৫ টি বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড কাস্টম রম [২০২১]

হ্যাপি নিউ ইয়ার! আশা করি নতুন বছর ২০২১, আপনার লাইফের আগের প্রত্যেকটি বছরের থেকে আরও ভালো কাটুক। কিছুদিন আগে শাওমি ফোনে কাস্টম রম ইন্সটল করার টিউটোরিয়াল শুরু করা হয়েছিলো, যার প্রথম পর্বটি ইতোমধ্যে পাবলিশ করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকেই এই সিরিজের পরবর্তী পর্বগুলো পাবলিশ করা হবে। তবে কাস্টম রম ইন্সটল করার আগে অপশনগুলোর ব্যাপারে ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার বলে আমার মনে হয়। যদিও প্রথম পর্বেই কয়েকটি কাস্টম রমের ব্যাপারে ছোট করে আলোচনা করা হয়েছিলো, কিন্তু আমার মনে হয় কাস্টম রম ইন্সটল করার আগে প্রত্যেকটি কাস্টম রমের ফিচারসের ব্যাপারে আলাদা আলাদাভাবে জানা দরকার, যাতে আপনার কাস্টম রম চয়েজ করতে আরও সুবিধা হয়।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Pixel Experience

বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড রমের কথা বলতে চাইলে এটার নামই বলতে হয়। আপনি যদি গুগলের পিক্সেল ফোনের ইউজার ইন্টারফেস বা গুগল ফ্লেভারের স্টক অ্যান্ড্রয়েড স্কিনের ফ্যান হয়ে থাকেন, তাহলে এটাই আপনার জন্য বেস্ট কাস্টম রম। হ্যা, এই লিস্টের সবগুলো কাস্টম রমই স্টক অ্যান্ড্রয়েড বেজড, তবে সবগুলোতে আপনি স্টক অ্যান্ড্রয়েড পেলেও গুগলের পিক্সেল ফোনগুলোর মতো ফ্লেভার পাবেন না। গুগল পিক্সেলের মতো একইধরনের এক্সপেরিয়েন্স পেতে চাইলে আপনাকে Pixel Experience কাস্টম রম ব্যবহার করতে হবে। Pixel Experience বেশ ব্যালেন্সড একটি কাস্টম রম। এটি তেমন কোন ফ্যান্সি ফিচারস এবং হাজার রকমের ইউআই টুইক দেবে না, আবার আপনাকে মিইউআই এর মতো খারাপ পারফর্মেন্সও দেবে না।

ব্যাটারি লাইফ এবং পারফরমেন্সের দিক থেকে যদি একটি ব্যালেন্সড কাস্টম রম চান, তাহলে Pixel Experience ব্যাবহার করতে পারেন। আর Pixel Expeirence রমটি এই লিস্টের অন্যান্য অধিকাংশ রমের থেকেই বেশি স্ট্যাবল। Pixel Experience এর ডেভেলপার এবং ইউজার কমিউনিটিও অনেক বেশি অ্যাক্টিভ। নিয়মমাফিক প্রায় প্রতি মাসেই Pixel Experience এর একটি করে নতুন মেজর আপডেট এবং সিকিউরিটি প্যাচ রিলিজ করা হয়। আর আমি এখন পর্যন্ত যতগুলো কাস্টম রম ব্যবহার করেছি, সেগুলোর মধ্যে বেস্ট পারফরমেন্স Pixel Experience দিতে না পারলেও আমার মতে, সবথেকে স্ট্যাবল এবং বাগ-বিহীন এক্সপেরিয়েন্স পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্স থেকেই পেয়েছি। তাই আমি সাজেস্ট করবো, যদি পিক্সেল ফ্লেভার এবং যতটা সম্ভব স্ট্যাবল ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পেতে চাইলে পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্স ব্যবহার করুন!

Evolution X

এটিও পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের মতোই আরেকটি স্টক অ্যান্ড্রয়েড বেজড কাস্টম রম। এটিতেও আপনি গুগল পিক্সেলের ফ্লেভার পাবেন, তবে ডেভেলপার ক্লেইম করলেও এটিতে পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের মতো স্মুথ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যায়না। এর কারন হচ্ছে, এই রমটিতে অনেক কাস্টোমাইজেশন ফিচারস আছে যেগুলো আপনি অন্যান্য মিনিমাল রম, যেমন পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সে পাবেন না। এই রমটিতে এক্সট্রা অনেক ফিচারস এবং ইউআই কাস্টোমাইজেশন ফিচার পাবেন আপনি। স্ট্যাটাসবার থেকে শুরু করে লকস্ক্রিন, অ্যাপ ড্রয়ার, লঞ্চার, ডিসপ্লে, ফন্ট সবকিছুতেই অনেক এক্সট্রা কাস্টোমাইজেশন ফিচার পাবেন এই রমে, যা পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সে পাবেন না।

এসব এক্সট্রা ফিচারের কারণেই রমটি পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের মতো লাইটওয়েট নয়। একেবারে আনইউজেবল নয়, তবে পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের সাথে তুলনা করলে পারফরমেন্সের কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করবেন এই কাস্টম রমে। তবে এই রমটির অফিসিয়াল ডিভাইস সাপোর্ট পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের থেকে অনেকটাই বেটার। অর্থাত, পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের তুলনায় আরও বেশি ডিভাইস সাপোর্ট করে Evolution X। আর পারফরমেন্স খুব ভালো না হলেও রমটি যথেষ্টই স্ট্যাবল। আপনি যদি কাস্টোমাইজেশন ফ্রিক হয়ে থাকেন এবং ফ্যান্সি ফিচারগুলোর জন্য পারফরমেন্সের সাথে কিছুটা কম্প্রোমাইজ করতে আপনার কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে Evolution X ব্যাবহার করেই দেখতে পারেন।

Resurrection Remix

যেহেতু কাস্টোমাইজেশব ফিচারসের কথা আসলো, তাই এই রমটিকে এই লিস্টে না রাখলেই নয়। এটি অ্যান্ড্রয়েড কাস্টম রমের দুনিয়ায় পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের মতোই অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্স যেমন জনপ্রিয় এর স্মুথ পারফরমেন্স এবং ক্লিন পিক্সেল ফ্লেভারের জন্য, Resurrection Remix রমটি জনপ্রিয় এর এক্সট্রিম কাস্টোমাইজেশন ক্যাপেবলিটির জন্য। আপনি Resurrection Remix রমের ফিচার-সেট এবং মুলত কাস্টোমাইজেশন অপশনগুলো দেখলে আপনার কাছে Evolution X রমটিও বোরিং লাগবে। Resurrection Remix রমে এতো বেশি কাস্টোমাইজেশন ফিচার আছে যে, এই রমটির কাস্টোমাইজেশন সেটিংসে ঢুকলে আপনার ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যাবে জাস্ট কি কি ফিচারস আছে সেসব এক্সপ্লোর করতে।

বলতে গেলে আপনি ইউজার ইন্টারফেসের প্রায় প্রত্যেকটি পার্ট নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। তবে, এই হাজার হাজার ফিচারের কারণে এটার পারফরমেন্সও Evolution X এর মতোই। অর্থাৎ, ভালোও নয়, আবার খুব বেশি খারাপও নয়। আপনার যদি হাজার হাজার কাস্টোমাইজেশনের দরকার হয় তবে পারফরমেন্স নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যাথা না থাকে, তাহলে Ressurection Remix রমটি ট্রাই করে দেখতে পারেন, আশা করি হতাশ হবেন না। তবে হ্যা, এটির অফিসিয়াল ডিভাইস সাপোর্ট কিছুটা লিমিটেড। ভাগ্য ভালো হলে আপনার ডিভাইসটি সাপোর্টেড লিস্টে পেয়ে যেতে পারেন।

Paranoid Android

এটি অ্যান্ড্রয়েডের দুনিয়ায় সবথেকে পুরনো কাস্টম রমগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। অ্যান্ড্রয়েড জেলিবিন, কিটক্যাটের সময় এই কাস্টম রমটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো। Paranoid Android কাস্টম রমের একমাত্র স্পেশালিটি হচ্ছে এর স্ট্যাবলিটি এবং পারফরমেন্স। হ্যা, পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্সের মতোই এই রমটিতেও আপনি এক্সট্রা অনেক ফ্যান্সি ফিচারস এবং হাজার হাজার কাস্টোমাইজেশন পাবেন না। জাস্ট ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের জন্য একেবারে বেয়ার মিনিমাম যেসব ফিচারস না হলেই নয়, শুধুমাত্র সেগুলোই পাবেন। তবে Paranoid Android একটি CAF রম। CAF এর ব্যাপারে এই মুহুর্তে তেমন কিছু জানার দরকার নেই, জাস্ট এইটুকু জেনে রাখতে পারেন যে CAF বেজড রমগুলোর পারফরমেন্স এবং এনিমেশন খুবই স্মুথ এবং ফাস্ট হয়। Paranoid Android ব্যাবহার করলে ডিভাইসের পারফর্মেন্স নিয়ে কখনোই চিন্তা করতে হবেনা। আপনার ডিভাইস থেকে বেস্ট পসিবল পারফরমেন্সটাই আপনি Paranoid Android রম থেকে পাবেন।

আপনি Paranoid Android কে Pixel Experience রমের মতোই বলতে পারেন, তবে সাথে থাকবে অনেক বেটার Raw Performance। তবে Paranoid Android রমে নতুন বিল্ড এবং সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট পাওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অপেক্ষা করতে হবে। অন্যন্য রমের মতো প্রতি মাসেই একটি করে আপডেট রিলিজ করেনা Paranoid Android। আপনি মোটামুটি ৪-৫ মাস পরপর একটি করে নতুন বিল্ড আশা করতে পারবেন। আর Paranoid Android এর সাপোর্টেড ডিভাইস লিস্টও অনেক লিমিটেড। কোনো কোম্পানির সবথেকে জনপ্রিয় মডেলগুলো ছাড়া খুব বেশি মডেলের জন্য অফিসিয়াল রম আপনি পাবেন না। যদি আপনার কোনো ফ্যান্সি ফিচার দরকার না হয়, শুধুমাত্র স্ট্যাবল পারফরমেন্স দরকার হয়, আর একইসাথে যদি আপনার ডিভাইসটি সৌভাগ্যবশত Paranoid এর সাপোর্টেড ডিভাইসের লিস্টে থাকে, তাহলে আমি সাজেস্ট করবো, অন্য কোন দিকে না তাকিয়ে এই রমটিই ব্যাবহার করুন। আমি নিজেও আমার ফোনে প্রাইমারি রম হিসেবে Paranoid Android ব্যাবহার করছি।

Corvus OS

যেমনটা এই রমের ডেভেলপাররা ক্লেইম করে থাকেন, এই রমটি Made for Gamers। আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন এবং মোবাইলে হাই এন্ড গেমস যেমন পাবজি, কল অফ ডিউটি ইত্যাদি গেমস খেলেন, তাহলে এই রমটি ব্যবহার করতে পারেন। গেমিং করার জন্য বিশেষভাবে অপটিমাইজ করা হয়েছে এই রমটি। গেমিং এর জন্য স্পেশাল স্ক্রিন রেকর্ডার, এফপিএস কাউন্টার, র‍্যাম অপটিমাইজার ইত্যাদি অনেক ফ্যান্সি ফিচারস আছে এই রমে যা গেমাররা পছন্দ করবেন। সত্যি কথা বলতে, এই রমের গেমিং পারফরমেন্স আমার নিজের কাছে খুব অসাধারন কিছু মনে হয়নি। পিক্সেল এক্সপেরিয়েন্স, প্যারানয়েড অ্যান্ড্রয়েড ইত্যাদি রমে আমি যেমন গেমিং পারফরমেন্স পেয়েছি, এই রমটিতেও একইরকমই পারফরমেন্স পেয়েছি।

তাই আমার মনে হয়না যে, এই রমটি গেমিং পারফরমেন্স ইম্প্রুভ করে বা এই ধরনের কোন অপটিমাইজেশন করে। জাস্ট এই রমটির ইউজার ইন্টারফেসে কিছু এলিমেন্টস রাখা হয়েছে যা গেমাররা পছন্দ করবেন, আবার গেমিং মাইন্ডেড কিছু আইকনসও আছে। আর এফপিএস কাউন্টার, গেমিং মোড, গেম বুস্টার ইত্যাদি টুকটাক ফিচারস থাকার কারনে এই রমটিকে Made For Gamers বলা হয়ে থাকে। ব্যপারটা অনেকটা অপেরার গেমিং ব্রাউজারের মতো। আপনি যদি গেমার হয়ে থাকেন এবং সবকিছুতেই আরজিবি এবং গেমিং ভাইবস পছন্দ করেন, তাহলে এই রমটি ট্রাই করে দেখতে পারেন। এই রমটিও বেশ স্ট্যাবল এবং পারফরমেন্স পিক্সেল এচপেরিয়েন্সের মতো এত ভাল না হলেও অনেকটাই ক্লোজ।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories