শুটিং স্টার কি? কেনই বা আমরা এগুলো দেখতে পাই?

রাতে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে হটাত একটি তারাকে আকাশ থেকে খসে পড়তে দেখেছেন কখনো? আমরা প্রায় সবাই আমাদের লাইফটাইমে একবার না একবার এটা দেখেছি। এছাড়া শুটিং-স্টার দেখার সময় মনে মনে একটি উইশ করলে সেটা সত্যি হয় এমনটাও ভাবেন এবং বিশ্বাস করেন অনেকে।

যাইহোক, শুটিং-স্টার বা খসে পড়া তারা কি সত্যিকারেই একটি নক্ষত্র, যা মহাকাশ থেকে খসে পড়ছে? নাকি অন্যকিছু? কি এই শুটিং-স্টার এবং কেনই বা আমরা এভাবে তারা খসে পড়তে দেখি? আজকে এই ব্যাপারটা নিয়েই আলোচনা করা যাক। শুটিং-স্টারের কাছে যখন আমরা উইশ করি, অন্তত এইটুকু জেনে রাখা ভালো যে, আমরা আসলে যার কাছে উইশ করছি, সেই জিনিটি কি।

আগেই বলি, হতে পারে আপনি এসব ব্যাপার অনেক আগে থেকেই জানেন। যদি জেনে থাকেন, তাহলে এই পোস্টটি ইগনোর করুন। অনেকেই আছেন যারা এখনো শুটিং স্টারের পেছনের সায়েন্স জানেন না। যদি আপনিও এই ব্যাপারে এখনো কিছু না জেনে থাকেন, তাহলে ইচ্ছা হলে পড়তেই পারেন। আর হ্যা, এই পোস্টে ব্যাবহার করা সব ইমেজই আর্টিফিশিয়াল, যা শুধুমাত্র ডেকোরেশনের জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে।


অ্যাস্টেরয়েড কি?

শুটিং স্টারের ব্যাপারে জানতে হলে আমাদেরকে আরো কিছু বিষয় আগে জেনে নিতে হবে। খুব বেশি কিছু নয়, জানতে হবে আমাদের সৌরজগতে বিচরন করা কিছু মহাজাগতিক অবজেক্টস নিয়ে, যাদেরকে বলা হয় অ্যাস্টেরয়েডস এবং অ্যাস্টেরয়েড বেল্টস।

এটাই আমাদের সৌরজগৎ, বা সোলার সিস্টেম, রাইট? এই ম্যাপটির মতোই প্রায় সব সোলার সিস্টেমের ম্যাপই শুধুমাত্র সূর্য এবং সৌরজগতে থাকা সব প্ল্যানেটগুলোকে দেখায়। কিন্তু সৌরজগতে কিন্তু শুধুমাত্র সূর্য এবং এর প্ল্যানেটগুলোই নেই। আরো অনেক কিছুই আছে। একেকটি গ্রহের মধ্যে এই বিশাল দূরত্ব কিন্তু একেবারে ফাঁকা নয়। স্পেসে এসব গ্রহ উপগ্রহ ছাড়াও আরো অসংখ্য অবজেক্টস আছে, যেগুলোকে সাধারনত সোলার সিস্টেমের ম্যাপে ফোকাস করা হয়না। ফোকাস করার কোন কারনও নেই যদিও। নিচের ম্যাপে সৌরজগতের চারদিকে গ্রহ ছাড়াও একটি বেল্টের মতো যা দেখতে পাচ্ছেন, সেটি হচ্ছে অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট।

এই অ্যাস্টেরয়েডের বেল্টটি আছে মূলত মঙ্গলগ্রহ এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি পজিশনে। এই অ্যাস্টেরয়েডগুলো মূলত তেমন ভয়ঙ্কর কিছু নয়। এগুলো সাধারনত কিছু বিশাল এবং মাঝারি সাইজের অবজেক্ট, যা তৈরি হয় পাথর, আয়রন, সিলিকন এই ধরনের পদার্থ দিয়ে। এই ধরনের অসংখ্য অ্যাস্টেরয়েড নিয়েই তৈরি হয় অ্যাস্টেরয়েডের বেল্ট।

শুটিং-স্টার কি?

আর শুটিং-স্টার কে আমরা শুটিং স্টার নামেই জেনে থাকি। তবে বৈজ্ঞানিক ভাষায় একে বলা হয়, মিটিরয়েড বা ছোট করে, মিটিয়র। এই শুটিং স্টার বা মিটিয়রয়েড হচ্ছে এই মহাজাগতিক অ্যাস্টেরয়েডসগুলোর একটি ছোট ফ্র্যাগমেন্ট, যা মূলত আয়রন বা সিলিকেট অথবা এই দুটির সংমিশ্রনে তৈরি। বোঝার খাতিরে, আপনি মহাকাশে বিচরন করা একটি অ্যাস্টেরয়েডের কথা চিন্তা করুন। কোন একটি কারণে এই অ্যাস্টেরয়েডে একটি এক্সপ্লোশন ঘটলো বা কোন একটি ইমপ্যাক্টের কারণে এই অ্যাস্টেরয়েডটি ধংস হয়ে গেল। এর ফলে অ্যাস্টেরয়েডটি ছোট ছোট অনেক অংশে ভাগ হয়ে গেল। এই ছোট ছোট অংশগুলোই হচ্ছে মিটিয়র বা আমরা যাকে বলি, শুটিং স্টার।

এই অ্যাস্টেরয়েডগুলো যখন ধংশ হয়ে যায়, তখন অ্যাস্টেরয়েডের এই ছোট ছোট পার্টিকেলগুলো মুক্তভাবে মহাকাশে বিচরন করতে থাকে। কিন্তু সমস্যার দেখা দেয় যখন এই মিটিয়রগুলো পৃথিবীর অর্বিটের কাছাকাছি চলে আসে। আমরা ইতোমধ্যেই জানি যে, পৃথিবীতে থাকা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে পৃথিবীর বাইরে পৃথিবীর চারদিকে একটি অদৃশ্য অর্বিট তৈরি হয়, যে অর্বিটে থাকার ফলেই পৃথিবীর উপগ্রহ এবং স্পেস স্টেশন পৃথিবীর চারপাশে প্রতি নিয়ত ঘুরতে পারে। এই মিটিয়রগুলো যখন পৃথিবীর অর্বিটের কাছাকাছি চলে আসে, তখন স্বভাবতই পৃথিবী এগুলোকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে।

আর এই আকর্ষণবলের কারণেই এই মিটিয়র গুলো পৃথিবীর মাটির দিকে অবিশ্বাস্যরকম গতিতে ধেয়ে আসে। আর পৃথিবীর দিকে এত গতিতে আসার সময় অবশ্যই সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে ঘষা খায়। আর এত গতিতে আসা কোন বস্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঘষা খেলে অবশ্যই ঘর্ষণের কারণে বিপুল পরিমান তাপ উৎপন্ন হবে। আর এই তাপের কারণে এই মিটিয়রগুলোতে আগুন ধরে যায় এবং আগুনের কারণে এগুলো উজ্জল সাদা রং এর হয়ে ওঠে। আর জ্বলন্ত অবস্থায় যখন এই মিটিয়রগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে আমাদের দৃষ্টিগোচর আকাশে চলে আসে, তখনই মূলত আমরা এগুলোকে আসতে দেখি এবং এগুলো দেখতে তখন অনেকটা খসে পড়া তারার মতোই দেখায় বলে আমরা এগুলোর নাম দিয়েছি শুটিং স্টারস।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories