আপনার নতুন কম্পিউটার’টি দোকান থেকেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত নয় তো?

আজ নিউইয়র্ক টাইমের একটি রিপোর্ট পড়তে গিয়ে আঁতকে উঠলাম, হতে পারে আপনার ব্র্যান্ড নিউ ডেক্সটপ/ল্যাপটপ কম্পিউটার’টি দোকান থেকেই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত! —তাহলে এখন চিন্তা করে দেখুন, আপনার নিরাপত্তা কতোটা রিস্কের মধ্যে রয়েছে। নতুন ফ্রেস কম্পিউটারও ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষিত নয়। আপনি জেনে হয়তো আশ্চর্য হয়ে যাবেন, আজকের দিনে অনেক ব্যাক্তি ম্যালওয়ারের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং পর্যন্ত করে। যারা জানেন না, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি; বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট বা যেকোনো সাইটের যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনি প্রোমট করতে পারবেন, আপনার শেয়ার করা স্পেশাল লিঙ্ক থেকে যদি কেউ ঐ প্রোডাক্ট’টি গ্রহন করে তবে আপনাকে কিছু কমিশন প্রদান করা হয়। ঠিক একইভাবে ম্যালওয়্যার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার’রা নতুন নতুন পিসি ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করায় টাকা কমিশন পাওয়ার জন্য।

পনি হয়তো কম্পিউটার কেনার পরে সেটাতে নতুন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করবেন, আর ভালো কোন অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারও সেখানে ইন্সটল করবেন। কিন্তু আজকের ম্যালওয়্যার গুলো আরো এবং আরো বেশি চালাক হয়ে গিয়েছে। এক স্টাডি থেকে দেখেছি, ম্যালওয়্যার হার্ডওয়্যার ফার্মওয়্যার এর মধ্যেও ইন্সটল করা যেতে পারে, আর এই টাইপের ম্যালওয়্যার ডিটেক্ট করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্র্যান্ড নিউ কম্পিউটার গুলোকে আগে থেকেই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করানোর উদ্দেশ্য কি? প্রথমত যারা আপনার কম্পিউটার’কে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করায়, হতে পারে সেলস ম্যান, তারা টাকা ইনকাম করার জন্য আপনার সিস্টেমে প্রি-বিল্ড ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করিয়ে দেয়। আর ব্ল্যাক হ্যাট’রা আপনার কম্পিউটার’কে আক্রান্ত করায় বহু কারণে। হতে পারে তারা আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন গুলো কালেক্ট করার জন্য আপনার কম্পিউটার আক্রান্ত করায়, আবার আপনার কম্পিউটার’কে বটনেটে পরিনত করানোও তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে। ক্র্যাসপারস্কি’র সিকিউর লিস্ট সাইট অনুসারে ম্যালওয়্যার ডেভেলপার’রা প্রতি ১,০০০ পিসি এনফেক্টেড করার জন্য ৳২০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করে থাকে। কখনো কখনো নাকি এর চেয়ে আরো বেশি টাকাও প্রদান করে।

তো মনে করুণ, আমি একজন ম্যালওয়্যার ডেভেলপার (সত্যিই ভাববেন না আবার!) আর আমি প্রত্যেক ১,০০০ কম্পিউটার আক্রান্ত করানোর জন্য ৳ ২০,০০০ টাকা করে খরচ করলাম। এখন ঐ আক্রান্ত কম্পিউটার গুলো যখন কেউ কিনে নিয়ে গিয়ে অন করবে বা ইন্টারনেটে সক্রিয় করবে, সাথে সাথে ম্যালওয়্যার কাজ করতে আরম্ভ করবে, তারপরে ম্যালওয়্যারের কোয়ালিটি অনুসারে সেটা দ্বারা যেকোনো ক্ষতি ঐ কম্পিউটারটির করানো সম্ভব। ধরুন, ইউজারের কাছে ফেক ভাইরাস অ্যালার্ট প্রদান করানো হলো, (যেমনটা অনলাইন টেক সাপোর্ট স্ক্যামার’রা করিয়ে থাকে) —আর আমি প্রত্যেকটি পিসি’র জন ইউজার থেকে ৳ ৫,০০০ টাকা করে ডিম্যান্ড করলাম। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, ১,০০০ পিসি’র জন্য আমার কাছে আসবে ৳ ৫০,০০,০০০ টাকা! —ভাবতে পাড়ছেন, এটি কতোবড় একটি বিজনেজ। আর নতুন পিসি কেনার পরে কোন সমস্যা দেখা দিলে যেকারো মাথা নষ্ট হয়ে যাবে, আপনি চাইবেন, “কতো টাকা যাবে যাক, ব্যাট পিসি ঠিক হোক”। কিন্তু এখানে আরো ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই যে, টাকা দেয়ার পরেও কোন নিশ্চয়তা নেই আপনার কম্পিউটার তারা নিরাপদ করবে। তাহলে আপনার কি করা প্রয়োজনীয়? চিন্তা করার কারণ নেই, আমি নিচে আলোচনা করেছি, কিভাবে নতুন কম্পিউটারে আপনি ম্যালওয়্যার ডিটেক্ট করবেন এবং কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন…


ধাপ ১; সাথে সাথে ইন্টারনেট কানেক্ট না করা

 

নতুন কম্পিউটার কিনে সাথে সাথে উৎসাহের বসে ইন্টারনেট কানেক্ট করা থেকে বিরত থাকুন, হ্যাঁ, আমি জানি আপনি নতুন কম্পিউটারে ওয়্যারবিডি পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে রয়েছেন, কিন্তু একটু সবুর করুণ। আপনার কম্পিউটার’টিতে যদি ম্যালওয়্যার প্রি-ইন্সটল করা থাকে, সেই ম্যালওয়্যার ইন্টারনেট পেতেই হ্যাকার সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে, আর সম্ভবত নিজের কাজ চালু করে দেবে। হতে পারে ইন্টারনেট কানেক্ট করার সাথে সাথে আপনার কম্পিউটার বটনেটে পরিনত হয়ে যেতে পারে। অথবা, আপনার কম্পিউটার আলাদা কোন ম্যালওয়্যার বা যেকোনো ম্যালিসিয়াস কোড ডাউনলোড করতে শুরু করতে পারে। তো অবশ্যই আপনাকে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে এবং তারপরেই কেবল আপনি কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেক্ট করতে পারবেন।

ধাপ ২; নতুন কম্পিউটার’টি স্ক্যান করুণ

 

আসলে এটিই হচ্ছে প্রথম ধাপ, আগে আপনাকে নতুন কম্পিউটার’টি আরেকটি আলাদা কম্পিউটার ব্যবহার করে স্ক্যান করাতে হবে। মানে কোন ভালো অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রামকে আলাদা কম্পিউটার থেকে ইউএসবি ড্রাইভে নিয়ে বা সিডি, ডিভিডি’তে নিয়ে কোন নেটওয়ার্ক কানেকশন ব্যাতিত আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল করতে হবে এবং সম্পূর্ণ সিস্টেম স্ক্যান করতে হবে। শুধু একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করে কাজ হবে না, সাথে একটি দ্বিতীয় অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার টুল যেমন- ম্যালওয়্যার বাইট ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয় সিকিউরিটি টুল ব্যবহার করার সুবিধার কথা আমি এন্টিভাইরাস বনাম এন্টিম্যালওয়্যার আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

যদি সম্ভব হয়, কিংবা আপনার স্ক্যানারে এই ফিচারটি থাকে, তবে সিস্টেম স্টার্ট হওয়ার সময় স্ক্যানার ব্যবহার করে স্ক্যান করে নিন। এতে লুকিয়ে থাকা ম্যালওয়্যার গুলো সামনে আসার সুযোগ বেড়ে যায়। যদি আপনার সিস্টেমে কোন ম্যালওয়্যার ডিটেক্ট করা হয়, আমি বলবো যদি সম্ভব হয় আপনার কম্পিউটার’টি জাস্ট সেলারের কাছে ফেরত দিন এবং কম্পিউটার প্রস্তুতকারি কোম্পানির কাছে আপনার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে মেইল করুণ। যদি ঐ কম্পিউটার’কে এখনো ব্যবহার করতে চান, তাহলে লেটেস্ট অ্যান্টিভাইরাস আপডেট থাকা একটি কম্পিউটারের সাথে আপনার কম্পিউটার’টি কানেক্ট করুণ এবং স্ক্যান করুণ। তবে সাবধান, স্ক্যান শেষ হবার আগে অ্যান্ড ম্যালওয়্যার রিমুভ করার আগে হোস্ট কম্পিউটার থেকে আক্রান্ত কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক অ্যাক্সেস করবেন না বা কোন ফাইল বা ফোল্ডার ওপেন করবেন না। অবশ্যই একটি সেকেন্ড অ্যান্টিম্যালওয়্যার টুল দ্বারা স্ক্যান করতে ভুলবেন না। যদি বিশ্বাস না হয়, তো গুগল করে দেখুন, আমি কেন সেকেন্ডারি টুল ব্যবহার করার কথা বলি।

ধাপ ৩; অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন

 

আপনার কম্পিউটারে যদি আজব টাইপের কোন ম্যাসেজ শো করে আপনি কিছুই বুঝতে পাড়ছেন না কি করবেন, সেই অবস্থায় বেস্ট হবে একজন অভিজ্ঞ ব্যাক্তির শরণাপন্ন হওয়া। অনলাইনে এমন অনেক সাইট/ফোরাম রয়েছে যেখানে প্রশ্ন করলে আপনাকে অনেক বিশেষজ্ঞ’রা সমাধান প্রদান করার চেষ্টা করে। অথবা আপনি আপনার পরিচিত বিশেষজ্ঞ’দের কাছেও হেল্প নিতে পারেন। যদিও আমি কোন তেমন অভিজ্ঞ নয়, তারপরেও আপনি চাইলে আমাকে জানাতে পারেন বা কমেন্ট করতে পারেন আপনার সমস্যার কথা, আমি সলিউসন করার চেষ্টা করবো।

তবে কিছু কিছু ম্যালওয়্যার আক্রমন অত্যন্ত জঘন্য হতে পারে, আর সবকিছু ইরেজ করে শুরু থেকে শুরু করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। সেই ক্ষেত্রে আমি রেকমেন্ড করবো এই আর্টিকেলটি অনুসরণ করতে। এখানে আপনি সহজেই জানতে পারবেন, কিভাবে হ্যাক হওয়ার পর আপনার কম্পিউটার’কে ফিরিয়ে আনা যায়


তো বন্ধু, এই ছিল এক কুইক আর্টিকেল যেখানে আপনি জানলেন কিভাবে এবং কেন আপনার নতুন কম্পিউটার বক্সে থাকা অবস্থায় ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আর সাথে এটিও জানলেন, কিভাবে আপনার আক্রান্ত কম্পিউটার’কে চেক করবেন বা ফিরিয়ে আনবেন। আবারো বলছি নিরাপত্তার জন্য যতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে, ততোই কম, তাই অবশ্যই বেশি বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করুণ, সাইবার সিকিউরিটি’র সাথে আপডেট থাকুন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories