কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম | ফ্যাট, এনটিএফএস, জিএফএক্স বৃত্তান্ত

কখনো ভেবে দেখেছেন আপনি যখন কোন ডাটা রীড বা রাইট করেন তখন হার্ডড্রাইভ সেটিকে সম্পূর্ণ করার জন্য কি কি কাজ করে? আজকের দিনে আমাদের হার্ডড্রাইভ গুলো দৈত্যাকার সাইজের ডাটা সংরক্ষিত রাখতে পারে, তাদের নিজের ধারণ ক্ষমতাও ব্যাপক হয়ে থাকে এবং সাথে নিজে থেকেই ত্রুটি প্রতিরোধ এবং পারফর্মেন্স বুস্ট করতে পারে। হার্ডড্রাইভ গুলো সাধারন বিশেষ কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম দ্বারা সংগঠিত হয়ে থাকে—যা অপারেটিং সিস্টেম নিজে থেকেই আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করে রাখে। আর আপনি নিজেও হয়তো মেমোরি কার্ড বা হার্ডড্রাইভ ফরম্যাট অপশনে ফ্যাট/এফএটি (FAT), এনটিএফএস (NTFS) ফাইল সিস্টেম অপশন গুলো দেখে থাকবেন, আর হতে পারে আপনার মনে প্রশ্নও জমে আছে, “আসলে এগুলো কি?” “এদের মধ্যে পার্থক্য কি?” —আজকের আর্টিকেলে আমি এই বিষয় গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো


ফ্যাট/এফএটি

কম্পিউটিং জগতের সবচাইতে পরিচিত এবং সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম হচ্ছে ফ্যাট বা এফএটি (FAT) —যার সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে ফাইল আল্যোকেশন টেবিল (File Allocation Table) এবং এটি মাইক্রোসফট দ্বারা উন্নতি পাওয়া একটি ফাইল সিস্টেম। এই ফাইল সিস্টেমটি আসা অনেক দিন হয়ে গেল এবং আসার পরে এর কিছু আপডেটও রয়েছে যেমন- ফ্যাট১৬ এবং ফ্যাট৩২; যাইহোক এই সিস্টেমকে আমরা মূলত ফ্যাট বলেই চিনি।

যতোগুলো প্রধান ফাইল সিস্টেম রয়েছে এদের মধ্যে ফ্যাট সবচাইতে সহজ একটি সিস্টেম এবং পৃথিবীর প্রায় সকল অপারেটিং সিস্টেমই এই ফাইল সিস্টেমকে রীড করার ক্ষমতা রাখে। এটি মূলত শুধু লিস্ট ভিত্তিক ফাইল শ্রেণি করে সাজিয়ে রাখার জন্য একটি সিস্টেম। তবে হার্ডড্রাইভের কোন ফাইল প্রবলেম হলে এই সিস্টেমটি তা ঠিক করার ক্ষমতা রাখে না। ফ্যাটের সবচাইতে বড় অসুবিধা হচ্ছে এই ফরম্যাটটি শুধু ৪জিবি পর্যন্ত এক একটি ফাইল সংরক্ষিত করতে পারে। একটি ফাইলের সাইজ ৪জিবির বেশি হলে ফ্যাট তা হ্যান্ডেল করতে পারে না। আজকের দিনে হার্ডড্রাইভে আর এটি ফরম্যাট ব্যবহার করা হয় না তবে মেমোরি কার্ড বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভ/পেনড্রাইভ গুলোতে এই ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট এখনো ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ড্রাইভকে এই ফাইল সিস্টেমে ফরম্যাট করা একেবারেই সোজা।

ফ্যাট৩২ বিশেষ করে পুরাতন ভার্সন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম গুলোতে ব্যবহার করা হতো; যেমন- উইন্ডোজ ৯৫, ৯৮ ইত্যাদি।

এনটিএফএস

নিউ টেকনোলজি ফাইল সিস্টেম বা এনটিএফএস (NTFS) হলো মাইক্রোসফট দ্বারা তৈয়ারকৃত আরেকটি কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম —যেটা নেক্সট জেনারেশনকে টার্গেট করে তৈরি করা হয়েছে। এর গঠন প্রণালী অনেক জটিল এবং এটি শুধু মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয় (মানে উইন্ডোজ) এবং উইন্ডোজ এক্সপির সাথে এটি প্রথম আমাদের মাঝে আসে। এটিকে “জার্নালিং” ফাইল সিস্টেমও বলা হয়, কেনোনা এটি নিজের ডিভাইজের সকল অপারেশন গুলোর রেকর্ড রাখে। আর এই অপারেশন রেকর্ড গুলো কোন ত্রুটি খুঁজে পেতে এবং সেগুলোকে রিকভার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি পাওয়ার ফেইলিয়র এবং ড্রাইভ ফেইলিয়র ইত্যাদি সমস্যা গুলোকেও রিকভার করতে পারে।

এর সবচাইতে সুবিধার বিষয় হলো এই সিস্টেমে ১টি ১৬ টেরাবাইট সাইজের ফাইলও স্টোর করা যায়; সাথে এটি ম্যাক্সিমাম ২৫৬ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ সমর্থন করে। যদিও এই সিস্টেম ফরম্যাট ফ্যাটের মতো এতোটা ইউনিভার্সাল নয়, তারপরেও মেজর অপারেটিং সিস্টেম গুলো একে পড়তে পারে। এই ফাইল সিস্টেম মূলত হার্ডড্রাইভের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তবে রেমুভেবল মিডিয়া স্টোরেজেও এই সিস্টেমে ফরম্যাট করা যায়। তবে আপনার ফোনের মেমোরি কার্ড এনটিএফএস দিয়ে ফরম্যাট করলে আপনার ফোন হয়তো সেটিকে সমর্থন নাও করতে পারে।

তবে রেমুভেবল মিডিয়া স্টোরেজে এটি না ব্যবহার করায় ভালো, এই কম্পিউটার ফাইল সিস্টেমটি অপারেশন রেকর্ড রাখার জন্য স্টোরেজে প্রচুর পরিমানে রাইট করে আর এর ফলে রেমুভেবল মিডিয়া স্টোরেজ করাপ্টেডও হয়ে যেতে পারে।

এইচএফএস+

এইচএফএস+ (HFS+) ফাইল সিস্টেমকে বিশেষভাবে অ্যাপেল উন্নতি করেছে তাদের ম্যাকিনটোস কম্পিউটারে ব্যবহার করার জন্য। এটি ফাইল গুলোকে নির্দিষ্টভাবে বণ্টন করার জন্য এনটিএফএস এর সাদৃশ্য গঠনে প্রস্তুতকৃত, তবে এই দুই ফাইল সিস্টেম কিন্তু সুসঙ্গত নয়। এই ফাইল সিস্টেম একটি ফাইল এবং ম্যাক্সিমাম স্টোরেজ হিসেবে ১০ লাখ টেরাবাইট উপর পর্যন্ত সমর্থন করতে পারে। সাথে এটি অবশ্যই জার্নালিং ফাইল সিস্টেম, ফলে কোন এরর দেখা দিলে তা ফিক্স করতে অনেক সহজ হয়ে যায়।

দুর্ভাগ্য বশত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এই ফাইল সিস্টেম ফরম্যাটকে ব্যবহার করতে পারে না, তবে ম্যাক ওএস এবং লিনাক্স একে ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে।

ইএক্সটি৪

ইএক্সটি৪ (ext4) বর্তমানে লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত একটি ফাইল সিস্টেম। এটি মূলত পুরাতন ভার্সন ইএক্সটি২ এবং ইএক্সটি৩ এর সফল ভার্সন—যেখানে কিছু জটিল টেকনিক ব্যবহার করে এর পারফর্মেন্সকে উন্নতি করা হয়েছে। এটিও মূলত জার্নালিং ফাইল সিস্টেম, মানে তো জানেনই। রেমুভেবল স্টোরেজে এটিকে ব্যবহার করা যায় না, এতে স্টোরেজ করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে তবে অবশ্যই এটি হার্ডড্রাইভের জন্য প্রযোজ্য।

এটি মূলত একটি ফাইল সাইজ ১৬ টেবিবাইট এবং স্টোরেজ সাইজ ১ এক্সবিবাইট পর্যন্ত সমর্থন করে। এটিও উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য নয়, তবে Ext2Read নামক একটি প্রোগ্রাম ব্যবহার করে উইন্ডোজ ইউজাররা অন্তত এই ফাইল সিস্টেম ফরম্যাটকে রীড করতে পারে।

জিএফএক্স

জিএফএক্স (ZFX) মূলত ইন্টারপ্রাইজ লেভেলের কম্পিউটার ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট; এটি হোম থেকে বেশি ইন্টারপ্রাইজ কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে সার্ভার স্টোরেজে একে ব্যবহার করা হয়, যেখানে একসাথে মিলিয়ন ইউজারের সংরক্ষিত ডাটা থাকে। তাছাড়া একে পারফর্মেন্স এর জন্যও চেনা হয়। এটি একটি ফাইল সাইজ এবং সম্পূর্ণ স্টোরেজ সাইজ হিসেবে ১৬ এক্সাবাইট পর্যন্ত সমর্থন করে। এটি মূলত ম্যাক সার্ভার, লিনাক্স এবং ছোট খাটো ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা সমর্থিত।

শেষ কথা

এই প্রধান প্রধান বহুল চলিত ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট কিন্তু সকলের জন্য এবং সকল কাজের জন্য নয়। প্রত্যেকের কিছু না কিছু গুরুত্ব এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে তবে তা ব্যবহারকারী এবং ব্যাবহারের উপর নির্ভরশীল। এই আর্টিকেল থেকে অন্তত আপনি বিভিন্ন ফাইল সিস্টেম এবং তাদের কাজ সম্পর্কে জানতে পাড়লেন এবং অবশ্যই পরিষ্কার হয়ে গেলেন ফ্যাট বা এনটিএফএস কি জিনিষ। তো আপনি কোন ফাইল সিস্টেম ফরম্যাট অধিকাংশ সময় ব্যবহার করেন? আমাদের কমেন্ট করে জানান।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories