রিফ্রেশ রেট কি? 60Hz Vs 120Hz মনিটর? বেশি রেট = বেশি ভালো?

নতুন মনিটর বা এইচডি টিভি কেনার সময় রিফ্রেশ রেট সম্পর্কে অবশ্যই শুনেছেন। শুধু শোনা নয়, যদি আপনি একজন গেমার হয়ে থাকেন তাহলে এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও আপনি অবগত রয়েছেন। আগের কথা বলবো না তবে বর্তমানে টিভি আর মনিটর প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা তাদের প্রডাক্ট স্পেসিফিকেশনে এই বিষয়টিকেই প্রধান মার্কেটিং টার্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের প্রডাক্টের সাথে হাই রিফ্রেশ রেট লাগিয়ে দাম আকাশ ছুঁইয়ে আমাদের কাছে পৌছিয়ে দিচ্ছে। তো এই অবস্থায় আমাদের এই বিষয়টির উপর সম্পূর্ণ নলেজ থাকা জরুরী, যাতে আমাদের টাকা নষ্ট না হয়।


রিফ্রেশ রেট মানে কি?

আসলে এই ব্যাপারটি মোটেও কোন জটিল ব্যাপার নয়, আপনাকে বোঝালে আপনি ১ বাক্যেই সম্পূর্ণ বিষয়টি জেনে যাবেন। রিফ্রেশ রেট সাধারনত ইমেজ শো করানোর জন্য একটি মনিটর সেকেন্ডে কতোবার রিফ্রেস করে তার পরিমাপ। আবার আরেকভাবে বলতে পারেন এটি সেই পরিমাপ যা দ্বারা নির্দেশ করে মনিটরটি ১ সেকেন্ডে কতোগুলো ফ্রেম প্রদর্শিত করতে পারবে (যদিও ব্যাপারটা এমন হলেও এমন নয়)। এটিকে সাধারনত হার্জ (Hz) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একটি ১২০ হার্জের মনিটর মানে বুঝতে হবে এটি সেকেন্ডে ১২০টি ইমেজ প্রদর্শন করতে পারবে, কিন্তু এখানে একটু ব্যাপার আছে।

মনিটরের মতোই যখন কোন ভিডিও বা মুভি সুট করা হয় সেখানে প্রতি সেকেন্ডে নির্দিষ্ট ফ্রেমের পরিমাপ থাকে। ধরুন একটি ভিডিও ২৪ ফ্রেম/সেকেন্ডে রেকর্ড করা হয়েছে অর্থাৎ এটি প্রত্যেক সেকেন্ডে ২৪টি ফ্রেম প্রদর্শন করে প্লে হবে। যারা এখনো জানেন না তাদের জানিয়ে দেই, কোন ভিডিওই আসলে চলমান হয় না; এতে একসাথে অনেক গুলো ছবি আমাদের চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আমাদের চোখের দৃষ্টির কিছু দেরীর কারণে এই ছবি গুলোকে চলমান মনে হয়। ভিডিও ক্যামেরা কীভাবে কাজ করে জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। যাইহোক, ফ্রেমরেট মানে ১ সেকেন্ডে কতোগুলো ফ্রেম বা ছবি প্রদর্শিত করা হবে তার পরিমাপ। কিন্তু রিফ্রেশ রেট মানে কোন ফ্রেম রেট নয়।

ধরুন আপনি মনিটরে কোন ভিডিও দেখছেন, সেটার ফ্রেম রেট ২৪ ফ্রেম/সেকেন্ড এবং আপনার মনিটর ৬০ হার্জের; অর্থাৎ ভিডিও প্রতি সেকেন্ডে ২৪টি ফ্রেম দেখাবে কিন্তু মনিটর প্রতি সেকেন্ডে ৬০ বার রিফ্রেশ হবে। আপনার সোর্স ভিডিওর ফ্রেমে যদি একটি পিক্সেলও পরিবর্তন না হয় তারপরেও মনিটর কিন্তু রিফ্রেশ করেই যাবে।

বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করার জন্য চলুন আরেকটি উদাহরণ নেওয়া যাক। মনে করুন আপনার চোখ খুলে রাখা অবস্থায় আপনি কোন চলমান জিনিষ দেখতে পারছেন না কিন্তু আপনার সামনে পৃথিবী ঠিকই চলমান রয়েছে। ধরুন আপনি ১ বার চোখ বন্ধ করে আবার খুললে তৎক্ষণাৎ নতুন ভার্সনের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন। এখন আপনাকে অবিরত চলমান বস্তু দেখতে কি করতে হবে? অবশ্যই বারবার চোখ খোলা মোজা করতে হবে এবং প্রতি সেকেন্ডে আপনি যতোবেশি চোখ খোলা মোজা করবেন আপনি ততোবেশি চলমান পৃথিবীর ডিটেইলস দেখতে পারবেন। আশা করি সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেড়েছেন।

কোন মনিটরের হাই রিফ্রেশ রেট থাকার মানে সেটি হাই ফ্রেম রেট হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হবে। তবে সবসময় হাইয়ার রিফ্রেশ আপনাকে মন মতো পারফর্মেন্স দিতে পারবে না যদি সোর্স ভিডিওতে যথেষ্ট ফ্রেম রেট না থাকে। ধরুন আপনি একটি ১২০ হার্জ মনিটরে ১৫ ফ্রেম রেটের ভিডিও দেখছেন, তো এখানে ১২০ হার্জ মনিটর হওয়াতে আপনি কোন লাভই পাবেন না বরং ভিডিওতে কম ফ্রেম রেট থাকার কারণে আপনার ছবি আটকা আটকা মনে হবে।

গেম এবং রিফ্রেশ রেট

কোন ভিডিও গেম কোন গ্রাফিক্স কার্ড দ্বারা রেন্ডার হলো বা আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন কি সে ব্যাপারে কোন যায় আসে না। মূল সম্পর্ক হলো গেমটি প্রতি সেকেন্ডে কতো গুলো ফ্রেম তৈরি করছে। সাধারনত একটি গেমে যতোবেশি ফ্রেম রেট থাকে সেটি খেলতে এবং দেখতে ততোবেশি স্মুথ হয়ে যায় এবং আপনার কাছে এই গেম প্লে কে একদম জীবন্ত মনে হয়।

সমস্যা তখন সৃষ্টি হতে পারে যখন আপনার গেমের ফ্রেম রেট মনিটরের রিফ্রেশ থেকে অনেক বেশি হয়ে যায়, তখন মনিটর সেই ভিডিওকে ঠিকঠাক সিঙ্ক করতে পারে না। আপনার কম্পিউটার কিন্তু ঠিকই স্মুথ গেম প্লে দিচ্ছে কিন্তু মনিটর সেটাকে দেখানোর ক্ষমতা রাখে না।

উদাহরণ স্বরূপ, মনেকরুন আপনার মনিটর ৬০ হার্জ রিফ্রেশে কাজ করে এবং আপনি একটি গেম প্লে করছেন যা ৮০ ফ্রেম/সেকেন্ড রেন্ডার করছে। এই অবস্থায় গেমে সেকেন্ডে ৮০টি ফ্রেম থাকলেও আপনি ৬০টির বেশি ফ্রেম দেখতে পাবেন না। আবার এমন হবে, আপনি এক একটি রিফ্রেশ রেটে একাধিক ফ্রেম দেখতে পাবেন যেখানে প্রতি রিফ্রেশে ১টি করে ফ্রেম উত্তম। আর্টিফিশিয়ালি ফ্রেম ক্যাপ করে এই সমস্যার অনেকটা সমাধান করা গেলেও আপনি স্মুথ প্লে দেখতে পাবেন না।

এর উত্তম সমাধান হচ্ছে একটি হাইয়ার রিফ্রেশ রেটের মনিটর কেনা, ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট মনিটর এক্ষেত্রে ঠিক হবে কেনোনা এটি সেকেন্ডে ১২০টি ফ্রেম হ্যান্ডেল করতে পারবেন ফলে কোন ফ্রেম মিস হবে না। গেমের জন্য ১২০ হার্জ মনিটর আপনাকে রিয়াল পার্থক্য দিতে পারে কিন্তু আপনি যখন কোন ভিডিও প্লে করবেন যেটা কোন নির্দিষ্ট ফ্রেম রেট সেট করে তৈরি করা সেখানে ১২০ হার্জ মনিটর এবং ৬০ হার্জ মনিটরে আপনি কোন পার্থক্য করতে পারবেন না।

বর্তমানে গেমারদের সমস্যা সমাধান করার জন্য রিফ্রেস প্রযুক্তিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এনভিডিয়া এই ফিচারকে বলে জি-সিঙ্ক এবং এএমডি এই ফিচারকে বলে ফ্রী-সিঙ্ক। আপনার গ্রাফিক্স কার্ড কাজ করে ডাইন্যামিক হার্জের উপর কিন্তু মনিটর কাজ করে স্ট্যাটিক হার্জের উপর; আর এই দুইটি পদ্ধতি কখনোই এক হতে পারে না।

কিন্তু জি-সিঙ্ক প্রযুক্তিতে আপনার মনিটরে যদি এই ফিচারটি থাকে তবে মনিটর গ্রাফিক্স কার্ডের গোলাম হিসেবে কাজ করে। আপনার গ্রাফিক্স কার্ড একটি ফ্রেম জেনারেট করলে সেটা সাথে সাথে মনিটরও প্রদর্শন করে। এমনটা নয় যে গ্রাফিক্স কার্ডের কাজ গ্রাফিক্স কার্ড করছে আর মনিটর ইচ্ছা মতো রিফ্রেশ করেই চলেছে। জি-সিঙ্ক প্রযুক্তিতে মনিটর এবং জিপিইউ একসাথে ডাইন্যামিক হার্জে কাজ করে বেটার পারফর্মেন্স প্রদান করে।

ভিডিও দেখা

 

ভিডিও দেখা এবং গেম প্লে করা দুইটি আলাদা ব্যাপার। ভিডিওতে একটি নির্দিষ্ট ফ্রেম রেট থাকে এবং সম্পূর্ণ ভিডিও একই ফ্রেম রেটে প্লে হয়। কিন্তু গেমে ইনস্ট্যান্ট ফ্রেম রেন্ডার হয়। ভিডিও সাধারনত ২৪ ফ্রেমে রেকর্ড করা হয় তবে এটিকে ৩০ ফ্রেম বা ৬০ ফ্রেমে কিছু ফ্রেম রিপিট করে প্লে করানো হয়। মানুষের চোখ শুধু মাত্র ২৪ ফ্রেম/সেকেন্ড ডিটেক্ট করার ক্ষমতা রাখে।

হোম মনিটর বা টিভির জন্য সাধারনত ৬০ হার্জ রিফ্রেস থাকেই চলে তবে গেমারদের জন্য ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট প্রয়োজনীয় হতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ২৪০ হার্জ, ৪৮০ হার্জ রিফ্রেস আপনার কতটা প্রয়োজনীয়? সত্যি বলতে “একদমই প্রয়োজনীয় নয়”। প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা রিফ্রেস রেট দিয়ে অ্যাডভারটাইজমেনট করে থাকে ব্যাস, তারা দেখানো এবং বোঝানোর চেষ্টা করে যে বেশি নাম্বারের রিফ্রেশ মানের ভালো কোয়ালিটি এবং ভালো মনিটর।

ক্ষে কম্পিউটার মনিটরে বেশি হার্জ রিফ্রেশ রেট থাকার তেমন কোন গুরুত্ব নেই। আর আমি আগেই উল্লেখ্য করেছি সোর্স ভিডিওতে যদি পর্যাপ্ত ফ্রেম না থাকে তবে মনিটরের রিফ্রেশ রেট কোন কাজেরই নয়! আবার কম্পিউটার মনিটরের ক্ষেত্রে ১২০ হার্জ মনিটর আর ২৪০ হার্জ মনিটরের ক্ষেত্রে ব্যস্তব ব্যাবহারে কোন পার্থক্যই দেখতে পাওয়া যাবে না।

তবে টিভির ক্ষেত্রে বেশি রিফ্রেস রেটের আলাদা ব্যাপার হয়েছে। টিভিতে সোর্স থেকে আসা ফ্রেম গুলোকে ইনহ্যান্স করানো হয় এবং বিশেষ অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে নতুন ফ্রেম তৈরি করা হয়। এই ফিচারকে মোসান ইন্টারপলেসন বলা হয় এবং এটি স্মুথ ভিডিও প্লে ব্যাক দিতে সক্ষম।

শেষ কথা

তো আপনার কি হাই রিফ্রেশ রেটের মনিটরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? ঠিক আছে, এর উত্তর নির্ভর করে আপনার প্রয়োজনীয়তার উপর। আপনি যদি গেম প্লে করেন যেটা প্রতি সেকেন্ডে ৬০ ফ্রেম রেন্ডার করে তবে বেশি রিফ্রেসের মনিটর আপনার কোন কাজেরই নয়। যদি ৬০ এর বেশি ফ্রেম রেন্ডার হয় তবে ১২০ হার্জ মনিটর কিনলেই ব্যাস। ২৪০ বা ৪৮০ হার্জ মনিটর আপনার কোনই উপকারে আসবে না এবং আপনি পার্থক্য বুঝতেই পারবেন না।

তো নতুন মনিটর কেনার সময় কতো রিফ্রেস রেট কেনার জন্য আপনি পছন্দ করবেন? কেন ঐ রেট আপনার প্রয়োজনীয়? সবকিছু আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানান।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories