বুলেটপ্রুফ গ্লাস | কীভাবে গুলিকে থামিয়ে দেয়?

এমন কোন জায়গায় দুর্ভাগ্য বসত পড়ে গেলেন, ডানে বামে চারদিক থেকে সোঁ সোঁ করে গুলি আসতে শুরু করলো; কীভাবে নিজেকে বুলেট বিদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচাবেন? রাইফেল বা পিস্তলের গুলির চেয়ে ফাস্ট আর কিছুই হতে পারে না, এমনকি বুলেটের এতো স্পীড যে আপনি দেখতেই পাবেন না। এই গুলি থেকে বাঁচার একটাই উপায় হতে পারে; আপনার বডির সামনে এমন কোন জিনিষ রাখতে হবে যা গুলির গতিকে চুষে নেবে এবং থামিয়ে দেবে। আর এটাই হলো বুলেটপ্রুফ গ্লাস এর পেছনের আইডিয়া। এক নজরে দেখতে, বুলেটপ্রুফ বা বুলেট প্রতিরোধী গ্লাস একেবারেই সাধারন যেকোনো গ্লাসের মতো। বুলেট প্রতিরোধী গ্লাসকে একটানা কয়েক রাউন্ড গুলি সহ্য করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়, তবে এটা কতোটা প্রতিরোধ করতে পারবে তা নির্ভর করে গ্লাসটি কতোটা পাতলা বা মোটা এবং কোন হাতিয়ার ব্যবহার করে গুলি করা হবে তার উপরে। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি গ্লাসে কোন ফিচার থাকার ফলে সাধারন গ্লাসের ন্যায় দেখতে একটি গ্লাস সুপার ফাস্ট গতির বুলেটকে আটকে দেয়? চলুন এর পেছনের বিস্তারিত বিজ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করি


বুলেটপ্রুফ গ্লাস

এই আর্টিকেলটি যারা পড়ছেন, আপনারা কমবেশি সবাই ক্রিকেট খেলা পছন্দ করেন আবার হতে পারে অনেকে অনেক ভালো খেলেনও। বল ক্যাঁচ ধরার সময় একটি জিনিস নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবেন, কোন গতিশীল বলকে হাত স্থির রেখে ক্যাঁচ ধরলে হাতে অনেক ব্যাথা পাওয়া যায়। কিন্তু বলের যতোই গতি থাকুক না কেন, বলটি ধরার সময় আপনার হাতটি ঢিল করে পেছনে সরিয়ে নিলে হাতে কম ব্যাথা লাগে। বিজ্ঞানিকভাবে বলতে গেলে বলটির ভরবেগের পরিবর্তনের একই রেটে আপনার হাতের অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য এটি হাতে কম ব্যাথা লাগে। তো আপনি বলটি ধরার সময় আপনার হাত যতটা বলের গতিরদিক করে সরিয়ে নেবেন আপনার ততোই কম ব্যাথা অনুভূত হবে।

আপনার হাতের মতো সাধারন গ্লাসের সড়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকে না, যদি কেউ কোন সাধারন গ্লাসের দিকে গুলি মারে তবে গ্লাসটির সড়ে গিয়ে বা বাঁকা হয়ে গুলির শক্তি চুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না; ফলে গ্লাসটি বুলেটের আঘাত সহ্য না করতে পেরে ভেঙ্গে যার আর বুলেটের ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না। আর এখানেই একটি সাধারন গ্লাস এবং বুলেটপ্রুফ গ্লাসের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায়।

বুলেটপ্রুফ গ্লাস যেকোনো সাধারন গ্লাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। যদিও কোন গ্লাস সম্পূর্ণ বুলেট প্রুফ করা সম্ভব নয় তাই একে বুলেট রেজিস্টান্ট বা গুলি প্রতিরোধী গ্লাস বলা বেশি উপযোগী হবে; মানে কিছু সংখ্যকবার এটি গুলি প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এটি কিন্তু একটি গ্লাস নয়, মূলত অনেক স্তরের বলিষ্ঠ গ্লাস দিয়ে তৈরি করা এবং প্রত্যেকটি স্তরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাস্টিক দিয়ে তৈরি করা। অনেক গ্লাসের ভেতরের ফাইনাল স্তর পলি কার্বনেট দিয়ে তৈরি যা একটি ব্যাপক মানের শক্ত প্ল্যাস্টিক। একটি শক্ত কাঁচ তারপরে শক্ত প্ল্যাস্টিক আবার কাঁচ আবার প্ল্যাস্টিক এভাবেই অনেক স্তর পর্যন্ত চলে এই গ্লাসটিকে সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা হয় আর এই প্রসেসকে স্তরায়ণ (Lamination) বলা হয়। এই প্রসেসের ফলে নর্মাল গ্লাস থেকে বুলেটপ্রুফ গ্লাসকে অনেক মোটা করে দেয়। গুলি প্রতিরোধী গ্লাসের ঘনত্ব সাধারনত ৭ মিলিমিটার থেকে ৭৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

যখন একটি গুলি প্রতিরোধী গ্লাসে গুলি আঘাত হানে, গুলির এনার্জি পার্শ্বাভিমুখভাবে বিভিন্ন স্তর দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। কারণ এখানে বুলেটের এনার্জি বেশ কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে যায়; একটি মাত্র গ্লাসকে অতিক্রম করার পরিবর্তে এখানে একসাথে একটি শক্ত গ্লাস তারপরে শক্ত প্ল্যাস্টিক আবার গ্লাস আবার প্ল্যাস্টিক এভাবে কয়েক স্তর অতিক্রম করার প্রয়োজনীয়তা পড়ে। অনেক স্তর থাকার কারণে বুলেটের এনার্জি প্রশস্তভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর এনার্জি বিভিন্ন লেয়ার দ্বারা শোষিত হয়ে যায়। এনার্জি শোষণ হওয়ার পড়ে বুলেটটির গতি আর আগের মতো থাকে না, এটি কোন একটি স্তরে গিয়ে এটি সম্পূর্ণ স্থির হয়ে পড়ে এবং ফাইনাল স্তর ভেদ করার ক্ষমতা আগেই হারিয়ে ফেলে। বুলেটপ্রুফ গ্লাসকে মনে করুন কোন একটি “এনার্জি শোষণকারী” গ্লাস, তবে মনে মনেই বেটার আইডিয়া পেয়ে যাবেন।

ব্যবহার?

বিশেষ করে যে জায়গা গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা হয়, সেখানেই বুলেটপ্রুফ গ্লাস ব্যবহার করতে দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষকরে ব্যাংকে এবং গাড়ীর জানালাতে ব্যাপকভাবে এটি ব্যবহৃত হয়। আজকাল এই গ্লাস বিভিন্ন মাপে এবং বিভিন্ন সাইজে পাওয়া যায়। তবে যে গ্লাসে যতোবেশি লেয়ার থাকবে সেই গ্লাস ততোবেশি মোটা হবে এবং ততোবেশি রাউন্ড গুলি সহ্য করার ক্ষমতা রাখবে। বেশি মোটা গ্লাস হয়তো ব্যাংকে লাগাতে সমস্যা হতে পারে কিন্তু যখন কথা আসে কোন রাষ্ট্রপতির গাড়ীর জানালার তখন সেটাকে যতোটা সম্ভব সুরক্ষিত করা যায়। আবার গুলি প্রতিরোধী গ্লাসকে বেশি মোটা বানালে একটি সমস্যা আছে, এটি ততোবেশি ঘোলা হয়ে যাবে—কেনোনা আলো এর মধ্যে দিয়ে আসতে অনেক লেয়ার ভেদ করতে হবে।

শেষ কথা

আশা করছি এই ছোট্ট আর্টিকেলটি থেকে বুলেটপ্রুফ গ্লাস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করতে পেড়েছেন এবং জানলেন কীভাবে এই গ্লাস দুরন্ত গতির গুলির শক্তি চুষে নিয়ে একে স্থির বানিয়ে দেয়। তো আপনার গাড়ীতেকি গুলি প্রতিরোধী গ্লাস লাগানো আছে? আমাদের নিচে কমেন্ট করে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন, তাছাড়া আপনার যেকোনো প্রশ্নেও কমেন্ট করতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories