ডুয়াল মনিটর কতটা প্রয়োজনীয়? কেন প্রয়োজনীয়? – প্রোডাক্টিভিটি বাড়িয়ে নিন!

আপনি যদি ঠিক আমার মতো কম্পিউটার গুরু হয়ে থাকেন কিংবা আপনি যদি ঠিক সেই ব্যাক্তি হয়ে থাকেন যাকে ২৪/১২+ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয় তবে আপনি নিশ্চয় জানেন যে, ডুয়াল মনিটর থাকাটা কতটা অসাধারণ। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমনটা নাও হতে পারে, এমনকি হয়তো আপনি নিজেও ভাবতে পারেন, “একটির বেশির কম্পিউটার মনিটর থাকার প্রয়োজনীয়তাটা কি? আসলে পয়েন্ট টা কোথায়?”। ঠিক আছে, আর্টিকেলের আরো গভীরে যাওয়ার আগে বলে রাখি, আসলে ডুয়াল কম্পিউটার মনিটর থাকাটা কোন প্রয়োজনের ব্যাপার নয় বরং এটি চাওয়ার ব্যাপার এবং প্রডাক্টিভিটির ব্যাপার। তো চলুন কিছু কারনের উপর নজর রাখা যাক, যেগুলো বিশ্লেষণ করলে জানা যেতে পারে—কেন ডুয়াল কম্পিউটার মনিটর থাকা প্রয়োজনীয়…


গবেষক বা লেখকদের জন্য

ডুয়াল মনিটর আপনাকে যেকোনো গবেষণা বা লেখার কাজে প্রচণ্ড সাহায্য করতে পারে। একটি মনিটরকে আপনি আপনার প্রাইমারী কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন এবং আরেকটি মনিটরে আপনি সর্বদা অন্য বিষয় গুলোর উপর নজর রাখতে পারবেন। হয়তো আপনি আমার মতো একজন ব্লগ রাইটার, তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার ব্লগ কনটেন্ট লেখার জন্য অন্যান্য সাইট গুলো এক্সপ্লোর করতে হয় এবং বহু কনটেন্ট গবেষণা করে তারপরে আপনাকে নিজের কনটেন্ট তৈরি করতে হয়। ডুয়াল কম্পিউটার মনিটর থাকলে, এক মনিটরে আপনি হয়তো আপনার ব্লগ ড্যাসবোর্ড ওপেন রেখে ব্লগে কাজ করতে পারবেন এবং আরেকটি মনিটরে অন্যান্য আর্টিকেল থেকে ধারণা বা সোর্স নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

আবার ধরুন আপনি একজন সাধারন কম্পিউটার ইউজার, বিশেষ করে ওয়ার্ডপ্রসেসিং সফটওয়্যার বা বেসিক কাজের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করেন। তবে ডুয়াল কম্পিউটার মনিটর দিয়ে একটি মনিটরে আপনার কাজ করতে পারবেন এবং আলাদা মনিটরে আপনি মিউজিক প্লে, বা ইন্টারনেট ব্রাউজার ওপেন রেখে কিছু ব্রাউজ করার সুবিধা পেয়ে যাবেন। আবার হয়ে পারে কাজের পাশাপাশি আপনি কারো সাথে ইনস্ট্যান্ট চ্যাট করতে পারবেন, আপনার ফেসবুক প্রোফাইল চেক করতে পারবেন। হয়তো চেক করে দেখলেন কে অনলাইনে রয়েছে বা একদিকে কাজ করতে করতে আপনি আরেকদিকে কাওকে কাজের মেইল পাঠাতে পারবেন।

হ্যাঁ উইন্ডোজ পিসিতে সাইড বাই সাইড উইন্ডো ফিচার রয়েছে, যেখানে আপনি উইন্ডো সাইডে রেখে কাজ করতে পারেন। কিন্তু একটি মনিটরে আপনি যতোই সাইড বাই সাইড উইন্ডো করে রাখুন না কেন আপনি জায়গায় স্বল্পতা অনুভব করবেন। অর্থাৎ ডুয়াল কম্পিউটার মনিটর ব্যাবহারের মাধ্যমে আপনি আসল কাজের পাশাপাশি কিছু এক্সট্রা তথ্যের দিকে নজর রাখতে পারবেন যা সত্যিই অনেকের জন্যই উপকারী হতে পারে।

কাজের স্বাধীনতা

ডুয়াল মনিটর আপনার কাজের স্বাধীনতাকে বৃদ্ধি করে। চিন্তা করে দেখুন আপনি একটি মনিটরে ৫-৬ সফটওয়্যার ওপেন করে রেখেছেন, তো অবশ্যই সেগুলো গোলমাল পেঁচিয়ে যাবে। তাছাড়া আপনি যদি সকল উইন্ডো গুলোকে সাইড বাই সাইড উইন্ডো করেন তবুও জায়গার অনেক কমতি পড়ে যাবে। ধরুন আপনার অফিসের বস আপনাকে কোন রিপোর্টের উপর একটি ফাইনাল রিপোর্ট বানাতে বললেন, তাহলে কি করবেন? আপনি কখনোই একটি মনিটরে স্বাধীন ভাবে রিপোর্ট গুলোকে সাইড বা সাইড কম্পেয়ার করতে পারবেন না। কিন্তু এবার ডুয়াল কম্পিউটার মনিটরের কথা ভেবে দেখুন… একটি মনিটরে আপনি বসের জন্য ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করার জায়গা পেয়ে যাবেন এবং আরেকটি মনিটরে সেই সকল রিপোর্ট গুলোকে সাজিয়ে রাখতে পারবেন যেগুলোকে আপনি তুলনা করতে চান।

ধরুন আপনি ইন্টারনেট থেকে কিছু তথ্য গবেষণা করছেন এবং সেগুলোকে কোন ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার দ্বারা লিপিবদ্ধ করে রাখছেন। এবার আপনি ইন্টারনেট ব্রাউজার খুললেন তথ্য গুলো খুঁজে পেলেন এবং ওয়ার্ড প্রসেসর খুললেন। একটি মনিটরের ক্ষেত্রে কি ঘটবে? একবার ইন্টারনেট ব্রাউজারে ক্লিক করে তথ্য নেবেন আবার আরেকবার ওয়ার্ড প্রসেসিং সফটওয়্যার ক্লিক করে লিখতে শুরু করবেন। কখনো একটা কাজ মাক্সিমাইজ তো আরেকটা কাজ মিনিমাইজ। এবার একটু চিন্তা করে দেখুন, এভাবে কি আপনি সত্যিই কাজ করে কোন স্বাধীনতা খুঁজে পাবেন। বরং ডুয়াল মনিটর থাকলে একটিতে আপনি লিখছেন এবং আরেকটিতে সর্বদা ইন্টারনেট ব্রাউজার খোলাই রয়েছে। এতে আপনি কাজের আসল স্বাধীনতা অনুভব করতে পারবেন। আর না হলে, ক্লিক, আপ, ডাউন, ক্লিক, মিনিমাইজ, মাক্সিমাইজ, উইন্ডো মুভ ইত্যাদি করতে জীবন একদম নরক হয়ে যাবে।

ভুল হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়

ধরুন আপনি একটি মনিটরে অনেক সাথে অনেক গুলো কাজের উইন্ডো খুলে গোলমাল পাকিয়ে রেখেছেন। কোন উইন্ডো ওপেন করছেন তো কোনটা ক্লিক করছেন, কোনটাকে মিনিমাইজ করছেন তো এভাবে কাজ করা ক্ষেত্রে হতেই পারে আপনি ভুল করে কোন কাজের উইন্ডো ক্লোজ করে ফেললেন। সেটা যদি আপনার প্রাইমারী কাজের উইন্ডো হয় এবং ভুল বশত আপনি যদি সেটাকে সেভ করে না রাখেন তবে আপনার কপাল সত্যিই খারাপ হতে পারে। যেখানে ডুয়াল কম্পিউটার মনিটরে এক্সট্রা স্পেস থাকায় এবং কাজ গুলোকে সাইড বাই সাইড আলাদা করে সাজিয়ে রাখায় আপনার কাজের ভুল বা ভুল বশত কোন উইন্ডো ক্লোজ করার ঝুঁকি কমে যায়।

আবার হতে পারে আপনি একসাথে একধিক উইন্ডো তে ডকুমেন্ট এডিট করছেন। একটি মনিটরে কোন টেক্সট কপি পেস্ট করার সময় কোনটি থেকে কপি করলেন আর কোনটিতে পেস্ট করবেন ইত্যাদি বিষয় গুলো গুলয়ে যেতে পারে। ডুয়াল মনিটরে আপনি সহজেই এবং অনেক কম ভুল করে এই কাজ গুলোকে চালিয়ে নিতে পারবেন। ডুয়াল মনিটরে আপনার কাজ গুলোকে নির্দিষ্টভাবে সাজিয়ে রাখতে পারবেন এবং খুব সহজে সেগুলোর উপর নজর রাখা সম্ভব হবে। জাস্ট একটি মনিটর থেকে কিছু কপি করে আরেকটিতে পেস্ট করে দিন, ব্যাস!

গেমারদের জন্য

যারা গেমিং করতে ভালোবাসেন বা ফুল স্ক্রীন গেমিং করেন তাদের জন্য ডুয়াল মনিটর থাকার এক আলাদা কদর রয়েছে। ধরুন আপনি ফুল স্ক্রীন করে গেম প্লে করছেন ঠিক সেই অবস্থায় কাজের কোন মেইল আসলো, আপনি নোটিফিকেশন সাউন্ড পেলেন… কিন্তু আপনি তৎক্ষণাৎ সেটি এক্সপ্লোর করতে ব্যার্থ হবেন। আপনাকে গেমটি আগে মিনিমাইজ করতে হবে বা ক্লোজ করে দিতে হবে তারপরে আপনি মেইলটি চেক করতে পারবেন। আর কোন গেম মিনিমাইজ করা বা গেমটি ক্লোজ করে দেওয়া সবসময়ই এতোটা সহজ নাও হতে পারে। আপনার পিসির কনফিগারেশন যদি সত্যিই ভালো না হয় তবে আপনি নিশ্চয় জানেন, কোন গেম মিনিমাইজ করা কতটা ঝামেলা আর সময় সাপেক্ষ হতে পারে।

ডুয়াল মনিটরে এই কাজ গুলো সত্যিই অনেক সহজ হয়ে যায়। আপনি একটি মনিটরে ফুল স্ক্রীনে গেম প্লে করতে পারবেন এবং আরেকটিতে আপনার প্রয়োজনীয় মেইল, চ্যাট, ম্যাসেজ, কম্পিউটার হেলথ, বা ব্যান্ডউইথ স্পীড ইত্যাদির দিকে সহজেই নজর রাখা সম্ভব হবে। তাছাড়া আপনি সহজেই আরেক স্ক্রীনে দেখতে পাবেন আপনার কোন কোন বন্ধু এই মুহূর্তে অনলাইনে রয়েছে এবং আপনি চাইলে তাদের ইনভাইট করতে পারেন গেম প্লে করার জন্য।

অথবা ধরুন আপনি ভয়েস চ্যাট করছেন এবং সাথে গেম প্লে করছেন সেখানে আরেকটি মনিটরে সহজেই দেখতে পারবেন আপনি কোন কন্টাক্টের সাথে কানেক্টেড রয়েছেন এবং চাইলে সহজেই চ্যাট রুম ম্যানেজ করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি যদি অনলাইনে গেম লাইভ স্ট্রিমিং করেন তবে এক মনিটরে সবকিছু কন্ট্রোল করা অনেক অসুবিধার ব্যাপার হতে পারে। এক মনিটরে আপনি গেম প্লে করতে পারবেন এবং আরেক মনিটরে আপনি নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন স্ট্রিমিং সফটওয়্যার, চেক করতে পারবেন সবকিছু ঠিক ঠাক চলছে কিনা।

প্রফেশনাল কাজ

আপনি যদি কোন প্রফেশনাল ভিডিও এডিটর হন কিংবা প্রফেশনাল ফটো এডিট করার কাজ করেন তবে ডুয়াল মনিটর ব্যবহার করা আপনার জন্য একেবারেই মানানসই। অ্যাডোবি প্রিমিয়ার বা অ্যাডোবি ফটোশপে কাজ করার সময় আপনি একটি মনিটরে ফটো এডিট এবং আরেকটি মনিটরে কালার কারেকশন টুল রাখতে পারবেন, এতে আপনার কাজ আরো বেশি প্রফেশনাল এবং নির্ভুল হয়ে উঠবে। ভিডিও এডিটর প্রোগ্রাম গুলোতে অনেক বেশি টুলস থাকে ফলে সেগুলো একটি মনিটরে প্রায়ই গোলমাল পাকিয়ে ফেলে, তাই কাজের টুলস গুলোকে আলাদা মনিটরে রেখে প্রাইমারী মনিটরে ভিডিও এডিট করার সুবিধাই আলাদা।

ডুয়াল মনিটর?

এতোক্ষণের আলোচনার পরে হয়তো আপনি এখন মনে করছেন, “আচ্ছা বুঝলাম! ডুয়াল কম্পিউটার মনিটরের কিছু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু ভাই যেখানে একটি মনিটরের সাথে পিসি কিনতে জীবন শেষ সেখানে আরেকটা মনিটরের জন্য এক্সট্রা টাকা কই পাবো?” —আপনার কথা ঠিক আছে, কিন্তু ব্যাপারটা সবসময়ই কিন্তু এক নয়। আপনি পিসির সাথে প্রাইমারী কাজের জন্য একটি ভালো মনিটর রাখলেন কিন্তু শুধু এক্সট্রা কিছু তথ্যের দিকে নজর রাখার জন্য আরেকটি সমান ভালো মনিটর রাখার দরকার নেই। এমনকি আপনি পুরাতন সাদাকালো সিআরটি মনিটর দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া বিক্রয় ডট কম থেকে অনুসন্ধান করে অনেক কম দামের পুরাতন মনিটর কিনে ব্যবহার করতে পারেন। সত্যি বলতে আপনি মাত্র ২ হাজার টাকা খরচ করেও একটি সেকেন্ড মনিটর কিনে ফেলতে পারেন।

এখন যদি বলেন আপনার কাছে ২ হাজার টাকাও নেই, আরে ভাই চিন্তা করে দেখুন এখন কোন গেম কিনতেও ১-১.৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায় আর ১ টাকা লাগে একটি ভালো পেনড্রাইভ কিনতে। ২ হাজার টাকা খরচ করার বিনিময়ে আপনি অসাধারণ এক কম্পিউটিং অনুভূতি পেতে পারেন এর গ্যারেন্টি আপনি নিজেই হয়ে যাবেন।

শেষ কথা

তো এই ছিল মুটামুটি আজকের আলোচনা, আমি নিশ্চয় বুঝতে পেড়েছেন ডুয়াল মনিটর থাকাটা কতটা লাভের হতে পারে। তাছাড়া আপনার ডেস্কে ডুয়াল মনিটর রাখলে আপনাকে আরো প্রফেশনাল মনে হবে। তো কাজের পাশাপাশি কিছু স্টাইল হয়ে গেলে ক্ষতি কি বলুন? আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে, এবং আপনার যেকোনো প্রশ্নে আমাকে নিজে কমেন্ট লিখে জানাতে পারেন। সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories