যেসব কারণে আপনি ক্রোম থেকে এজ ব্রাউজারে সুইচ করতে পারেন

মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারের নাম শুনলেই অনেকের অভ্যাস হাঁসাহাঁসি করা বা ব্রাউজারটিকেে ট্রল করার, যেমনটা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার নিয়ে আমরা সবাই কম-বেশি করে থাকি। হ্যা, উইন্ডোজ ১০ যখন রিলিজ করা হয়েছিলো, তখন মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার এতটাই স্লো এবং আনস্ট্যাবল ছিলো যে, এজ ব্রাউজার বাদ দিয়ে অন্য যেকোনো ব্রাউজার ব্যাবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ ছিলো। তেমন সময়ে মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারের একমাত্র কাজই ছিলো গুগল ক্রোম ডাউনলোড করা, মানে এই কাজের জন্যই সবাই এজ ব্রাউজার ব্যাবহার করতো। গুগল ক্রোম বা ফায়ারফক্স ডাউনলোড করার পরে ইউজাররা কখনো ভুলেও কোন কাজে এজ ব্রাউজার ওপেন করতেন না।

যাইহোক, এখন আর সেই সময় নেই। মাইক্রোসফট নিজেও তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে এবং সেই অনুযায়ী ব্যাবস্থাও নিয়েছে। এতদিনে প্রায় সব উইন্ডোজ ইউজারই জেনে গিয়েছেন যে, মাইক্রোসফট গত বছরই নিজেদের ব্লিংক ইঞ্জিন বাদ দিয়ে গুগলের ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের ওপরে নতুন করে মাইক্রোসফট এজ তৈরি করেছে। ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনে চালিত আরও অনেক জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ইতোমধ্যেই আছে। যেমন- ব্রেভ ব্রাউজার এবং অপেরা ব্রাউজার। স্বয়ং গুগল ক্রোম এর পাশাপাশি জনপ্রিয় এই ব্রাউজারগুলোর ভিড়ে কেনই বা আপনি মাইক্রোসফট এর ওপরে আস্থা রেখে তাদের তৈরি আরেকটি ক্রোমিয়াম ব্রাউজার ব্যাবহার করবেন? ব্যাবহার করলেও কেনই বা গুগল ক্রোমকে রিপ্লেস করতে চাইবেন নতুন এজ ব্রাউজারের সাথে?


মিনিমাল ডিজাইন

আমি আপনার ব্যাপারে জানি না, তবে আমার কাছে ব্রাউজার পছন্দ করার ক্ষেত্রে একটি বড় ব্যাপার হচ্ছে এর ইউজার ইন্টারফেস। আমার মনে হয় সুন্দর ইউজার ইন্টারফেসের ব্রাউজার সবারই পছন্দ। সুন্দর ইউজার ইন্টারফেসের জন্য অনেকসময় কিছু ছোট-খাট ফিচারের সাথে কম্প্রোমাইজ করতেও রাজি থাকেন অনেকে। আমার মনে হয় অধিকাংশ ইউজারের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি। যদি আপনিও ইউজার ইন্টারফেস নিয়ে আমার মতো খুঁতখুঁতে হয়ে থাকেন, তাহলে আমি বলবো নতুন মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারে সুইচ করার এটাই অন্যতম কারণ হবে আপনার জন্য।

গুগল ক্রোমের ইউজার ইন্টারফেস কোন দিক থেকেই খারাপ বা ব্যাকডেটেড নয়, তবে আপনারা অনেকেই সম্মত হবেন যে, মাইক্রোসফট এজ ক্রোমিয়ামের ইউজার ইন্টারফেস গুগল ক্রোমের থেকেও অনেক বেশি মডার্ন এবং মিনিমাল। আমার কাছে মাইক্রোসফট এজ এর রাইট ক্লিক কন্টেক্সট মেনুর লেয়াউটটি সবথেকে ভালো লাগে। এছাড়া মাইক্রোসফট এজ এর ন্যাটিভ ডার্ক মোডটিও খুবই সুন্দর। ব্রাউজার উইন্ডো থেকে শুরু করে ব্রাউজারের ভেতরের কনটেক্সট মেনু, সেটিংস মেনু, নিউ ট্যাব পেজ, বাটনগুলোর স্টাইল সবকিছুই উইন্ডোজ ১০ এর ফ্লুয়েন্ট ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ব্রাউজারটিকে উইন্ডোজ ১০ এর অন্যান্য প্রায় সব ব্রাউজারের থেকে বেশি মডার্ন লুক দেয়।

 এক্সটেনশন সাপোর্ট

মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার যখন প্রথম উইন্ডোজ ১০ এর ইনিশিয়াল রিলিজের সাথে রোলআউট করেছিলো মাইক্রোসফট, তখন এজ ব্রাউজারে কোন এক্সটেনশন সাপোর্টই ছিলো না। এর ফলে যেসব ইন্টারনেট ইউজাররা এক্সটেনশনের ওপর ডিপেন্ডেন্ট, তারা চাইলেও এজ ব্রাউজার প্রাইমারিলি ব্যাবহার করার কথা ভাবতেই পারতেন না। যদিও কিছুদিন পরে উইন্ডোজ আপডেটের সাহায্যে মাইক্রোসফট এজে এক্সটেনশন সাপোর্ট যোগ করা হয়, কিন্তু মাইক্রোসফট স্টোর থেকে এক্সটেনশন ইন্সটল করা খুবই ঝামেলাপূর্ণ কাজ ছিলো। এছাড়া হাতে গোনা কয়েকটি এক্সটেনশন ছিলো মাত্র, যা কোন ইউজারের জন্যই যথেষ্ট ছিলো না।

তবে নতুন মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারটি ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনে তৈরি হওয়ায় গুগল ক্রোমের সকল এক্সটেনশনই মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারে সাপোর্ট করে। আর এক্সটেনশন সাপোর্ট করানোর জন্যও কোন এক্সট্রা ডিপেন্ডেন্সি বা কোন ধরনের এক্সট্রা সেটিংসের দরকার হয়না। অন্যান্য ক্রোমিয়াম ব্রাউজারের মতোই ক্রোম ওয়েবস্টোরে গিয়ে আপনার পছন্দের এক্সটেনশনটি সার্চ করে Add To Chrome ক্লিক করলেই এক্সটেনশনটি মাইক্রোসফট এজে অ্যাড হয়ে যাবে। আর ক্রোমিয়াম ইঞ্জিনের ব্রাউজার হওয়ায় এক্সটেনশনটি পারফর্মও করবে একেবারেই গুগল ক্রোমের মতোই। আর মাইক্রোসফট এজ এর র‍্যাম ম্যানেজমেন্ট বেটার হওয়ায় অনেক এক্সটেনশন ক্রোমের থেকেও বেশি ভালো কাজ করে।

প্রাইভেসি প্রোটেকশন ফিচারস

আমরা সবাই জানি, ইউজার প্রাইভেসি রক্ষার ক্ষেত্রে গুগল ক্রোমের খুব বেশি সুনাম নেই। গুগল নিজেই ইউজারের প্রত্যেক স্টেপের ডাটা কালেক্ট করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময়। তবে এখানে এই প্রাইভেসির কথা বলা হচ্ছেনা। এখানে বলা হচ্ছে থার্ড পার্টি ওয়েবসাইটগুলোর ক্ষেত্রে প্রাইভেসি প্রোটেকশন এর ব্যাপারে। কিছু এক্সট্রা প্রাইভেসি প্রোটেকশন ফিচার ব্রেভ ব্রাউজারে বিল্ট-ইন থাকে বলে আমরা অনেকেই প্রাইমারি ব্রাউজার হিসেবে ব্রেভ ব্রাউজার ব্যাবহার করি। যদি আপনি ব্রেভ ব্রাউজার ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি জেনে খুশি হবেন যে, মাইক্রোসফট এজেও কিছু বিল্ট-ইন প্রাইভেসি প্রোটেকশন ফিচার আছে যেগুলো গুগল ক্রোম এবং আরও অনেক ক্রোমিয়াম ব্রাউজারেই নেই।

মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজারে ইন্টারনেট ব্যাবহার করার সময় আপনি বাই-ডিফল্ট তিনটি লেভেলের প্রাইভেসি প্রোটেকশন অপশন পাবেন, যেগুলো নিজের ইচ্ছামত সেট করে নিতে পারবেন। এসব সেটিংস এনাবল করে রাখলে যেকোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করার সময় ব্রাউজার ওয়েবসাইটের সকল থার্ড পার্টি ট্র্যাকার ডিজেবল করে দেবে, যেমনটা ব্রেভ ব্রাউজার করে থাকে। বেসিক, ব্যালেন্সড এবং স্ট্রিক্ট এই তিনটি লেভেলে ট্র্যাকার ডিজেবল করতে পারবেন আপনি। শুধু ট্র্যাকারই নয়, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ইন্ট্রিগ্রেশন থাকায় প্রায় সব ধরনের হার্মফুল ওয়েব কন্টেন্ট থেকে কিছুটা প্রোটেকশন দেবে মাইক্রোসফট এজ। যদিও একই ফাংশনালিটি অনেক ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যাবহার করে পাওয়া সম্ভব, তবে বিল্ট-ইন থাকা অবশ্যই একটি ভালো ব্যাপার।

গুগল ইকোসিস্টেমের বাইরে

এটা অনেকের কাছে মাইক্রোসফট এজ এর একটি ডাউনসাইড মনে হতে পারে, আবার অনেকের কাছে একটি ভালো ব্যাপার। আপনার কাছে কি মনে হবে তা নির্ভর করবে আপনি কতোটা প্রাইভেসি সেন্সিটিভ মানুষ, তার ওপরে। গুগল ক্রোম ব্রাউজারে ইউজারের প্রত্যেকটি অনলাইন একটিভিটি ট্র্যাক করে, অ্যাড টার্গেট করার উদ্দেশ্যে। আপনি কোন কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন, কি কি প্রোডাক্টে ক্লিক করছেন, এইসবকিছুই গুগল ট্র্যাক করে আপনার ব্যাপারে তথ্য জানার লক্ষ্যে। এর ফলে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে টার্গেটেড অ্যাড দেখানো গুগলের জন্য আরও সহজ হয়। তবে অবশ্যই এজ ব্রাউজার গুগলের প্রোডাক্ট না হওয়ায়, এজ ব্রাউজারে গুগল এটা করতে পারবে না যেহেতু এটি গুগলের নয়, মাইক্রোসফট ইকোসিস্টেমের ভেতরে।

তবে ব্যাপারটা একটু জটিল। এজ ব্রাউজার আবার টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট এর প্রোডাক্ট। তাই এজ ব্রাউজার ব্যাবহার করলে গুগল আপনার ব্রাউজিং বিহেভিয়র ট্র্যাক করতে না পারলেও মাইক্রোসফট তা পারবে। হয়তো মাইক্রোসফট আপনার ডাটা ট্র্যাক করছে। কিন্তু তাতে আমাদের অধিকাংশ ইউজারেরই কিছু যায় আসে না। কারণ আমরা মাইক্রোসফট এর প্রোডাক্ট এত বেশি ব্যাবহার করিনা যতোটা গুগলের প্রোডাক্ট ব্যাবহার করি। তাই মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার ব্যাবহার করলে, আমাদের ডেক্সটপের ব্রাউজিং বিহেভিয়র অনুযায়ী আমাদের ফোনে অ্যাডস দেখতে নাও হতে পারে। কিন্তু এমনও নিশ্চয়তা নেই যে দেখতে হবে না। তাই এটা একটু কনফিউজিং সিচুয়েশন। তবে হ্যা, যদি কোন কারণে আপনি গুগলের ডাটা মাইনিং সিস্টেম পছন্দ না করেন, তাহলে মাইক্রোসফট এজ ব্যাবহার করতেই পারেন।

হাই কোয়ালিটি নেটফ্লিক্স কন্টেন্ট

আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে, গুগল ক্রোম এবং অন্য সকল ব্রাউজারে যদি আপনি নেটফ্লিক্স এর কোন কন্টেন্ট স্ট্রিম করেন, আপনার ইন্টারনেট স্পিড যতোই ভালো হোক না কেন, আপনি কখনোই ৭২০পি রেজুলেশনের ওপরে ভিডিও স্ট্রিম করতে পারবেন না। আমি জানি না এর কারণ কি, কেনই বা সব ব্রাউজারের ওপরে এমন রেস্ট্রিকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে উইন্ডোজে শুধুমাত্র একটা ব্রাউজারেই আপনি ১০৮০পি থেকে একেবারে ৪কে আলট্রা এইচডি রেজুলেশনে নেটফ্লিক্স কন্টেন্ট স্ট্রিম করতে পারবেন।

ঠিক ধরেছেন, মাইক্রোসফট এজ। আমি জানি না কেন মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার ৪কে রেজুলেশনের নেটফ্লিক্স কন্টেন্ট স্ট্রিম করতে অ্যালাউড কিন্তু অন্য কোন ব্রাউজার নয়। আপনি চাইলে নেটফ্লিক্সের অফিসিয়াল রেজুলেশন টেস্টিং সিস্টেম ব্যাবহার করে টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন। যাইহোক, আপনি যদি অনেক বেশি নেটফ্লিক্স ওয়াচার হয়ে থাকেন এবং ডেক্সটপে দেখার অভ্যাস থাকে, তাহলে মাইক্রোসফট এজ আপনার জন্য বেস্ট চয়েজ হবে।

পারফরমেন্স এবং অন্যান্য ফিচারস

ইনিশিয়াল রিলিজে এজ ব্রাউজার যখন মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার মাইক্রোসফট এর তৈরি ব্লিংক ইঞ্জিন ব্যাবহার করতো, তখন সত্যিকারেই অন্যান্য মেইনস্ট্রিম ব্রাউজারগুলোর থেকে স্লো ছিলো এই ব্রাউজারটি। তবে ক্রোমিয়াম ইঞ্জিন ব্যাবহার করায় বর্তমানে স্পিডের ক্ষেত্রে একেবারেই ক্রোমের মতোই পারফর্ম করে মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার। ক্রোম এবং এজ পাশাপাশি ব্যাবহার করলে স্পিডের কোন পার্থক্য পাবেন না আপনি দুটি ব্রাউজারের মধ্যে। এমন না যে ক্রোমের থেকে আরও বেশি স্পিড পাবেন, তবে নিশ্চিতভাবেই সেম ইঞ্জিনের অপটিমাইজড ব্রাউজার হওয়ায় ক্রোমের থেকে কম পাবেন না। তবে অপেরা এবং অন্যান্য আরও কিছু ক্রোমিয়াম ব্রাউজারের থেকে বেটার স্পিড পেতে পারেন।

এছাড়া মাইক্রোসফট এজ গুগল ক্রোমের থেকে অনেকটাই কম র‍্যাম ইউজ করে এবং র‍্যাম ম্যানেজমেন্টও বেশ ভালো। তাই মাল্টিপল ট্যাব হ্যান্ডেল করার ক্যাপাবলিটি গুগল ক্রোমের থেকে বেশ ভালো মাইক্রোসফট এজ এর। আর মাইক্রোসফট এজ এর ডেভটুলসও একেবারেই গুগল ক্রোমের মতোই। অর্থাৎ, অভারঅল ক্রোমের তুলনায় মাইক্রোসফট এজ কিছুটা বেটার অপটিমাইজড ব্রাউজার।

এছাড়াও মাইক্রোসফট এজে কিছু এক্সট্রা এজ-স্পেসিফিক ফিচারস আছে যেগুলো আপনি অন্যান্য ব্রাউজারে বিল্ট-ইন পাবেন না। যেমন- সাইডবার ট্যাব ম্যানেজার বা ট্যাব কালেকশন, যা অন্যান্য ব্রাউজারে Toby এর মতো থার্ড পার্টি এক্সটেনশন ইউজ করে পেতে হয়। বিল্ট ইন ফুল পেজ স্ক্রিনশট টুল, যা ফায়ারফক্স এবং অপেরা ছাড়া আমার জানামতে আর কোন ব্রাউজারে নেই। এছাড়াও আছে Read Aloud টুল, যা আপনাকে যেকোনো ওয়েবপেজের কন্টেন্ট স্পিকারে পড়ে শোনাবে। এবং ফ্যামিলি সেফটি, অ্যান্ড্রয়েড ইন্টিগ্রেশন সহ আরও ছোট ছোট অনেক ফিচারস আছে যা গুগল ক্রোমে এবং আরও অনেক ব্রাউজারেই নেই। আর অন্যান্য ক্রোমিয়াম ব্রাউজার বা ক্রোম থেকে মাইক্রোসফট এজে সুইচ করাও খুবই সহজ। খুব সহজেই সেটাপের সময় আপনার প্রাইমারি ব্রাউজার থেকে আপনার সকল ডাটা ইমপোর্ট করতে পারবেন এজ ব্রাউজারে।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories