অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ সিরিজ : ৫ টি বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস [পর্ব-১০]

অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায়না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে।

আর অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে তো কথাই নেই, প্লে স্টোরে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস পাবেন। যাইহোক, আর বেশি ভূমিকা না করে কাজের কথায় আসি। আজকে আমাদের বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সিরিজের নবম পর্বে আরো ৫ টি এমন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

DroidCam

শুরু করা যাক বেশ জনপ্রিয় একটি অ্যাপ দিয়ে। এই অ্যাপটির ব্যাপারে হয়তো অনেকেই জানেন এবং অনেকেই হয়তো অলরেডি ব্যবহারও করেছেন। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে অনলাইন কল বা অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সের চল আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। তাই বর্তমানে স্মার্টফোনের পাশাপাশি ল্যাপটপ বা ডেক্সটপেও ফ্রন্ট ক্যামেরা বা ওয়েবক্যামের দরকার হচ্ছে। তবে অনেকের ডেস্কটপেই  ওয়েবক্যাম থাকেনা এবং অধিকাংশ ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম খুবই লো কোয়ালিটির হয়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত এই অ্যাপটি। এই অ্যাপটির সাহায্যে আপনি আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরাটিই আপনার ডেক্সটপ বা ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনাকে জাস্ট স্মার্টফোনে এই অ্যাপটি এবং আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ যেখানে আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরা ওয়েবক্যাপ হিসেবে ব্যাবহার করতে চান, সেখানে DroidCam এর ক্লায়েন্ট প্রোগ্রামটি ইন্সটল করতে নিতে হবে। আপনি চাইলে স্মার্টফোনের ক্যামেরা ওয়াইফাই এর সাহায্যে ওয়্যারলেসলিও শেয়ার করতে পারেন, আবার চাইলে ইউএসবি ক্যাবল ব্যাবহার করেও শেয়ার করতে পারেন।

তবে ওয়্যারলেসলি কানেক্ট করার জন্য আপনার টার্গেট ডিভাইস এবং আপনার স্মার্টফোনটি একই ওয়াইফাই কানেকশনের আন্ডারে থাকতে হবে। কানেক্ট করার পরে আপনি দুটি ডিভাইসেই DroidCam এর ক্লায়েন্ট ওপেন করে সহজেই সবকিছু সেটাপ করে নিতে পারবেন। কানেক্ট করা অবস্থায় স্কাইপ, জুমের মত অ্যাপসগুলোতে আপনার স্মার্টফোনের ক্যামেরা ব্যাবহার করার জন্য আপনার ওই অ্যাপসগুলোর সেটিংস থেকে আপনার ভিডিও ইনপুট ডিভাইস হিসেবে DroidCam কে সিলেক্ট করে দিতে হবে

XDrop

নাম শুনেই হয়তো ধারনা করতে পারছেন যে এটি আরেকটি ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ, শেয়ারইট এবং অন্যান্যগুলোর মতই। হ্যা, এটাও একটা ফাইল শেয়ারিং অ্যাপ, তবে সবদিক থেকেই এটি শেয়ারইটের থেকে অনেক বেটার। শেয়ারইট অ্যাপটির সবকিছুই আজ থেকে ৫-৭ বছর আগে ভালো ছিলো। তবে কয়েক বছর ধরে অনেক বেশি ম্যালিশিয়াস অ্যাডসের কারণে এই অ্যাপটির থেকে বর্তমানে দূরে থাকাই ভালো। তবে শেয়ারইটের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে আপনি এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। এই অ্যাপটির সাহায্যেও আপনি স্মার্টফোনে ইন্সটলড থাকা অ্যাপস, যেকোনো ফাইল, ইমেজ, মিউজিক, ভিডিও সবকিছুই শেয়ার করতে পারবেন অন্য একটি ডিভাইসে। শেয়ারইটের মতোই এটিও লোকাল ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফাইল শেয়ার করে, তাই এক্ষেত্রে ইন্টারনেট কানেকশনের কোন প্রয়োজন হবেনা।

XDrop অ্যাপটির সবথেক ভালো ফিচারটি হচ্ছে এটির ইউজার ইন্টারফেস খুবই সিম্পল এবং সাদামাটা। অন্তত বর্তমানের শেয়ারইট অ্যাপের মতো কোনো কনফিউজিং ইউজার ইন্টারফেস নেই এতে। এছাড়াও, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের পাশাপাশি XDrop এর একটি অফিসিয়াল উইন্ডোজ ক্লায়েন্টও আছে যার ফলে আপনি খুব সহজেই লোকাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আপনার স্মার্টফোন থেকে আপনার ল্যাপটপ বা ডেক্সটপে যেকোনো ফাইল শেয়ার করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপ এবং আপনার ফোনকে একই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকতে হবে। আপনি যদি একটি লাইটওয়েট এবং ভালো ফাইল শেয়ারিং অ্যাপস খোঁজেন, তাহলে Xdrop ট্রাই করে দেখতে পারেন।

Infinity For Reddit

নাম শুনে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে এটি একটি রেডিট ক্লায়েন্ট। তবে আপনি যদি না জেনে থাকেন যে রেডিট কি এবং কেনই বা আপনি রেডিট ব্যবহার করতে চাইবেন, সেক্ষেত্রে কিছুদিন আগে রেডিট-এর ব্যাপারে লেখা আমাদের এই পোস্টটি থেকে ঘুরে আসতে পারেন। রেডিট ব্যবহার করতে চাইলে হয়তো আপনি প্লে স্টোরে থাকা অফিসিয়াল রেডিট অ্যাপটি ব্যবহার করার কথা ভাববেন, তবে আপনি হয়তো জানেন না যে প্লে স্টোরে ইতোমধ্যে রেডিট ব্রাউজ করার জন্য অনেক ফ্রি এবং পেইড থার্ড পার্টি অ্যাপস আছে যেগুলোর অধিকাংশই অরিফিসিয়াল রেডিট অ্যাপের থেকে কোন না কোন দিক থেকে বেটার।

এই থার্ড পার্টি রেডিট অ্যাপসগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে এটি। রেডিটের এই থার্ড পার্টি ক্লায়েণ্টটি অফিসিয়াল রেডিট অ্যাপের থেকে অনেকটা লাইটওয়েট এবং এটির ইউজার ইন্টারফেসও অফিসিয়াল এবং অন্যান্য অধিকাংশ থার্ড পার্টি রেডিট অ্যাপের থেকে অনেক বেশি স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড, মিনিমাল এবং ক্লিন। সত্যি কথা বলতে, স্মার্টফোনে রেডিট ব্রাউজ করার জন্য থার্ড পার্টি রেডিট অ্যাপস ব্যাবহার করাটাই  বুদ্ধিমানের কাজ, যেহেতু অফিসিয়াল রেডিট অ্যাপটি প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই হেভি।

এই থার্ড পার্টি অ্যাপটি ইউজার ইন্টারফেস সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলার দরকার হবেনা, যেহেটু এটির ইউজার ইন্টারফেস এতটাই স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড যে, যেকেউ ৫ মিনিটের জন্য অ্যাপটি ব্যবহার করলেই সব ন্যাভিগেশন বুঝতে পারবে। আপনি যদি অফিসিয়াল রেডিট অ্যাপস ব্যাবহার করেন, তাহলে আমি সাজেস্ট করবো কয়েকদিনের জন্য অফিসিয়াল অ্যাপটি রিপ্লেস করে এই অ্যাপটি ট্রাই করে দেখতে।

Style

আপনি যদি ইন্সটাগ্রাম ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনি অনেকের ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলের বায়োগ্রাফিতে দেখেছেন যে তারা বিভিন্ন ধরনের আজব ফন্ট বা স্টাইলিশ অনেক ফন্ট ব্যাবহার করে তাদের নাম লিখে থাকেন। যদিও, এটা খুবই হাস্যকর দেখায়, তবে আপনার যদি তবুও ইচ্ছা হয়ে থাকে যে কিভাবে আপনি এমন স্টাইলিশ ফন্টে নিজের নাম বা অন্য যেকোনো টেক্সট লিখতে পারেন, তাহলে এই অ্যাপটা আপনার জন্যই। যেমনটা ধরেছেন, এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি এই ধরনের হাজারো ধরনের স্টাইলিশ ফন্টে যেকোনো টেক্সট লিখতে পারবেন।

হাজার রকম বললে ভুল বলা হবে, এখানে আপনি প্রায় ৫০০+ স্টাইলিশ ফন্টের সিলেকশন পাবেন, যেগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। কোন স্টাইলিশ ফন্টে আপনার নাম বা যেকোনো টেক্সট পরিবর্তন করতে চাইলে আপনাকে জাস্ট এই অ্যাপটিতে থাকা ইনপুট বক্সে আপনার কাঙ্ক্ষিত টেক্সটটি লিখতে হবে। এরপর নিচে থেকে ৫০০+ স্টাইল থেকে যেকোনো স্টাইল আপনার ইচ্ছামত চুজ করলেই আপনার ইনপুট করা টেক্সটটি ওই ফন্টে রিরাইট হয়ে যাবে। এরপর আপনি ইনপুট বক্স থেকে আপনার স্টাইলিশ ফন্টের লেখাটুকু কপি করে আপনার ইন্সটাগ্রাম বায়োগ্রাফিতে (প্লিজ, এটা করবেন না!) বা অন্য যেকোনো জায়গায় পেস্ট করে দিতে পারবেন বা চাইলে কারোর সাথে চ্যাট করার সময় তাকেও সেন্ড করতে পারেন।

এই একই কাজ করার জন্য প্লে স্টোরে আরও হাজার হাজার রকমের অ্যাপস রয়েছে। তবে এই অ্যাপটিকে ফিচার করার কারন হচ্ছে, অন্য যেসব স্টাইলিশ টেক্সটের অ্যাপস আছে, সেগুলোর কোনটাতেই সম্ভবত ৫০০ এরও বেশি সংখ্যক স্টাইল থেকে কোনোটা চুজ করার সুবিধা নেই। এই অ্যাপটিতেই আপনি সবথেকে বেশি টেক্সট স্টাইল পাবেন।

Volume Styles

আমার মতে এটাই আজকের লিস্টের সবথেকে অসাধারন অ্যাপ। আপনি অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে অ্যন্ড্রয়েডের বিভিন্ন স্কিনের ইউজার ইন্টারফেস একেক ধরনের ডিজাইন ল্যাংগুয়েজ ফলো করে থাকে। আমরা ফোনে ভলিউম বাটন প্রেস করে ভলিউম কনট্রোল করার সময় যে ভলিউম প্যানেলটি দেখতে পাই, সেটা অনেকসময় বারবার দেখতে দেখতে বেশ একঘেয়েমী ধরে যায়। তাই এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ভলিউম কনট্রোল প্যানেলটিকে নিজের মনমতো কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবেন।

মূলত ভলিউম প্যানেল কাস্টোমাইজ নয়, আপনি এটির সাহায্যে আপনার ফোনে অন্য যেকোনো কাস্টম স্কিনের ভলিউম প্যানেল ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন- আপনি চাইলে ফোনের ডিফল্ট ভলিউম কনট্রোল প্যানেল চেঞ্জ করে মিইউআই এর ভলিউম প্যানেল, স্যামসাং এর প্যানেল, অক্সিজেন ওএসের প্যানেল এবং আরও জনপ্রিয় প্রায় সব অ্যান্ড্রয়েড স্কিনের ভলিউম প্যানেল ব্যাবহার করতে পারবেন। আবার আপনি প্রত্যেকটি ভলিউম প্যানেলের কালার স্কিম, ডেনসিটি সবকিছুই নিজের মতো করে কাস্টোমাইজও করে নিতে পারবেন। মোটকথা, ফোনের বিল্ট ইন ভলিউম প্যানেল চেঞ্জ করার জন্য এর থেকে বেটার অ্যাপ আপনি আর একটাও খুঁজে পাবেন না।

শুধু বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড স্কিন এবং কাস্টম রমগুলোর ভলিউম প্যানেলই নয়, এখানে আপনি আরও অনেক কাস্টম ডিজাইনড স্টাইলিশ ভলিউম প্যানেল পাবেন, যেগুলো জাস্ট এক ক্লিকেই আপনার ফোনে অ্যাপ্লাই করে নিতে পারবেন। কাস্টোমাইজেশন ফ্রিক হয়ে থাকেলে অবশ্যই একবার এই অ্যাপটি ট্রাই করে দেখবেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories