নেটওয়ার্ক পোর্ট কি? ইন্টারনেট পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তারিত

আগের দিনের কম্পিউটার শুধু নির্দিষ্ট কাজে এবং সিমাবদ্ধভাবে ব্যবহার করা হতো—কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য দুই ২/১ টা প্রোগ্রাম ছিল এবং আরো আগের দিনে তো কম্পিউটার গুলোতে অপারেটিং সিস্টেমই ছিল না। কম্পিউটারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই মেশিনটি বর্তমানে আরো বেশি ইউনিভার্সাল এবং সহজ ব্যবহার যোগ্য হয়ে উঠছে। এখন একটি কম্পিউটার মেশিন একসাথে অগুনতি প্রকারের কাজ করতে সক্ষম, নানান ডিভাইজের সাথে কানেক্টেড থাকতে সক্ষম। কিন্তু নেটওয়ার্কে থাকা একাধিক কম্পিউটার কীভাবে একে অপরের সার্ভিস গুলো অ্যাক্সেস করে এবং নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে? —আর এখানেই আসে নেটওয়ার্ক পোর্ট (Network Ports) এর প্রয়োজনীয়তা। তো চলুন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে পোর্ট ইন্টারনেট কাঠামোকে টিকিয়ে রেখেছে।


নেটওয়ার্ক পোর্ট কি?

নেটওয়ার্কিং ছাড়া একটি কম্পিউটিং সিস্টেমের অনেক কিছুই অচল। শুধু ইন্টারনেট নয়, আপনার কম্পিউটারের সাথে যদি কোন প্রিন্টার লাগানো থাকে, তবে সেটিও নেটওয়ার্কিং এর আওতায় চলে আসে। নেটওয়ার্ক পোর্ট বোঝার আগে, চলুন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার পোর্ট নিয়ে একটু ভেবে দেখা যাক। আপনি নিশ্চয় জানেন, আপনার কম্পিউটারের সাথে বিভিন্ন ডিভাইজ এবং আপনার কম্পিউটারের প্রয়োজন অনুসারে অনেক পোর্ট থাকে। যেমন প্রিন্টার, ইউএসবি ড্রাইভ, মোডেম ইত্যাদি ইউএসবি পোর্টে কানেক্ট করা হয়, ডিসপ্লে বা প্রোজেক্টর কানেক্ট করতে এইচডিএমআই পোর্ট বা ভিজিএ পোর্ট কানেক্ট করতে হয়, আবার ইন্টারনেট বা ইথারনেট ক্যাবল লাগানোর জন্য ইথারনেট পোর্ট থাকে আপনার কম্পিউটারে। তো এভাবে বিভিন্ন আলাদা আলাদা পোর্টের সাথে কানেক্টেড হয়ে আলাদা আলাদা কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।

এখন কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কি হয়, দেখুন এখানে কিন্তু সকল কম্পিউটার গুলো ফিজিক্যালি একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকে, আর লোকাল কম্পিউটিং সিস্টেমের মতো নেটওয়ার্কেও এক সাথে অনেক কাজ করা যায়। যেমন- ফাইল ট্র্যান্সফার করা যায়, প্রিন্ট কম্যান্ড দেওয়া যায়, ওয়েবপেজ ডাউনলোড বা আপলোড করা যায় ইত্যাদি। ধরুন আপনি নেটওয়ার্কের সাহায্যে একটি কম্পিউটারের সাথে কানেক্টেড হলেন, এবং ঐ কম্পিউটারটিতে কোন ফাইল আপলোড দিতে চান, তাহলে নিশ্চয় আপনার ঐ কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ বা স্টোরেজের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, তো তার জন্য আপনার ঐ নির্দিষ্ট পোর্টের সাথে কানেক্টেড হওয়া প্রয়োজনীয়।

আপনার কম্পিউটারের ইউএসবি পোর্ট, ইথারনেট পোর্ট, সিরিয়াল পোর্ট এগুলোকে হার্ডওয়্যার পোর্ট বলা হয়, কিন্তু টিসিপি/আইপি এর পোর্ট গুলোকে ভার্চুয়াল বা নেটওয়ার্ক পোর্ট বলা হয়। নেটওয়ার্ক পোর্ট ব্যাবহার করে বিভিন্ন সফটওয়্যারকে কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডওয়্যার বা সার্ভিসের অ্যাক্সেস প্রদান করা হয়। প্রত্যেকটি কম্পিউটার বা ওয়েব সার্ভারে নির্দিষ্ট কাজ নির্দিষ্ট পোর্ট দ্বারা সম্পূর্ণ করা হয়। যেমন ধরুন একটি সার্ভার ওয়েবপেজ সার্ভ এবং ফাইল ট্রান্সফার করার জন্য এইচটিটিপি/এফটিপি প্রোটোকল ব্যবহার করে। তবে অবশ্যই ঐ সার্ভারে পোর্ট ৮০ (এইচটিটিপি পোর্ট) এবং পোর্ট ২১ (এফটিপি পোর্ট) খোলা রয়েছে। আর যদি আপনি ঐ সার্ভারের সাথে কানেক্ট হয়ে ওয়েবপেজ ডাউনলোড করতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে পোর্ট ৮০তে কানেক্টেড হতে হবে এবং ফাইল ট্রান্সফার করতে চাইলে পোর্ট ২১তে কানেক্টেড হতে হবে।

চলুন সম্পূর্ণ বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করে বোঝার জন্য একটি সুন্দর উদাহরণ নেওয়া যাক। নেটওয়ার্কে থাকা কোন কম্পিউটারকে একটি শপিং মলের সাথে তুলনা করুণ আর ঐ মলের ঠিকানাটি হচ্ছে কোন কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেস। তো ঠিকানা জানার ফলে আপনি ঐ নির্দিষ্ট মলটিতে চলে যেতে পারবেন মানে নেটওয়ার্কে থাকা কম্পিউটারটির সাথে কানেক্টেড হতে পারবেন। এবার ধরুন মল থেকে কোন স্মার্টফোন কিনতে চাচ্ছেন, তাহলে আপনাকে নিশ্চয় কোন স্মার্টফোনের দোকানে যেতে হবে, তাই না। আবার আপনি কাপড় চোপড় কিনতে চাইলে আপনাকে গার্মেন্টসের দোকানে যেতে হবে। তো শপিং মলের এই আলাদা আলাদা দোকান গুলোকে আপনার নেটওয়ার্কের কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক পোর্ট এর সাথে তুলনা করুণ। যেমন আপনাকে ওয়েবপেজ পাওয়ার জন্য একটি পোর্টের সাথে, ফাইল ট্র্যান্সফার করার জন্য আরেকটি পোর্টের সাথে এবং ইমেইল পাওয়ার জন্য অন্য পোর্টের কানেক্ট হতে হয়। এবার ধরুন একটি শপিং মল রয়েছে যেখানে সকল জিনিস পাওয়া তো যায় কিন্তু তাদের জন্য আলাদা আলাদা কোন দোকান নেই। একটি মাঠের সমান বিশাল ঘর রয়েছে সেখানে সব জিনিস ছড়িয়ে রয়েছে। তাহলে আপনি কীভাবে সহজে কোন জিনিস খুঁজে পাবেন বা কিনতে পারবেন? তো আপনি নিশ্চয় বুঝে গেছেন, নেটওয়ার্ক পোর্ট কি এবং কেন প্রয়োজনীয়।

সার্ভার পোর্ট

ধরুন আপনি কোন সার্ভার বা নেটওয়ার্কে কানেক্ট থাকা কোন কম্পিউটার থেকে নির্দিষ্ট সার্ভিস কানেক্ট করার জন্য নির্দিষ্ট পোর্ট অ্যাক্সেস করতে চান, তবে ঐ সার্ভারটিতে অবশ্যই পোর্টটি ওপেন থাকতে হবে। দুনিয়ার জন্য যদি পোর্টটিকে ওপেন রাখা হয় এবং ফায়ারওয়াল যদি কানেকশন ব্লক না  করে তবে তখনই শুধু ঐ সার্ভার পোর্টে কানেক্ট হওয়া সম্ভব। তবে এখানে কিছু বিষয় জেনে রাখুন, এমনটা কিন্তু নয় যে ওয়েব সার্ভার শুধু পোর্ট ৮০তেই কাজ করে। আপনার নিজের কম্পিউটারে আপনি ওয়েব সার্ভার সফটওয়্যার ইন্সটল করলেন এবং ওয়েব সার্ভারের জন্য পোর্ট ৯১৮ সিলেক্ট করে দিলেন তবে ঐ পোর্ট থেকেই ওয়েব সার্ভার কাজ করবে, এখানে জোর করে কিছু করতে হবে না, বা এমনটা নয় ঐ কাজের জন্য অমুক সংখ্যার পোর্টই ওপেন রাখতে হবে। তবে সবাই যেটা করে সেটা করলে সুবিধা হয়।

যেমন আপনি যদি পোর্ট ৮০ বাদে অন্য কোন পোর্টকে ওয়েব সার্ভারের জন্য সিলেক্ট করে রাখেন তবে আপনার সাইটে প্রবেশ করার সময় সাইটের আইপি বা ডোমেইনের সাথে পোর্টটি উল্লেখ্য করতে হবে। যেমন আপনার সার্ভার ঠিকানা https://archive.wirebd.com এবং ধরুন আমি পোর্ট ৯১৮তে ওয়েব সার্ভার খুলে রেখেছি, তাহলে আমার সাইট অ্যাক্সেস করার জন্য ব্রাউজারে লিখতে হবে https://archive.wirebd.com:918। আর যদি আমি কোন পোর্ট না উল্লেখ্য করি তবে ব্রাউজার ডিফল্টভাবে পোর্ট ৮০তে কানেক্ট করার চেষ্টা করবে। এজন্য নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে এবং সার্ভিস অনুসারে নির্দিষ্ট পোর্ট ব্যবহার করা হয় যাতে আলাদা করে পোর্ট উল্লেখ্য না করতে হয়, অ্যাপ্লিকেশন যাতে ডিফল্টভাবেই পোর্ট বুঝে যায়।

টিসিপি/ইউডিপি পোর্ট লিস্ট

নিচে সবচাইতে ব্যবহৃত কিছু নেটওয়ার্ক পোর্ট লিস্ট প্রদান করা হল, এ থেকে আপনি মোটামুটি ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন, কোন পোর্ট কোন কাজের জন্য অফিসিয়ালি ব্যবহার করা হয়। তবে এর চাইতেও আরো বড় লিস্ট পেতে চাইলে এই লিঙ্কটি দেখতে পারে।

Protocol TCP/UDP Port Number
File Transfer Protocol (FTP) TCP 20/21
Secure Shell (SSH) TCP 22
Telnet TCP 23
Simple Mail Transfer Protocol (SMTP) TCP 25
Domain Name System (DNS) TCP/UDP 53
Dynamic Host Configuration Protocol (DHCP) UDP 67/68
Trivial File Transfer Protocol (TFTP) UDP 69
Hypertext Transfer Protocol (HTTP) TCP 80
Post Office Protocol (POP) version 3 TCP 110
Network Time Protocol (NTP) UDP 123
NetBIOS TCP/UDP 137/138/139
Internet Message Access Protocol (IMAP) TCP 143
Simple Network Management Protocol (SNMP) TCP/UDP 161/162
Border Gateway Protocol (BGP) TCP 179
Lightweight Directory Access Protocol (LDAP) TCP/UDP 389
Hypertext Transfer Protocol over SSL/TLS (HTTPS) TCP 443
Lightweight Directory Access Protocol over TLS/SSL (LDAPS) TCP/UDP 636
FTP over TLS/SSL TCP 989/990

শেষ কথা

নেটওয়ার্ক, পোর্ট, রাউটার, ক্যাবল, ইত্যাদি ইন্টারনেটের কাঠামোকে ধারণ করে রেখেছে। এসব কিছু ছাড়া ইন্টারনেট কল্পনা করা যায় না, আর সবচাইতে মজার ব্যাপার হলো এগুলো একত্রে আলোর গতিতে কাজ করে। বিভিন্ন পোর্ট সুবিধা থাকার কারণে ইন্টারনেট এবং মূলত নেটওয়ার্কিংকে আরোবেশি  সহজ এবং সুবিধা জনক করা সম্ভব হয়েছে। আশা করছি এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি অনেক কিছু শিখতে এবং জানতে পেড়েছেন, আপনার আরো কোন প্রশ্ন থাকলে সেগুলো নিচে কমেন্টে উল্লেখ করতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories