ডোজকয়েন : কি এবং কেন এই হাইপ?

আপনি যদি ফেসবুকের বাইরেও ইন্টারনেটের অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া, যেমন টুইটার, রেডিট ইত্যাদি রেগুলার ভিজিট করেন, তাহলে আপনি হয়তো গত কিছুদিন ধরে ডোজকয়েন নামটি অনেকবার শুনেছেন। আপনি হয়তো অনেক পাওয়ারফুল সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদেরকে ডোজকয়েনের ব্যাপারে পোস্ট করতেও দেখেছেন।

যদি ডোজকয়েন আপনার কাছে পরিচিত নাও হয়, তবুও ডোজকয়েনের লোগোটি আপনার কাছে অবশ্যই পরিচিত। আপনি ডোজকয়েনের লোগোতে থাকা জাপানিজ Shiba Inu ব্রিডের কুকুরটিকে এতদিনে হাজার হাজার বার ফেসবুকে বিভিন্ন মিমসে দেখেছেন। কিন্তু ডোজকয়েন কি এবং কেনই বা ডোজকয়েনের লোগোতে এই কুকুরের ছবি? আর কেনই বা হটাত এটা নিয়ে এত হাইপ? চলুন জানা যাক!

ডোজকয়েন (DogeCoin) কি?

আপনি অবশ্যই সবথেকে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিটকয়েনের নাম শুনেছেন এবং বিটকয়েনের ব্যাপারে হয়তো আপনার বেশ ভালোই ধারনা রয়েছে। যদি আপনি ওয়্যারবিডির অনেক পুরনো রিডার হয়ে থাকেন, তাহলে কয়েক বছর আগে ওয়্যারবিডিতে লেখা বিটকয়েন এবং বিটকয়েক মাইনিং এর ব্যাপারে পোস্টগুলোও হয়তো পড়েছেন। যদি বিটকয়েন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং কিভাবে কাজ করে তা এখনো না জেনে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।

তবে, বিটকয়েন কিন্তু একমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়। বিটকয়েন ছাড়াও আরো অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে যেগুলোকে বলা হয় Alternative Coin বা AltCoin। আর এমন AltCoin এর সংখ্যা কিন্তু কম নয়। এখন পর্যন্ত এমন AltCoin এর সংখ্যা প্রায় কয়েক হাজারেরও বেশি। আমরা সচরাচর অন্যান্য ক্রিপ্টোকয়েনগুলোর নাম শুনে থাকিনা, যেহেতু অন্যগুলোর রিয়াল ওয়ার্ল্ড ভ্যালু বিটকয়েনের মত ৫০ হাজার ডলার নয় এবং এগুলো বিটকয়েনের মত জনপ্রিয়ও নয়।

তবে এমন কয়েকটি অলটারনেটিভ কয়েনের নাম হয়তো আপনি শুনেছেন, যেগুলো কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যেমন- ইথিরিয়াম, লাইটকয়েন ও ড্যাশ। বিটকয়েনের মতো একটি অলটারনেটিভ ক্রিপ্টোকারেন্সি চাইলে আপনি নিজেও লঞ্চ করতে পারবেন। কারণ, নতুন AltCoin তৈরি করে লঞ্চ করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। ডিসেন্ট্রালাইজড কারেন্সি হওয়ায়, যেকেউই চাইলে এমন কয়েন লঞ্চ করতে পারে। যেমন- ফেসবুকেরও প্ল্যান রয়েছে তাদের নিজেদের ক্রিপ্টোকারেন্সি, Libra লঞ্চ করার। ফেসবুকের লিব্রা কারেন্সির ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন। আর হ্যা, ঠিক ধরেছেন। ডোজকয়েনও ঠিক এমনই আরেকটি ডিসেন্ট্রালাইজড কারেন্সি বা AltCoin।

কয়েনমার্কেটক্যাপ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কেট ভ্যালুর হিসাবে ডোজকয়েন বর্তমানে টপ ১০ টি ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে একটি। তবে ডোজকয়েনের মার্কেট ভ্যালু কিন্তু খুবই কম। বর্তমানে মার্কিন ডলারের হিসাবে ১ ডোজকয়েনের মার্কেট ভ্যালু প্রায় ৫ সেন্টের কাছাকাছি বা বাংলাদেশের কারেন্সির হিসাবে ৫ টাকারও কম। বর্তমানে ডোজকয়েন নিয়ে এত হাইপের কারণ হচ্ছে, অনেক জনপ্রিয় ইন্টারনেট ব্যাক্তিত্য, বিশেষ করে ইলন মাস্ক প্রায়ই ডোজকয়েনকে প্রোমোট করছেন। কারণ, ইলন মাস্কসহ আরো অনেকেই ধারণা করছেন যে বিটকয়েনের পরে সবথেকে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি হতে চলেছে ডোজকয়েন।

 

গেমস্টপে ডোজকয়েনের কপিক্যাট হাইপের পর থেকেই ইলন মাস্ক সহ আরো অনেক ইন্টারনেট পার্সোনালিটি ডোজকয়েনের ব্যাপারে টুইট করছেন। টুইটার এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে রেডিটে ডোজকয়েনের হাইপের কারনে এবছরের শুরুর দিকে অনেক আশাবাদী ইনভেস্টররাই ডোজকয়েনে অনেক ইনভেস্ট করেছেন, যার কারণে গত মাসে ডোজকয়েনের মার্কেট ভ্যালু প্রায় ৬০০%+ বেড়ে গিয়েছে। তবে ডোজকয়েনের হাইপের কারণ কিন্তু শুধুমাত্র ইলন মাস্ক এবং পাবলিক ফিগারদের টুইটই নয়। খুব সম্ভবত, যখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ডোজকয়েনের লোগোর কুকুরটির মিম জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে, একইসাথে এই কুকুরটির কয়েনও ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। ইলন মাস্ক শুধুমাত্র কয়েনটির পপুলারিটি আরেকটু পুশ করার জন্য টুইট করছেন।

 

তবে ডোজকয়েন, এই আজব নামের কারেন্সিটি কিন্তু এই প্রথম স্পটলাইটে এসেছে এমনটা নয়। ডোজকয়েন রিলিজ হওয়ার প্রথম দিকেও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির তুলনায় অনেক বেশি অ্যাটেনশন পেয়েছে। ডোজকয়েন স্টার্ট হওয়ার পেছনের ইতিহাসটাও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির থেকে আলাদা। চলুন ডোজকয়েনের ইতিহাসের ব্যাপারেও কিছু জানা যাক!

ডোজকয়েনের ইতিহাস

আপনি জানলে অবাক হবেন, ডোজকয়েনের ক্রিয়েটর নিজেও কখনো ভাবেন নি যে ডোজকয়েন নামের একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি থাকবে। ডোজকয়েন নামটা এসেছিলো শুধুমাত্র একটা জোক হিসেবে। এই জোকটা স্টার্ট করেছিলেন অ্যাডোবির একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, জ্যাকসন পালমার।

২০১৩ সালের দিকে বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি একইসাথে তৈরী হচ্ছিলো একেরপর এক AltCoin। এত ধরনের AltCoin তৈরি হচ্ছিলো যে তিনি AltCoin তৈরীর ব্যাপারটি নিয়ে জোক হিসেবে একটা টুইট করেছিলেন, যেখানে তিনি তখনকার জনপ্রিয় মিম, ডোজ কুকুরের নামে আরেকটি AltCoin এর কথা কল্পনা করতে বলেছিলেন এবং মজার ছলে টুইটের সাথে একটি কয়েনের ছবি অ্যাড করেছিলেন, যে কয়েনে ছিলো Shiba Inu কুকুরের মুখ।

২০১৩ সালে জ্যাকসনের করা এই মজার টুইটটি তখন এতটাই হাইপ তৈরী করেছিলো যে তিনি তার কল্পনা করা এই ডোজকয়েনকে সত্যিকারেই আরেকটি রিয়াল ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে লঞ্চ করার কথা ভাবতে থাকেন। অন্যদিকে পোর্টল্যান্ডে আইবিএম এর ইঞ্জিনিয়ার বিলি মার্কাসও তার নিজের একটি ডিজিটাল কারেন্সি প্রোগ্রাম করার ব্যাপারে ভাবছিলেন। তাই এর কিছুদিন পরেই আইবিএম এর ইঞ্জিনিয়ার বিলি মার্কাস এবং অ্যাডোবির ইঞ্জিনিয়ার জ্যাকসন পালমার দুজন মিলে তখনকার সময়ের দুই হাইপ অর্থাৎ ডোজ কুকুরের মিম এবং ক্রিপ্টোকয়েনকে একসাথে ব্লেন্ড করে তৈরী করেন একটি নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি, যার নাম অবশ্যই দেওয়া হয় “ডোজ কয়েন (Doge Coin)”!

তারা dogecoin.com নামের ডোমেইনও পারচেজ করেছিলেন, যেটি পারচেজের পরে প্রথম মাসেই প্রায় ১ মিলিয়নের বেশি ভিজিটর পেয়েছিলো। ডোজকয়েনের প্রতিষ্ঠাতারাও ডোজকয়েনের ওপর ইন্টারনেট ইউজারদের এত বেশি ইন্টারেস্ট দেখে অবাক হয়েছিলেন, যেহেতু তারা নিজেরাও কখনো এত বেশি হাইপ এক্সপেক্ট করেন নি। ডোজকয়েন কারেন্সিটি পাবলিকলি রিলিজ হওয়ার কিছুদিন পরেই কয়েনটির ব্যাপারে সবথেকে বেশি হাইপ তৈরি হয়েছিলো রেডিট ইউজারদের মধ্যে। রেডিটরদের কারণে ২০১৩ সালেই ডোজকয়েনের টোটাল মার্কেট ভ্যালু হয়েছিল প্রায় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

লঞ্চ করার মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যেই ডোজকয়েন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ইন্টারনেটে ছোট ছোট টিপস দেওয়ার জনপ্রিয় মাধ্যম। তখন রেডিটে কারোর পোস্ট ভালো লাগলে তাকে কিছু ডোজকয়েন সেন্ড করে টিপস দেওয়াটা ছিলো খুবই কমন প্র্যাকটিস। অবশ্যই,  যেহেতু ডোজকয়েন একটি মিম ফোকাসড ক্রিপ্টোকারেন্সি, তাই কাউকে টিপস দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য কয়েন ব্যাবহার না করে ডোজকয়েন ব্যাবহার করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত।

রেডিটরদের To The Moon প্রোজেক্ট

নতুন কোন মিম ট্রেন্ড শুরু করার ক্ষেত্রে রেডিট এবং রেডিট ইউজারদের কোন জুড়ি নেই। হটাত গত কয়েক মাস ধরে ডোজকয়েনের হাইপ নতুন করে বুস্ট হওয়ার কারণ হচ্ছে রেডিটরদের নতুন প্রোজেক্ট, যেখানে তারা ডোজকয়েনের মার্কেট ভ্যালু কয়েক সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ১ ডলার পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাইছে। এই চেষ্টাটাকেই রেডিটে বলা হচ্ছে To the Moon বা ডোজকয়েনের প্রাইসকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া। তবে সত্যি কথা বলতে বর্তমানে ৫-৬ সেন্ট মূল্যের ক্রিপ্টোকয়েনের প্রাইস ১ ডলারে নিয়ে যাওয়া অনেকটা অসম্ভবই বলা যায়। যাইহোক, রেডিটরদের এই প্রোজেক্টকেই মুলত পুশ করছেন ইলন মাস্ক এবং অন্যন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যাক্তিত্যরা।

বলে রাখা ভালো, এই পোস্টটি লেখা হয়েছে শুধুমাত্র জানার উদ্দেশ্যে। ডোজকয়েন সম্পর্কে জেনে এখন যদি আপনার ডোজকয়েনে ইনভেস্ট করার ইচ্ছা হয়, তাহলে আমি সাজেস্ট করবো সেটা না করতে। ডোজকয়েন খুবই আনস্ট্যাবল কারেন্সি। আগামীতে ডোজকয়েনের হাইপ কমে গেলে যে এটার ভ্যালু কয়েক সেন্ট থেকে কমে একেবারে ০ সেন্ট হয়ে যাবে না এমনও কোন নিশ্চয়তা নেই। এটা বিটকয়েন কিংবা লাইটকয়েনের মত স্ট্যাবল কারেন্সি নয়। আর সত্যি কথা বলতে, যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ইনভেস্ট করাই একটা ব্যাড আইডিয়া, যদি আপনার মার্কেত সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান না থাকে। তাই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ইনভেস্ট করার চিন্তা মাথায় আসলে সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো!

About the author

সিয়াম

1 comment

  • ভাইয়া, এথিক্যাল হ্যাকিং কোর্সটি কই ?????????????

Categories