ডিসপ্লে ইন্টারফেস | ভিজিএ, ডিভিআই, এইচডিএমআই, ডিসপ্লে পোর্ট

আজকের দিনে আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা যেকোনো ভিডিও সোর্স থেকে টিভি, মনিটর বা প্রজেক্টরে কানেক্ট করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। ডিসপ্লে ইন্টারফেস গুলোর এতো ধরণ এবং তাদের প্রত্যেকের আলাদা ভার্সন থাকার ফলে আপনি প্রায়ই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যান—কারণ বর্তমানে একসাথে অনেক ডিভাইজ রয়েছে এবং প্রত্যেকের একসাথে অনেক ভিডিও কানেক্টর পোর্ট রয়েছে। এই বিষয়ের উপর একটি আর্টিকেল লেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম, যাতে পরবর্তী সময়ে কোন নতুন মনিটর কেনার সময় বা যেকোনো ডিসপ্লে কানেক্ট করার সময় আপনার সঠিক জ্ঞান থাকে সেই বিষয়ের উপর। এখন ভিজিএ, ডিভিআই, এইচডিএমআই, ডিসপ্লে পোর্ট —এই প্রধান ডিসপ্লে কানেক্টর গুলো নিয়ে আলোচনা করবো, একদম বিস্তারিত। তো প্রস্তুত তো?…


ডিসপ্লে ইন্টারফেস

কোন ডিসপ্লে বা মনিটরে কোন কিছু প্রদর্শিত করানোর জন্য আপনার কম্পিউটারকে বা যেকোনো ভিডিও সোর্সকে মনিটরে সিগন্যাল পাঠাতে হয়। এই সিগন্যাল সাধারন বিভিন্ন ক্যাবলের মাধ্যমে মনিটরে গিয়ে পৌঁছে, আর এই ক্যাবল গুলো বিভিন্ন পোর্ট বা কানেক্টরের সাথে লাগানো থাকে—এই কানেক্টর গুলো বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। মনিটরে পাঠানো সিগন্যাল ডিজিটাল বা অ্যানালগ হতে পারে। তাই ডিজিটাল, অ্যানালগ দুই ধরনেরই কানেক্টর দেখতে পাওয়া যায়।

অ্যানালগ এবং ডিভিআই

শুনতে বেখাপটা লাগলেও আজকের অনেক ডিভাইজ এবং মনিটরে অ্যানালগ কানেক্টর ব্যবহার করা হয়। সেই পুরাতন সিআরটি মনিটর গুলো থেকে শুরু করে আজকের বিভিন্ন এলইডি মনিটর গুলোও অ্যানালগ সিগন্যালে কাজ করে। যাই হোক, আপনার কম্পিউটার কিন্তু ডিজিটাল ফরম্যাটের উপরই কাজ করে, কিন্তু এতে ভিডিও কনভার্টার ব্যবহার করে ডিজিটাল ফরম্যাটকে অ্যানালগ ফরম্যাটে পরিণত করে পাঠানো হয়। ভিডিও কনভার্টার অ্যাডাপ্টারকে ভিডিও কার্ড বা গ্রাফিক্স কার্ড বা গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টারও বলা হয়ে থাকে। গ্রাফিক্স কার্ড বা জিপিইউ থেকে ভিডিওকে ডিজিটাল থেকে অ্যানালগে কনভার্ট করার পরে একে ভিজিএ (দ্যা ভিডিও গ্রাফিক্স অ্যারে) (VGA) ক্যাবল দ্বারা মনিটরে পাঠানো হয়। আগেই বলেছি ভিজিএ অনেক পুরাতন একটি কানেক্টর যা ১৯৮৭ সালে প্রথম পরিচিতি পায়। সত্যি বলতে আজকের প্রায় যেকোনো ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মনিটর ইত্যাদিতে ভিজিএ পোর্ট দেখতে পাওয়া যায়।

ভিজিএ স্ট্যান্ডার্ড অনেক লো কোয়ালিটির রেজুলেসন বহন করে—সাধারনত এটি ৬৪০x৪৮০ রেজুলেসন সিগন্যাল পাঠাতে পারে। তাছাড়া ভিজিএ ক্যাবল আরজিবিএইচভি (RGBHV); রেড, গ্রীন, ব্লু, হরিজন্টাল সিঙ্ক (Horizontal Sync), এবং ভার্টিকেল সিঙ্ক (Vertical Sync) ভিডিও বহন করতে পারে। একটি ভিজিএ সকেটে মোট ১৫টি পিন থাকে এবং তা তিনটি সারিতে থাকে—প্রত্যেক সারিতে ৫টি করে পিন। এই ক্যাবলের দুই প্রান্তেই স্ক্র্যু লাগানো থাকে, যাতে ক্যাবলটিকে ডিভাইজ গুলোর সাথে নিরাপদে আটকানো যায়।

ডিভিআই কানেক্টর

শুনতে বেখাপটা লাগলেও আজকের অনেক ডিভাইজ এবং মনিটরে অ্যানালগ কানেক্টর ব্যবহার করা হয়। সেই পুরাতন সিআরটি মনিটর গুলো থেকে শুরু করে আজকের বিভিন্ন এলইডি মনিটর গুলোও অ্যানালগ সিগন্যালে কাজ করে। যাই হোক, আপনার কম্পিউটার কিন্তু ডিজিটাল ফরম্যাটের উপরই কাজ করে, কিন্তু এতে ভিডিও কনভার্টার ব্যবহার করে ডিজিটাল ফরম্যাটকে অ্যানালগ ফরম্যাটে পরিণত করে পাঠানো হয়। ভিডিও কনভার্টার অ্যাডাপ্টারকে ভিডিও কার্ড বা গ্রাফিক্স কার্ড বা গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টারও বলা হয়ে থাকে। গ্রাফিক্স কার্ড বা জিপিইউ থেকে ভিডিওকে ডিজিটাল থেকে অ্যানালগে কনভার্ট করার পরে একে ভিজিএ (দ্যা ভিডিও গ্রাফিক্স অ্যারে) (VGA) ক্যাবল দ্বারা মনিটরে পাঠানো হয়। আগেই বলেছি ভিজিএ অনেক পুরাতন একটি কানেক্টর যা ১৯৮৭ সালে প্রথম পরিচিতি পায়। সত্যি বলতে আজকের প্রায় যেকোনো ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মনিটর ইত্যাদিতে ভিজিএ পোর্ট দেখতে পাওয়া যায়।

ভিজিএ স্ট্যান্ডার্ড অনেক লো কোয়ালিটির রেজুলেসন বহন করে—সাধারনত এটি ৬৪০x৪৮০ রেজুলেসন সিগন্যাল পাঠাতে পারে। তাছাড়া ভিজিএ ক্যাবল আরজিবিএইচভি (RGBHV); রেড, গ্রীন, ব্লু, হরিজন্টাল সিঙ্ক (Horizontal Sync), এবং ভার্টিকেল সিঙ্ক (Vertical Sync) ভিডিও বহন করতে পারে। একটি ভিজিএ সকেটে মোট ১৫টি পিন থাকে এবং তা তিনটি সারিতে থাকে—প্রত্যেক সারিতে ৫টি করে পিন। এই ক্যাবলের দুই প্রান্তেই স্ক্র্যু লাগানো থাকে, যাতে ক্যাবলটিকে ডিভাইজ গুলোর সাথে নিরাপদে আটকানো যায়।

ডিভিআই কানেক্টর

আজকের দিনে বেশিরভাগ ডিভাইজে এইচডিএমআই ইন্টারফেস ব্যবহৃত হয়। এটি ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, ক্যামেরা, মনিটর, ব্লুরে প্লেয়ার ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয় এবং অবশ্যই এটি ডিজিটাল ফরম্যাটে কাজ করে। এইচডিএমআই এর পূর্ণনাম হলো; হাই-ডেফিনিশন মাল্টিমিডিয়া ইন্টারফেস এবং আমি নিশ্চিত যে আপনারা প্রায়- সবাই এটার সাথে পরিচিত। এই কানেক্টরে একত্রে অডিও এবং ভিডিও উভয়ই সমর্থন করে এবং ইথারনেটও সমর্থন করে যদি দুইটি ডিভাইজ সেটিকে সমর্থন করে। ডিভিআই কানেক্টরের সকল ফিচারই এইচডিএমআই তে রয়েছে এবং এটি ৬০ হার্জ রিফ্রেস রেটে ৪কে (৩৮৪০x২১৬০) ভিডিও সমর্থন করে। সাথে এটি রেক ২০২০ (Rec 2020) কালার সমর্থন করে যেটা অনেক বিস্তৃত একটি কালার স্পেস, পাশাপাশি এটি আরজিবি (RGB) এবং অয়াইসিবিসিআর (YCbCr) কালার সমর্থন করে।

এইচডিএমআই শুধু অডিও বা ভিডিওই নয়, সাথে একত্রে দুইটি ভিডিও ট্র্যান্সমিট করতে পারে। আবার আপনি চাইলে ডিভিআই টু এইচডিএমআই অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করে এইচডিএমআই পোর্ট থেকে ডিভিআই পোর্টে ভিডিও ট্র্যান্সমিট করতে পারেন। আর একটি কথা মনে রাখবেন, প্রত্যেকটি ডিজিটাল ইন্টারফেসের মতো এইচডিএমআই ক্যাবলের দাম বা কোয়ালিটি কম বেশি হওয়াতে কোনই যায় আসে না, একটি ১০০ টাকার ক্যাবল এবং ৫০০ টাকার ক্যাবল আপনাকে একই পিকচার কোয়ালিটি দেবে। তবে অ্যানালগ ক্যাবল ভালো হওয়া জরুরী।

তাছাড়া এইচডিএমআই কানেক্টরের তিনটি প্রকার রয়েছে। টাইপ-এ এইচডিএমআই ফুল সাইজ পোর্ট হয়ে থাকে, এটি বেশিরভাগ সময় টিভি, হোম থিয়েটার ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে দেখতে পাওয়া যায়। টাইপ-সি বা মিনি-এইচডিএমআই ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ইত্যাদি ডিভাইজ গুলোতে ব্যবহার করা হয় এবং মাইক্রো-এইচডিএমআই বা টাইপ-ডি মোবাইল ডিভাইজ গুলোতে দেখতে পাওয়া যায়।

ডিসপ্লে পোর্ট

অবশ্যই ডিসপ্লে পোর্ট একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে ইন্টারফেস। এটিকে মূলত কম্পিউটার মনিটর কানেক্ট করার জন্য ব্যবহার করা হলেও এটি দ্বারা অন্যান্য ডাটা ট্র্যান্সমিট যেমন- অডিও, ইউএসবি, এবং ইন্টারনেট ট্র্যান্সমিট করা যায়। ডিসপ্লে পোর্ট ১.৪ হলো সর্বশেষ সংস্করণ এবং এটি প্রতি সেকেন্ডে ৩২.৪ গিগাবিট ডাটা ট্র্যান্সমিট করতে পারে। তাছাড়া এটি ৬০ হার্জ রিফ্রেস রেটে ৮কে (৭৬৮০x৪৩২০) রেজুলেসন পর্যন্ত সমর্থন করে। আজকের দিনের প্রায় বেশিরভাগ ভিডিও কার্ডেই ডিসপ্লে পোর্ট কানেক্টর থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া এটি ৬০ হার্জ রিফ্রেস রেটে ৫কে মনিটর সমর্থন করে।

শেষ কথা

বর্তমানে ইউএসবি টাইপ-সি কানেক্টর আরোবেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং অনেক মোবাইল ডিভাইজে এবং অ্যাপেল এর নতুন ম্যাকবুক প্রো তে একে ব্যবহার হতে দেখা গেছে। টাইপ-সি কানেক্টর নিয়ে আমি পরে একটি বিস্তারিত আর্টিকেল লিখে ফেলবো। তো আপনার পছন্দের ডিসপ্লে ইন্টারফেস কোনটি? নিচে আমাদের তা কমেন্ট করে জানান এবং আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করুন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories