ব্লক রেশিও : একটি ইনোভেটিভ অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চার

নাম দেখেই হয়তো বুঝতে পারছেন, আজ কথা বলতে চলেছি একটি অ্যান্ড্রয়েড হোমস্ক্রিন লঞ্চার নিয়ে। আপনি যদি খুব টেক স্যাভি না হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনি এই অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারটির নাম এই প্রথম শুনলেন। আপনি হয়তো ভাবছেন, একটা অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চার নিয়ে আলাদা পোস্ট লেখার কি আছে? অ্যাপস সিরিজের মধ্যেই তো রাখা যেত। বাট এই লঞ্চারটি নিয়ে আলাদা না লিখলে অনেক কিছুই বাদ থেকে যেত। তবুও চেষ্টা করছি ছোট একটা ওভারভিউ দেওয়ার।

Blloc এর তৈরী Ratio নামের এই মিনিমাল এবং লাইটওয়েট অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারের মেইন ফোকাসটি হচ্ছে আপনার স্মার্টফোনের ওপরে নির্ভরতা বা সহজ ভাষায় বললে আপনার স্মার্টফোনের অ্যাডিকশন কিছুটা কমানোর চেষ্টা করা। মূলত কিছু ইউজার ইন্টারফেস ফিচারস এবং ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজের সাহায্যে এই লঞ্চারটি আপনার স্মার্টফোনের ইউজেস কিছুটা কমানোর চেষ্টা করবে। যদিও স্মার্টফোন অ্যাডিকশন কমানোর জন্য এটা কখনোই বেস্ট সল্যুশন নয়, তবে Ratio লঞ্চারের ইনিশিয়েটিভটি যথেষ্ট ইনোভেটিভ।

এই লঞ্চারটি মোনোক্রোম ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ফলো করে। অর্থাৎ, প্রাইমারিলি এই লঞ্চারটির অধিকাংশ ইউজার ইণ্টারফেসেই আপনি ডার্ক মোড লক্ষ্য করতে পারবেন। শুধু সাধারণ ডার্ক মোড নয়, মূলত সম্পূর্ণ ইন্টারফেসেই ব্যবহার করা হয়েছে ব্ল্যাক অ্যাক্সেন্ট কালার। শুধুমাত্র সাদা এবং কালো রঙ ব্যাবহার করেই ইউজার ইন্টারফেসকে সাজানোর ফলে এমনিতেই ইউজারের স্মার্টফোন ব্যাবহারের হার কিছুটা কমানো যাবে বলে বিশ্বাস করে লঞ্চারটির ডেভেলপার Blloc Inc। এই লঞ্চারটি মূলত আপনার স্মার্টফোন ইউজ করার জেনারেল হ্যাবিটই অনেকটা চেঞ্জ করে দেয়।

সম্পূর্ণ লঞ্চারটিতে মূলত দুটি অংশ আছে। একটি হচ্ছে Route বা আপনার জেনারেল হোমস্ক্রিন, যেখানে আপনি নিজের ইচ্ছামত কিছু প্রি-ডিফাইন্ড উইজেটস সেভ করে রাখতে পারবেন, যেগুলোকে আপনি স্মার্টফোন আনলক করেই খুব দ্রুত অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এখানে এমন কিছু টুলস এর উইজেট আপনি সেভ করে রাখতে পারেন যেগুলো আপনার প্রত্যেকদিনই দরকার হয়। যেমন- আপনি চাইলে স্ক্রিনের ওপরে আপনার এলাকার ওয়েদার ফোরকাস্ট রাখতে পারেন এবং চাইলে নিচে সবসময়ের জন্য একটি মিনি ক্যালকুলেটর এনে রাখতে পারেন যাতে ফোন আনলক করে সরাসরি ক্যালকুলেটরে যেকোনো ছোট হিসাব-নিকাশ সেরে নিতে পারেন।

আবার আপনি চাইলে আপনার হোমস্ক্রিনে একটি নোটস উইজেট এনে রাখতে পারবেন, যার সাহায্যে আপনি ফোন আনলক করে সহজেই খুব দ্রুত যেকোনো নোট তৈরী করে রাখতে পারবেন, যা আবার ফোন আনলক করলেই সাথে সাথে দেখতে পাবেন। আবার আপনি চাইলে আপনার Routes স্ক্রিনের নিচে থাকা সার্চ বার ব্যবহার করে আরও কিছু কাজ করতে পারবে। যেমন- গুগল সার্চ করা, সরাসরি কোন ইউআরএল ভিজিট করা ইত্যাদি। এছাড়া এই সার্চ বার ব্যবহার করে আপনি আরও এক্সট্রা টুলস অ্যাক্সেস করতে পারবেন। যেমন- কারেন্সি কনভার্টার, টেক্সট অ্যাসিসট্যান্ট ইত্যাদি। রেশিও লঞ্চারের হোমস্ক্রিনেই আরও অনেক টুলস রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে কোন অ্যাপ লঞ্চ না করেই অনেক কাজ সেরে নিতে পারবেন।

হোমস্ক্রিন থেকে লেফট সোয়াইপ করলে আপনি পাবেন আপনার অ্যাপ ড্রয়ার। তবে অন্যান্য গতানুগতিক অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারের থেকে রেশিও লঞ্চারের অ্যাপ ড্রয়ার একেবারেই আলাদা। এখানে আপনি দুটি ট্যাব দেখতে পাবেন। Essentials নামের ট্যাবটিতে আপনার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোকে রাখতে পারবেন এবং All Apps সেকশনে অবশ্যই আপনার ইন্সটল করা সব অ্যাপস খুঁজে পাবেন।

Essentials ট্যাবটি আপনার নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবেন। আপনার ইচ্ছামত অ্যাপস যোগ করতে পারবেন এবং কোনো অ্যাপসকে হাইলাইট করতে চাইলেও আপনি সেটা হাইলাইট করে রাখতে পারবেন। তবে খেয়াল করবেন, অ্যাপ ড্রয়ারের প্রত্যেকটি অ্যাপই অনেকটা সাদা-কালো রঙ-এ পেইন্ট করা হয়েছে যা সত্যি কথা বলতে দেখতে অনেকটাই বোরিং লাগে। মূলত এই কারণেই এই লঞ্চারটি অন্যান্য সকল অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারের থেকে আলাদা। এই বোরিং ইউজার ইন্টারফেসের কারণেই ইউজারের স্মার্টফোন ব্যাবহার করার হ্যাবিট চেঞ্জ করার চেষ্টা করে এই লঞ্চারটি।

ইউজার ইন্টারফেসটি অনেকের কাছে বোরিং লাগলেও মিনিমালিস্টদের কাছে, অর্থাৎ যারা মিনিমাল ডিজাইন পছন্দ করেন, তাদের কাছে বেশ ভালোই লাগবে এই লঞ্চারের ডিজাইন ল্যাংগুয়েজ। আর এই লঞ্চারে এমন আরও কিছু ফিচারস আছে যেগুলো আপনি অন্য কোনো অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারে পাবেন না। যেমন- আপনি যদি মনে করেন যে, কোনো অ্যাপের প্রতি আপনি অ্যাডিক্টেড হয়ে পড়েছেন এবং অনেক বেশি ব্যাবহার করছেন অ্যাপটি, তাহলে আপনি এই লঞ্চারের সাহায্যে ওই অ্যাপটিকেও মোনোক্রোম পেইন্ট করতে পারবেন। এর ফলে অ্যাপটির ভেতরের ইউজার ইন্টারফেসও সবসময় সাদা-কালো হবে। এর ফলে অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস আপনার কাছে বোরিং লাগবে এবং অ্যাপটির প্রতি আপনার অ্যাডিকশন হয়তো কিছুটা কমে যাবে। এছাড়া লঞ্চার বেজড অ্যাপ লক ফিচার তো থাকছেই। তবে এই সবগুলোই অপশনার ফিচারস যা আপনি চাইলে ব্যাবহার করতে পারেন।

