অ্যান্ড্রয়েড ফোনের যে জিনিস গুলো সবচাইতে বাজে লাগে আমার কাছে!

পোস্ট টাইটেল দেখে আবার মনে করবেন না, আমি অ্যাপল ব্যবহারকারী! সেই আইসক্রিম সান্ডুইচ এর আমল থেকে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করে আছি, আর এখন অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর মোজা উপভোগ করছি। অ্যান্ড্রয়েড নিজে থেকে এক অসাধারণ অপারেটিং সিস্টেম, আর এই নিয়ে আমার কোনই কমপ্লেইন নেই। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কিছু ব্যাপার এখনো পর্যন্ত এতোটা বেশি বিরক্তিকর যে এই নিয়ে ডেডিকেটেড ভাবে আলোচনা না করে থাকতে পারলাম না!


আপডেট কই?

এখন এটা যদিও আগের তুলনায় এতো বিশাল কোন সমস্যা আর নয়, কোম্পানিরা কিছুটা নজর দিয়ে এটাকে এখন অনেকটা ঠিক করেছে তারপরেও অ্যান্ড্রয়েডের জন্য এখনো বড় সমস্যা হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আপডেট আসে না। উইন্ডোজ ফোনে বা আইওএস এ এটা নিয়ে কোন কালেই ঝামেলা ছিল না। যদি উইন্ডোজ ফোন অনেক আগেই ডেড, আর আইওএস শুধু অ্যাপেলের ফোনেই পাওয়া যায় তাই আপডেট কন্ট্রোল করা অনেক বেশি সহজ।

কিন্তু তারপরেও, আপনি ৩০-৪০ হাজার টাকার ফোন কেনার পরেও আপনাকে কোন নিশ্চয়তা দেওয়া হয় না, আপনি ঠিক কতো গুলো আপডেট পেতে পারবেন, নাকি নেক্সট ভার্সনের আপডেট আর পাবেনই না। নেক্সট অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের কথা তো ভুলেই যান, আপনাকে নিয়মিত সিকিউরিটি প্যাচ আপডেট দেবে কিনা সেটারও গ্যারান্টি নেই!

আমি শাওমি মি এ৩ নামের একটি ডিভাইজ ব্যবহার করছি এর স্টক অ্যান্ড্রয়েড থাকার জন্য, আর ডিভাইজটি অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রোগ্রাম দ্বারা পরিচালিত। যারা জানেন না অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান কি জিনিস, আসলে এটা গুগলের স্টক অ্যান্ড্রয়েডের একটি প্রজেক্ট। আপনার ফোনে একটি থাকলে আপনি গুগলের পিউর অ্যান্ড্রয়েড পাবেন সাথে সবার আগে আপডেট পেতে পাবেন। কমপক্ষে ২টি মেজর আপডেট তো আপনি পাবেনই!

কিন্তু দুঃখের ব্যাপার কি জানেন, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রজেক্টে না থেকেও অন্য ফোন গুলো অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর আপডেট পেয়ে গেছে কিন্তু শাওমি মি এ৩ এখনো আপডেট পেল না! কেন? যদি আপডেটই না পাই সবার আগে তাহলে কিসের অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান প্রোগ্রাম তাই না? এখন ভেবে দেখুন, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানের সাথেই এই লাফড়া, তাহলে আপনার নর্মাল ডিভাইজে কবে আপডেট পাবেন?

এখন অনেকেই মনে করেন, আপডেট নিয়ে কি করবো? ওয়েল, আপডেট দিলে শুধু ফিচারই বারে না, সাথে আপনার ফোনের সিকিউরিটিও বারে। আপনি যদি এই যুগে এসে অ্যান্ড্রয়েড জিঞ্জারব্রেড ব্যবহার করেন, কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না, আপনার ফোনের সবকিছু হ্যাক হয়ে যাবে কিনা! ফোন স্মুথ চলার জন্য, সিকিউর রাখার জন্য, নতুন ফিচার গুলো এনাবল করার জন্য ফোনে আপডেট পাওয়া জরুরি!

ব্লটওয়্যার এর উৎপাত

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সাথে এক বিরাট অসুবিধা হচ্ছে অনেক সস্তা বা মিড রেঞ্জ ফোনে ব্লটওয়্যারের কারখানা ইন্সটল করানো থাকে। ব্লটওয়্যার হচ্ছে এমন কিছু সফটওয়্যার বা অ্যাপ আপনার ফোনের সাথে আগে থেকেই ইন্সটল হয়ে আসে সেগুলো ইউজ করার আপনার মোটেও দরকার নেই এবং আপনি সেগুলোকে আনইন্সটল করতেও পারবেন না।

আপনি যদি একটি বাজেট ফোন কেনেন, তো দুর্ভাগ্যবশত আপনাকে অনেক ব্লটওয়্যার দেখতে মিলবে। আরে ভাই, আমার কমদামী ফোনের র‍্যাম এমনিতেই ১ জিবি, এর মধ্যে আবার তোমাদের আজাইরা অ্যাপ ইন্সটল করা রয়েছে যেগুলো আনইন্সটলও করা যায় না, তাহলে কি ফোনের দম এমনিতেই বের হয়ে যাবে না?

কেন? আমার ফোন আমি নিজে ডিসাইড করবো, আমি কোন অ্যাপ রাখবো আর কোন অ্যাপ আন-ইন্সটল করে দেবো, রাইট? কিন্তু এই কোম্পানিরা আমাকে সেটা করতে দেবে না। এই আইজাইরা অ্যাপ গুলো ফোন কোম্পানির সাথে স্পন্সর ডিল করে এবং ফোনে এই অ্যাপ গুলোকে প্রি-ইন্সটল করে রাখার জন্য ফোন কোম্পানি গুলোকে টাকা দেয়। এই জন্যই সস্তা ফোন হয়তো এতোটা বেশি সস্তা হতে পারে।

কিন্তু তারপরেও ব্লটওয়্যার যদি রিমুভ করার ফাংশন রাখত তারা সেটা বেশ উপকারী ফিচার হতো বলে আমার মনে হয়। অনেক মিড বাজেটের ফোনেও ব্লটওয়্যার দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু তারা সেগুলো রিমুভ করারও অপশন প্রদান করে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ইউআই একেক রকম

অ্যান্ড্রয়েড এমনিতেই একেক ভার্সনে একেক রকমের রূপ নিয়ে আসে। কিন্তু তারপরে আবার আছে ফোন কোম্পানিদের কাস্টম ইউআই! এই ইউয়াই, সেই ইউআই, আরো কতো কি। এই জন্য অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করা, বিশেষ করে এক ফোন থেকে সুইচ করে আরেক ফোনে যাওয়া অনেক সমস্যার হয়ে থাকে।

ধরুন, আপনি হুয়াওয়ে বা শাওমি ফোন ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে আপনি অ্যান্ড্রয়েডের উপরে ইমোশন ইউআই বা মি ইউআই দেখতে পাবেন, এরা একেঅপরের থেকে একেবারেই আলাদা। এখন ধরুন আপনি স্যামসাং এর ফোন কেনার কথা চিন্তা করলেন, তো স্যামসাংং ফোনে নিয়ে সেটিংস খুঁজে পাওয়া আপনার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা এক দুনিয়ার ব্যাপার হবে। ওরা ওয়ান ইউআই ব্যবহার করে, যদি সব ফোনই হয়তো অ্যান্ড্রয়েড কিন্তু তারপরেও কারো সাথে কারো মিল নেই!

আইওএস যতোই আপডেট হোক না কেন, সেই আগের মতোই কিছু লুক এখনো আইওএস এ থেকেই গেছে। আপনি যদি একেবারে প্রথম আইফোন ব্যবহার করেন, তো আপনি আইফোন ১১ ও ব্যবহার করতে পারবেন, অন্য দুনিয়ার এলিয়েন বলে মনে হবে না।

কিছু কিছু ফোনের ইউআই তো এতোটাই বাজে যে ফোনে লেটেস্ট স্ন্যাপড্রাগন ৮৬৫ দিয়ে দাম ২০ হাজার করে দিলেও ফোন কিনতে ইচ্ছা করবে না। অপোর কালার ওএস এর বিরাট এক উদাহরণ! তো ভাই, স্টক অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতে তোমাদের সমস্যা কি? একই লুক রাখো না, এতো চেহারার দরকারটা কি?

অ্যান্ড্রয়েড এখন গুগল নির্ভর

এখানে গুগল ভালোই চাল চেলেছে নিজের জন্য! অ্যান্ড্রয়েড ললিপপের পর থেকে অ্যান্ড্রয়েড কোর কন্ট্রোল অনেকটা গুগলের হাতেই চলে গেছে, মানে গুগল সার্ভিসেস ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড এখন অনেকটায় অচল। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড প্রজেক্ট যখন শুরু হয়েছিল তখন সেটার সবকিছুই ওপেন সোর্স ছিল।

ওপেন সোর্স নামে, কোন সফটওয়্যারের সোর্স কোড সকলের জন্য ওপেন থাকবে এবং যেকোনো ডেভেলপার সেটাকে আরো উন্নতি করতে পারবে, এভাবেই বেশিরভাগ লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেম গুলো কাজ করে থাকে। অ্যান্ড্রয়েড সেই প্রথম দিকে এভাবে কাজ করলেও এখন প্রায় সবকিছু গুগল নির্ভর। যেমন আপনার ফোনে গুগল প্লে সার্ভিসেস না থাকলে ফোনে অনেক অ্যাপ রানই করবে না।

আর গুগল সার্ভিসেস গুলো মোটেও ওপেন সোর্স নয়, এগুলোর ব্যাপারে গুগল নিজে সরাসরি মাথা ঘামায়। এখন গুগল প্লে সার্ভিসেস এর মতো সার্ভিস গুলো সস্তা ফোন গুলো র‍্যাম নিজেই খেয়ে সাবাড় করে দেয়, সে এক আলাদা জঘন্য কাহিনী!

গুগল তো নিজেই এক বড় চোর

যখন কথা আসে প্রাইভেসি নিয়ে তো গুগলের চেয়ে বড় আসামী আর কে হতে পারে। গুগল আপনার প্রত্যেকটা অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করে, আপনি গুগল বা ইউটিউবে কি কি সার্চ করে, গুগল ম্যাপে কখন কথায় যাচ্ছেন, কোন রেস্টুরেন্টে চেকইন করছেন, কোন হোটেলে থাকছেন, সবকিছুই কিন্তু গুগল খুব ভালো করেই যানে।

এখন গুগলের নিজস্ব জিনিস হচ্ছে এই অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে বুঝুন, অ্যান্ড্রয়েডের মাধ্যমে গুগল আপনার কি পার্সোনাল ডাটা ট্র্যাক করতে পারে! আপনার কন্টাক্ট লিস্ট থেকে শুরু করে, আপনার পার্সোনাল ছবি ফাইল থেকে শুরু করে আপনি ফোনে কোন অ্যাপ কতোক্ষণ ব্যাবহার করেন গুগল সবকিছুই খুব ভালো করে যানে। আর অ্যান্ড্রয়েডের এই ব্যাপারটি আমার মোটেও পছন্দ নয়!


তো এই ছিল অ্যান্ড্রয়েড সম্পর্কে কিছু জিনিস গুলো আমার মোটেও পছন্দ নয়। আমি জানি আপনিও অ্যান্ড্রয়েড সম্পর্কে এমন অনেক কিছুই পছন্দ করেন না, আমাদের নিচে কমেন্টে সেগুলো লিখে ফেলুন। আর হ্যাঁ, এর মানেই অ্যান্ড্রয়েড একে বারেই গারবেজ অপারেটিং সিস্টেমে রূপান্তরিত হয়না। অ্যান্ড্রয়েড অনেক ভালো অপারেটিং সিস্টেম, এটা এখনো অনেক স্বাধীনতা প্রদান করে, অনেক মডার্ন লুক প্রদান করে, জাস্ট এগুলো ব্যবহার ঠিক হয়ে গেলে মজাই মজা হয়ে যেতো

Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories