হাইব্রিড ড্রাইভ কি? এটি কি হার্ডড্রাইভ বা এসএসডি থেকে ভালো?

যদি আপনার কম্পিউটারে ফাস্ট পারফর্মেন্স পেতে চান, সেক্ষেত্রে এসএসডি অবশ্যই বেস্ট সলিউসন আর বেশি স্টোরেজ স্পেসের জন্য হার্ডড্রাইভ। —কিন্তু কেমন হয়, যদি হার্ডড্রাইভের মতো বেশি স্পেস আর এসএসডি’র ফাস্ট পারফর্মেন্স একই ড্রাইভ থেকে পাওয়া যায়! হাইব্রিড ড্রাইভ সলিড স্টেট ড্রাইভের মতো পারফর্মেন্স এবং মেকানিক্যাল ড্রাইভের মতো বেশি স্পেস দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একে অনেক সময় এসএসএইচডি (সলিড-স্টেট হাইব্রিড ড্রাইভ) বলেও ডাকা হয়। এই ড্রাইভটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিস্টেম ফাইল গুলোকে এসএসডি পরিবেশে ক্যাশ করে যাতে ফাস্ট পারফর্মেন্স দিতে পারে এবং বাকী ফাইল গুলো যেমন মিডিয়া ফাইল, এইচডিডি’তে স্টোর করে যাতে স্টোরেজের সঙ্কট না ঘটে। এই আর্টিকেল থেকে এই ড্রাইভটির সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য জানবো এবং বিবেচনা করবো, এটি আপনার জন্য কতোটুকু উপযোগী হতে পারে। তো চলুন শুরু করা যাক…


হাইব্রিড ড্রাইভ

আগের দিনে কম্পিউটার স্টোরেজ নির্মাতা কোম্পানিরা শুধু হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ অথবা সলিড-স্টেট ড্রাইভ তৈরি করতো, অথবা উভয়ই তৈরি করতো। দুই ধরনের ড্রাইভের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আমি একটি তুলনা মূলক আর্টিকেল পাবলিশ করে দেখিয়েছিলাম, কিভাবে হার্ড ড্রাইভ এবং এসএসডি একে অপরের থেকে আলাদা। এসএসডি, যেকোনো সাধারণ হার্ড ড্রাইভ থেকে বহু গুনে ফাস্ট, তাই কম্পিউটারে ফাস্ট পারফর্মেন্স পাওয়ার জন্য র‍্যাম আপগ্রেড করার আগে এসএসডি’তে আপগ্রেড করা প্রয়োজনীয়। কিন্তু যদি কথা বলি প্রাইজ নিয়ে বা ক্যাপাসিটি নিয়ে, তবে মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ আপনার জন্য সুবিধা জনক হিসেবে প্রমানিত হবে। একটি ২৫৬ জিবি এসএসডি’র দাম দিয়ে ২-৩ টিবি হার্ড ড্রাইভ ক্রয় করা সম্ভব। যদিও মেকানিক্যাল ড্রাইভ স্লো তারপরেও এর গুরুত্ব রয়েছে।

আপনি যদি দুই ড্রাইভের সুবিধা একত্রে পেতে চান, সেক্ষেত্রে এসএসডি এবং এইচডিডি’কে একসাথে আপনার সিস্টেমে লাগাতে পারেন। অনেক গেমার, কম্পিউটার গীক পারফর্মেন্স আর ক্যাপাসিটির মধ্যে ব্যাল্যান্স রাখতে একসাথে দুই ড্রাইভ ব্যবহার করে। যেখানে তারা অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সকল ইন্সটল করা ফাইল গুলো এসএসডিতে সংরক্ষন করে এবং বড় মিডিয়া ফাইল বা যেকোনো বড় সাইজের ফাইল গুলোকে হার্ড ড্রাইভে সেভ করে। আবার আপনার যদি বেশি ডাটা রীড রাইট করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে হার্ড ড্রাইভ বেশি টেকসই হবে। সলিড স্টেট ড্রাইভে বেশি ডাটা রীড রাইট করলে ড্রাইভের আয়ুকাল কমে যায়।

যাই হোক, এসএসডি আর এইচডিডি কে আপনার সিস্টেমে আলাদা আলাদা ভাবে না লাগিয়ে আর ম্যানুয়ালি ম্যানেজ না করে আরেক ধরনের ড্রাইভ রয়েছে যার নাম হাইব্রিড ড্রাইভ; যেখানে একটি সিঙ্গেল ড্রাইভের মধ্যেই এসএসডি ইউনিট এবং মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ লাগানো থাকে—সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনাকে এই ড্রাইভে ম্যানুয়ালি কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না, ড্রাইভটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিপিইউ যে ফাইল গুলোকে বারবার অ্যাক্সেস করে সে ফাইল গুলোকে এসএসডি ইউনিটে মুভ করে দেয়, যাতে ফাস্ট পারফর্মেন্স পাওয়া সম্ভব হয়। ড্রাইভটির মধ্যে লাগানো থাকা একটি কন্ট্রোলার এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকে। এই ড্রাইভটির মধ্যে যে এসএসডি পার্টিশনটি থাকে, সেটা ক্যাশ মেমোরি হিসেবে আচরন করে। ড্রাইভটির নিজস্ব ফার্মওয়্যার সমস্ত বিষয় গুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে নিখুদভাবে কন্ট্রোল করে।

আপনার কি এটি কেনা উচিৎ?

উপরের প্যারাগ্রাফ থেকে অবশ্যই জেনে গেছেন, হাইব্রিড ড্রাইভ কিভাবে ডাটা কন্ট্রোল করে এবং একটি সিঙ্গেল ড্রাইভের মধ্যে পারফর্মেন্স এবং ক্যাপাসিটি দুটোরই সলিউসন রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি আপনার কেনা উচিৎ? দেখুন, কেনার কথা চিন্তা করার আগে কিছু কমতির দিকে নজর বুলিয়ে নেওয়া ভালো। যদিও এই ড্রাইভে আপনি একসাথে দুই ধরনের সলিউসন পাবেন, কিন্তু হাইব্রিড ড্রাইভে এসএসডি’র ক্যাপাসিটি অনেক কম হয়। ১ টেরাবাইট হাইব্রিড ড্রাইভ গুলোতে মাত্র ৮ জিবি এসএসডি দেখতে পাওয়া যায়। যদিও ৮ জিবি ক্যাপাসিটিতে প্রয়োজনীয় সিস্টেম ফাইল বা প্রোগ্রাম গুলোকে ক্যাশ করা সম্ভব, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন একটি ডেডিকেটেড সলিড-স্টেট ড্রাইভের কথা, যেটার ক্যাপাসিটি ১২৮ বা ২৫৬ জিবি; অর্থাৎ সেখানে সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম, যেকোনো সিস্টেম ফাইল, এবং আপনার কম্পিউটারের সকল প্রোগ্রাম গুলো ধারণ করতে সক্ষম।

হাইব্রিড ড্রাইভ একটি সিঙ্গেল ড্রাইভ, আর এটা একটি বিশেষ সুবিধা, বিশেষ করে ল্যাপটপের জন্য। ধরুন আপনার ল্যাপটপে মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ লাগানো ছিল এবং আপনি ভালো পারফর্মেন্স পেতে চান, সেক্ষেত্রে এসএসডি লাগাতে পারেন, কিন্তু ক্যাপাসিটি অনেক কমে যাবে। আর একসাথে দুই ড্রাইভ ল্যাপটপে তো লাগানো সম্ভব হবে না, তাই না? এক্ষেত্রে হাইব্রিড ড্রাইভ আপনার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। তাছাড়া যদি দামের কথা চিন্তা করতে যান, সলিড-স্টেড ড্রাইভ হতে হাইব্রিড ড্রাইভের দাম কম হবে, কেনোনা সেখানে মাত্র ৮জিবি এসএসডি লাগানো রয়েছে। আবার একটি জাস্ট ১টিবি মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ থেকে ১টিবি হাইব্রিড ড্রাইভের দাম বেশি হবে। আপনার যদি দুই ড্রাইভ একত্রে কেনার টাকা না থাকে কিংবা মেকানিক্যাল ড্রাইভের থেকে একটু টাকা বেশি খরচ করে যদি পারফর্মেন্স আর ক্যাপাসিটি দুটোই পেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য হাইব্রিড ড্রাইভ উপযোগী হতে পারে। কিন্তু আপনার কাছে ভালো বাজেট থাকলে, আমি একটি ডেডিকেটেড এসএসডি এবং একটি মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ লাগানোর পরামর্শ দেবো, এখানে আপনি এসএসডি’তে অনেকবেশি স্টোরেজ পেয়ে যাবেন।

হাইব্রিড ড্রাইভ পারফর্মেন্স

অবশ্যই এই ড্রাইভটি সাধারণ মেকানিক্যাল ড্রাইভ থেকে ফাস্ট, কেনোনা এতে অপারেশন বুস্ট করার জন্য রয়েছে এসএসডি পার্টিশন, যেখানে প্রয়োজনীয় সিস্টেম ফাইল গুলোকে ক্যাশ করে রাখা হয়, যাতে পারফর্মেন্স বৃদ্ধি পায় এবং সিপিইউকে সেই ফাইল গুলো ফাস্ট সরবরাহ করা সম্ভব হয়। কিন্তু আপনি যখন প্রথম হাইব্রিড ড্রাইভ আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করবেন, এটি সাধারণ মেকানিক্যাল ড্রাইভের মতোই স্লো কাজ করবে। ড্রাইভটি চলতে চলতে যখন শেখে নেবে কোন সিস্টেম ফাইল গুলোকে ক্যাশ করতে হবে তখন ড্রাইভটি ফাস্ট কাজ করতে আরম্ভ করবে। তাই নতুন ড্রাইভ কিনে স্লো পারফর্মেন্স দেখে জেনো ভাববেন না, আপনার টাকা নষ্ট হয়েছে। কিছু সময় পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ড্রাইভটি পারফর্মেন্স দেখাতে আরম্ভ করবে।


এখানে দামই প্রধান ফ্যাক্টর, যার জন্য মেকানিক্যাল হার্ড ড্রাইভ বা হাইব্রিড ড্রাইভ এখনো বেঁচে আছে। তবে বর্তমানে এসএসডির দাম অনেক কমে যাচ্ছে, কেনোনা এটি সময়ের সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকের বেশি ক্যাপাসিটির কোন প্রয়োজনীয়তা নেই, তারা শুধু এসএসডি দিয়েই আরামে কাজ চালাতে পারেন। আমি আপনার ডেক্সটপে এসএসডি এবং হার্ড ড্রাইভ একসাথে লাগিয়ে রেখেছি, কেনোনা আপনার পারফর্মেন্স + ক্যাপাসিটি দরকার। যদি আপনার এই রকমই দরকার থাকে কিন্তু বাজেট একটু কম হয় সেক্ষেত্রে হাইব্রিড ড্রাইভের দিকে দেখতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories