আনলকড ফোন কি? কেন এটি আপনার জন্য চিন্তার ব্যাপার?

ধরুন আপনার বাবা বিদেশে থাকে, আর সেখান থেকে কোন দামী ফোন আপনার জন্য উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। আপনি তো বেশ খুশি, কিন্তু যখন সিম কার্ড লাগাতে গেলেন, দেখছেন আপনার ফোন আপনার কাছ থেকে লক কোড চাচ্ছে—এটা সিমের পিন কোডও নয়, আবার ফোনের সিকিউরিটি কোডও নয়। সার্ভিস সেন্টারে ফোনটি নিয়ে গেলেন, আর আপনাকে বলা হলো, “আপনার ফোনটি ক্যারিয়ার লক করা রয়েছে” —যা বাবা… এবার কি ধরণের লক? আপনি নিশ্চয় কনফিউশনের মধ্যে পড়ে যাবেন, তাই না? এই আর্টিকেল থেকে লকড ফোন, আনলকড ফোন কি, কেন ফোন লকড করা থাকে, ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে জানবো। তো চলুন, শুরু করা যাক…


কেন ফোন লকড করা থাকে?

আপনি হয়তো শুনে থাকবেন, বিদেশে অনেক কমদামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোন কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন ফোনের দাম সেখানে কম হয়? হ্যাঁ, একটি কারণ হচ্ছে সেখানে ফোন কোম্পানিদের তাদের ফোন বাজারজাত করতে ঐ দেশের সরকারকে অনেক কম ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্তু আরেকটি কারণ হচ্ছে, সেখানে লকড ফোন পাওয়া যায়। এখন লকড ফোন কি? —দেখুন, আসলে ফোন লকড হয় না, ফোনে অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করা থেকে ফোনটিকে লক করা থাকে। কোন বিশেষ মোবাইল অপারেটর মোবাইল ব্র্যান্ডের সাথে চুক্তি করে মোবাইলে এমন একটি লক দিয়ে দেয়, যাতে ঐ অপারেটরের সিম ছাড়া আর অন্য অপারেটরের সিম সেখানে ব্যবহার করা না যায়। এতে ফোনের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু আপনি কেবল এক অপারেটরের সিমই সেখানে ব্যবহার করতে পারেন।

ধরুন আপনি গ্রামীণফোনের লক করা একটি আইফোন ৭ কিনলেন, মানে এতে আপনি শুধু গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহার করতে পারবেন। যদি আপনি গ্রামীণফোন ছাড়া অন্য কোন অপারেটর ব্যবহার না করে থাকেন, তো সেটা আবার জন্য ভালো অপশন, এতে আপনি স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে ফোনটি পেয়ে যাবেন (যদিও বাংলাদেশে ক্যারিয়ার লকড ফোন তেমন একটা নেই)। কিন্তু আপনি সেখানে অন্য সিম কার্ড ব্যবহার করতে চান, আপনি রবিতে চলে যেতে চান, গ্রামীণফোন আপনার সব টাকা কেটে নিচ্ছে, তাহলে আপনাকে ফোনটি আনলক করতে হবে। আপনাকে মোবাইল কোম্পানি থেকে আনলক কোড কিনতে হবে, তবেই আপনি যেকোনো সিম সেখানে ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রত্যেকটি জিএসএম মোবাইলকে সিম কার্ড ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক সার্ভিস কানেক্ট করার জন্য তৈরি করা হয়। আপনার ডিভাইজটি যদি আনলকড হয় তবে জাস্ট পুরাতন সিমটি খুলে নিলেন আর নতুন সিম লাগিয়ে ফেললেন, এতেই কাজ শেষ। কিন্তু লকড ফোনের সাথে আপনি সেটা করতে পারবেন না। একটি বিশেষ সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যখন ডিটেক্ট করবে, আপনি আলাদা অপারেটরের সিম লাগিয়েছেন, তো আপনার কাছে ফোন আনলক করার জন্য কোড চাওয়া হবে। আপনার অপারেটর এবং ফোনটি যদি সিডিএমএ টেকনোলজিতে চলে, সেখানে লকড ফোন বা আনলকড ফোন তেমন একটা ব্যাপার নয়, কিন্তু আপনার ফোনটি যদি জিএসএম, এইচএসপিএ/এইচএসপিএ+ নেটওয়ার্কের হয়, তো লকড ফোনে আপনি অন্য সিম ব্যবহার করতে পারবেন না। আরো পড়ুন; সিম কার্ড কেন প্রয়োজনীয়? সিম ছাড়া কি সেলফোন চালানো সম্ভব?

আনলকড ফোন | কিভাবে ফোন আনলক করবেন?

আশা করছি এতক্ষণে বুঝে গেছেন, আপনার ফোনটিতে কেন অন্য অপারেটর সিম সমর্থন করছে না। মানে আপনার ফোনটিকে আনলক করতে হবে। প্রথমত, যদি বিদেশ থেকে কোন ফোন আনাতে চান, অবশ্যই আনলকড ফোন কেনার চেষ্টা করুণ, এতে আপনাকে আর কোন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। ফোন আনলক করতে অপারেটরকে ফোন করতে হয়, কিন্তু ফোনটি বিদেশ থেকে কেনা হলে, ঐ দেশের অপারেটরকে ফোন করাও এক ঝামেলার ব্যাপার। যদি ভুল বসত বা না জেনে আপনার আত্মীয় লকড ফোন সস্তায় কিনে ফেলে, আর যদি এখনো না পাঠায়, তবে অপারেটরকে ফোন করতে বলুন, আর ব্যাপারটি খুলে বলতে বলুন। অপারেটরকে বোঝান, এই ফোনটি বাইরের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, তো সেখানে আলাদা সিম কার্ড ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে। আমি অনলাইনে দেখেছি, ইউএস ক্যারিয়ার গুলো কিছু টাকা চার্জ করে আপনাকে আনলক কোড দিয়ে দেয়।

এখন দুর্ভাগ্য বসত যদি আপনার কাছে লকড ফোনটি চলেই আসে, তো আপনাকে নিজে থেকেই ফোনটি আনলকড করতে হবে। ইউএসএ তে ফোন নিজে থেকে ফোন আনলক করা পূর্বে অবৈধ ছিল কিন্তু বর্তমানে ফোন আনলকিং বৈধ। আমাদের দেশেও ফোন আনলক করা বৈধ, যেহেতু আপনি টাকা দিয়ে ফোনটি কিনেছেন, তাই আপনি সেটার সাথে যা ইচ্ছা তা করতে পারেন। যদি কোন ট্র্যাস্টেড প্রভাইডার আপনাকে আনলক কোড দিতে চায়, আপনি সেখান থেকে আনলক করে নিতে পারেন। আবার অনলাইনেও অনেক আনলকিং সার্ভিস প্রভাইডার থাকে, তবে খুব সতর্ক, অনলাইনে এই ব্যাপারে কিন্তু খুব চিটারি হয়। আপনার টাকা ডুবে যাওয়ার সম্ভবা থাকে। আলাদা আলাদা ব্র্যান্ড এবং মডেল হিসেবে ফোনের আনলকিং প্রসেস আলাদা হয়ে থাকে, আপনার ফোনটি যদি একটু পুরাতন মডেলের হয়ে থাকে তো হতে পারে সেটার জন্য ফ্রী কোন আনলকিং ট্রিক ইউটিউব বা গুগল সার্চ করলে পেয়ে যাবেন, সেটাও চেক করে দেখতে পারেন।

অবশ্যই সব ফোন লকড অবস্থায় থাকে আপনি যদি ফোন ব্র্যান্ড সাইড থেকে ফোনটি কিনে থাকেন, সেটা অবশ্যই আনলকড ফোন হবে। তবে আপনাকে ফুল টাকা পে করে ফোনটি কিনতে হবে। অপারেটর সাইড থেকে ফোনটি কিনলে হতে পারে সেটা লকড। আনলকড ফোন নিয়ে আপনার যেকোনো প্রশ্ন করতে আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

1 comment

  • একবার ফেসবুকেও কিভাবে জানি একটা সমস্যায় পড়ে পোস্ট দিয়েছিলাম একটা গ্রুপে! আপনি সেটার এন্সার করেছিলেন! আজ আবার এই ব্যাপার টা কোথাও না পেয়ে ওয়েব সার্চ করে জানলাম! নিচে এসে দেখি আপনি!😁 ভালোবাসা রইলো ভাইয়া!❤️

Categories