এই লঞ্চারটির আরেকটি ভালো ফিচার হচ্ছে, এই লঞ্চারের ভেতরেই আপনি কিছু ডিজিটাল ওয়েলবিং ফিচারস পাবেন। লঞ্চারে কোন অ্যাপের ওপরে লং প্রেস করে অ্যাপ ইনফো ওপেন করলে আপনি সারাদিনে ওই অ্যাপটি কতবার ওপেন করেছেন, কতক্ষন ওই অ্যাপটি ব্যাবহার করেছেন, ওই অ্যাপটি আপনাকে কতগুলো নোটিফিকেশন সেন্ড করেছে এই সব ইনফরমেশন দেখতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে আলাদা করে সেটিংসে ঢুকতে হবে না।

আর আমার মতে, এই লঞ্চারটির আরেকটি ভালো ফিচার হচ্ছে এর সানলাইট মোড বা লাইট মোড। আপনার যদি ডার্ক মোড ভালো না লাগে, তাহলে আপনি লাইট মোড ব্যাবহার করতে পারবেন। তবে এই লঞ্চারের লাইট মোডটি মূলত আউটডোর ভিজিবিলিটির ব্যাপার চিন্তা করে তৈরি করা হয়েছে। লঞ্চারটি লাইট মোডে ব্যাবহার করলে আপনি আউটডোরে আপনার হোমস্ক্রিন এবং লঞ্চারের সব কন্টেন্ট খুবই স্পষ্ট দেখতে পারবেন। এখনো পর্যন্ত অন্য কোন অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারের লাইট মোড আমার কাছে এতটা ইফেক্টিভ মনে হয়নি।

এই লঞ্চারের আরেকটি অসাধারন ফিচার হচ্ছে BllocDesk। এই লঞ্চারের একটি ডেস্কটপ ক্লায়েন্টও আছে যা আপনি আপনার ডেস্কটপে ব্যাবহার করতে পারবেন। ডেস্কটপের BllocDesk অ্যাপটির সাথে খুব সহজেই ওয়্যারলেসলি কানেক্ট করতে পারবেন আপনার ফোন। ফোনে লঞ্চারের সেটিংস থেকেই কানেক্ট এবং ডিসকানেক্ট করতে পারবেন। কানেক্টেড থাকা অবস্থায় ডেস্কটপে BllocDesk অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি ফোনের পিকচার, মেসেজ, নোটিফিকেশন ইত্যাদি চেক করতে পারবেন। যদিও বর্তমানে উইন্ডোজ ১০ এর Your Phone অ্যাপ ব্যবহার করেই এটা করা যায়, তবে BllocDesk অ্যাপটি ইউজার ইন্টারফেস এবং ফিচারসের দিক থেকে Your Phone এর থেকে অনেক বেশি রিলায়েবল এবং স্মার্ট, যদি আপনি আপনার ফোনে Ratio লঞ্চারটি ব্যবহার করেন।

শুধু এগুলোই নয়, এই লঞ্চারটিতে আরও অনেক ছোট ছোট ফিচারস এবং ইউআই টুইকস আছে যেগুলো আপনার ভালো লাগবেই। আর হ্যাঁ, এই লঞ্চারটি সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি এবং পারফরমেন্সের দিক থেকেও অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড লঞ্চারের থেকে বেশি ফাস্ট এবং স্মুথ। এতক্ষনে নিশ্চই বুঝতে পারছেন যে এই লঞ্চারটি ঠিক কিভাবে ইউজারের স্মার্টফোন অ্যাডিকশন কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছে। যদিও তারা এই কাজে খুব একটা সফল নয়, তবে, যেমনটা বললাম, ইনিশিয়েটিভটি প্রশংসনীয়!

Images: Shutterstock.com

 

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories