উইন্ডোজ ১০ এর জন্য ৫ টি বেস্ট ফ্রি অ্যাপস (২০২০)

অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস নিয়ে কম-বেশি লেখা হলেও আমাদের এখানে উইন্ডোজ অ্যাপস নিয়ে খুব বেশি লেখা হয়না। উইন্ডোজ অ্যাপস নিয়ে শেষ পোস্টটি ছিলো গত বছরের শুরুর দিকে। তাই ভাবলাম, আজকে আরও নতুন কয়েকটি উইন্ডোজ অ্যাপস শেয়ার করা যাক, যেগুলো আমি ব্যাক্তিগতভাবে প্রতিদিনই ব্যাবহার করি। এই অ্যাপসের লিস্টে আমি অবশ্যই জনপ্রিয় অ্যাপস, যেমন- গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ারফক্স বা ভিএলসি প্লেয়ার ইত্যাদি অ্যাপসগুলোকে ইগনোর করবো। আমি মূলত এখানে এমন কয়েকটি অ্যাপসের ব্যাপারে কথা বলবো, যেগুলোর ব্যাপারে খুব কম উইন্ডোজ ইউজাররা জানেন। যাইহোক, কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আপনি যা জানার জন্য পোস্টটি ক্লিক করেছেন, সেই কথায় আসি।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

Taskbar X

এবছরের প্রথমদিকে যখন মাইক্রোসফট ট্যাবলেট ডিভাইসের জন্য তাদের উইন্ডোজ ১০ এর আরেকটি নতুন ভার্সন, উইন্ডোজ ১০ এক্স অ্যানাউন্স করে, তখন ইউজাররা উইন্ডোজ ১০ এক্স এর নতুন টাস্কবার ডিজাইনটি খুব পছন্দ করেছিলো। টাস্কবারের সেমি ট্রান্সপারেন্ট ফ্লুয়েন্ট ডিজাইন, সেন্টার অ্যালাইন করা আইকন গ্রুপ এই সবকিছু মিলিয়ে উইন্ডোজ ১০ এর টাস্কবারের ডিজাইনটি বর্তমানের রেগুলার উইন্ডোজ ১০ এর টাস্কবারের তুলনায় অনেক সুন্দর এবং মডার্ন।

Chris Andriessen নামের একজন ডেভেলপার উইন্ডোজ ১০ এক্স এর এই মডার্ন টাস্কবারটি রেগুলার উইন্ডোজ ১০ এ আনার ব্যাবস্থা করেছেন এই Taskbar X অ্যাপটি ব্যাবহার করে। Taskbar X অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি আপনার ডেক্সটপের বোরিং টাস্কবারটিকে একটু নতুন লুক দিতে পারবেন। উইন্ডোজ ১০ এক্স এর মতো আইকনগুলোকে টাস্কবারের সেন্টারে প্লেস করার পাশাপাশি এই অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি টাস্কবারের ট্রান্সপারেন্সিও নিজের ইচ্ছামতো সেট করতে পারবেন। উইন্ডোজ ১০ এর কাস্টোমাইজেশন অ্যাপসগুলোর মধ্যে এই অ্যাপটি ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট বলা যায়।

Microsoft PowerToys

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এটি মাইক্রোসফট এর নিজের তৈরি উইন্ডোজ অ্যাপ। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে এই অ্যাপটির ফিচার উইন্ডোজ ১০ এ ন্যাটিভলি দেওয়া হতে পারে। এই অ্যাপটি মূলত আপনাকে উইন্ডোজ ১০ এ ম্যাকওএসের মতো সিস্টেম লেভেল স্পটলাইট সার্চ ফাংশনালিটি এনে দেয়। এই একই কাজের জন্য Ueli নামের আরও একটি থার্ড পার্টি ইলেকট্রন অ্যাপ আছে, যেটি নিয়ে পূর্বে আমাদের এখানে লেখা হয়েছিলো। যাইহোক, মাইক্রোসফট এর নিজের তৈরি অ্যাপ হওয়ায় এটি থার্ড পার্টি যেকোনো অ্যাপসের থেকে অনেক বেশি রিলায়েবল। এই অ্যাপটি ব্যাবহার করলে আপনি ডেস্কটপ থেকেই Alt+Space ক্লিক করে আপনার ইন্সটল করা যেকোনো অ্যাপ বা যেকোনো ফাইল ওপেন এক ক্লিকে ওপেন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অ্যাপ আইকন সবগুলো ডেস্কটপে রেখে দেওয়ার দরকার হবেনা। এর ফলে আপনার ডেস্কটপ স্ক্রিনটি অনেক ক্লিন রাখতে পারবেন।

শুধুমাত্র স্পটলাইট সার্চই নয়, Microsoft PowerToys অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি আরও অনেক ছোট ছোট ফিচার এবং ফাংশনালিটি পাবেন। যেমন- স্পটলাইট সার্চ থেকে ক্যালকুলেটর ব্যাবহার করা, ডেস্কটপের যেকোনো পার্ট থেকে এক ক্লিকে ওই জায়গার হেক্স/আরজিবি কালার কোড কপি করা, ইত্যাদি। এই ধরনের ছোট ছোট আরও অনেক ফিচার পাবেন এই অ্যাপটির সাথে, যা একজন ইউজার হিসেবে আপনার উইন্ডোজ এক্সপেরিয়েন্সকে আরও সহজ এবং ঝামেলাহীন করবে। অ্যাপটির ড্যাশবোর্ড ব্যাবহার করে এই সব ফিচারস আপনি কাস্টোমাইজ করতে পারবেন।

ShutUp10

আপনি যদি অনেক প্রাইভেসি কনসার্নড মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য এই অ্যাপটি পারফেক্ট। এই অ্যাপটি প্রাইভেসি ফ্রিকদের জন্য একটি ছোট ফ্রি টুল, তবে অত্যন্ত পাওয়ারফুল। এই অ্যাপটি আপনাকে জাস্ট একটি স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড ড্যাশবোর্ড দেবে, যেখানে আপনি উইন্ডোজ ১০ এর এমন সব সেটিংস অফ/অন করতে পারবেন যেগুলো আপনার প্রাইভেসির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। এই অ্যাপটির ড্যাশবোর্ডে কয়েকটি কলামে আপনি প্রাইভেসি রিলেটেড বেশ কিছু সেটিংস পাবেন, যেগুলো যেকোনো ধরনের ইউজার সহজেই বুঝতে পারবে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

এখান থেকে যেসব সেটিংস আপনি অফ করতে চান সেগুলো টগল সুইচ ব্যাবহার করে এক ক্লিকেই ডিজেবল করে দিতে পারবেন এবং পরে চাইলে আবার এক ক্লিকেই এনাবল করে নিতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ১.৩ এমবি সাইজের এই পোর্টেবল অ্যাপটি ব্যাবহার করে মাইক্রোসফটে আপনার অ্যাডভার্টাইজিং আইডি, বায়োমেট্রিক ফিচার, ইউজার অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকিং, ইউজার বিহেভিয়র ট্র্যাকিং ইত্যাদি, এই ধরনের প্রায় ১০০+ ফিচারস বন্ধ করতে পারবেন।

Files UWP

মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমের অধিকাংশ পার্টের ডিজাইন মডার্নাইজ করতে পারলেও এখনো পর্যন্ত উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারের ইন্টারফেস আগের উইন্ডোজ ৭ এর মতোই রেখেছে। উইন্ডোজ এর ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারের ডিজাইন খুব একটা খারাপ না হলেও তা যথেষ্ট আউটডেটেড। তবে, আপনি যদি মডার্ন ফ্লুয়েন্ট ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ফাইল এক্সপ্লোরার ব্যাবহার কর‍তে চান, তাহলে Files UWP (Preview) নামের এই থার্ড পার্টি ফাইল ম্যানেজার অ্যাপটি ব্যাবহার করতে পারেন। এই অ্যাপটি নিয়ে তেমন কিছু বলার দরকারও হবে না। ইউজার ইন্টারফেস দেখলেই বুঝতে পারবেন যে কেন আপনি এই অ্যাপটি ইউজ করতে চাইতে পারেন।

মডার্ন ইউজার ইন্টারফেসের পাশাপাশি ফিচারস এরও কমতি নেই এই অ্যাপটিতে। আপনি ট্রান্সক্লুসেন্ট সাইডবার এবং ডার্ক মোড ছাড়াও ডিফল্ট উইন্ডোজ ফাইল ম্যানেজারের প্রায় সব ফিচারসই পাবেন এই অ্যাপটিতে। ফাইল কাট,কপি,পেস্ট থেকে শুরু করে জিপ ফাইল এক্সট্রাক্ট, ফাইল রিনেম, ডিলিট, প্রোপার্টিস দেখা ইত্যাদি সব ধরনের ফিচারই আপনি পাবেন এই থার্ড পার্টি ফাইল অ্যাপে। ভবিষ্যতে মাইক্রোসফট তাদের ফাইল ম্যানেজার রিডিজাইন করবে এবং তাদের নতুন ডিজাইনটিও অনেকটা এই ফাইল অ্যাপের মতোই হতে চলেছে। তাই নতুন ডিজাইন ল্যাঙ্গুয়েজে অভ্যস্ত হওয়ার জন্যও আপনি এই অ্যাপটি ব্যাবহার করতে পারেন।

Traffic Monitor

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন যে এটা কি ধরনের অ্যাপ বা টুল। হ্যাঁ, টাস্কবারে রিয়ালটাইম ইন্টারনেট স্পিড দেখার জন্য অনেক ধরনের থার্ড পার্টি অ্যাপস আছে। যেমন- রিয়ালটাইম ট্রাফিক দেখার জন্য DU Meter বেশ জনপ্রিয়। তবে ব্যাক্তিগতভাবে আমার কাছে Traffic Monitor নামের এই অ্যাপটি বেশি পছন্দের। অ্যাপ না বলে একটি ছোট্ট টুল বলা ভালো। কারন, এটি কোন ট্রেডিশনাল অ্যাপ নয় যা আপনাকে ইন্সটল করতে হবে। বরং এটি কয়েক এমবি সাইজের ছোট একটি ফ্রি পোর্টেবল টুল, যা অন্যান্য অনেক ইন্টারনেট স্পিড মনিটরের থেকে আরও ভালো কাজ করে।

আর ১০০% ফ্রি হওয়ায় DU Meter এর মতো বারবার পারচেজ করতেও বলা হবে না এই অ্যাপটি ব্যাবহার করার সময়। শুধুমাত্র ইন্টারনেট স্পিড নয়, আপনি চাইলে এই অ্যাপটির ড্যাশবোর্ড থেকে আপনার ইচ্ছামত সেটিংস করে নিয়ে টাস্কবারে আরও অনেক ইনফরমেশনই ডিসপ্লে করাতে পারবেন। এই অ্যাপটির সবথেকে ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে এর কাস্টোমাইজেশন ক্যাপেবলিটি। আপনি ফন্ট সাইজ থেকে শুরু করে, কালার, ফন্ট ওয়েট, কাস্টম ফন্ট ফ্যামিলি সবকিছুই নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবেন। যারা DU Meter ব্যাবহার করেন, আমি তাদের সবাইকে সাজেস্ট করবো এই অ্যাপটিতে সুইচ করার জন্য। ট্রাই করে দেখতে পারেন, আশাহত হবেন না!

Image: Shutterstock.Com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories