লম্বা সময়ের জন্য ল্যাপটপ অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখলে কি হবে?

কেউ কেন এমনটা করতে চাইবে জানি না, তবে ইউনিক কারণ থাকতেও পারে। যেমন সামনে পরীক্ষা কিন্তু আপনি ল্যাপটপে গেমিং করছেন বা আলাদা কাজ করছেন ফলে পড়ায় মনোযোগ আসছে না (আর এখন তো ছাত্ররা ল্যাপটপেই পড়াশুনা করে, অনলাইন ক্লাস করে, আমি আগের যুগের কথা বললাম!) তখন ভাবলেন ল্যাপটপ কয়েক মাস বা সপ্তাহের জন্য সিন্ধুকে তুলে রাখবেন। বা কারণ যেটাই হোক না কেন, ধরুন আপনি লম্বা সময়ের জন্য আপনার ল্যাপটপ ব্যাবহার করতে পারলেন না, সেক্ষেত্রে কি কি সমস্যা হতে পারে? বা সঠিক উপায়ে কিভাবে ল্যাপটপ নিরাপদে অব্যবহৃত অবস্থায় রাখা যেতে পারে? — চলুন, এই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা যাক…


অব্যবহৃত অবস্থায় ল্যাপটপ

দুনিয়ার সকল মানুষ তো আর আমার ম্যাটেরিয়ালে তৈরি নয়! প্রায় দুইমাস যাবৎ আমার নিজের ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে পরে রয়েছে, এই আর্টিকেল মোবাইল থেকে লিখছি, আর আর্টিকেলের বিষয়বস্তু “ল্যাপটপ দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় রাখলে কি হবে?” হাউ ফ্যানি ইজ দ্যাট? তো ল্যাপটপ ফেলে রাখার কারণ যেটাই হোক না কেন, আপনি যখন বেশিদিন যাবৎ বিদ্যুৎ প্রদান না করে আপনার ল্যাপটপকে এমনি জাস্ট ঘরের কোণায় ফেলে রাখবেন সেক্ষেত্রে নানান টাইপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর হ্যাঁ, বলে রাখা ভালো, এটা শুধু ল্যাপটপ এর ক্ষেত্রে নয় আপনার ডেস্কটপ কম্পিউটারও বেশিদিন ফেলে রাখলে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

ডাটা লস

প্রথম যে সমস্যাটি হতে পারে তা হলো “ডাটা লস”, মানে আপনার ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ ফেইল করতে পারে। দেখুন, ল্যাপটপ এক পোর্টেবল কম্পিউটিং মেশিন। এতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ একে অপরের সাথে ফিট করানো থাকে ঠিক পাজলের মতো। ল্যাপটপে থাকা হার্ড ড্রাইভ গুলো ডেস্কটপ ড্রাইভের থেকে ছোট সাইজের হয়ে থাকে, আর অনেক দিন যাবৎ ল্যাপটপ অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখলে সহজেই এতে ত্রুটি চলে আসতে পারে। তবে ঠিক কি ত্রুটি আসবে সেটা অনেকটা নির্ভর করে আপনি কি পরিবেশে ল্যাপটপটি সংরক্ষণ করছেন তার উপরে।

পরিবেশের আর্দ্রতা আর তাপমাত্রার উপরে নির্ভর করে ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। হঠাৎ করে তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটলে সময়ের সাথে হার্ড ড্রাইভের ভেতরের যন্ত্রাংশের আয়োতন বেড়ে বা সঙ্কুচনের সৃষ্টি ঘটতে পারে। এতে হার্ড ড্রাইভের বাহুর সমস্যা তৈরি করতে পারে যেখানে হার্ড ড্রাইভের হেড থাকে আর এটা ডাটা রিড/রাইট করার জন্য দায়ী।

যাইহোক, আর্দ্রতা আরো বেশি মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। পানি সহজেই বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারে, হার্ড ড্রাইভের ভেতরে সামান্য পরিমাণে আর্দ্রতা ড্রাইভের বড় ড্যামেজ এবং ডাটা লস ঘটাতে সক্ষম।

আপনি আমার কম্পিউটার মেমোরি নিয়ে লেখা আর্টিকেল এবং হার্ড ড্রাইভ কিভাবে কাজ করে এই দুটি আর্টিকেল পড়ে থাকলে জানাবেন যে, কম্পিউটার আসলে মনে রাখার জন্য নয় বরং ভুলে যাওয়ার জন্য ওস্তাদ! হার্ড ড্রাইভের মধ্যে বিশেষ এক কায়দা করে ইলেক্ট্রিসিটির সাহায্যে চুম্বকত্ব তৈরি করা হয়, আর এভাবে ডাটা স্টোর রাখা হয়। আর আপনি যদি দীর্ঘদিন ল্যাপটপ না ব্যাবহার করে ফেলে রাখেন সেক্ষেত্রে হার্ড ড্রাইভের চুম্বকত্ব ক্ষমতা দিনের পর দিন লোপ পেতে থাকে। এতে ডাটা লসের সম্মুখীন হতে হতে পারে।

তাছাড়া হার্ড ড্রাইভ যেহেতু মেকানিক্যাল ডিভাইস, তাই এতে মেকানিক্যাল ত্রুটিও চলে আসতে পারে। সলিড স্টেট ড্রাইভ বা সংক্ষেপে যেটাকে এসএসডি বলে — দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখলে এর সেলের মধ্যেও ত্রুটি চলে আসতে পারে, ফলে ডাটা লস ঘটতে পারে

ল্যাপটপ ব্যাটারি ড্যামেজ

আসলে ডাটা লস পরের কথা, অনেকদিন যাবৎ ল্যাপটপ অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখলে সবার আগে ল্যাপটপের ব্যাটারি খারাপ হতে শুরু করবে। আপনি ভালো করেই জানেন ল্যাপটপের ব্যাটারির মধ্যে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল থাকে, আর এই কেমিক্যাল গুলো তখনই ঠিকঠাক থাকে যখন কাজ করতে থাকে, এদের মধ্যে ক্রিয়া বিক্রিয়া গুলো চলতে থাকে।

আপনি যদি অনেক দিন ধরে ব্যাটারি সেল ফেলে রাখেন সেক্ষেত্রে ব্যাটারি এমনিতেই ডেড হয়ে যাবে। আপনি ব্যাবহার না করলেও ব্যাটারি নিজের ক্রিয়া বিক্রিয়া গুনে ডিসচার্জ হতে থাকে। আর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ০% ডিসচার্জ করে ফেলা মোটেও সুবিধার কথা নয়।

তো বেস্ট প্র্যাকটিস হচ্ছে, ল্যাপটপ থেকে ব্যাটারিটি খুলে রেখে ল্যাপটপটি সংরক্ষণ করা। তারপরে সপ্তাহ অন্তর অন্তর ল্যাপটপ ব্যাটারি ইন্সটল করে নেওয়া এবং কয়েক মিনিটের জন্য বা অর্ধঘণ্টার জন্য ব্যাটারি রিচার্জ করে নেওয়া। এতে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা অক্ষত থাকতে পারবে।

আলাদা যন্ত্রাংশে ত্রুটি

শুধু হার্ড ডিস্ক বা ব্যাটারির ই ত্রুটি নয়, আপনি কতদিনের জন্য বা কিভাবে ল্যাপটপ অব্যবহৃত রাখবেন সে অনুসারে আলাদা যন্ত্রাংশ গুলোতেও ত্রুটি দেখা দিতে পারে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে ফেলে রাখার জন্য আর্দ্রতার কারণে আপনার ল্যাপটপ স্ক্রীন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। বায়োস ব্যাটারি ডেড হয়ে যেতে পারে। ল্যাপটপের এয়ার কুলিং সিস্টেমে অত্যধিক ময়লা জমে যেতে পারে, ফ্যান সম্পূর্ণ রূপে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

আবার শুধু হার্ডওয়্যার নয়, ল্যাপটপ অনেক দিন ফেলে রাখলে আপনার অপারেটিং সিস্টেমের ক্রিটিক্যাল সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট গুলো মিস করবেন, অ্যান্টিভাইরাস ডাটাবেজ আপডেট মিস করবেন, সকল সফটওয়্যার গুলো ততোদিনে ব্যাকডেটেড হ যাবে। হ্যাঁ, আপনি যেহেতু ল্যাপটপ ব্যাবহার ই করছেন না সেক্ষেত্রে সফটওয়্যার ব্যাকডেটেড হলেও কিছু যায় আসে না, কিন্তু ব্যাবহার করার সময় ব্যাপারটি ভুলে গেলে ভেজাল বাঁধতে পারে।


তো বুঝতেই পারছেন, ল্যাপটপ কে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখলে বিপদ ই বিপদ! কেননা এই যন্ত্রটাকে ফেলে রাখার জন্য নিশ্চয় বানানো হয়নি, রাইট? আমি আপনার মত গিক পার্সনের কাছে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আলাদা, ল্যাপটপ/ডেস্কটপ ই আমাদের প্রাণ, মানে দিনের বেশিরভাগ সময় এর সামনেই তো কাটে। কিন্তু কেউ কোন কারণে যদি ল্যাপটপ ফেলে রাখার ই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাটারি খুলে নিন, নিয়মিত ব্যাটারি রিচার্জ/ডিসচার্জ করতে ভুলবেন না, কোন শুকনো ও স্ট্যাবল তাপমাত্রার স্থানে ল্যাপটপটি সংরক্ষণ করবেন, আর প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো অবশ্যই ব্যাকআপ করে নেবেন।

আর বেশি দেরি করে নিষ্ঠুরতার প্রমাণ না দিয়ে দ্রুতই আপনার ল্যাপটপে ফেরত আসার আহ্বান জানাবো, এতে ল্যাপটপ ড্যামেজ হওয়া থেকেও বাঁচলো আর প্রিয়তমার কাছে কাছেই থাকলেন ?

Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories