্টফোনগুলোকে বাজেট  স্মার্টফোন এর ক্যাটেগরিতে রাখি না। কারো ক্ষেত্রে বাজেট স্মার্টফোন ৩০ হাজারের নিচের স্মার্টফোন হতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে ২০ হাজার এবং কারো ক্ষেত্রে সেটা ১০ হাজারও হতে পারে। যাইহোক, আজকে আমরা এমন ৫ টি স্মার্টফোন নিয়ে আলোচনা করব যেগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি স্মার্টফোনের দাম ৩০ হাজারের নিচে, পরের দুটি স্মার্টফোনের দাম ২০ হাজারের নিচে। তো, আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল বিষয়ে আসা যাক।


১. শাওমি মি এ১

এবছর শাওমির রিলিজ করা এই স্মার্টফোনটি আমরা আগেই ওয়্যারবিডিে কভার করেছি। শাওমি মি এ১ স্মার্টফোনটি আমার মতে ৩০ হাজার এবং ২৫ হাজার প্রাইসট্যাগের নিচে রিলিজ করা বেস্ট স্মার্টফোন। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে এর সফটওয়্যার। কারণ, আপনি এই দামে এর থেকেও কিছুটা ভালো কনফিগের স্মার্টফোন পাবেন কিন্তু মি এ১ এর মত সফটওয়্যার এক্সপেরিয়েন্স এই দামে আর অন্য কোন স্মার্টফোনেই পাবেন না। কারণ, এটি একটি অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান (Android One) স্মার্টফোন। অর্থাৎ, এই স্মার্টফোনটির সফটওয়্যার সরাসরি গুগল নিয়ন্ত্রন করে। এই ফোনের আপডেটও সরাসরি গুগল নিয়ন্ত্রন করে। এটিই শাওমির তৈরি প্রথম স্মার্টফোন, যেটিতে সফটওয়্যার হিসেবে শাওমির  নিজের মিইউআই নেই। আছে গুগলের নিজের নিয়ন্ত্রিত পিওর স্টক অ্যান্ড্রয়েড যেটা অধিকাংশ শাওমি ইউজারের স্বপ্ন বলা যায়। তাছাড়া পিওর স্টক অ্যান্ড্রয়েড হওয়ায় এর সফটওয়্যার অপটিমাইজেশনের কারণে পারফরমেন্সও এই দামের অন্যান্য ফোনের থেকে বেটার হবে।

এছাড়াও এই স্মার্টফোনে থাকছে ডুয়াল ক্যামেরা সেটাপ। এই ফোনটিতে রিয়ারে থাকছে ডুয়াল ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সেটাপ, যার একটি ক্যামেরা হচ্ছে ২৬ মিলিমিটার লেন্স এবং এফ ২.২ অ্যাপারচার যুক্ত এবং অপরটি হচ্ছে ৫০ মিলিমিটার লেন্স এবং এফ এফ ২.৬ অ্যাপারচার যুক্ত। দুটি ক্যামেরাই ১২ মেগাপিক্সেল। এই ফোনটির ডুয়াল ক্যামেরা ইমপ্লিমেন্টেশন অনেকটা আইফোন ৭ প্লাসের মত। এই দামের মধ্যে অন্যান্য কিছু কিছু ফোনেও ডুয়াল ক্যামেরা সেটআপ আছে (যেমনঃ Honor 6X) কিন্তু সেসব ক্যামেরা ইমপ্লিমেন্টেশন  মি এ১ এর মত এতটা স্মার্ট ও উপযোগী নয়। শাওমি মি এ১ এর রিয়ারের সেকেন্ডারি ক্যামেরাতে ৫০ মিলিমিটার লেন্স থাকায় এর সাহায্যে আপনি ২এক্স লসলেস জুম করতে পারবেন। অর্থাৎ ছবি তোলার সময় দ্বিগুণ পর্যন্ত জুম করতে পারবেন কোন ধরনের পিকচার কোয়ালিটি না হারিয়েই।

দাম অনুযায়ী এই স্মার্টফোনের স্পেসিফিকেশনও খারাপ নয়। কিন্তু মিড বাজেট স্মার্টফোন হওয়ায় হাই এন্ড স্পেসিফিকেশন আশা করাও বোকামি। এর প্রধান কয়েকটি স্পেসিফিকেশন নিচের চার্টে দেখতে পারেন। স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে দেখতে পারেন।

প্রাইস : ২৩ হাজার থেকে ২৪ হাজারের মধ্যে।

চিপসেট স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫
র‍্যাম ও স্টোরেজ ৪ জিবি ও ৬৪ জিবি+মাইক্রো এসডি
জিপিউ অ্যাড্রেনো ৫০৬
ডিসপ্লে রেজোলিউশান ১০৮০ পি
ক্যামেরা (রিয়ার+ফ্রন্ট) ডুয়াল ১২ রিয়ার+৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট
ডিসপ্লে সাইজ ৫.৫ ইঞ্চি
অ্যান্ড্রয়েড ভারশন ৭.১.২ (নুগাট)
ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৩০৮০ এমএএইচ
ডিসপ্লে প্রোটেকশন গোরিলা গ্লাস ৩

২. স্যামসাঙ গ্যালাক্সি জে৭ প্রো

যদিও স্যামসাঙ এর জে লাইনাপের কোন ফোনই কখনো আমার ভাল লাগেনি, তবুও এই স্মার্টফোনটি বাজেট স্মার্টফোনের লিস্টে ইনক্লুড করলাম। কারণ, বাংলাদেশে অনেকেই স্যামসাঙ এর ভক্ত বা অন্ধভক্ত আছেন যারা যেকোনো স্মার্টফোন কেনার সময় প্রথম প্রায়োরিটি দেন স্যামসাঙকে। এবছর জুনে রিলিজ করা স্যামসাঙ এর এই ডিভাইসটি আগের জে সিরিজের স্মার্টফোনগুলোর তুলনায় একটু ভাল মনে হয়েছে। এই জে৭ প্রো স্মার্টফোনটি মুলত স্যামসাঙ এর আগের রিলিজ করা জে৭ ২০১৭ ভার্শনের কিছুটা আপগ্রেডেড এবং ইম্প্রুভড মডেল। এই ফোনটির ডিসপ্লে স্যামসাঙ এর জে সিরিজের আগের স্মার্টফোনগুলোর থেকে অনেক ভাল। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে এই ৭৩.৩% স্ক্রিন টু বডি রেশিও এবং চিকন বেজেল সাইজ এবং তার সাথে স্যামসাঙ এর ব্র্যান্ড ফিচার, সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে।

এছাড়া স্পেসিফিকেশনের দিক থেকে স্যামসাঙ এর জে সিরিজের আগের স্মার্টফোনগুলোর সাথে অনেকটাই মিল থাকছে এই ফোনটির। এই ফোনটিতে আপনি হাই এন্ড গেমগুলো ভালোভাবে খেলতে পারবেন না, কিন্তু লাইট গেমগুলো বেশ ভালভাবেই খেলতে পারবেন। এই ফোনটিতে যে চিপসেট ব্যাবহার করা হয়েছে, তা স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ এর সাথে কম্পেয়ারেবল। স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ একটি এন্ট্রি লেভেল চিপসেট, তাই এই স্মার্টফোনে অনেক ভাল পারফরমেন্স আশা করাটাই বোকামি। কিন্তু সাধারনভাবে প্রতিদিনের নরমাল টাস্কগুলো এই ফোনটি বেশ ভালভাবেই হ্যান্ডেল করতে পারবে। আর ক্যামেরা সেকশনের থাকছে ১৩ মেগাপিক্সেল এফ ১.৭ অ্যাপারচারযুক্ত রিয়ার ক্যামেরা এবং ১৩ মেগাপিক্সেল এফ ১.৯ অ্যাপারচারযুক্ত ফ্রন্ট ক্যামেরা। পেছনের ক্যামেরাটি খুব বিশেষ কিছু নয়, এটা প্রায় আগের জে ৭ ২০১৭ এর মতই পারফর্ম করবে অথবা জে৭ ২০১৭ এর থেকে একটু বেটারও করতে পারে। কিন্তু ফ্রন্ট ক্যামেরা হিসেবে ১৩ মেগাপিক্সেল সেন্সর থাকায় ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে বেশ ভাল ছবি বা সেলফি তুলতে পারবেন।

আর আমার কাছে সবথেকে ভাল ব্যাপার মনে হয়েছে স্যামসাঙ গ্যালাক্সি জে ৭ প্রো এর সফটওয়্যার। কারণ, স্যামসাঙ এর টাচওইজ ইউআই আমার কখনোই ভালো লাগতো না। কিন্তু স্যামসাঙ এর ইউআই আমার সেদিন থেকেই ভালো লাগা শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে তারা গ্যালাক্সি নোট ৭ রিলিজ করল এবং তাদের সব ফোনে স্যামসাঙ এক্সপেরিয়েন্স ইউআই ব্যাবহার করা শুরু করল। স্যামসাঙ এর আগের ইউআই ভাল না লাগলেও স্যামসাঙ এর বর্তমান স্যামসাঙ এক্সপেরিয়েন্স ইউআই আমার ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট ফেভারিট ইউআই। জে ৭ প্রো তে সফটওয়্যার হিসেবে থাকছে অ্যান্ড্রয়েড  ৭.০ নুগাট যা স্যামসাঙ এক্সপেরিয়েন্স ইউআই দ্বারা হেভিলি কাস্টোমাইজড। গ্যালাক্সি এস৮ বা নোট ৮ এর সাথে জে ৭ প্রো এর সফটওয়্যারের মিল পাবেন।

আপনি যদি স্যামসাঙ এর ফ্যান হন, তাহলে ৩০ হাজারের মধ্যে এই স্মার্টফোনটি একটি ভাল চয়েজ হতে পারে আপনার জন্য। এই ফোনটির প্রধান কয়েকটি স্পেসিফিকেশন নিচের চার্টে দেখতে পারেন। স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে দেখতে পারেন।

প্রাইস : ২৯,৯০০ টাকা (অফিশিয়াল)

চিপসেট এক্সিনস ৭৮৭০
র‍্যাম ও স্টোরেজ ৪ জিবি ও ৬৪ জিবি+মাইক্রো এসডি
জিপিউ ম্যালি টি ৮৩০ এমপি ১
ডিসপ্লে রেজোলিউশান ১০৮০ পি
ক্যামেরা (রিয়ার+ফ্রন্ট)  ১৩ রিয়ার+১৩ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট
ডিসপ্লে সাইজ ৫.৫ ইঞ্চি
অ্যান্ড্রয়েড ভারশন ৭.১ (নুগাট)
ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৩৬০০ এমএএইচ
ডিসপ্লে প্রোটেকশন

৩. মোটো জি৫ প্লাস

” মোটোরোলা ” কোম্পানিটির নাম আপনি অবশ্যই শুনেছেন। অনেকে শুনেছেন এবং ভুলেও গিয়েছেন। কিন্তু তারা স্মার্টফোন তৈরি করতে একেবারেই ভুলে যায়নি, যদিও মোটোরোলা বা মোটো ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনগুলো এখন লেনোভো ম্যানুফ্যাকচার করে থাকে। এবছর তারা নতুন দুটি বাজেট স্মার্টফোন রিলিজ করেছে তাদের জি লাইনাপে। অর্থাৎ, গত বছরের মোটো জি ৪ এবং জি৪ প্লাস রিলিজ করে বেশ ভাল সাড়া পাওয়ার পরে এবছর তারা তাদের জি লাইনাপে নতুন দুটি স্মার্টফোন যোগ করেছে যার একটি হচ্ছে মোটো জি৫ এবং আরেকটি হচ্ছে মোটো জি৫ প্লাস। এই দুটিই বাজেট স্মার্টফোন। তবে আজকের বাজেট স্মার্টফোনের লিস্টে যেটিকে যোগ করছি তা হল মোটো জি৫ প্লাস।

মোটো জি৫ প্লাস এবং লিস্টের প্রথমের শাওমি মি  এ১ এর মধ্যে একটি বিষয়ে মিল আছে। সেটি হচ্ছে এদের সফটওয়্যার। এই দুটি ফোনের সফটওয়্যারই পিওর স্টক অ্যান্ড্রয়েড। মোটো জি৫ প্লাস AndroidOne ডিভাইস নয় এবং এর সফটওয়্যার সরাসরি গুগল দ্বারা নিয়ন্ত্রিতও নয়। কিন্তু এর সফটওয়্যার একেবারেই ক্লোজ টু স্টক রাখা হয়েছে, ওয়ানপ্লাস স্মার্টফোনগুলোর সফটওয়্যার এর মত। এছাড়া স্টক অ্যান্ড্রয়েড (৭.০ নুগাট) এর সাথে এই স্মার্টফোনে এক্সট্রা কিছু মোটো এক্সক্লুসিভ ফিচারও অ্যাড করা হয়েছে। যেমন, মোটো ডিসপ্লে, টুইস্ট টু টার্ন অন ক্যামেরা, ওয়ান ফিঙ্গার ন্যাভিগেশন ইত্যাদি। এছাড়া স্টক অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন হওয়ায় এই স্মার্টফোনে পরবর্তী সিস্টেম আপডেটগুলোও তুলনামূলকভাবে দ্রুত পাওয়া যাবে।

স্পেসিফিকেশনের কথা বলতে হলে, এটি একটি মিড রেঞ্জ স্মার্টফোন হওয়ায় এতে চিপসেট হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ যা একটি পাওয়ার সেভিং এবং মিড রেঞ্জ চিপ এবং গ্রাফিক্স হ্যান্ডেল করার জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে অ্যাড্রেনো ৫০৬ জিপিউ। এছাড়া ৪ জিবি র‍্যাম এবং ৬৪ জিবি স্টোরেজ থাকছে। স্টোরেজ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হবেনা, কারন মাইক্রো এসডি কার্ড সাপোর্টও থাকছে। এছাড়া রিয়ারে থাকছে ১২ মেগাপিক্সেলের এফ ১.৭ অ্যাপারচারযুক্ত অটো ফোকাস ক্যামেরা যা ৪কে ভিডিও করতে সক্ষম এবং ফ্রন্টে থাকছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এই ফোনটির ক্যামেরা পারফরমেন্স দাম অনুযায়ী অনেক ভালো। মোটো জি লাইনাপ সবসময়ের জন্যই বাজেটের মধ্যে বেস্ট ক্যামেরা পারফরমেন্স দেওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিল। গত বছরের জি৪ এবং জি৪ প্লাসের ক্যামেরাও দাম অনুযায়ী যথেষ্ট ভাল ছিল। এবছরও তার কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। এছাড়া এই ফোনটিতে থাকছে স্প্ল্যাশ এবং ডাস্ট রেসিস্ট্যান্স যেটি এই লিস্টের আর অন্য কোন ফোনে নেই। আর এই ফোনটির সফটওয়্যার এবং গেমিং পারফরমেন্স শাওমি মি এ১ এর মতই হবে আশা করতে পারেন। অর্থাৎ, ফোনটি সাধারন প্রতিদিনের টাস্কস ভালভাবেই হ্যান্ডেল করতে পারে এবং এড্রেনো ৫০৬ জিপিউ মোটামোটি সব ধরনের লাইট ও মোটামোটি হেভি ২ডি/৩ডি গেমগুলো স্মুথলি চলার জন্য যথেষ্ট।

দাম অনুযায়ী এই স্মার্টফোনের স্পেসিফিকেশনও খারাপ নয়। কিন্তু মিড বাজেট স্মার্টফোন হওয়ায় হাই এন্ড স্পেসিফিকেশন আশা করাও বোকামি। এর প্রধান কয়েকটি স্পেসিফিকেশন নিচের চার্টে দেখতে পারেন। স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে  দেখতে পারেন।

প্রাইস : ২৫,০০০ থেকে ২৭,০০০ টাকার মধ্যে। 

চিপসেট স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫
র‍্যাম ও স্টোরেজ ৪ জিবি ও ৬৪ জিবি+মাইক্রো এসডি
জিপিউ অ্যাড্রেনো ৫০৬
ডিসপ্লে রেজোলিউশান ১০৮০ পি
ক্যামেরা (রিয়ার+ফ্রন্ট) ১২ রিয়ার+৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট
ডিসপ্লে সাইজ ৫.২ ইঞ্চি
অ্যান্ড্রয়েড ভারশন ৭.১ (নুগাট)
ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৩০০০ এমএএইচ
ডিসপ্লে প্রোটেকশন গোরিলা গ্লাস ৩

৪. শাওমি রেডমি নোট ৪ এক্স (৩/৩২ বা ৪/৬৪)

আমার মনে হয়না এই স্মার্টফোনটি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলার দরকার আছে। কারন, এটাকে অলরেডি অনেক জায়গায় বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট স্মার্টফোন উপাধি দেওয়া হয়ে গেছে। এটি হচ্ছে এবছর ইন্ডিয়ার সবথেকে বেশি বিক্রি হওয়া স্মার্টফোন। বাংলাদেশেও অনেকটা তেমনই। বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখা যাক কি কি থাকছে এই ফোনে।

স্মার্টফোনটি মেটাল বিল্ট, যদিও ফোনের ওপরে এবং নিচে দুই জায়গায় কিছুটা প্লাস্টিক ব্যাবহার করা হয়েছে। এই স্মার্টফোনটি দেখতে অনেকটা গত বছরের মডেল রেডমি নোট ৩ এর মত। কিন্তু রেডমি নোট ৪ এক্স এর ডিজাইন নোট ৩ এর থেকে অনেক বেশি ইম্প্রুভড। থাকছে ৫.৫ ইঞ্চির আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে যার রেজোলিউশান ১০৮০ পি। এছাড়া চিপসেট হিসেবে আগের মোটো জি৫ এবং মি এ১ এর মতই থাকছে স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ এবং জিপিউ হিসেবে থাকছে অ্যাড্রেনো ৫০৬। এই স্মার্টফোনটি ৩ টি ভার্সনে পাওয়া যায়। একটি ২ জিবি র‍্যাম এবং ১৬ জিবি স্টোরেজের, আরেকটি ৩ জিবি র‍্যাম এবং ৩২ জিবি স্টোরেজের এবং আরেকটি ৪ জিবি র‍্যাম এবং ৬৪ জিবি স্টোরেজের। সবগুলো ভার্সনেই থাকছে মাইক্রো এসডি কার্ড সাপোর্ট। আর সফটওয়্যার হিসেবে থাকছে শাওমির চিরচেনা মিইউআই। আমি পারসোনালি স্টক অ্যান্ড্রয়েডের ফ্যান হলেও শাওমির মিইউআই অনেকের কাছেই অনেক প্রিয় একটি কাস্টম ইউআই।

ক্যামেরা সেকশন নিয়ে বলতে হলে, এই ফোনটির রিয়ারে থাকছে ১৩ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস ক্যামেরা যার অ্যাপারচার ২.০ এবং ফ্রন্টে থাকছে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা যার কোয়ালিটি খুব একটা ভালো নয়। রিয়ার ক্যামেরা মোটামোটি ভাল হলেও ফ্রন্ট ক্যামেরা খুব একটা ভাল নয় (আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলা। কারণ, আমি এই ফোনটি ব্যাবহার করেছি এবং এখনও করি)। আপনি যদি সেলফি লাভার হন, তাহলে আপনার এই স্মার্টফোন না নেওয়াই ভাল হবে।

আর পারফরমেন্স মোটামোটি ভালই বলা যায় যদিও খুব বেশি ভাল হবেনা। এটির স্পেসিফিকেশন শাওমি মি এ১ এবং মোটো জি৫ এর মত হলেও পারফর্মেন্স ওদের তুলনায় একটু খারাপ হবে। এর কারণ হচ্ছে নোট ৪ এক্স এর সফটওয়্যার এবং সফটওয়্যার অপটিমাইজেশন। মিইউআই স্টক অ্যান্ড্রয়েডের থেকে বেশি হেভি এবং অনেক কম অপটিমাইজড। তাই অন্যান্য অনেক কাস্টম ইউআই এর থেকে মিইউআই এর পারফরমেন্স ভাল হলেও, স্টক অ্যান্ড্রয়েডের মত হবেনা। আর এই স্মার্টফোনটির একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ। কারণ, এই ফোনে ব্যাবহার করা হয়েছে ৪১০০ এমএএইচ এর ব্যাটারি। এছাড়া স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ একটি পাওয়ার সেভিং চিপসেট। তাই পাওয়ার সেভিং চিপসেটের সাথে ৪১০০ এমএএইচ এর ব্যাটারি  ব্যাবহার করার ফলে ফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ হয় অসাধারন। আপনি হেভি ইউজ করলেও প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা স্ক্রিন অন টাইম পাবেন।

এর প্রধান কয়েকটি স্পেসিফিকেশন নিচের চার্টে দেখতে পারেন। স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে দেখতে পারেন।

প্রাইস : ১৫-১৬ হাজার (২/১৬), ১৮-১৯ হাজার (৩/৩২), ২১-২২ হাজার (৪/৬৪) (অফিশিয়াল)

চিপসেট স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫
র‍্যাম ও স্টোরেজ ২/১৬, ৩/৩২, ৪/৬৪+ মাইক্রো এসডি
জিপিউ অ্যাড্রেনো ৫০৬
ডিসপ্লে রেজোলিউশান ১০৮০ পি
ক্যামেরা (রিয়ার+ফ্রন্ট) ১৩ রিয়ার+৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট
ডিসপ্লে সাইজ ৫.৫ ইঞ্চি
অ্যান্ড্রয়েড ভারশন ৭.০ (নুগাট)
ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৪১০০ এমএএইচ
ডিসপ্লে প্রোটেকশন

৫. নোকিয়া ৫

নোকিয়ার নাম শোনেনি বা নোকিয়ার ফোন কখনো ব্যাবহার করেনি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুজে পাওয়া কঠিন। নোকিয়া নামটি শুনলেই মনে নস্টালজিয়া সৃষ্টি হয়। নোকিয়া যখন ২০১৭ সালে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন নিয়ে মার্কেটে আসলো, তখন এটাই ছিল তাদের প্রধান মার্কেটিং পলিসি। কারণ, নোকিয়া মোবাইলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগে থেকেই একটা ভালবাসা আছে। তার মানে এই না যে নোকিয়ার হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার বা নোকিয়ার স্মার্টফোন খারাপ। কিন্তু এখন নোকিয়া যেসব ফোন মার্কেটে বিক্রি করছে সেসব আসলে HMD Global এর ম্যানুফ্যাকচার করা। যাইহোক, এই লিস্টের সবশেষে রাখছি নোকিয়ার এবছর রিলিজ করা স্মার্টফোন, নোকিয়া ৫।

সত্যি কথা বলতে, নোকিয়া ৫ খুব অসাধারন কোন স্মার্টফোন নয়। মুলত, স্পেসিফিকেশন বিচার করে আগেরগুলোর থেকেও কিছুটা নিচে রাখব আমি এই স্মার্টফোনটিকে। তবুও কেন এই লিস্টে ইনক্লুড করলাম? ওইযে, নস্টালজিয়া! যাইহোক, অ্যালুমিনিয়াম ইউনিবডির  নোকিয়া ৫ স্মার্টফোনে থাকছে ৫.২ ইঞ্চির ৭২০ পি আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে। এছাড়া চিপসেট হিসেবে থাকছে স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ যা একটি এন্ট্রি লেভেল চিপসেট যা লিস্টের আগের স্মার্টফোনগুলোর চিপসেটের থেকে অনেকটাই কম পাওয়ারফুল। এছাড়া জিপিউ হিসেবে থাকছে অ্যাড্রেনো ৫০৫ যেটিও আগের স্মার্টফোনগুলোর জিপিউ থেকে কিছুটা কম পাওয়ারফুল। রিয়ারে থাকছে ১৩ মেগাপিক্সেল অটোফোকাস ক্যামেরা এবং ফ্রন্টে থাকছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। এই স্মার্টফোনটির দাম অনুযায়ী ক্যামেরা মোটামোটি ভালই যদিও আরেকটি বেটার হতে পারত। আর ব্যাটারি থাকছে ৩০০০ এমএএইচ।

আর এই স্মার্টফোনটির সফটওয়্যার হিসেবে থাকছে মোটো জি৫ এবং মি এ১ এর মত পিওর স্টক অ্যান্ড্রয়েড। স্টক অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন হওয়ায় এবং নোকিয়ার অপটিমাইজেশনের কারণে এই ফোনটির পারফরমেন্স আর ১০ টা স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ চালিট স্মার্টফোনের থেকে বেটার হবে। কিন্তু তাই বলে খুব ভাল হবে এটা আশা করার কারণ নেই। কারণ আগেই বলেছি স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ হচ্ছে এন্ট্রি লেভেল চিপসেট। এই স্মার্টফোনে আপনি ডে টু ডে টাস্কগুলোতে ল্যাগের খুব একটা দেখা পাবেন না, কিন্তু র‍্যামের স্বল্পতার কারণে মাল্টিটাস্কিং এর সময় ঝামেলায় পড়বেন। এছাড়া মোটামোটি লাইট গেমগুলো এবং সিঙ্গেল প্লেয়ার ভালোভাবেই খেলতে পারবেন, কিন্তু গ্রাফিক্স ইন্টেন্সিভ মাল্টিপ্লেয়ার গেমগুলো খেলার কথা চিন্তা করবেন না, কারণ সেগুলো এতটাই ল্যাগ করবে যে প্রায় খেলার অযোগ্য হয়ে যাবে।

আপনি যদি নোকিয়ার ফ্যান হয়ে থাকেন এবং যদি স্মার্টফোন শুধুমাত্র লাইট ইউজ করেন, গেম খুব বেশি না খেলেন, তাহলে আপনি নোকিয়া ৫ নিতেই পারেন। এর প্রধান কয়েকটি স্পেসিফিকেশন নিচের চার্টে দেখতে পারেন। স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত এখানে দেখতে পারেন।

চিপসেট স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০
র‍্যাম ও স্টোরেজ ২ জিবি ও ১৬ জিবি+মাইক্রো এসডি
জিপিউ অ্যাড্রেনো ৫০৫
ডিসপ্লে রেজোলিউশান ৭২০ পি
ক্যামেরা (রিয়ার+ফ্রন্ট) ১৩ রিয়ার+৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট
ডিসপ্লে সাইজ ৫.২ ইঞ্চি
অ্যান্ড্রয়েড ভারশন ৭.১.১ (নুগাট)
ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৩০০০ এমএএইচ
ডিসপ্লে প্রোটেকশন গোরিলা গ্লাস

তো এই ছিল এবছর রিলিজ হওয়া কয়েকটি বাজেট স্মার্টফোন যেগুলো আপনি কিনতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories