অ্যান্ড্রয়েড টিপস : যেগুলো আপনার অনুসরণ করা উচিত!

আজকের দিনে প্রায় অধিকাংশ মানুষই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যাবহার করে থাকেন। যদিও এখন আর অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যাবহার করার জন্য খুব বেশি কিছু জানার প্রয়োজন পড়ে না, তবুও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনকে আরও বেটার করতে চাইলে বা আরও ভাল রাখতে চাইলে আপনার আপনার কয়েকটি টিপস অনুসরণ করা উচিৎ। আজকে এমনই পাঁচটি অ্যান্ড্রয়েড টিপসের ব্যাপারে আলোচনা করব। আপনি যদি আগে থেকেই অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের ব্যাপারে প্রো হয়ে থাকেন, অর্থাৎ এসব টিপস-ট্রিকস যদি আগে থেকেই আপনি জেনে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য নয়। কিন্তু যদি আপনি এসব না জেনে থাকেন, তাহলে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আশা করি ভাল কিছু অ্যান্ড্রয়েড টিপস জানতে পারবেন যেগুলো আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনটিকে বেটার পারফর্ম করতে সাহায্য করবে। এবার তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মুল বিষয়ে আসা যাক।


র‍্যাম ক্লিনার ব্যাবহার করা বন্ধ করুন

এটি হয়ত আপনি আরও অনেকবার শুনে থাকবেন আগে। কারন এটিই হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের সবথেকে ভাল এবং সবথেকে উপকারী টিপস। আপনি একজন বাংলাদেশি হয়ে থাকেন বা যদি আরও ৮০% বাংলাদেশি স্মার্টফোন ইউজারদের মত হয়ে থাকেন, তাহলে হয়ত আপনার ফোনের অ্যাপ লিস্ট ঘাটলে ক্লিন মাস্টার, ৩৬০ সিকিউরিটি বা ডিইউ ব্যাটারি সেভার ইত্যাদি এই ধরনের ” র‍্যাম ক্লিনার ” অ্যাপ খুজে পাওয়া যাবেই। কারন এই ধরনের অ্যাপগুলা এশিয়ার মানুষ এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার মানুষরাই বেশি ব্যাবহার করে।

কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এসব অ্যাপ একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। যদি আপনার ফোনটি লো এন্ড হয় অর্থাৎ ডুয়াল কোর প্রোসেসর এবং ৫১২ বা ১ জিবি র‍্যামের স্মার্টফোন হয়, তাহলে হয়ত এই ধরনের র‍্যাম ক্লিনার বা স্পিড বুস্টার অ্যাপ আপনার দরকার হতে পারে। কিন্তু আপনার স্মার্টফোনটি যদি আপার মিড রেঞ্জ বা হাই এন্ড কনফিগের স্মার্টফোন হয়, তবে আপনার উচিৎ এসব অ্যাপ থেকে ১০০ হাত দূরে থাকা। কারন, এগুলো আপনার ফোনের উপকার তো করেই না, বরং আপনার ফোনের সব ক্যাশ ক্লিয়ার করে এবং একটার পর একটা টাস্ক কিল করে করে ফোনের আরও ক্ষতি করে। এছারা বিরক্তিকর সব নোটিফিকেশন এবং এডস তো আছেই।

ফোনের র‍্যাম ম্যানেজ করার জন্য অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম নিজেই যথেষ্ট স্মার্ট এবং ক্যাপেবল। এর জন্য কোন থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যাবহার করা শুধুমাত্র বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। র‍্যাম ক্লিয়ার করার জন্য এসব থার্ড পার্টি অ্যাপ ইন্সটল করলে তা অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের নিজের অপটিমাইজেশন এবং নিজের প্রোসেসে ব্যাঘাত ঘটায় যেটা ফোনের জন্য মোটেই ভাল ব্যাপার নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব অ্যাপ আনইন্সটল করুন (যদি কখনো ইন্সটল করে থাকেন)।

gReenify ব্যাবহার করুন

Greenify অ্যাপটি রুটেড অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের কাছে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। আমার মতে এই অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য সবথেকে উপকারি অ্যাপগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এই অ্যাপটি আগে রুট ছাড়া ব্যাবহার করা যেত না। কিন্তু এখন এই অ্যাপের দেভেলপার রুট অ্যাক্সেস ছাড়াও এই অ্যাপটি ব্যাবহার করার ফাংশনালিটি যোগ করেছে, যদিও সিস্টেম লিমিটেশনের কারণে  রুট অ্যাক্সেস ছাড়া অ্যাপটির সম্পূর্ণ ফাংশনালিটি পাওয়া যায়না এখনো।  এই অ্যাপটি মুলত আপনার ফোনের যেসব অ্যাপ আপনি খুব কম ব্যাবহার করেন সেসব অ্যাপ হাইবারনেট করে রেখে দিতে পারে। এই অ্যাপটি নিশ্চিত করে যে ওই ধরনের কম দরকারি অ্যাপগুলো যেন আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ এবং পারফরমেন্সের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে না পারে।

 

যেমন, আপনি যদি স্কাইপ অ্যাপটি খুব কম ব্যাবহার করেন, তাহলে সেটি এই অ্যাপের হাইবারনেশন লিস্টে অ্যাড করে রেখে দিতে পারেন। তাতে স্কাইপের মত একটি হেভি এবং র‍্যাম হাংরি অ্যাপের কারণে আপনার ফোনে আগের মত প্রভাব পড়বে না, যেহেতু Greenify সেটাকে অধিকাংশ সময় হাইবারনেট করে রেখে দেবে। Greenify অ্যাপটি কয়েকদিন ব্যাবহার করলেই আপনি বুঝতে পারবেন এর উপকারিতা কি।  যদিও, এই অ্যাপটি একটু সতর্কতার সাথে ব্যাবহার করতে হয়। যেমন, আপনাকে জানতে হবে যে কোন কোণ অ্যাপ হাইবারনেট করা উচিৎ এবং কোনটি নয়। যেমন, কোন সিস্টেম অ্যাপ বা সিস্টেম অ্যাপ হাইবারনেট করলে আপনার ফোনে বিভিন্ন ধরনের ক্রিটিক্যাল প্রবলেম দেখা দিতে পারে। কিন্তু যদি বুঝে শুনে এবং সতর্কতার সাথে এই অ্যাপটি ব্যাবহার করা হয়, তবে এই অ্যাপটির মত উপকারী অ্যাপ আপনি আর কোথাও পাবেন না।

 

পছন্দ অনুযায়ী এনিমেশন স্পিড পরিবর্তন করুন

এই বিষয়টি আসলে লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। আপনি যদি আপনার ফোনের এবাউট সেকশনে গিয়ে Build Number অপশনটির ওপর ৫ বার ক্লিক করেন পরপর, তাহলে আপনি একটি পপআপ নোটিফিকেশন পাবেন যেখানে লেখা থাকবে, Congratulation, Now you are a developer। এরপর আপনি আপনার ফোনের সেটিংস পেজের নিচের দিকে একটি নতুন অপশন দেখতে পাবেন যার নাম Developer Options। সেখানে আপনি আপনি কিছু এডভান্সড সেটিংস অ্যাক্সেস করতে পারবেন এবং সেটিংস চেঞ্জও করতে পারবেন। এইটুকু পর্যন্ত আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেনা এই অপশন থেকে ফোনের এনিমেশন স্পিড চেঞ্জ করা যায়। আপনি যদি জেনে থাকেন, তাহলে এটা আপনার জন্য নয়।

এই ডেভেলপমেন্ট সেটিংস অপশনে যদি আরও নিচে স্ক্রল করতে থাকেন তবে আপনি ৩ টি  এনিমেশন সম্পর্কিত সেটিংস পাবেন।  এবার যারা জানেন না, তারা শুনুন, ফোনের এনিমেশন স্পিড চেঞ্জ করলে, আপনার ফোনের এনিমেশনগুলো সাধারনের তুলনায় আরও দ্রুত কাজ করবে। অর্থাৎ, আপনি কোন অ্যাপ ওপেন-ক্লোজ করার সময় যে এনিমেশনটি দেখতে পান, অ্যাপের কোন অপশন মেনু বা ডায়লগ বক্স পপআপ হওয়ার সময় যে এনিমেশন দেখতে পান, সেসব এনিমেশন আরও দ্রুত হবে।

 

এটি সত্যিকার অর্থে আপনার ফোনকে আগের তুলনায় ফাস্ট করেনা, কিন্তু এনিমেশন দ্রুত দেখানোর কারণে, ফোনটি ব্যাবহার করার সময় তা আপনার কাছে আগের তুলনায় ফাস্ট এবং স্ন্যাপি মনে হবে। সাধারনত অ্যান্ড্রয়েডের সকল এনিমেশন 1.0 স্কেলে দেখানো হয়। আপনি যদি ওই ৩ টি এনিমেশন সেটিংস থেকে এই ভ্যালুটি চেঞ্জ করে 0.5 করে দেন তাহলে আপনার ফোনের এনিমেশনগুলো আগে যত দ্রুত কাজ করত, এরপর তার থেকে দ্বিগুণ দ্রুত কাজ করবে। তাই আপনার ফোনটি আরও ফাস্ট মনে হবে ইউজ করার সময়। নিচের স্ক্রিনশটে দেখুন এতা কিভাবে করতে হবে।

 

অ্যাপ পারমিশনস কন্ট্রোল করুন

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপনি যেসব অ্যাপ আপনি ইন্সটল করেন, সেগুলো আপনার বা আপনার ফোনের পারমিশন ছাড়া কিছুই করতে পারে না। যেমন, আপনি যদি একটি ভিডিও প্লেয়ার ইন্সটল করেন, তাহলে তার দরকার হবে আপনার ফোনের স্টোরেজ অ্যাক্সেস করার পারমিশন। তাছাড়া এই অ্যাপটি আপনাকে আপনার ফোনের ভিডিও প্লে করে দেখাতে পারবে না। তাই আপনি শুধুমাত্র এই অ্যাপটিকে আপনার স্টোরেজ অ্যাক্সেস করার পারমিশনই দেবেন। কিন্তু একটি ভিডিও প্লেয়ার অ্যাপ যদি আপনার ফোনের কল হিস্টোরি এবং কন্টাক্টস অ্যাক্সেস করার পারমিশন নেয়, তাহলে নিশ্চই সেটি কোন নিরাপদ অ্যাপ নয়। সেটি কোন স্ক্যাম অ্যাপ হতেই পারে।

এই ধরনের অ্যাপ আইডেন্টিফাই করার একমাত্র উপায় হল এই অ্যাপটি আপনার ফোনের কি কি অ্যাক্সেস করার পারমিশন চাচ্ছে তা চেক করা। যদি মনে করেন যে কোন অ্যাপ এমন কোন পারমিশন চাচ্ছে যা তার সাধারনত দরকার হওয়ার কথা নয়, তাহলে আপনি অ্যাপটি যত দ্রুত সম্ভব আনইন্সটল করে দিন। যদি আপনার স্মার্টফোনটি অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ বা তার অপরের কোন অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনে চালিত হয়, তাহলে আপনি কোন অ্যাপকে কি কি পারমিশন দেবেন তা নিজেই সিলেক্ট করতে পারবেন ওই অ্যাপটির ইনফো চেক করে। কিন্তু যদি ৬.০ এর আগের ভার্সনে চালিত কোন ফোন হয়, তবে এই ধরনের সন্দেহজনক অ্যাপ আনইন্সটল করে দেয়াই বেটার।

 

সবসময় রিসেন্ট অ্যাপস ক্লিয়ার করা বন্ধ করুন

আপনি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের মতই হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার একটি অভ্যাস হচ্ছে বারবার আপনার ফোনের রিসেন্ট অ্যাপস স্ক্রিনে জমে থাকা সব অ্যাপগুলোকে সোয়াইপ করে বন্ধ করে দেয়া। এই অভ্যাসটি আমারও ছিল আগে। আপনার মনে হতে পারে যে, কোন অ্যাপ ব্যাবহার করা শেষ হয়ে গেলে সেটি রিসেন্ট অ্যাপস লিস্ট থেকে কিল করে দেওয়া উচিৎ, কারন অ্যাপটি রানিং থাকলে তা আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ এবং র‍্যামের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল।

আপনি যদি কোনো অ্যাপ ক্লোজ করার পরে আবার রিসেন্ট অ্যাপ থেকেও  অ্যাপটি কিল করে দেন, তাহলে অ্যাপটি আর ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থাকেনা। যার ফলে, পরের বার যখন আপনি অ্যাপটি আবার ওপেন করেন, তখন আপনার ফোনের র‍্যাম এবং প্রোসেসরকে ওই অ্যাপটি আবার নতুন করে ওপেন করতে হয়, যেহেতু ওই অ্যাপটি আর ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং নেই। তাই সম্পূর্ণ অ্যাপটি আবার নতুন করে ওপেন করার কারণে, আপনার প্রোসেসর এবং র‍্যামকে সাধারনের তুলনায় বেশি কাজ করতে হয় এবং এদের ওপরে বেশি চাপ পড়ে, যে চাপটি অ্যাপটি ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং থাকলে পড়তনা। তাই আপনি যদি কোন অ্যাপ রিসেন্ট অ্যাপ থেকে ক্লিয়ার না করেন, তাহলে পরের বার অ্যাপটি ওপেন করার সময় আপনার ফোনের প্রোসেসর এবং র‍্যামকে খুব বেশি কাজ করতে হবেনা। ফলে অ্যাপটিও খুব দ্রুত ওপেন হবে এবং আপনার ফোনের ওপর তেমন কোন চাপও পড়বে না। এবং সবসময় মনে রাখবেন, ফোনের র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট করার জন্য অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম নিজেই যথেষ্ট স্মার্ট। তাই এটা নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবেনা।

তো, এগুলোই ছিল ৫ টি টিপস যেগুলো আপনার অনুসরণ করা উচিৎ যদি আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনটিকে আরও ভাল রাখতে চান। শুধু এই ৫ টি নয়, এমন আরও অনেক টিপস আছে। সেগুলো নিয়ে অন্য একদিন আলোচনা করা যাবে।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনার কোন ধরনের প্রশ্ন বা কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। ভালো থাকবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories