ডুয়াল বুট | এক কম্পিউটারে একাধিক অপারেটিং সিস্টেম?

যদিও বেশিরভাগ কম্পিউটার গুলো সিঙ্গেল অপারেটিং সিস্টেমের সাথেই বাজারজাত করা হয়, কিন্তু আপনি চাইলে এক কম্পিউটারেই একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে পারেন এবং ব্যবহার করতে পারেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আপনি কম্পিউটার অন করলেন, একটি মেন্যু আপনার সামনে ওপেন হলো, আপনি উইন্ডোজ বা লিনাক্স চয়েজ করলেন, আর সেই চয়েজ অনুসারে অপারেটিং সিস্টেম রান হলো। এই সিস্টেম আপনাকে পৃথিবীর দুইটি বেস্ট অপারেটিং সিস্টেম একসাথে রান করার সুযোগ করে দেয়। আপনি চাইলে একসাথে উইন্ডোজের ভিন্নভিন্ন ভার্সন গুলোকেও পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন, আবার উইন্ডোজের পাশাপাশি লিনাক্স ব্যবহার করতে পারেন। সিঙ্গেল কম্পিউটারে একসাথে একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে রাখার সিস্টেমকেই ডুয়াল বুট বা ডুয়াল বুটিং বলা হয়। কিন্তু কেন এই ডুয়াল বুটিং সিস্টেম? সিঙ্গেল অপারেটিং সিস্টেম কি যথেষ্ট নয়? কিভাবে ডুয়াল বুটিং কাজ করে? —চলুন সবকিছু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক…


ডুয়াল বুট কিভাবে কাজ করে?

আপনার কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম সাধারণত কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে ইন্সটল করা থাকে। যখন আপনি কম্পিউটারটি অন করেন, বায়োস (BIOS) হার্ড ড্রাইভ থেকে বুট লোডার লোড করে এবং সেই বুট লোডার আপনার কম্পিউটারে ইন্সটল থাকা অপারেটিং সিস্টেমকে বুট করে। আপনার কম্পিউটারে আপনি একসাথে কতোগুলো অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে রাখবেন, সেটার কোন লিমিট নেই। আবার আপনি চাইলে একাধিক হার্ড ড্রাইভ আপনার কম্পিউটারে লাগিয়ে রাখতে পারেন, একেক হার্ড ড্রাইভে একেক অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে রাখতে পারেন। কম্পিউটার অন করার সময় বায়োস থেকে হার্ড ড্রাইভ পছন্দ করে, সেটা দ্বারা কম্পিউটার বুট করতে পারেন। আবার আপনি যদি লিনাক্স ইন্সটল ব্যবহার করতে চান, আপনাকে সেটা ইন্সটলও করতে হবে না, লাইভ ইউএসবি বা লাইভ ডিভিডি বানিয়ে আপনি লিনাক্স ইন্সটল করা ছাড়ায় ব্যবহার করতে পারেন।

এমনকি আপনি একটি সিঙ্গেল হার্ড ড্রাইভেও একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে পারেন। শুধু আপনার হার্ড ড্রাইভে আলাদা পার্টিশন তৈরি করতে হবে। আলাদা পার্টিশন গুলোতে আলাদা অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা থাকবে এবং রান করবে। আপনি যদি উইন্ডোজের পাশাপাশি লিনাক্স ডিস্ট্র ইন্সটল করে রাখেন, তবে লিনাক্স বুট লোডার দখল করে নেবে এবং আপনাকে একটি মেন্যু প্রদান করবে যেখানে আপনি উইন্ডোজ বা লিনাক্সের মধ্যে অপারেটিং সিস্টেম চয়েজ করার সুবিধা পাবেন। লিনাক্স ডিস্ট্র সাধারণত মাস্টার বুট রেকর্ড রিপ্লেস করে দেয়। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেরও নিজস্ব বুট লোডার রয়েছে, কিন্তু সেটা তখন কাজ করে, যখন আপনি একসাথে একাধিক উইন্ডোজ ভার্সন ইন্সটল করে রাখেন।

কেন ডুয়াল বুটিং?

আপনার কম্পিউটারে আলাদা অপারেটিং সিস্টেম গুলোর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আপনার কাজ অনুসারে এবং আপনার চাহিদা অনুসারে আলাদা আলাদা অপারেটিং সিস্টেম থেকে আপনি আলাদা সুবিধা গুলো পাবেন, আর ডুয়াল বুট সিস্টেমের জন্য আপনার একাধিক কম্পিউটার থাকার প্রয়জনিয়তা নেই। জাস্ট কম্পিউটার রিবুট করেই আপনি আলাদা অপারেটিং সিস্টেম রান করাতে পারবেন।

ধরুন, আপনি উইন্ডোজ এবং লিনাক্স একত্রে আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করে রেখেছেন। লিনাক্স অনেক সিকিউর, তাই সেখানে আপনি ইন্টারনেট ব্রাউজ সহ যেকোনো ডেভেলপমেন্ট কাজ গুলো সাড়তে পারেন। আর উইন্ডোজ ইন্সটল করে রেখেছেন, সেখানে উইন্ডোজ অনলি সফটওয়্যার এবং গেমিং করার জন্য। আবার আপনি চাইলে লিনাক্সের আলাদা ডিস্ট্র গুলোকেও ইন্সটল করে রাখতে পারেন। হতে পারে আপনি এথিক্যাল হ্যাকিং বা নেটওয়ার্কিং শিখছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে ক্যালি লিনাক্স ব্যবহার করতে হবে। আপনি যদি ম্যাক ব্যবহার করেন, সেখানেও তার পাশাপাশি ডুয়াল বুট সিস্টেমে উইন্ডোজ ব্যবহার করতে পারেন, ম্যাকে উইন্ডোজ থাকলে সেখানে উইন্ডোজ অনলি সফটওয়্যার গুলো এবং উইন্ডোজ গেম রান করাতে পারবেন।

হ্যাঁ, আপনি চাইলে ভার্চুয়াল মেশিন সফটওয়্যার ইন্সটল করেও একাধিক অপারেটিং সিস্টেমকে আপনার কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ডুয়াল বুটিং এর মাধ্যমে আপনি অরিজিন্যালি একাধিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার সুবিধা পাবেন। ভার্চুয়াল মেশিন সফটওয়্যার গুলো নিজেই চলার জন্য আরেকটি অপারেটিং সিস্টেমের উপর নির্ভরশীল, সেখানে আপনাকে একই সময়ে দুইটি অপারেটিং সিস্টেম রান করে রাখতে হবে, এতে বেশি রিসোর্স ব্যয় হবে। কিন্তু ডুয়াল বুটিং সিস্টেমে আপনি কোন অপারেটিং সিস্টেমকে ফুল সিস্টেম রিসোর্স প্রদান করতে পারবেন, এতে অপারেটিং সিস্টেমটি স্মুথভাবে চালতে পারবে।

অপারেটিং সিস্টেম নির্বাচন

 

আপনি যদি উইন্ডোজ এর পাশাপাশি আলাদা অপারেটিং সিস্টেম যেমন লিনাক্স ডিস্ট্র ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে আগে উইন্ডোজ ইন্সটল করতে হবে এবং তারপরে লিনাক্স ডিস্ট্র ইন্সটল করতে হবে। এরকমটা কেন? কেনোনা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম তার সাথে আরো কোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা রয়েছে কিনা সেটা ধরতে পারে না। আর উইন্ডোজ তার পাশাপাশি অন্য অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার অনুমতিও দেয় না। বিরক্তিকর ব্যাপার তাই  না? আমি আমার কম্পিউটারে কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করবো সেটা উইন্ডোজ আমাকে ঠিক করে দেবে?

যাই হোক, চিন্তার কোন কারণ নেই, লিনাক্স আরামে বুঝতে পারে এর সাথে আরো কোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা রয়েছে কিনা এবং লিনাক্সের পাশাপাশি যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমকে ডুয়াল বুটে ব্যবহার করার সুবিধা প্রদান করে থাকে। এই জন্যই আপনার কম্পিউটারে আগে উইন্ডোজ ইন্সটল করার প্রয়জনিয়তা পড়ে এবং পরে লিনাক্স, এতে লিনাক্স উইন্ডোজের উপর বুট লোডার দখল করে নেয়, এবং অপারেটিং সিস্টেম চয়েজ করার জন্য মেন্যু প্রদান করে।

যদি আপনি আলাদা হার্ড ড্রাইভে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করে থাকেন, সেক্ষেত্রে কোন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করবেন এবং কোন হার্ড ড্রাইভে সেটা ইন্সটল রেখেছেন, কম্পিউটার অন করার সময় বায়োস থেকে সেই হার্ড ড্রাইভ দিয়ে বুট করতে হবে। যদি আপনি সিঙ্গেল ড্রাইভে ডুয়াল বুট করে রাখেন, সেখানে লিনাক্স থেকে একটি মেন্যু আসবে, যেখানে অপারেটিং সিস্টেম পছন্দ করতে পারবেন। অন্য অপারেটিং সিস্টেমটি রান করানোর জন্য আপনাকে কম্পিউটারটি রিস্টার্ট করতে হবে।

ডুয়াল বুট ইন্সটলিং

ডুয়াল বুট সিস্টেমে অপারেটিং ইন্সটল করা অনেক সহজ ব্যাপার, এক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার গীক হবার দরকার নেই।

আগেই বলেছি, আপনার কম্পিউটারে সর্বপ্রথম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করুন, যদি কোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা না থাকে। এবার লিনাক্সের যেকোনো ডিস্ট্রর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যান এবং আইএসও ইমেজ ডাউনলোড করুন। তারপর সেটা দ্বারা একটি বুটেবল ইউএসবি তৈরি করুন। রুফুস নামক একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে, অতি সহজেই আপনি লিনাক্সের জন্য বুটেবল ইউএসবি তৈরি করতে পারবেন। এরপর আপনার হার্ড ড্রাইভ থেকে নতুন পার্টিশন তৈরি করতে হবে, আপনি লিনাক্সে কি করবেন তার উপর নির্ভর করে সাইজ নির্বাচন করতে হবে। তবে মিনিম্যাম ১০ জিবি সাইজ দিয়ে পার্টিশন তৈরি করতে বলব। এরপরে লিনাক্স ইন্সটল করতে আরম্ভ করুন, দেখবেন ইন্সটল প্রসেসে সব বিষয় গুলোর পরিষ্কার অপশন পেয়ে যাবেন। আপনি যদি ম্যানুয়ালি ড্রাইভ পার্টিশন না করেন, সেখানেও সমস্যা নেই। লিনাক্স ইন্সটল করার সময় সেই অপশন গুলোও পেয়ে যাবেন। তবে সব সময় মনে রাখবেন, লিনাক্স ইন্সটল করার সময়, উইন্ডোজের পাশে লিনাক্স এই অপশনটি নির্বাচন করতে হবে, অনলি লিনাক্স ইন্সটল করা যাবে না, এতে হার্ড ড্রাইভ সম্পূর্ণ ফরম্যাট হয়ে যাবে, সকল স্টেপ গুলো ভালভাবে পড়ুন এবং সেই অনুসারে কাজ করুন।

আপনি যদি প্রথমবার ডুয়াল বুট সিস্টেম তৈরি করতে যান, সেক্ষেত্রে আমি রেকোমেন্ড করবো আপনার সকল কাজের ফাইল গুলোর ব্যাকআপ করে রাখতে। কেনোনা যদি কোন স্টেপ ভুল হয়ে যায়, আপনার হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন গোলমাল হয়ে যেতে পারে এবং ডাটা লস হয়ে যেতে পারে। তাই ম্যানুয়ালি কাজের ফাইল গুলোর ব্যাকআপ তৈরি করে রাখুন

আপনার কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভে যদি জায়গা থাকে, তো একসাথে লিনাক্স, উইন্ডোজ, ম্যাক ওস এক্স সবকিছু ইন্সটল করে রাখতে পারেন। আর ইন্সটলিং প্রসেসও অনেক সহজ, তাই না? আপনি জানলেন, ডুয়াল বুট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার সুবিধা। তো আপনি কি ডুয়াল বুট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন? আপনার কাছে কি ডুয়াল বুটিং এর আরো কোন সহজ পদ্ধতি রয়েছে? নিচে আমাদের কমেন্ট করে জানান।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories