ল্যাপটপের ওয়েবক্যামগুলো কেন সবসময় খারাপ কোয়ালিটির হয়?

আপনাকে বা আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে ল্যাপটপের সবথেকে ইউজলেস পার্ট বা কম্পোনেন্টটি কি, তাহলে তার উত্তর নিঃসন্দেহে হবে ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম। কখনো কি চিন্তা করেছেন যে, এই ২০২০ সালে যখন আমরা আক্ষরিক অর্থেই ফোল্ডেবল স্মার্টফোন ব্যাবহার করতে পারছি, যেসময়ে আমরা স্মার্টফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যাবহার করেই আলট্রা এইচডি পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড করতে পারছি, সেই একই সময়ে ল্যাপটপের ওয়েবক্যামের কোয়ালিটি কেন এত খারাপ? কেন ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম কোয়ালিটি এখনও ২০১০ সালের মতোই আছে?

এমনটা করার আরও অনেক কারণই আছে, তবে এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ওয়েবক্যামের ইউজেস। আপনি হয়তো জানেনই যে, সাধারনত আমরা কেউই ল্যাপটপের ক্যামেরা ব্যাবহার করি না বললেই চলে। গত কয়েক বছর ধরে, কোনো ল্যাপটপ ইউজার বছরে একবারও তার ল্যাপটপ ওয়েবক্যাম ওপেন করেছেন কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব হবেনা।

ভিডিও কনফারেন্সিং টেকনোলজি যখন নতুন নতুন চালু হয়েছে, তখন এর অত্যন্ত জনপ্রিয়তা থাকলেও, দিন দিন ভিডিও কনফারেন্সিং বা ভিডিও কলিং এর চাহিদা কমেই চলছে। আর বর্তমানে কর্পোরেট পারসনরা বাইরের দেশের ক্লায়েন্ট বা বিজনেসের খাতিরে কারো সাথে ভার্চুয়ালি কথা বলা ছাড়া অন্যান্য সাধারন ল্যাপটপ ইউজাররা কারো সাথে ভিডিও কনফারেন্স করেন না বললেই চলে।

আর এই কারণেই ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারাররা চিন্তা করে যে, সাধারন ল্যাপটপ ইউজারদেরকে ভালো এইচডি বা আলট্রা এইচডি কোয়ালিটির ওয়েবক্যাম দেওয়াটা শুধুমাত্র টাকা এবং রিসোর্সের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ, যে ভালো ওয়েবক্যামের পেছনে তারা এক্সট্রা টাকা খরচ করবে, সেই ওয়েবক্যামটি ইউজার হয়তো কখনো ওপেন করেই দেখবেন না।

তাই লো কোয়ালিটি ৪৮০পি ওয়েবক্যাম কিংবা আরও লো কোয়ালিটি ভিজিএ ওয়েবক্যাম ব্যাবহার করলেও তাতে সাধারন ইউজারদের কিছুই যায়-আসে না। এর ফলে ম্যানুফ্যাকচারাররা ক্যামেরার ক্ষেত্রে কম বাজেট রেখে ল্যাপটপের অন্যান্য কম্পোনেন্টের ক্ষেত্রে বেশি বাজেট রাখতে পারবে। এর ফলে ইউজারদের ভালো ছাড়া খারাপ হওয়ার কথা নয়। এই হলো ল্যাপটপে লো কোয়ালিটি ওয়েব ক্যাম ব্যাবহার করার দ্বিতীয় কারন।

এইসব ব্যাপার বিবেচনা করে ইভেন লাক্সারিয়াস ব্র্যান্ড অ্যাপলও তাদের নতুন মডেলের ম্যাকবুকগুলোতে লো কোয়ালিটির ৭২০পি ওয়েবক্যাম ব্যবহার করেছে। কারন, তারা ধরেই নিয়েছে যে সাধারন কনজিউমারদের জাস্ট ওয়েবক্যাম ব্যবহার করার কোন দরকারই পড়বে না। এর ফলে তারা এই বাজেটটা ম্যাকবুকের অন্যান্য কম্পোনেন্টে ব্যবহার করতে পারবে। তবে হ্যা, অ্যাপলের সর্বশেষ আইম্যাকে কিন্তু বেশ ভালো কোয়ালিটির একটি ওয়েবক্যাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এটা প্রশংসা করার মতো কোন ব্যাপার নয়, কারন যে আইম্যাকের কথা এখানে বলা হচ্ছে সেটির প্রাইস ৫০০০ ইউএস ডলারেরও বেশি।

যারা বর্তমানে ল্যাপটপের খারাপ ওয়েবক্যাম নিয়ে কমপ্লেইন করেন, তারা মুলত এই কমপ্লেইন করেন জাস্ট তাদের OCD এর কারণে অথবা জাস্ট আউট অফ কিউরিসিটি। এই পর্যায়ে এসে ব্যাপারটা অনেকটা চিকেন অ্যান্ড এগ সিচুয়েশনের মতোও হয়ে যায়। অনেক ইউজাররা বলেন যে, ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম খারাপ হওয়ার কারণেই তারা আসল ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম কখনো ব্যবহার করেন না। আবার তারা কখনো ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম কখনো ওপেন করেন না বলেই ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারাররা ল্যাপটপগুলোতে হাই কোয়ালিটি ওয়েবক্যাম ইমপ্লিমেন্ট করে না।

তবে এতদিন এটা কোন প্রবলেম ছিলো না তাহলে হটাত করে মানুষ ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম নিয়ে চিন্তাও বা কেন করছে? এর কারন হচ্ছে বর্তমানে কোভিড ১৯ এর কারনে অধিকাংশ মানুষই Work From Home অ্যাপ্রোচে অভ্যস্থ হচ্ছেন। এর ফলে বর্তমানে জুম মিটিং বা ইন-জেনারেল অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং টেকনোলজির ব্যবহার আগের তুলনায় বহুগুন বেড়েছে। এর ফলে বর্তমানে যেসব ইউজাররা লাইফে কোনদিনই তাদের ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম ব্যাবহার করতেন না, তারা সবাই বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম ব্যবহার করছেন এবং অনেকেই এই প্রথম জানতে পারছেন যে তাদের ল্যাপটপে থাকা ওয়েবক্যাম আসলে কতটা লো কোয়ালিটি ভিডিও আউটপুট করে।

যাইহোক, আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে, আমি যদ প্রথম থেকেই এমন একজন কর্পোরেট পারসন হয়ে থাকি, যার প্রায় প্রত্যেকদিনই ক্লায়েন্টদের সাথে ভিডিও কনফারেন্স করার দরকার পড়ে? সেক্ষেত্রেও আপনার কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারন, ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারাররা ধরেই নেয় যে, ভিডিও কনফারেন্সিং যদি আপনার কাছে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আপনি অলরেডি জানেন যে ল্যাপটপের ওয়েবক্যম কোয়ালিটি আপনার জন্য যথেষ্ট নয় এবং অলটারনেটিভস ব্যবহার করার মতো যথেষ্ট এক্সপেরিয়েন্স আপনার অলরেডি আছে।

আপনার জন্য যদি ভিডিও কনফারেন্সিং খুব বেশ ইম্পরট্যান্ট হয়, তাহলে আপনি সহজেই একটি এক্সটারনাল হাই কোয়ালিটি ভিডিও ক্যামেরা বা দরকার হলে ডিএসএলআর ক্যামেরাও কানেক্ট করে সেটিকে আপনার ভিডিও ইনপুট ডিভাইস বা ওয়েবক্যাপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এমনটা আপনার তখনই দরকার হতে পারে যখন আপনি ভিডিও কনফারেন্সিংকে প্রোফেশনাল কাজের জন্য ব্যবহার করেন।

তবে আপনি যদি একজন সাধারন ইউজার হন, যে শুধু একটু বেটার ওয়েবক্যাম চায়, সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে আপনার স্মার্টফোনের ফ্রন্ট বা ব্যাক ক্যামেরাকেও আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের ওয়েবক্যাম হিসেবে ব্যাবহার করতে পারবেন। আপনি গুগল প্লে সটরেই এটা করার জন্য যথেষ্ট ভালো অ্যাপস পাবেন। ল্যাপটপ ম্যানুফ্যাকচারাররা মুলত এই সবদিকগুলো চিন্তা করেই এখনো ল্যাপটপের ওয়েব ক্যামের কোয়ালিটির ক্ষেত্রে সেই ২০১০ সালে পড়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে হ্যা, সংগত কারনেই, যেহেতু বর্তমানে আমরা আবার অনেক বেশি ভিডিও কনফারেন্সিং টেকনোলজি ব্যবহার করা শুরু করেছি, আগামীতে ল্যাপটপে হাই কোয়ালিটি ওয়েবক্যামের দেখা মিলতেই পারে!

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories