রিফারবিশনড ফোন : আপনার কি এটি কেনা উচিৎ? সবকিছু বিস্তারিত!

আজকের দিনে রিফারবিশড ফোন- এই নামটি আপনি অবশ্যই অনেকবার শুনেছেন। হয়ত কখনো অনলাইনে স্মার্টফোন কেনার সময় এই নামটি বেশি শুনে থাকবেন। কারন, অনলাইনেই এসব ফোন বেশি সেল করা হয়। আপনি হয়ত খেয়াল করলে দেখবেন যে অনলাইন মার্কেটে যেসব রিফারবিশড সেল করা হয় সেগুলোর দাম সাধারনের তুলনায় প্রায় ৫০% এর বেশি পর্যন্ত কম হয়ে থাকে।

এসব দেখে আপনি হয়ত ভেবেও থাকবেন যে এগুলো আসলে নকল স্মার্টফোন বা ক্লোন স্মার্টফোন। এটা ভাবাই স্বাভাবিক। কারন, ফোন নকল না হলে এত কম দামে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধারণাটি একেবারেই ভুল। রিফারবিশড ফোন মানেই কিন্তু নকল ফোন বা ক্লোন স্মার্টফোন নয়। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় এটাই।


রিফারবিশড স্মার্টফোন কি?

ধরুন, আপনি স্যামসাঙ এর স্মার্টফোন কিনেছেন কয়েক মাস আগে। স্বাভাবিকভাবেই আপনি স্মার্টফোনটির সাথে ১ বছরের সার্ভিস এবং রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি পেয়েছেন। স্মার্টফোনটি ৩/৪ মাস ব্যাবহার করার পরেই আপনার ফোনে একটা সমস্যা দেখা দিল।

হয়ত আপনার ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক কমে গেল অথবা আপনার ফোনের স্পিকার বা মাইক্রোফোন কাজ করা বন্ধ করে দিল বা এই ধরনের অন্য কোন সমস্যা দেখা দিল এবং আপনি স্মার্টফোনটি স্যামসাঙ রিপেয়ার সেন্টারে নিয়ে গেলেন এবং স্মার্টফোনটি ঠিক না করে, আপনি স্মার্টফোনটির রিপ্লেসমেন্ট দাবী করলেন।

এখন স্যামসাঙ কর্পোরেশন আপনার স্মার্টফোনটি ঠিক করে দিতে পারলেও তারা আপনার স্মার্টফোনটির রিপ্লেসমেন্ট দিতে বাধ্য, যেহেতু তারা আপনাকে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি দিয়েছে। তারা আপনাকে আপনার ফোনটি রিপ্লেস করে দেবে। কিন্তু আপনি যে নষ্ট হয়ে যাওয়া স্মার্টফোনটি ওদের কাছে জমা দিয়েছেন, সেটি ওরা কি করবে?

ওরা যা করতে পারে, তা হচ্ছে, আপনার ওই স্মার্টফোনটিতে যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো রিপেয়ার করে তারা এই স্মার্টফোনটি আবার সেল করতে পারে। এখন এই স্মার্টফোনটিই হচ্ছে রিফারবিশড স্মার্টফোন। অর্থাৎ, এগুলো হচ্ছে ইউজড স্মার্টফোন যেগুলোর প্রবলেম রিপেয়ার করে আবার সেল করা হচ্ছে। কিন্তু আপনি নিশ্চই এই স্মার্টফোনটি একটি নতুন স্মার্টফোনের সমান দাম দিয়ে কিনতে চাইবেন না।

ঠিক এই কারনে এসব স্মার্টফোনের দাম একটি নতুন স্মার্টফোনের থেকে অনেক কম হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ফোনটি নকল বা ক্লোন। ফোনটি অবশ্যই অরিজিনাল, শুধুমাত্র ফোনটি ইউজড এবং রিপেয়ার করা হয়েছে। হয়ত ফোনের ভেতরের কোন পার্টস বা কম্পোনেন্টস রিপ্লেস করা হয়েছে। কিন্তু স্মার্টফোনটি নকল নয়।

 

রিফারবিশড ফোন সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এক ধরনের ফোন সরাসরি ম্যানুফ্যাকচারারের দ্বারা রিফারবিশড করা হয়। এটি হচ্ছে সেই ধরনের স্মার্টফোন যেগুলোর কথা এতক্ষণ ওপরে বললাম। আর আরেক ধরনের ফোন আছে যেগুলো থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারের দ্বারা রিফারবিশড করা হয়।

অর্থাৎ, আপনার কেনা স্মার্টফোনটির যদি আর ওয়ারেন্টি অবশিষ্ট না থাকে এবং আপনি যদি এই স্মার্টফোনটি কোন থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারারের কাছে অনেক কম দামে সেল করে দেন, তাহলে তারা আপনার স্মার্টফোনটি রিপেয়ার করে আরেকটু বেশি দামে রিফারবিশড ফোন হিসেবে অনলাইনে বা অফলাইনে আবার সেল করতে পারে। এটাই হচ্ছে থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা রিফারবিশড স্মার্টফোন।

রিফাবিশড স্মার্টফোনের সুবিধা-অসুবিধা

এখন আশা করি আপনার কিছুটা ধারণা হয়েছে রিফারবিশড ফোনগুলোর ব্যাপারে। এখন সরাসরি প্রধান বিষয়ে আসা যাক। আপনার কি একটি রিফারবিশড ফোন কেনা উচিৎ? এই প্রশ্নটির উত্তর কয়েকটি ছোট ছোট বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। একটি রিফারবিশড ফোন কেনার আগে আপনাকে প্রথমেই সঠিকভাবে জানতে হবে যে এটি কোন ধরনের রিফারবিশড স্মার্টফোন। অর্থাৎ, এটি কি ফার্স্ট পার্টি ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা রিফারবিশড স্মার্টফোন নাকি থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা।

এসময় বেশি প্রায়োরিটি দেওয়া উচিৎ ফার্স্ট পার্টি ম্যানুফ্যাকচারার বা কোম্পানির দ্বারা রিফারবিশড স্মার্টফোনকে। কারন সরাসরি কোম্পানির দ্বারা রিপেয়ার করা হলে সেই স্মার্টফোনে সমস্যা একটু কমই থাকার কথা।

যদিও এই স্মার্টফোনে কোন ধরনের কোন প্রবলেম থাকবেনা বা একেবারে নতুনের মত হবে এটা আশা করাই বোকামি, কিন্তু কোম্পানির দ্বারা রিফারবিশড হলে স্মার্টফোনটির ওপর একটু বেশি বিশ্বাস করা যায়। আবার সরাসরি কোম্পানির দ্বারা রিফারবিশড হলে অনেকসময় আপনাকে ফোনের সাথে ৬ মাস বা ১ বছর বা আরও বেশি অফিশিয়াল ওয়ারেন্টি দেওয়া হবে।

অর্থাৎ রিফারবিশড স্মার্টফোন হওয়ার পরেও, কেনার পরে আপনার ফোনের কোন সমস্যা হলে কোম্পানি আপনাকে ফোনটি রিপেয়ার করে দেবে। কিন্তু থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা রিফারবিশড স্মার্টফোনে এই ধরনের সুবিধা আপনি সাধারনত পাবেন না।

কিন্তু এসব স্মার্টফোনের ওপর আপনি কখনোই ১০০% ভরসা করতে পারবেন না। এই ধরনের যেকোনো স্মার্টফোন কেনার আগে একবার ভেবে নেবেন যে, এই স্মার্টফোনটিতে আগে একবার সমস্যা দেখা দিয়েছিল বলেই এই ফোনটি রিফারবিশড করে সেল করা হচ্ছে।

তাই আপনাকে ধরে নিতেই হবে যে ভবিষ্যতে এই ফোনে আবারো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি মনে করেন যে এটা মেনে নিয়ে আপনি স্মার্টফোনটি ব্যাবহার করতে পারবেন, তাহলেই শুধুমাত্র একটি রিফারবিশড স্মার্টফোন কিনবেন।

এসব স্মার্টফোন কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

ওপরে এসব স্মার্টফোন সম্পর্কে যা যা বললাম এসব জানার পরেও যদি আপনি এই স্মার্টফোন কিনতে চান, তাহলে কেনার আগে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখবেন। যেমন,

১. অবশ্যই স্মার্টফোনটি কোন রিপুটেড অনলাইন/অফলাইন শপ থেকে কিনবেন। যেমন, যদি অনলাইন থেকে কেনেন, তাহলে রিপুটেড অনলাইন স্টোর থেকে কিনবেন। এবং স্মার্টফোনটি কেনার আগে অবশ্যই স্মার্টফোনটির ইউজার রিভিউ এবং সেলার রিভিউ চেক করবেন। যারা এই  স্মার্টফোনটি ওই সেলারের কাছ থেকে কিনেছে, তাদের সাথে সম্ভব হলে সরাসরি যোগাযোগ করুন এবং তার মতামত নিন। এটা সম্ভব না হলে, ওই স্মার্টফোনটি যারা কিনেছে, তারা ওই প্রোডাক্ট সম্পর্কে সাইটে কি কি কমেন্ট করেছে চেক করুন।

২. আবারো বলব, ভালো করে জেনে নিন যে এই স্মার্টফোনটি সরাসরি অফিশিয়াল ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা রিফারবিশড নাকি থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা। এক্ষেত্রে অবশ্যই অফিশিয়াল ম্যানুফ্যাকচারার দ্বারা রিফারবিশড ফোনগুলোকে বেশি প্রায়োরিটি দেবেন।

৩. যে ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন তা আসলেই একটি রিফারবিশড ফোন কিনা সেটা নিশ্চিত হয়ে নেবেন। বিভিন্ন অনলাইন স্টোরে এমন কিছু সেলার আছেন যারা নকল ফোন বা ক্লোন ফোনকে রিফারবিশড স্মার্টফোন বলে সেল করার চেষ্টা করে। এদের ফাঁদে পা দেবেন না কখনোই। এটার থেকে বাঁচার উপায় হল স্মার্টফোন কেনার আগে সেলারের রেটিং দেখে নেয়া, সেলারের ওপরে বায়াররা কতোটা খুশি সেটা লক্ষ্য রাখা এবং প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট রিভিউ ভালোভাবে চেক করা। কারন, এমন কোন বিষয় থাকলে আপনি প্রোডাক্ট রিভিউ থেকেই জানতে পারবেন।

আশা করি, এসব বিষয় মাথায় রাখলেই আপনি রিফারবিশড স্মার্টফোন কেনার সময় মোটামোটি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। কিন্তু আগেই বলেছি, তার মানে এই নয় যে আপনার ফোনে কোন সমস্যা হবেনা। কারন, একটি রিফারবিশড স্মার্টফোন কেনার আগে আপনাকে ধরেই নিতে হবে যে এই ফোনটিতে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। আশা করি, রিফারবিশড স্মার্টফোন সম্পর্কে আপনাদের কোন ভুল ধারণা থাকলে, আমি কিছুটা হলেও বিষয়টিকে আপনার কাছে  পরিষ্কার করতে পেরেছি।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনার কোন ধরনের প্রশ্ন বা কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। ভালো থাকবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories