ইন্টারনেটের সোর্স কোথায়? ইন্টারনেট ডাটা গুলো কই থেকে আসে?

যদিও এই প্রশ্ন নিজে থেকেই তেমন একটা ভ্যালিড নয় (আর্টিকেলের শেষে নিজেই বুঝে যাবেন, কেন এমনটা বলছি), কিন্তু তারপরেও সোস্যাল মিডিয়াতে বা আমাকে অনেকে ইনবক্স করে এমন প্রশ্ন করে থাকেন। আপনি আপনার প্রশ্ন করার মানেটা বুঝতে পারছি ভাই, এমন প্রশ্ন বছর দশেক আগে আমার মাথায়ও ঘোরপাক খেত। মনে করতাম ইন্টারনেট নির্দিষ্ট কোন সোর্স থেকে আসছে, আর এটা আজব কোন জিনিস!

কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এই কনসেপ্ট টা অনেক বেশি সহজ! বিশ্বাস করুন, আমাকে অন্যান্য আর্টিকেলের মতো এটা বুঝাতে হাজার শব্দও খরচ করতে হবে না। তবে আর্টিকেলের মূল বিষয় বস্তুর পাশাপাশি আরো কিছু বোনাস পয়েন্ট নিয়েও আলোচনা করবো, তো শুরু করা যাক…


ইন্টারনেটের সোর্স কোথায়?

উত্তরটা একেবারেই সহজ, আবার সম্পূর্ণ ব্যাপারটা এতোটাও সহজ নয়। দেখুন, সত্যি বলতে ইন্টারনেটের নির্দিষ্ট তেমন কোন সোর্স ই নেই। ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা, রাইট? — এর আগে এক আর্টিকেলে আলোচনা করেছিলাম, কেন ইন্টারনেট ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব নয় সেই ব্যাপারে। — সেই আর্টিকেলে আমি ইউনিক ভাবে বুঝিয়েছিলাম, সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সিস্টেমটাই আসলে কিভাবে গঠিত!

আপনি গিয়ে আগের আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন, কেননা সেখানেও ইন্টারেস্টিং অনেক তথ্য রয়েছে কিন্তু এই আর্টিকেলের খাতিরে ব্যাপারটা আবার উল্লেখ্য করছি।

ধরুন, আপনার বাসায় ধরুন ৩-৪ টা ডিভাইস রয়েছে যেগুলো লোকাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একে অপরের সাথে কানেক্টেড রয়েছে। এর মানে আপনি চাইলে একটি ডিভাইস থেকে আরেকটি ডিভাইসের মধ্যে যেকোনো ডাটা বা যে কোন ফাইল এর লোকাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আদান-প্রদান করতে পারবেন।

এখন মনে করুন আপনার প্রতিবেশী বন্ধু আপনার এই লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে আপনার কম্পিউটার থেকে সেও কিছু ফাইল ডাউনলোড করতে চায় বা কিছু ডাটা আদান-প্রদান করতে চায়। আবার আপনিও একই ভাবে বন্ধুর কম্পিউটার থেকে কোন ফাইল আদান প্রদান করতে চান। তাহলে কি করতে হবে?

তাহলে এখন ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বা তার ব্যাবহার করে আপনার লোকাল নেটওয়ার্ক এবং আপনার বন্ধুর লোকাল নেটওয়ার্ক একসাথে কানেক্টেড করতে হবে, রাইট? এভাবে আপনার যতগুলো বন্ধু একে অপরের সাথে ফাইল আদান প্রদান করতে চাইবেন, সবার লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে তার বা বেতারে সংযুক্ত করতে হবে, এই তো?

এখন এই একই ব্যাপারটাকে আপনার পুরো মহল্লার উপরে ভাবুন, তারপরে আপনার পুরো থানার উপরে ভাবুন, ধীরেধীরে এটাকে আপনার বিভাগ লেভেল ভাবুন, তারপরে ভাবুন আপনার সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে এমন একটা নেটওয়ার্ক এর সাথে আরেকটা নেটওয়ার্ক যুক্ত। এখানে সবাই সবার লোকাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে বিশাল এক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে গেলো, যেখানে সবার ডিভাইস একসাথে কানেক্টেড রয়েছে। তো কি বুঝলেন? হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে ইন্টারনেট, এটা আপনার দেশের নিজস্ব ইন্টারনেট! এভাবে দুনিয়ার আলাদা আলাদা দেশ গুলো আবার আলাদা আলাদা দেশের সাথে তাদের নেটওয়ার্ক শেয়ার করে। আর যার ফলে তৈরি হয় আসল গ্লোবাল ইন্টারনেট সিস্টেম!

তো এই জিনিসের কোন অথোরিটি নেই বা কেউ কিন্তু কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে না, কিংবা এর কোন নির্দিষ্ট সোর্সও নেই! আপনি ইন্টারনেট ব্যাবহার করছেন, এরমানে আপনিও ইন্টারনেটের একটি সোর্স। এখন আপনার পিসিতে ওয়েব সার্ভার সফটওয়্যার ইনস্টল করলে, আপনি ও দুনিয়াকে কনটেন্ট প্রোভাইড করতে পারবেন। ইন্টারনেটের বাপ বলে কেউ নেই, যে সে মাথা থেকে হাত উঠিয়ে নিলে ইন্টারনেট রাতারাতি গায়েব হয়ে যাবে!

তো বুঝলেন, আপনি নিজেও একজন সোর্স! এই আর্টিকেল যারা পড়ছেন তাদের অনেকই হয়তো টরেন্ট ব্যাবহার করে থাকেন। এটা নিশ্চয় জেনেও থাকবেন যে সরাসরি আপনার পিসি থেকেই অনেক ফাইল টরেন্টের মাধ্যমে অন্য ইউজাররা ডাউনলোড করতে পারে। তো এখানে আপনিও এক সোর্স, কথা ক্লিয়ার?

ইন্টারনেট ডাটার উৎপত্তি কোথায়?

এখন অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমরা যে প্রতিনিয়ত ডাটা প্যাক কিনছি সেগুলো খরচ করছি, তো এই ডাটা গুলো আসে কই থেকে আবার ডাটা গুলো খরচ হয়ে যাই-ই বা কোথায়?

মূল কথা হচ্ছে, আপনি ইন্টারনেটে কোন ডাটা খরচও করেন না, আর ডাটা কোথাও উৎপন্নও হয় না। সাধারণ দৃষ্টিতে ব্যাপারটা যেরকম লাগে সেরকম মোটেও না, তাহলে আপনি বলবেন, ফোন থেকে নির্দিষ্ট কোড ডায়াল করলে যে অবশিষ্ট ডাটা ব্যালেন্স দেখানো হয় সেটা আসলে কি?

আপনার সিম ডাটা অ্যাকাউন্টে যতো ডাটা প্রদর্শিত করানো হয়, সেটা হচ্ছে জাস্ট একটা লিমিট, অর্থাৎ আপনি মোট কতোটুকু ব্যান্ডউইথ খরচ করতে পারবেন। আপনার ফোনে ডাটা ব্যালেন্স ১ জিবি রয়েছে এর মানে কোথাও থেকে কেটে আপনাকে ১ জিবি জমা করিয়ে দেয়নি, জাস্ট আপনি ১ জিবি ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারবেন সেটা বুঝানো হচ্ছে।

ইন্টারনেট এক বিশাল কম্পিউটারের সমষ্টি, আমি উপরেও ব্যাপারটা বুঝিয়েছি, আরো জানতে — ইন্টারনেট কি? কিভাবে কাজ করে? — এই আর্টিকেল টি পড়ুন। ধরুন আপনার বাড়িতে রাউটারের সাথে আপনার ৩টি ফোন, ২টা ল্যাপটপ এবং ১টি পিসি কানেক্টেড রয়েছে, আপনি জানেন কি এই ডিভাইজ গুলো একসাথে কানেক্ট করে আপনি নিজের এক ছোট্ট পার্সোনাল ইন্টারনেট তৈরি করেছেন? যদিও একে সরাসরি ইন্টারনেট বলা হয় না বরং লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বলে। আসলে এই লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক আর ইন্টারনেটের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্যই নেই, বেসিক গুলো সব সেইম!

আপনি নিশ্চয় শেয়ারইট ইউজ করে এক ফোন থেকে আরেক ফোনে ডাটা/গান/পিকচার শেয়ার করেন তাই না? আপনি কি জানেন, এভাবেই ইন্টারনেট কাজ করে? তাহলে এই ডাটা গুলো কই থেকে আসছে? আসলে এগুলো আরেক কম্পিউটারে স্টোরড থাকা ফাইল যেগুলো আপনি আপনার ডিভাইজে চাচ্ছেন। আর এই ফাইল গুলো সার্ভার থেকে আপনার ডিভাইজে পার করার জন্য ইন্টারনেট কাজ করে জাস্ট!

এখন যারা আপনাকে ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে রেখেছে তারা এই ডাটা পার করতে আপনার থেকে কিছু অর্থ নেয়, এই ডাটা তাদের কাছে নেই, তারা জাস্ট লিমিট সেট করে আপনি কতোটুকু ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারবেন। যেটা হতে পারে যেকোনো ফাইল, জাস্ট এক সার্ভার থেকে আপনার ফোনে বা যেকোনো কম্পিউটারে মুভ করলেই সেটার হিসেব হয়ে যাবে।

তো এবার পরিষ্কারভাবে বুঝলেন তো, ইন্টারনেটের সোর্স কোথায়? বা আপনার আপনার ফোনে যে ডাটা প্যাক গুলো কেনেন সেগুলো আসলে কিভাবে কাজ করে? — আশা করছি যেমনটা ওয়াদা করেছিলাম ঠিক তেমন সহজেই ব্যাপার গুলো বুঝাতে পেরেছি। আরো কোন প্রশ্ন থাকলে নিচের কমেন্ট সেকশন সর্বদা খোলা রয়েছে!

Image: Shuttestock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

3 comments

Categories