হার্ড ডিস্ক পার্টিশন কি? কেন প্রয়োজনীয়? – বিস্তারিত

অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে, হার্ড ডিস্ক পার্টিশন কি? কেন প্রয়োজনীয়? —আপনার কম্পিউটার হার্ড ড্রাইভ হোক আর যেকোনো ইউএসবি ড্রাইভ; সেটাতে কোন ফাইল রাইট করতে চাইলে অবশ্যই কমপক্ষে একটি পার্টিশন থাকা প্রয়োজনীয়। পার্টিশন ছাড়া আপনি কোন ফাইলই ড্রাইভে রাইট করতে পারবেন না, কিন্তু কেন? চলুন, এই আর্টিকেল থেকে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি…


পার্টিশন কি?

 

আজকের নতুন ড্রাইভ কেনার সময় বা পেনড্রাইভে আগে থেকেই সিঙ্গেল পার্টিশন করা থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ড্রাইভের স্পেস গুলো নতুন অবস্থায় অব্যবহৃত স্পেস হিসেবে প্রদর্শিত করে, মানে এই স্পেসে কোন পার্টিশন নেই। আর এই ফাঁকা স্পেসে কোন ফাইল রাইট করার জন্য অবশ্যই পার্টিশনের দরকার পড়বে আর এই পার্টিশনে অবশ্যই কোন ফাইল সিস্টেম থাকতে হবে। হার্ড ডিস্ক পার্টিশন হলো ঐ ড্রাইভটির লজিক্যাল ডিভিশন, যেটাকে কোন অপারেটিং সিস্টেম আলাদা আলাদা ইউনিট এবং ফাইল সিস্টেম হিসেবে দেখতে পায়। আপনার কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম এবং ফাইল সিস্টেম প্রত্যেকটি পার্টিশনকে খুব ভালোভাবে এবং সহজভাবে ম্যানেজ করতে পারে, যেমনটা তারা মনে করে আপনার প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা পার্টিশন আলাদা আলাদা ফিজিক্যাল ড্রাইভ। সমস্ত হার্ড ড্রাইভকে পার্টিশনকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করার ফলে সেটিকে আরো দক্ষভাবে ম্যানেজ করা সম্ভব হয়।

পার্টিশন অবশ্যই প্রয়োজনীয়, কেনোনা পার্টিশন ছাড়া আপনি অঝথায় ফাঁকা স্পেসে ফাইল রাইট করতে শুরু করতে পারবেন না। ধরুন আপনার কাছে এক টেবিল সমান জায়গা আছে, এখন আপনি সেখানে ১ লিটার পানি রাখতে চাচ্ছেন, টেবিলের উপর কিভাবে পানি রাখবেন? অবশ্যই একটি পাত্রের প্রয়োজন পড়বে, আর এই পাত্রকেই পার্টিশন বলতে পারেন। যেমন তরল আর গ্যাসীয় পদার্থ স্টোর করার জন্য আলাদা আলাদা ধরনের পাত্রের দরকার পরে, সেইভাবে বিভিন্ন ফাইল কিভাবে হার্ড ড্রাইভে রাইট হবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় হয় আলাদা আলাদা ফাইল সিস্টেম।

অপারেটিং সিস্টেমে একটি ডিস্ক পার্টিশন ম্যানেজার থাকে, যেটি সিস্টেম অ্যাডমিনকে অনেক পার্টিশন বানাতে, পার্টিশন সাইজ রিসাইজ করতে, পার্টিশন ডিলিট করতে সাহায্য করে। নতুন পার্টিশন তৈরি করার পরে সেটাকে সাথে সাথে ফাইল স্টোর করানো সম্ভব নয়, অবশ্যই ফাইল সিস্টেম দ্বারা পার্টিশনটি ফরম্যাট করা থাকতে হবে। উইন্ডোজ ড্রাইভের জন্য এনটিএফএস ফাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। ফ্যাট/ফ্যাট৩২ সাধারণত যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম এবং যেকোনো ডিভাইজ সমর্থন করে। এইচএফএস+ ফাইল সিস্টেম ম্যাক এবং ইএক্সটি৪ ফাইল সিস্টেম লিনাক্সের জন্য।

ড্রাইভের মধ্যে একটি বুটেবল পার্টিশন থাকে, যেটি সাধারণত অপারেটিং সিস্টেমকে ধারন করে, আর অপারেটিং সিস্টেম সর্বপ্রথম এই পার্টিশনকেই রীড করে। কম্পিউটার বুট করার পরে একটি প্রসেস রান হয় যেটি পার্টিশন টেবিলকে বুঝতে এবং অ্যাক্সেস করতে ওএসকে সাহায্য করে, তাছাড়া এই পার্টিশন টেবিল বোঝাতে সাহায্য করে, ড্রাইভে কতোগুলো পার্টিশন এবং কি কি ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট রয়েছে। তাছাড়া এটি প্রত্যেকটি পার্টিশনের সাইজ, অ্যাড্রেস ইত্যাদি বুঝাতে সাহায্য করে।

কেন একাধিক পার্টিশন প্রয়োজনীয়?

 

আপনার পেন ড্রাইভে বা মেমরি কার্ডে অবশ্যই একাধিক পার্টিশন করতে পছন্দ করবেন না, কেনোনা যতো পার্টিশন করবেন, আপনার কম্পিউটারে ততোগুলো ড্রাইভ আকারে শো করবে। যাই হোক, একাধিক পার্টিশন ব্যবহার করার আরো অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলো মাল্টি পার্টিশন করার মূল্য তৈরি করে। সাধারণত উইন্ডোজকে সি ড্রাইভে ইন্সটল করে রাখা হয়, আপনার হার্ড ডিস্কে যদি আর কোন পার্টিশন না থাকে তবে উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করার সময় আপনার অন্যান্য ফাইল গুলো সহজেই রিমুভ হয়ে যাবে। আর এই জন্যই বেশিরভাগ উইন্ডোজ ব্যবহারকারি আলাদা আলাদা পার্টিশন তৈরি করে সেখানে তাদের পার্সোনাল ফাইল গুলো স্টোর করতে পছন্দ করে। যাতে উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করার সময় সকল ডাটা গুলো থেকে হাত না ধুতে হয়।

আবার ধরুন আপনি একই হার্ড ড্রাইভকে ডুয়াল বুট করে লিনাক্স এবং উইন্ডোজ একসাথে ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে একই পার্টিশনে দুই ওএস ইন্সটল করলে লিনাক্স আর উইন্ডোজ নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলবে। তাছাড়া লিনাক্স ইন্সটল করার জন্য আলাদা পার্টিশনের প্রয়োজন পরে, আর লিনাক্স আলাদা ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট ব্যবহার করে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করার জন্য একটি পার্টিশনই যথেষ্ট, কিন্তু লিনাক্স ইন্সটল করার জন্য একাধিক পার্টিশন প্রয়োজনীয় হয়। যেমন- লিনাক্স সিস্টেমের একটি স্যোয়াপ পার্টিশনের প্রয়োজন হয়, যখন আপনার সিস্টেম র‍্যাম ফুল হয়ে যায়, লিনাক্স স্যোয়াপ মেমোরিতে প্রয়োজনীয় ফাইল গুলোকে জমা করে। স্যোয়াপ পার্টিশনকে আলাদা ফাইল সিস্টেমে ফরম্যাট করা প্রয়োজনীয়।

প্রাইমারি, এক্সটেন্ডেড, লজিক্যাল পার্টিশন

হার্ড ডিস্ক পার্টিশন এবং ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট করার আগে ডিস্ক পার্টিশন নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে অবগত হওয়া যাক। দেখুন একটি ড্রাইভে কেবল মাত্র ৪টি প্রাইমারি পার্টিশন তৈরি করা সম্ভব। আপনি যদি চারটি প্রাইমারি পার্টিশন তৈরি করেন, সেক্ষেত্রে ৩টি প্রাইমারি পার্টিশন তৈরি হবে এবং একটি ১টি এক্সটেন্ডেড পার্টিশন তৈরি হবে। এক্সটেন্ডেড পার্টিশন হলো এমন একটি পার্টিশন যার ভেতরে আলাদা আলাদা পার্টিশন তৈরি করা যায়। আর এই এক্সটেন্ডেড পার্টিশনের মধ্যের তৈরি হওয়া পার্টিশন গুলোকে লজিক্যাল পার্টিশন বলা হয়।

ধরুন আপনার ৪টি বা তার কম পার্টিশন প্রয়োজন, তবে ৪টি প্রাইমারি পার্টিশন আরামে তৈরি করা সম্ভব। আবার ধরুন আবার আপনার ৬টি পার্টিশন তৈরি প্রয়োজনীয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে ৩টি প্রাইমারি পার্টিশন তৈরি করতে হবে এবং একটি এক্সটেন্ডেড পার্টিশন তৈরি করাতে হবে আর এই এক্সটেন্ডেড পার্টিশনটির মধ্যে আরো তিনটি লজিক্যাল পার্টিশন তৈরি করতে হবে। প্রাইমারি পার্টিশন সাধারণত আপনার অপারেটিং সিস্টেম ধারণ করতে পারে, এবং আপনি প্রাইমারি পার্টিশন থেকে কম্পিউটার বুট করতে পারবেন। এক্সটেন্ডেড পার্টিশন নিজে কোন পার্টিশন নয় বরং এটি লজিক্যাল পার্টিশন ড্রাইভ গুলোকে ধারণ করে। লজিক্যাল ড্রাইভ গুলো বিশেষ করে অপারেটিং সিস্টেম বাদে যেকোনো টাইপের ফাইল ধারণ করার জন্য তৈরি করা হয়, যেমন আপনার কম্পিউটারের অডিও, ভিডিও, গেমস ইত্যাদি। আপনি ৬টি পার্টিশন তৈরি করার সময় চাইলে, ১টি প্রাইমারি পার্টিশন এবং ১টি এক্সটেন্ডেড পার্টিশন যেখানে ৫টি লজিক্যাল ড্রাইভ তৈরি করতে পারেন।

পার্টিশন পারফর্মেন্স

আপনার মনে এই প্রশ্নটি অবশ্যই জেগেছে, আলাদা আলাদা পার্টিশন ড্রাইভ গুলো আপনার অপারেটিং সিস্টেমে আলাদা আলাদা ড্রাইভ হিসেবে প্রদর্শন করে, তাহলে পারফর্মেন্সের ক্ষেত্রে কি প্রত্যেকটি ড্রাইভ থেকে আলাদা আলাদা পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে? —দুর্ভাগ্য বসত আলাদা পার্টিশন গুলো আলাদা ড্রাইভ আকারে শো করলেও পারফর্মেন্সে কোন উন্নতি আসে না। যেহেতু একই ফিজিক্যাল ড্রাইভ থেকেই সকল পার্টিশন হয়ে থাকে, তাই ব্যান্ডউইথ স্পীড একটি পার্টিশনের মতোই আচরন করে, আলাদা আলাদা পার্টিশন থেকে ডেডিকেটেড স্পীড পাবেন না। তবে আপনার কম্পিউটারে যদি আলাদা ফিজিক্যাল ড্রাইভ লাগানো থাকে, সেখানে পারফর্মেন্স উন্নতি দেখতে পাবেন।

শেষ কথা

অনেকেই হার্ড ড্রাইভ পার্টিশন নিয়ে তেমন কোন চিন্তা করেন না, কম্পিউটার কেনার সময় দোকান থেকেই ওরা পার্টিশন করে দেয়, আর আমরা শুধু ফাইল স্টোর বা আলাদা কাজ করতে থাকি। কিন্তু আপনি একজন কম্পিউটার গুরু এবং ওয়্যারবিডি পাঠক হিসেবে অবশ্যই জানা প্রয়োজনীয় ছিল, পার্টিশন কি এবং কিভাবে কাজ করে। তো আপনি কখনো নিজে থেকে ডিস্ক পার্টিশন করেছেন? আপনি কোন পার্টিশন ম্যানেজার টুলটি ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করেন, আমাদের নিচে কমেন্ট করে উল্লেখ্য করুন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories