উইন্ডোজের কয়েকটি হিডেন ফিচার যেগুলো হয়তো আপনি জানতেন না

স্টের টাইটেল দেখে ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন আজ কি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। দেখতে দেখতে উইন্ডোজ ১০ এর অফিসিয়াল রিলিজের প্রায় ৫ বছরের বেশি হয়ে যাওয়ার পরেও এখনো উইন্ডোজ এর অনেক অনেক ছোট ছোট এবং বেশ কাজের কিছু ফিচার রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে অধিকাংশ উইন্ডোজ ইউজাররাই এখনো জানেন না। সত্যি কথা বলতে উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ নিজেই এত বড় একটি প্লাটফর্ম যে, এখানে ছোট-বড় যত ফিচারস রয়েছে, সবকিছু খুঁজে পাওয়াও সম্ভব নয়।

এছাড়াও উইন্ডোজ এর প্রত্যেকটি মেজর আপডেটেই উইন্ডোজে ছোট ছোট অনেক ফিচার যোগ করে প্লাটফর্মটিকে আরও ইমপ্রুভ করা হচ্ছে, যেগুলোর ব্যাপারে অধিকাংশ ইউজাররাই জানেন না। আজকে উইন্ডোজ এর এমন কয়েকটি হিডেন ফিচারের ব্যাপারে আলোচনা করতে চলেছি, যেগুলোর ব্যাপারে অধিকাংশ ইউজাররাই এখনো জানেন না।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Snip and Sketch

উইন্ডোজ ১০ এ অধিকাংশ ইউজাররাই স্ক্রিনশট নেওয়ার জন্য থার্ড পার্টি টুলস এবং প্রোগ্রামস, যেমন- ShareX এবং Greenshot ব্যবহার করে থাকেন। হ্যা, স্ক্রিনশট নেওয়া এবং স্ক্রিন ক্যাপচার করার জন্য এই ডেডিকেটেড টুলসগুলো সবথেকে ভালো, যেহেতু এগুলোতে আরও অনেক এক্সট্রা ফিচারস থাকে। তবে, অধিকাংশ সময় স্ক্রিনশট নেওয়ার জন্য এত ফিচারের এবং এডিটিং টুলসের দরকার হয়না। সেক্ষেত্রে আমার মতে, উইন্ডোজ এর যে ডিফল্ট স্ক্রিনশট টুল আছে, সেটাই যথেষ্ট। স্ক্রিনশট টুল বলতে আপনি যেকোনো সময় print scr বাটন প্রেস করে ক্লিপবোর্ডে একটি ফুল স্ক্রিন শট কপি করে নিতে পারেন, সেটার কথা বলা হচ্ছে না।

যাইহোক, অনেকেই যেটা জানেন না তা হচ্ছে, পার্শিয়াল স্ক্রিনশট নেওয়ার জন্য বা ওপেন করা কোন একটি স্পেসিফিক উইন্ডোর আলাদা স্ক্রিনশট নেওয়ার জন্য থার্ড পার্টি টুলস ব্যবহার করার দরকার নেই। আপনি উইন্ডোজ এর বিল্ট-ইন Snip and Sketch টুল ব্যবহার করেই পার্শিয়াল এবং উইন্ডো স্ক্রিনশট নিতে পারবেন। যদি এই নামে কোন অ্যাপ আছে এটা প্রথম শুনে থাকেন, সমস্যা নেই, এটাই স্বাভাবিক। যাইহোক, আপনি যেকোনো সময় Windows Key + Shift + S ক্লিক করেই Snip and Sketch ব্যবহার করে ফুল স্ক্রিন স্ক্রিনশট, নিজের ইচ্ছামত ক্রপ করে পার্শিয়াল স্ক্রিনশট, কোন একটি স্পেসিফিক উইন্ডোর আলাদা স্ক্রিনশট সবকিছুই পারফেক্টলি নিতে পারবেন। কি দরকার এইটুকুর জন্য থার্ড পার্টি অ্যাপ ডাউনলোড করে সেটা সবসময়ের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং রাখা?

Command Promp Settings

আপনি যদি একেবারেই নুব লেভেলের উইন্ডোজ ইউজার না হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই কখনো না কখনো উইন্ডোজের কমান্ড প্রম্পট ওপেন করেছেন। কমান্ড প্রম্পটের কালো ইউজার ইন্টারফেস এবং তার মধ্যে ছোট ছোট ফন্টের এই লুকটি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। কারণ, কমান্ড প্রম্পটের ইউজার ইন্টারফেস খুব বেশি কেউ চেঞ্জ করেন না। সত্যি কথা বলতে কমান্ড প্রম্পটের ইন্টারফেস যে কিছুটা কাস্টোমাইজ করা যায় তা অনেকেই এখনো জানেন না। আপনি হয়তো জানতেন না যে, উইন্ডোজ কমান্ড প্রম্পটের বেশ কিছু ইন্টারফেস সেটিং চেঞ্জ করার অপশন অলরেডি উইন্ডোজে দেওয়া আছে যার জন্য থার্ড পার্টি কোন টুলসের দরকার হয়না।

কমান্ড প্রম্পট (CMD) ওপেন করে প্রোগ্রামটির টাইটেল বারে মাউস কার্সর দিয়ে রাইট ক্লিক করুন। টাইটেল বার বলতে, যে বারটিতে প্রোগ্রাম ছোট-বড় করা, মিনিমাইজ এবং ক্লোজ করার বাটনগুলো থাকে। এই বারে রাইট ক্লিক করলেই আপনি নিচে Properties নামের একটি সেটিংস দেখতে পারবেন। এই Properties সেটিংসে ঢুকলেই আপনার সামনে কমান্ড প্রম্পটটিকে নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করার বিশাল একটি প্যানেল ওপেন হবে। এখান থেকে আপনি কমান্ড প্রম্পটের ফন্ট সাইজ, ফন্ট কালার, ফন্ট স্টাইল, ফন্ট ওয়েট, কাস্টম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে শুরু করে কমান্ড প্রম্পটের অপাসিটি পর্যন্ত আরও অনেক কিছু নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবেন এবং কমান্ড প্রম্পটের বোরিং ডিফল্ট লুক চেঞ্জ করতে পারবেন।

Ready Boost

আপনার ডেক্সটপ বা ল্যাপটপটি যদি খুব স্লো হয়ে থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভকে আপনার সেকেন্ডারি মেমরি হিসেবে ব্যবহার করে আপনার ডিভাইসটির পারফরমেন্স কিছুটা ইমপ্রুভ করে নিতে পারবেন। আর অনেকেই হয়তো জানেন না যে, এটা করার জন্য আপনাকে কোন থার্ড পার্টি টুল ডাউনলোড বা ইন্সটল করতে হবে না। ইউএসবি ড্রাইভকে মেমরি হিসেবে ব্যবহার করে পারফরমেন্স ইমপ্রুভ করার ফাংশনালিটি উইন্ডোজে অনেক আগে থেকেই আছে। তবে এটা করলে পারফরমেন্সে হয়ত কিছুটা ইমপ্রুভমেন্ট দেখতে পাবেন তবে তা কখনোই রাত-দিন তফাৎ হবে না। আর Ready Boost আপনার ডিভাইসের জন্য না হলেও আপনার ইউএসবি ড্রাইভের জন্য ভবিষ্যতে ক্ষতিকর হতে পারে।

যাইহোক, Ready Boost ব্যবহার করার জন্য আপনার পেনড্রাইভটি কানেক্ট করে ড্রাইভটির প্রোপার্টিসে ঢুকবেন। প্রোপার্টিস এর মধ্যেই Ready Boost নামের একটি ট্যাব দেখতে পাবেন যেখানে ঢুকে আপনি এটি সেটাপ করে নিতে পারবেন। সেটাপ প্রোসেসটি তেমন কঠিন কিছু না, খুবই সহজ। উইন্ডোজ যদি মনে করে যে আপনার ডেক্সটপে Ready Boost ব্যবহার করে আপনি কোন ফল পাবেন না, সেক্ষেত্রে আপনাকে ওপরের স্ক্রিনশটের মত মেসেজ দেখাবে। আর এমন মেসেজ না আসলে আপনি সহজেই Ready Boost সহজেই সেটাপ করে নিতে পারবেন। চাইলে শুধুমাত্র Ready Boost সেটাপ প্রোসেস নিয়ে আগামীতে কোন পোস্ট লেখা যেতে পারে। আর আপনি চাইলে ইউটিউবেও টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। এই পোস্টটি Ready Boost সেটাপ নিয়ে নয়, তাই এই টপিকটি এখানেই স্কিপ করছি।

Windows Calculator Features

এতদিনে আমরা প্রায় সবাই ভুলেই গিয়েছি যে উইন্ডোজ ১০ এর একটি ডিফল্ট ক্যালকুলেটর অ্যাপ রয়েছে যা আপনি স্টার্ট মেনুতে খুঁজে পাবেন বা সার্চ করে ওপেন করতে পারবেন। তবে অনেকেই হয়তো মনে করে থাকেন যে উইন্ডোজ এর ডিফল্ট ক্যালকুলেটরটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনের ডিফল্ট ক্যালকুলেটরের মতই বেসিক এবং খুব বেশি ফিচার প্যাকড নয়। আর এইজন্য উইন্ডোজ ক্যালকুলেটর ওপেনও করা হয়না। কিন্তু তা ভুল ধারনা। আপনি উইন্ডোজ ১০ এর ক্যালকুলেটর অ্যাপটি ওপেন করেই দেখুন। ক্যালকুলেটরের পাশে থাকা হ্যামবার্গার মেনু ওপেন করলেই ক্যালকুলেটরের এক্সট্রা সব ফিচারস দেখতে পাবেন।

উইন্ডোজ ক্যালকুলেটরে বিল্ট ইন এত বেশি ফাংশনস রয়েছে যে, আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, যেকোনো ধরনের ক্যালকুলেশনের জন্য উইন্ডোজের ডিফল্ট ক্যালকুলেটরই যথেষ্ট। উইন্ডোজ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করলে আপনাকে কোন ক্যালকুলেশনের জন্য গুগল সার্চ ব্যবহার করতে হবে না এবং কোন অনলাইন টুলসও ব্যবহার করতে হবে না। বেসিক ক্যালকুলেশন থেকে শুরু করে ইউনিট কনভার্সন, বাইট-বিট, মিটার-ইঞ্চি, কালার কোড, ভলিউম, ওয়েট, তাপমাত্রা, এনার্জি, প্রেশার পর্যন্ত প্রায় সবধরনের কনভার্সন করার সুযোগ রয়েছে উইন্ডোজ ক্যালকুলেটরে। আর হ্যা, এইসবগুলোই কিন্তু ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই কাজ করে। তাই নেক্সট টাইম কোন কোন ম্যাথমেটিক্যাল কনভার্সন করার দরকার হলে গুগল সার্চ না করে উইন্ডোজ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করুন!

Dynamic Lock

যারা স্মার্টওয়াচ বা এই ধরনের কোন স্মার্ট ব্লুটুথ ডিভাইস ব্যবহার করেন, তারা হয়তো অ্যান্ড্রয়েড ফোনে স্মার্ট লক ফিচারটি ব্যাবহার করেন। যদিও আমাদের দেশে এই ফিচারটি খুব বেশি কেউ ব্যাবহার করেন না, তবে এর সাহায্যে আপ্নার ব্লুটুথ কানেক্টেড ডিভাইসটি আপনার ফোনের কাছাকাছি থাকলে আপনি ফোনটি অটোমেটিক্যালি আনলক করে নিতে পারবেন। মূলত ওয়্যারলেস হেডফোন এবং মি ব্যান্ডের মত স্মার্ট ওয়্যারেবল ডিভাইসগুলোর সাথে ভালোভাবে কাজ করে। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে, আপনি চাইলে আপনার উইন্ডোজ ১০ ল্যাপটপেও এই স্মার্ট লক ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন এবং এর জন্য আপনাকে কোন থার্ড পার্টি টুল ব্যবহার করতে হবেনা।

উইন্ডোজ ১০ এর সেটিংস মেনুতেই আপনি এই একই ধরনের স্মার্ট লক ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে উইন্ডোজ ১০ এটিকে Smart Lock নয়, Dynamic Lock বলা হয়। ডায়নামিক লক ব্যাবহার করার জন্য আপনাকে আগে থেকেই আপনার ল্যাপটপের সাথে আপনার কোন একটি ব্লুটুথ ডিভাইস পেয়ার করে নিতে হবে। এরপর সেটিংস মেনুতে ঢুকে Accounts > Sign in options ট্যাবে ঢুকলেই নিচে স্ক্রল করে Dynamic Lock সেটাপ করার অপশন পেয়ে যাবেন। সেটাপ প্রোসেস খুবই সহজ, আপনাকে শুধু দেখিয়ে দিতে হবে যে আপনি পেয়ার করা কোন ব্লুটুথ ডিভাইসটিকে আপনার ল্যাপটপ আনলক করার জন্য ব্যবহার করতে চাইছেন।

ব্যাস! এরপর থেকে আপনার ল্যাপটপ অন করলেই আপনার কাছে যদি ওই ট্রাস্টেড ব্লুটুথ ডিভাইসটি থাকে, তাহলে আপনার উইন্ডোজ এর লক অটোমেটিক্যালি খুলে যাবে। আবার আপনি যদি আপনার ওই ট্রাস্টেড ব্লুটুথ ডিভাইসটি নিয়ে আপনার ল্যাপটপের ব্লুটুথ রেঞ্জের বাইরে চলে যান, তাহলে আপনার ল্যাপটপ আবার অটোমেটিক্যালি লক হয়ে যাবে। এই ফিচারটি সত্যিকারেই বেশ কাজের। যারা ফোনে স্মার্ট লক ব্যবহার করেন, তারা ট্রাই করে দেখতে পারেন!

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories