ইউএসবি কিভাবে কাজ করে? | ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস

আপনি পরিচিত কাওকে সামনে দেখলে অবশ্যই তার সাথে হাত বাড়িয়ে হ্যাণ্ডশেক করেন—কেনোনা আপনার এবং তার হাতের আঁকার এবং গঠন একই প্রকৃতির। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন; গরু, ঘোড়া, হাতি, বা মাছের সাথে কিভাবে হ্যাণ্ডশেক করবেন? আমরা শুধু মানুষেরা একে অপরের সাথে হাত মিলিয়ে থাকি, কারন আমরা একই রকম ভাবি, আমরা একই ভাষায় কথা বলি এবং আমাদের মনের অনুভূতি একই রকমের। সৌভাগ্য বসত কম্পিউটারের সাথে বিভিন্ন গ্যাজেট যেমন- প্রিন্টার, পেনড্রাইভ, মাউস, কী-বোর্ড ইত্যাদি একই পদ্ধতিতে হ্যাণ্ডশেক করে (কানেক্টেড হয়)। ব্যাট ব্যাপারটা কিন্তু মোটে আগে এইরুপ ছিল না—আজ থেকে বিশ বছরের আগের কম্পিউটার গুলো একটির থেকে আরেকটি সম্পূর্ণই আলাদা ছিল। এতে কোন গ্যাজেট কানেক্ট করানো মানে ছিল, গরুর সাথে হ্যাণ্ডশেক করা। কিন্তু আজকের দিনে ডিভাইজ গুলোকে একে অপরের সাথে কানেক্টেড করার একটি সার্বজনীন পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়—একে ইউএসবি বা পূর্ণভাবে ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস বলা হয়। আজকের দিনের যেকোনো কম্পিউটার, সাথে আপনারটিতেও এটি রয়েছে, শুধু তাই নয়, আপনার সেলফোনেও এটিকে ব্যবহার করা হয়। একাধিক ডিভাইজের মধ্যে ইন্টার-কানেক্ট করার আরো পদ্ধতি রয়েছে, যেমন- প্যারালেল পোর্ট, সিরিয়াল পোর্ট, ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটারে স্পেশাল ড্রাইভারের প্রয়োজন পড়ে। ইউএসবিকে ব্যবহার করা তুলনামূলক ভাবে সহজ এবং যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম একে সমর্থন করে। তো প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কিভাবে কাজ করে? চলুন জেনে নেওয়া যাক…


ইউএসবি এর সুবিধা

কম্পিউটারের সাথে বিভিন্ন গ্যাজেট কানেক্ট করা নিয়ে যে মাথা ব্যাথা ছিল, ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস সেটিকে সম্পূর্ণরূপে দূর করতে সক্ষম হয়েছে। আগের ডিভাইজ গুলো পরস্পরের সাথে কানেক্ট করাই ছিল আসল সমস্যা। প্রিন্টার গুলোকে প্যারালেল প্রিন্টার পোর্টের সাথে কানেক্ট করা হতো, যে পোর্ট সকল কম্পিউটারেই থাকতো—কিন্তু ভেবে দেখুন মিডিয়া স্টোরেজ ডিভাইজ গুলোর কথা যাতে কানেক্ট হওয়ার পাশাপাশি ভালো স্পীড থাকাও দরকারি। প্যারালেল পোর্টে মিডিয়া ডিভাইজ কানেক্ট তো হবে কিন্তু খুব ভালো স্পীড পাওয়া যাবে না। আবার মোডেমকে সিরিয়াল পোর্টে কানেক্ট করা যাবে, কিন্তু হাইস্পীড ডাটা ট্র্যান্সফারের কথা ভুলে যান। এই সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাদের এমন কোন পদ্ধতি প্রয়োজন যা সকল ডিভাইজে একই রকমের হবে, আর এরই জন্য ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস কে নিয়ে আসা।

এটি সর্বজনীন

বিশ বছরের আগের কম্পিউটার গুলোর সাথে আজীব আজীব সব পোর্ট লাগানো থাকতো; সিরিয়াল পোর্ট, প্যারালেল পোর্ট, ইনফ্রারেড পোর্ট (ডিভাইজ গুলোকে ওয়্যারলেসলি কানেক্ট করার জন্য)—এর মধ্যে বেশিরভাগ পোর্ট সম্পর্কেই আমরা জানতাম না যে এর সাথে কি করা উচিৎ। আবার এমনও হতো আপনার কম্পিউটার পোর্ট আর আমার পোর্ট একদমই এক পয়সার দুই দিক। আবার যদি ঐ কম্পিউটার গুলোতে প্রিন্টার বা কোন গ্যাজেট কানেক্ট করতে চাইতেন তবে সেগুলোর জন্য অনেক লম্বা ইন্সটলেশনের প্রয়োজন ছিল। আপনাকে বিভিন্ন ডিভাইজের জন্য বিভিন্ন ড্রাইভার ইন্সটল (সাধারনত একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারকে বলে দেয়, ডিভাইজটি কিভাবে কাজ করবে) করার প্রয়োজন পড়তো, যা অনেকটা সময় কিল করতো। ড্রাইভার ইন্সটল শেষ হলে কম্পিউটারকে রিবুট করার প্রয়োজন পড়তো, ফলে কোন ডিভাইজ কানেক্ট করা মানেই ছিল ১ কেজি বাদাম ছেলার সময়।

ব্যাট আজকের দিনে, কম্পিউটারের সাথে গ্যাজেট কানেক্ট করা নিয়ে আপনাকে বা আমাকে কোন মাথায় ঘামাতে হয়না। আপনি এক কোম্পানির কম্পিউটার কিনুন আর আরেক কোম্পানির প্রিন্টার বা স্ক্যানার কিনুন এতে কোন যায়-আসবে না। আপনি পেনড্রাইভ লাগান, মোডেম লাগান, পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ লাগান জাস্ট নো প্রবলেম। কেনোনা সকল ডিভাইজ এখন একই স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে, যা হলো ইউএসবি।

প্লাগ করুন আর প্লে করুন

কম্পিউটারের সাথে কোন ইউএসবি ডিভাইজ কানেক্ট করা একেবারেই সহজ কাজ—আজকের প্রত্যেকটি কম্পিউটারের সাথে একাধিক ইউএসবি সকেট লাগানো থাকে আপনি চাইলে ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস হাব লাগিয়ে আরো সকেট বাড়াতে পারেন, যেকোনো ডিভাজের পোর্টের সাথে আপনার কম্পিউটার পোর্টটি ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস ক্যাবল দিয়ে কানেক্ট করে দিন, ব্যাস!

যদি আপনার ডিভাইজ এবং অপারেটিং সিস্টেমটি নতুন হয়ে থাকে, তবে ম্যানুয়ালি ড্রাইভার ইন্সটল করারও প্রয়োজন পড়বে না, আপনার কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রাইভার খুঁজে নিয়ে ইন্সটল করবে এবং ডিভাইজটির সাথে কথা বলতে আরম্ভ করবে। যতো গুলো ডিভাইজই কানেক্ট করুন না কেন আপনার কম্পিউটারকে রিবুট করার প্রয়োজন পড়বে না। সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে, কোন ডিভাইজ কানেক্ট করতে মন চাইলে জাস্ট কানেক্ট করুন আর কাজ শেষে ব্যাস ডিসকানেক্ট করুন, সো সিম্পল! আরেকভাবে বলতে গেলে, “প্লাগ করুন আর প্লে করুন”।

এটি অনেক বেশি দ্রুতগামী

কতটা দ্রুতগামী? অন্যান্য প্রযুক্তির মতো ইউএসবিতেও দিনের পর দিন ধরে অনেক পরিবর্তন এসেছে—নিচের সম্পূর্ণ চার্টটি অনুসরন করুন;

Connection Transfer speed Speed compared to serial
Serial 115 kbits/second.
Parallel 115 kbytes/second 8 times faster
USB 1.0 1.5 Mbits/second (low speed) or 12Mbits/second (full speed). 13–104 times faster.
USB 2.0 480 Mbits/second. 4100 times faster.
USB 3.0 5 Gbits/second. 40,000–50,000 times faster.
USB-C 10 Gbits/second. 80,000–100,000 times faster.

এটি পাওয়ারও সরবরাহ করে

আগের পুরাতন সিরিয়াল পোর্ট গুলো শুধু লাগাতার ডাটা ট্র্যান্সফার করার কাজে ব্যবহৃত হতো—কিন্তু ইউএসবি, ডাটা ট্র্যান্সফার করার পাশাপাশি প্রায় ৫ ভোল্ট পাওয়ারও সাপ্লাই করে থাকে, ফলে লো ভোল্টেজে চলা গ্যাজেট যেমন- মোডেম, পেনড্রাইভ, পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ ইত্যাদির জন্য আলাদা পাওয়ার সোর্সের প্রয়োজন পড়ে না। ইউএসবি প্লাগের দুইটি পিনে পাওয়ার এবং বাকি দুইটি পিন দ্বারা ডাটা সরবরাহ করে। তাছাড়া এখন অনেক কম্পিউটারের বিশেষ করে ল্যাপটপের ইউনিভার্সাল সিরিয়াল বাস এ কুইক চার্জিং প্রযুক্তি সমর্থন করে, ফলে আপনার সাথে ল্যাপটপ থাকা মানে, সেলফোন, এম্পিথ্রি প্লেয়ার ইত্যাদির চার্জার ভুলে যান।

আরো বেশি ডিভাইজ কানেক্ট করুন

আজকের কম্পিউটার গুলোর সাথে সর্বনিম্ন ২টি ইউএসবি সকেট লাগানো থাকে, তবে হাবস ব্যবহার করে ১টি সকেট থেকে ইচ্ছা মতো সকেট বাড়ানো সম্ভব। আজকের দিনে আমরা কম্পিউটারের সাথে অনেক ডিভাইজ কানেক্টেড করে রাখি; আমাদের প্রিন্টার, মাউস, কী-বোর্ড, মাইক্রোফোন, ওয়েবকাম ইত্যাদি সবই কিন্তু একই প্রযুক্তিতে চলে। তো কতোগুলো ডিভাইজ একত্রে কানেক্টেড রাখা সম্ভব? তাত্ত্বিকভাবে একটি কম্পিউটারের সাথে ১২৭টি পর্যন্ত আলাদা ডিভাইজ ইউএসবি দ্বারা কানেক্ট করে রাখতে পারবেন।

শেষ কথা

ইউএসবি এর সবচাইতে সুবিধাজনক ব্যাপার হচ্ছে, এটি অত্যন্ত সহজ ব্যবহারযোগ্য। আপনার বুড়ো দাদী মা ও সহজেই কম্পিউটারের সাথে ওয়েবকাম কানেক্ট করে বিদেশে থাকা ছেলেদের সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারবে, এর জন্য তাকে কম্পিউটারের উপর ডিগ্রি নিতে হবে না। আপনার কাছে যে গ্যাজেটই থাকুক না কেন, সহজেই কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করতে পারবেন। তাছাড়া বর্তমানের ইউএসবি টাইপ সি তো সবদিক থেকেই কানেক্ট করা যায়। তাছাড়া এই প্রযুক্তিতে বর্তমানে অনেক উন্নতি এসেছে—ইউএসবি টাইপ সি—আরো ফাস্ট, পাওয়ারফুল, এবং দক্ষ। যদিও এই প্রযুক্তি বর্তমানে একেবারেই নতুন, তবে ভবিষ্যতে এটি নিঃসন্দেহে অনেক বিস্তার লাভ করবে।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories