র‍্যাম কি? স্মার্টফোনের জন্য কতটুকু র‍্যাম দরকার? বিস্তারিত

র‍্যাম কি? র‍্যাম কতটা জরুরী আমাদের ফোন এর জন্য এবং কতটুকু র‍্যাম আপনার ফোন এর জন্য যথেষ্ট হবে এই বিষয় নিয়ে আজ আমি বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। আমি জানি, স্মার্টফোন কেনার আগে র‍্যাম এর কথা আপনাদের সকলের মনেই প্রশ্ন বোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়ায়। আর গভির চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেয়। আজকের এই পোস্টটি পড়তে থাকুন, আশা করি আপনার সকল মনের প্রশ্ন দূর হয়ে যাবে।

র‍্যাম কি?

প্রথমেই কথা বলি র‍্যাম কি, তা নিয়ে। দেখুন র‍্যাম (RAM) এর পূর্ণ নাম হলো রান্ডোম অ্যাক্সেস মেমোরি (Random Access Memory). এখন শুধু এর নাম শুনে কিছু এটি কি তা আন্দাজ করা মুশকিল। তো চলুন এর বাস্তবিক জিবনের উদাহরন দিয়ে একে বুঝানোর চেষ্টা করি।

মনে করুন আপনি একটি অফিস এ কাজ করেন। এবং আপনার কাজ করার জন্য কিছু ফাইলস এর প্রয়োজন পরে। এখন এই ফাইল গুলো অন্য এক ঘরে রাখা আছে। এই মতবস্থায় আপনি কি করবেন, আপনি আপনার চেয়ার থেকে উঠে দ্বিতীয় ঘরে যাবেন এবং আপনার প্রয়োজনীয় কাজের ফাইলস নিয়ে আসবেন। তারপর তা ডেস্কে রেখে আপনার কাজ শুরু করবেন। এখন মনে করুন আপনি এমন এক কাজ করতে শুরু করলেন যেখানে আপনার অনেক গুলো ফাইল একসাথে দরকার পড়ছে। তাহলে আপনি কি করবেন? আপনি দ্বিতীয় ঘরে যাবেন এবং অনেক গুলো ফাইল একসাথে নেবেন তারপর আপনার কাজ করার ডেস্কে ফেরত আসবেন। এখন এই অনেক গুলো ফাইলকে এক সাথে রাখার জন্য হয় আপনার ডেস্ক বড় হতে হবে অথবা আপনাকে একটি আলাদা ডেস্ক সংযোজন করতে হবে। তারপর কাজ করা শেষ হয়ে গেলে আপনি সেই ফাইল গুলোকে আবার দ্বিতীয় ঘরে রেখে আসবেন এবং বাড়ি ফিরে যাবেন।

দেখুন আপনার স্মার্টফোনে RAM কিছু টা এমনই কাজ করে। মনে করুন আপনার অফিসের যে আলাদা রুম ছিল তা আপনার ফোন এর স্টোরেজ, মানে ইন্টারনাল মেমোরি বা আপনার মেমোরি কার্ড। এবং অনেক গুলো ফাইল একসাথে রাখার জন্য আপনি যে আলাদা ডেস্ক সংযোজন করলেন সেটি হলো RAM। র‍্যাম প্রচন্ড গতি সম্পূর্ণ একটি মেমোরি হয়। একটি ১৬ জিবি বা ৬৪ জিবি স্টোরেজ মেমোরি বানাতে যে খরচ পরে সেই খরচ একটি ১ জিবি RAM বানাতে পরে যায়। এটি অত্যন্ত গতি সম্পূর্ণ একটি মেমোরি, হার্ডড্রাইভ বা যেকোনো সাধারন স্টোরেজ যেমন আপনার ফোন এর মেমোরি বা মেমোরি কার্ড বা পেনড্রাইভ কখনই RAM এর কাজ করার গতির সাথে পেরে উঠতে পারবেনা। স্টোরেজ থেকে সিপিইউ কে যেকোনো ফাইলস দ্রুত গতিতে পাঠানোর জন্য RAM কাজ করে থাকে। আপনি আপনার ফোনে যেসব গেম ইন্সটল করেন কিংবা অ্যাপ ইন্সটল করেন সেগুলো আপনার স্টোরেজ এ ইন্সটল হয়, আপনার ফোন এর RAM এ ইন্সটল হয় না। যখন আপনি কোনো অ্যাপ কে রান করান তখন সেই অ্যাপটি  স্টোরেজ থেকে উঠে র‍্যামে চলে আসে, যেন আপনি যতক্ষণ সেই অ্যাপটি ব্যবহার করবেন ঠিক ততোক্ষণ সেই অ্যাপটির ডাটা গুলো সিপিইউ এর কাছে খুব দ্রুত পাঠানো সম্ভব হয়।

এখন মনে করুন আপনি কম RAM এর ফোন ব্যবহার করছেন। তাহলে কি হবে, মনে করুন আপনি একসাথে ৪ টি অ্যাপ ব্যবহার করছেন। তাহলে সেই ৪ টি অ্যাপ স্টোরেজ থেকে RAM এ চলে যাবে এবং তা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে সিপিইউ তে সরবরাহ হতে থাকবে। এবার মনে করুন আপনি ৫ নম্বর অ্যাপ চালু করলেন কিন্তু আপনার RAM কম হওয়ায় একসাথে ৫ টি অ্যাপ অন রাখতে পারবেনা। এর ফলে আগের ৪ টি অ্যাপ থেকে যেকোনো একটি অ্যাপ বা একাধিক অ্যাপ RAM থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং ৫ নম্বর অ্যাপটি চালু হবে। আপনি আবার যদি পুরাতন অ্যাপ গুলোকে রান করাতে চান তবে তা রান করতে দেরি হবে। কেনোনা সেই অ্যাপ গুলো আবার নতুন করে RAM এ উঠে আসবে এবং রান হবে।

এজন্যই যতো বেশি RAM হবে ততো বেশি মাল্টিটাস্কিং এর উপযোগী হবে আপনার ফোনটি। আপনি ১০, ১৫, ২০ টি অ্যাপ একসাথে অন রাখতে পারবেন কোনো প্রকার ঝামেলা বা ল্যাগিং সমস্যা ছাড়াই।

স্মার্টফোনের জন্য কতটুকু র‍্যাম দরকার

এতক্ষণের আলোচনায় নিশ্চয় এটা বুঝে গেছেন যে আপনার ফোনটিতে যতো বেশি RAM থাকবে আপনি ততো বেশি কার্যক্ষমতা পেতে পারবেন। তারপরও একটা ঠিকঠাক উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি। দেখুন আজকালকার আধুনিক স্মার্টফোন এবং অ্যাপ গুলোর দিক বিবেচনা করলে ফোনে ২ জিবি RAM থাকাটা অত্যাবশ্যক। কেনোনা আজকাল অ্যাপ গুলো দিনদিন উন্নত হওয়ার সাথে সাথে সাইজেও অনেক বড় হচ্ছে। আপনি সাধারন ফেসবুক অ্যাপ এর কথাই বলুন না কেনো, এটিই প্রায় ২০০-৩০০ এমবি জায়গা দখল করে র‍্যামে। এভাবেই যে অন্য অ্যাপ গুলো আছে সেগুলো দিনদিন সাইজে অনেক বড় হচ্ছে এই জন্য এর সাথে সাথে র‍্যাম এর ব্যবহার ও বেড়ে চলেছে।

এই জন্য আপনি যদি মনে করেন যে আপনি আপনার ফোন এ  ঠিকঠাক মাল্টিটাস্কিং করবেন, কিংবা যদি মনে করেন যে আপনার ফোনটি অনেক দ্রুত কাজ করবে তাহলে ২ জিবি RAM থাকাটা অত্যাবশ্যক। যদি ৩ জিবি বা ৪ জিবি RAM এর প্রশ্ন করেন যে এগুলো কি জরুরী। তবে আমি বলবো, দেখুন আজকের দিনে ৩ জিবি বা ৪ জিবি RAM থাকাটা জরুরী নয়, আপনি ২ জিবি দিয়েই অনেক আরামে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু যদি ৩ জিবি বা ৪ জিবি থাকে তবে তা ভবিষ্যৎ এর জন্য খুব ভালো হবে। কেনোনা RAM আপনার ফোনের এমন একটি যন্ত্রাংশ যেটি আপনি পরবর্তীতে আপগ্রেড করতে পারবেন না। এটি ফোন এর স্টোরেজ এর মতো নয় যে আপনার ফোনে মেমোরি কার্ড এর স্লট আছে আপনি ইচ্ছা মতো ১৬ জিবি ৩২ জিবি লাগিয়ে ফেলবেন। RAM শুধু মাত্র কম্পিউটার এর ক্ষেত্রে বাড়ানো সম্ভব, স্মার্টফোনে কখনোয় সম্ভব নয়।

অনেক ব্যবহারকারী রয়েছেন যারা মনে করেন যে স্মার্টফোনে বাড়ানো সম্ভব, ফোনটি রুট করে এতে RAM বাড়ানোর অ্যাপ ব্যবহার করলেই RAM বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। আসলে এটি একটি ভুল ধারনা। তবে হাঁ, কিছুকিছু অ্যাপ আছে যা দ্বারা আপনার স্টোরেজ মেমোরিকে RAM পরিবর্তন করিয়ে দেয়। কিন্তু আপনি ভেবে দেখুন আমি আগেই বলেছি RAM একটি অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পূর্ণ মেমোরি, এখন একটি সাধারন মেমোরি দিয়ে কি সেই গতিতে কাজ করা সম্ভব? উত্তর হলো না, তা কখনোয় সম্ভব না। র‍্যাম বাড়াতে গিয়ে উলটা আপনার ফোন স্লো হয়ে যাবে। তাছাড়াও উইন্ডোজ কম্পিউটারেও পেনড্রাইভ লাগিয়ে RAM বাড়ানোর অনেক কৌশল দেখে থাকবেন হয়তো। কিন্তু বাস্তবিক ভাবে একটি পেনড্রাইভ কখনোয় একটি RAM এর সমতুল্য হতে পারে না।

র‍্যাম এর ধরন

RAM এর আরেকটি আসল বিষয় হলো এর ধরন। সকল ২ জিবি RAM এক প্রকারের হয়না আবার সকল ৪ জিবি RAM ও এক প্রকারের হয়না। যেমনটা আপনারা জানেন যে প্রসেসর এর মধ্যেও স্পীড এর পার্থক্য আছে ঠিক তেমনই RAM এর স্পীড এর ও পার্থক্য থাকে। আপনি যদি আমার প্রসেসর বিষয়ে লেখা বিস্তারিত পোস্টটি না পরে থাকেন তবে এখান থেকে তা পড়ে আসতে পারেন। প্রসেসর এর স্পীড কাজ করে একটি ক্লক এবং গিগাহার্জ এর রূপে। ঠিক তেমনি RAM এর ভেতরও ক্লক স্পীড থাকে।

আপনারা অনেক সময় হয়তো শুনে থাকবেন DDR3 RAM এর কথা অথবা DDR4 RAM এর কথা। তো এগুলো হলো RAM এর ধরন। বিভিন্ন ক্লক স্পীড এর RAM থাকে, যেমনঃ ৮০০ মেগাহার্জ, ১,০০০ মেগাহার্জ কিংবা ১,৪০০ মেগাহার্জ। যতো মেগাহার্জ বেশি হবে RAM ততো বেশি গতি সম্পূর্ণ হবে।

শেষ কথাঃ

যতটা পারেন বেশি র‍্যাম ওয়ালা ফোন কিনে ফেলুন, এতে কোনো ক্ষতি হবে না বরং ভবিষ্যতে কাজে আসবে এবং আপনার ফোনটিকে আপনি অনেক দিন পর্যন্ত চালাতে পারবেন। আশা করি RAM নিয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছি। এবং এখন থেকে আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আজকের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে বেশি বেশি করে শেয়ার করুন। আপনি চাইলে আরো পোস্ট পড়তে পারেন। নিয়মিত এই সাইটটি ভিসিট করুন, কেনোনা আমি প্রতিদিন এভাবেই নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বিষয়ে পোস্ট শেয়ার করতে থাকি।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories