উইন্ডোজের ড্রাইভ লেটার কেন সবসময় C থেকে শুরু হয়?

আপনি হয়তো শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় বেশ কিছু বছর ধরেই ডেস্কটপে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করছেন। উইন্ডোজের প্রায় সব ফাংশনই আমাদের সবার খুবই পরিচিত। তবে এতদিন উইন্ডোজ ব্যাবহার করার পরে আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন এসেছে যে উইন্ডোজে This PC তে ক্লিক করার পরে আপনার ডেস্কটপে কানেক্ট করা যত রিমুভেবল ড্রাইভ দেখানো হয়, এসব ড্রাইভ কেন সবসময় C লেটারটি থেকেই শুরু করা হয়? আবার কেনই বা উইন্ডোজে C,D,E,F এমন আলাদা আলাদা ড্রাইভ লেটার দিয়ে ড্রাইভগুলোকে আলাদা করা থাকে কিন্তু ম্যাক এবং লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে এমন ড্রাইভ লেটার থাকেনা? আজকে এই সবগুলো বিষয় নিয়েই কথা বলা যাক!


C ড্রাইভ

আপনি হয়তো অনেকবারই খেয়াল করেছেন যে, উইন্ডোজে যে ড্রাইভ শুধু C থেকে শুরুই হয় তা নয়, বরং আপনি যত এক্সটার্নাল ড্রাইভ কানেক্ট করেন ডেস্কটপের সাথে, যেমন- এসএসডি, এক্সট্রা হার্ড ড্রাইভ কিংবা পেনড্রাইভ, এগুলোকেও অটোম্যাটিকালি C এর পরের লেটারগুলোতে অ্যাসাইন করা হয়। কিন্তু কখনোই আপনার কানেক্ট করা কোনো এক্সটারনাল ড্রাইভকে A অথবা B লেটারে অ্যাসাইন করা হয়না।

যাইহোক, বেশি ভুমিকা না করে সরাসরি এর ব্যাখ্যাটা দেওয়া যাক। আমরা সাধারনত কখনোই এক্সটারনাল ড্রাইভ হিসেবে আগেকার যুগের ফ্লপি ডিস্কগুলোকে ডেস্কটপে কানেক্ট করিনা। এইজন্যই মুলত আমরা উইন্ডোজে কখনো A বা B ড্রাইভ দেখতে পাইনা। আপনি যদি আপনার ডেস্কটপে কয়েক এমবি সাইজের একটা ফ্লপি ডিস্ক কানেক্ট করেন, তাহলে আপনি দেখতে পাবেন যে ওই ডিস্কটিকে A কিংবা B লেটারে অ্যাসাইন করা হয়েছে। বাসায় কোনো পুরোনো ওয়ার্কিং ফ্লপি ডিস্ক থাকলে ট্রাই করে দেখতে পারেন!

এর কারন হচ্ছে, উইন্ডোজে শুরুর সময় থেকেই A এবং B এই দুটি লেটারকে ফ্লপি ডিস্ক ড্রাইভগুলোর জন্য রিজার্ভ করে রাখা হয়েছিলো। কারণ, সেই সময় এক্সটার্নাল ড্রাইভ বলতে শুধু ফ্লপি ডিস্কই এভেইলেবল ছিলো। তবে প্রথমদিকের IBM ডেস্কটপগুলোও হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ সাপোর্ট করতো, তবে তখন কম্পিউটারে এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ কানেক্ট করা ছিলো অত্যন্ত ব্যায়বহুল। তাই তখন কম্পিউটারে ফ্লপি ড্রাইভই মুলত ব্যাবহার করা হত। আর এই কারনেই এক্সটার্নাল ড্রাইভ হিসেবে ফ্লপি ডিস্কের প্রায়োরিটিই ছিলো সবথেকে বেশি।

সেই সময় আপনি যতগুলো ফ্লপি ড্রাইভ ডেস্কটপে কানেক্ট করতেন, সবগুলোই হার্ডড্রাইভের আগের লেটারগুলোতে অ্যাসাইন হত। তবে MS DOS 5 ভার্সনে এসে এই সিস্টেমটি কিছুটা চেঞ্জ করা হয়। তখন যেহেতু হার্ড ড্রাইভ আরও বেশি মেইনস্ট্রিম হচ্ছিলো, তাই তখন C লেটারটিকে স্পেসিফিক্যলি হার্ড ডিস্কের জন্যই রিজার্ভ করা হয়। তখন আপনি যতগুলোই ফ্লপি ডিস্ক কানেক্ট করেন না কেন, একইসাথে যদি হার্ড ডিস্কও কানেক্ট করতেন, তাহলে সবসময়ের জন্য প্রথম দুটি ফ্লপি ডিস্ক A এবং B ড্রাইভে অ্যাসাইন হত এবং এরপরে C ড্রাইভে থাকতো হার্ড ড্রাইভটি, এবং বাকি সব ফ্লপি ডিস্ক ধারাবাহিকভাবে অ্যাসাইন করা হতো C এর পরের লেটারগুলোতে। আর এই সিস্টেমটাই এখনো পর্যন্ত চলছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও এভাবেই চলবে।

তবে এমন না যে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে এই সিস্টেমটিকে এভাবেই মেনে নিতে হবে। আপনি চাইলে উইন্ডোজের ডিস্ক ম্যানেজমেন্টে ঢুকে নিজের ইচ্ছামত যেকোনো ড্রাইভে যেকোনো লেটার ম্যানুয়ালি অ্যাসাইন করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার D বা E ড্রাইভটির লেটার চেঞ্জ করে এটিকে A বা B ড্রাইভ বানিয়ে নিতে পারেন, যদিও C ড্রাইভের লেটার চেঞ্জ করা খুব একটা সহজ কাজ নয়, কিন্তু এটা করা সম্ভব।

তবে যেহেতু যুগের পর যুগ মাইক্রোসফট নিজেই ড্রাইভ লেটারগুলোকে অটোমেটিক্যালি এভাবে অ্যসাইন করে আসছে, তাই বর্তমানে এটাই স্ট্যান্ডার্ড কনভেনশন হয়ে গিয়েছে। আর এই কারনেই কেউ আর এটা নিয়ে মাথা ঘামান না বা চেঞ্জ করতে চান না।

ম্যাক এবং লিনাক্সের ফাইল সিস্টেম

যদিও একজন অ্যাভারেজ উইন্ডোজ ইউজার লিনাক্স এবং ম্যাকের ফাইল সিস্টেমের ব্যাপারে জানতে খুব বেশি ইন্টারেস্টেড থাকেন না, তবে অ্যাভারেজ ইউজার না হয়ে থাকলে আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন যে, লিনাক্স এবং ম্যাকে উইন্ডোজের মত C ড্রাইভ, D ড্রাইভ এসব থাকেনা। তাহলে লিনাক্স এবং ম্যাকের ফাইল সিস্টেম কিভাবে কাজ করে? এটা নিয়েও ছোট করে আলোচনা করা যাক।

লিনাক্সের ক্ষেত্রে উইন্ডোজের মতো কোনো ড্রাইভ লেটার থাকেনা, জাস্ট থাকে একটু রুট ফোল্ডার। যারা লিনাক্স ওয়েব সার্ভারের সাথে পরিচিত, তারা এটা ভালো জানবেন। রুট ফোল্ডারটি হচ্ছে লিনাক্স ওএসের ফাইলসিস্টেমের হাইয়েস্ট লেভেল প্যাথ, যার থেকে আর পেছনে যাওয়ার উপায় নেই। উইন্ডোজে This PC ওপেন করলে যেখানে সব ড্রাইভের লিস্ট দেখানো হয়, লিনাক্সের রুট প্যাথ অনেকটা এমন (যদিও একই জিনিস নয়!)। কিন্তু লিনাক্সে এই রুট ফোল্ডারটি একটি ইন্ডিভিজুয়াল প্যাথ এবং এটাই অনেকটা লিনাক্সের C ড্রাইভের মতো।

লিনাক্সের রুট ফোল্ডার ওপেন করলে আপনি ভেতরে আরও অনেক ফোল্ডার দেখতে পাবেন, যেগুলোর কিছু হচ্ছে অ্যাকচুয়াল ফোল্ডার, আর কিছু হচ্ছে একেকটি মাউন্ট পয়েন্ট, যা অনেকটা ভার্চুয়াল ফোল্ডারের মত। আর আপনি যখন লিনাক্সে কোনো এক্সটারনাল ড্রাইভ কানেক্ট করেন, তখন লিনাক্স ড্রাইভটিকে কোনো লেটার অ্যাসাইন করে শো করেনা, বরং এটিকে রুট ফোল্ডারের আন্ডারে আরেকটি সাব-ফোল্ডারে মাউন্ট পয়েন্টে মাউন্ট করে, যে ফোল্ডারের প্যাথে ঢুকলে আপনি ওই এক্সটারনাল ড্রাইভটির সব কন্টেন্ট অ্যাকসেস করতে পারেন। আবার আপনি চাইলে আপনার এক্সটারনাল ড্রাইভকে নিজের ইচ্ছামত একটি প্যাথনেমও দিতে পারেন, যেমন /secondary বা অন্যকিছু।

আর ম্যাক এর ফাইলসিস্টেমও লিনাক্সের মতোই। ম্যাকও কোনো ড্রাইভকে লেটার দিয়ে অ্যাসাইন করেনা। আবার লিনাক্সের মত রুট ফোল্ডারটিকেও ইউজারের সামনে এক্সপোজ করে দেয়না। ম্যাল রুট ফোল্ডারটিকে হাইড করে একেকটি মাউন্ট পয়েন্টকে একেকটি নামে ইউজারের সামনে প্রেজেন্ট করে যাতে ইউজারের সেটা খুঁজে পেতে সুবিধা হয়। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বেটার করার জন্যই ম্যাক এভাবে তাদের ফাইল সিস্টেমকে সাজিয়ে রাখে। যেমন- হার্ড ড্রাইভ, পেনড্রাইভ, নেটওয়ার্ক ড্রাইভ সবগুলোকেই আলাদা আলাদা নাম দিয়ে ইউজারের সামনে প্রেজেন্ট করা হয়, যদিও বিহাইন্ড দ্যা সিন, ফাইল সিস্টেমের সবকিছুই লিনাক্সের মতো করেই কাজ করে!

তবে হ্যা, আপনি কিন্তু চাইলে উইন্ডোজেও এমন ব্যাবস্থা করতে পারবেন যাতে উইন্ডোজও সব এক্সটারনাল ড্রাইভকে আলাদা একেকটি ড্রাইভ এবং লেটারে সাহায্যে অ্যাসাইন না করে আলাদা একটি ফোল্ডারে মাউন্ট করবে, যে ফোল্ডার প্যাথে ঢুকলে আপনি ড্রাইভের সব কন্টেন্ট অ্যাকসেস করতে পারবেন। আপনি চাইলেই উইন্ডোজের ডিস্ক ম্যানেজমেন্টে ঢুকে এটা করতে পারবেন। তবে এটা উইন্ডোজের জন্য স্ট্যান্ডার্ড কনভেনশন নয়, তাই সাধারনত আমরা কেউ এটা করি না। আর এটা উইন্ডোজের ক্ষেত্রে লিনাক্সের মতো ইফেক্টিভ নয়, বরং একটি ঝামেলার কাজ।

Images: Shutterstock.com

About the author

stuff04@wirebd

Add comment

Categories