টেক টেক আর টেক, চারিদিকে হাজারো টেক গ্যাজেট আর নতুন নতুন টেক প্রতিনিয়ত আমাদের জীবন সহজ করছে। কিন্তু এদের মধ্যে কিছু টেক আজকের দিনে সত্যিই অনেক পুরাতন হয়ে গেছে আর অকাজেরও বটে, তাই ২০২০ সালে এসে সেই টেক গ্যাজেট গুলোর উপরে নিজের মূল্যবান টাকা নষ্ট করার কোন মানেই হয় না!
আজকের আর্টিকেলে আমরা এমনই কিছু টেক এবং টেক গ্যাজেট নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো ২০২০ সালে এসে আপনার কেনা উচিৎ নয়! তো বুঝতেই পারছেন আজকের আর্টিকেল বেশ মজার হতে চলেছে, তো টাইট হয়ে বসে পড়তে শুরু করুন।
720p টিভি
সিআরটি টিভির যুগ থেকে বের হয়ে এসেছি বেশ কয়েক বছর হয়ে আসলো! যারা একটু আগে ফ্ল্যাট টিভি কিনেছেন, তাদের টিভি গুলোই পুরাতন হয়ে এসেছে। কিন্তু টেকনোলজি যে গতিতে এগোচ্ছে সে অনুসারে প্রত্যেক বছর আমরা কয়েক গুনে বেশি উন্নতি লাভ করছি পেছনের বছরের তুলনায়। তো আপনি যদি নতুন ফ্ল্যাট স্ক্রীন টিভি কেনার চিন্তা করেন অবশ্যই সেটা যেন একটি 720p (HD) রেজুলেশন না হয়! কমপক্ষে 1080p (Full HD) অথবা 4K (Ultra HD) রেজুলেশনের টিভি হয়, 720p অনেক পুরাতন স্ট্যান্ডার্ড, আর সেটা আজকের দিনে আপনার মোটে কেনা উচিৎ নয়।
প্রযুক্তির গুনে 1080p (Full HD) অথবা 4K (Ultra HD) রেজুলেশনের টিভি অনেক সস্তা মূল্যেই কিনতে পাওয়া যায়। আপনি কেন ব্রিটিশ আমলের জিনিস কিনবেন? টিভির স্ক্রীন যতো বড় হবে এবং স্ক্রীন রেজুলেশন যতোবেশি থাকবে মিডিয়া কন্টেন্ট উপভোগ করতে ততোই বেশি মোজা লাগবে, আর সেক্ষেত্রে 720p এন্ট্রি লেভেলের টেক! তাই নতুন টিভি কিনতে যাওয়ার সময় আর ভুল করেও 720p এর দিকে নজর দেবেন না!
তবে অনেকেই রয়েছেন, যারা 720p, 1080p, বা 4K রেজুলেশন সম্পর্কে কিছুই জানেন না, তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি রয়েছে; এইচডি, ফুল এইচডি এবং ৪কে নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা — পড়ে ফেলতে পারেন!
ভিআর হেডসেট
মনে পরে ২০১৫-১৬ সালের দিকের কথা, আমি নিজেই ভিআর হেডসেট কেনার জন্য কেমন পাগল হয়ে গেছিলাম। তবে এই টেকনোলজি ফিউচার টেকের জন্যই ঠিক আছে, অনলাইন স্টোর থেকে যেগুলো সস্তায় কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো একেবারেই আবর্জনা। চোখের সামনে বিশাল এক হেডসেট লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানোর ট্রেন্ড শুধু সায়েন্স ফিকশন মুভিতেই দেখতে ভালো লাগে, আর সত্যি বলতে এর ব্যাস্তব অ্যাপ্লিকেশন খুবই কম।
তবে হ্যাঁ, হাই এন্ড ভিআর হেডসেট করেছে, যেগুলো ভিআর বা এআর সাপোর্ট করে, কিন্তু মারাত্মক এক্সপেন্সিভ আর দাম অনুসারে কেনার তেমন যুক্তিও নেই। তো ২০২০ সালে ভুলেও ভিআর হেডসেট কিনবেন না। ওহ, হ্যাঁ, অবশেষে ২০১৭ সালে ভিআর হেডসেট কিনেছিলাম অফারে, আর মাত্র কয়েক মাস পরেই সেটা ড্রেনে নিক্ষেপ করেছি! তো আপনিও মোটেও আজাইরা টাকা নষ্ট করবেন না।
ডিজিটাল ক্যামেরা
মনে আছে ফিল্ম ক্যামেরার কথা? আপনি যদি ৯০ এর পারসন হয়ে থাকেন অবশ্যই ফিল্ম ক্যামেরার কথা মনে রয়েছে, ছোট ডিজিটাল পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা গুলো এসে ফিল্ম ক্যামেরা গুলোকে সম্পূর্ণ রিপ্লেস করে দিয়েছিল, আর স্মার্টফোন ক্যামেরা এখন প্রায় সকল ডিজিটাল ক্যামেরা গুলোকে রিপ্লেস করে দিয়েছে। মনে আছে ২০০৮-১০ এর কথা, তখন টিভিতে নিকন কুল পিক্স, আর স্যামসাং এর মিনি পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ডিজিটাল ক্যামেরা গুলোর বিজ্ঞাপন দেখা যেতো? অনেকেই তৎকালীন সময়ে কিনে বেশ মুডও নিয়েছে। কিন্তু এখন আর সেগুলোর বিজ্ঞাপন কি টিভিতে দেখতে পাওয়া যায়? না!
কেননা ঐ যুগ শেষ, এখন পয়েন্ট অ্যান্ড শুট মিনি ডিজিটাল ক্যামেরা গুলো স্মার্টফোনের তুলনায় মোটেও ভালো ছবি ক্যাপচার করতে পারে না। তাই ২০২০ সালে এসে ঐ ক্যামেরা গুলো কেনা মোটেও উচিৎ হবে না, বড় কথা হচ্ছে যেগুলোকে বাজারে খুব একটা পাবেনও না এই মুহূর্তে। যদি ডেডিকেটেড ক্যামেরা কেনার কথা চিন্তা করেন সেক্ষেত্রে ডিএসএলআর বা মিররলেস ক্যামেরা কিনে ফেলতে পারেন। তবে এখনকার ডিসেন্ট স্মার্টফোন গুলো যতোটা ভালো ছবি ক্যাপচার করে প্রফেশনাল প্রয়োজন ছাড়া প্রফেশনাল ক্যামেরা প্রয়োজন পরবেই না কখনো!
স্মার্টফোন ক্যামেরা লেন্স
ফটোগ্রাফির কথা মনে করতেই মাথায় আসে স্মার্টফোন ক্যামেরা লেন্স এর কথা, খোদ আমরাও এই স্মার্টফোন লেন্স কিট গুলো রিভিউ করেছি আর আর্টিকেলও পাবলিশ করেছিলাম। এক্সটারনাল লেন্স যেগুলো স্মার্টফোনের সাথে লাগিয়ে ফোন ক্যামেরাকে বানিয়ে ফেলুন ডিএসএলআর, ডিএসএলআর ক্যামেরার দিন শেষ; ওয়েট, এটা আমার কথা নয়, ঐ লেন্স কোম্পানি আর যারা লেন্স সেল করে তাদের কথা।
স্মার্টফোন কোম্পানি গুলো বছরের পর বছর ধরে ফোন ক্যামেরা ডেভেলপমেন্ট করছে, নানান লেন্স আর সফটওয়্যার তৈরি করছে বেটার ক্যামেরা তৈরি করার জন্য আর আপনি পেছনে ইয়া বড় বড় লেন্স লাগিয়েই সেটাকে ডিএসএলআর বানিয়ে ফেলবেন? আরে ভাই ডিএসএলআর কোম্পানি তো ফতুর হয়ে যাবে ভাই, একটু তো রহম করুন!
এক্সটারনাল ক্যামেরা লেন্স গুলো তেমন ভালো কোয়ালিটি জেনারেট করতে পারে না, ছবিতে কেমন জানি অপটিক্যাল গ্লিচ এর মতো কিছু দেখা যায়। মাইক্রো ফটোগ্রাফি করা যেতে পারে, কিন্তু এখন ফোনে ডিফল্টভাবেই মাইক্রো লেন্স থাকে, সাথে কম দামের ফোন গুলোতেও ৪৮ মেগাপিক্সেলের সাপোর্ট থাকছে, আপনি নর্মাল ফটো তুলে ক্রপ করলেও মাইক্রো ফটোগ্রাফির স্বাদ নিতে পারবেন, ওভারওল এক্সটারনাল স্মার্টফোন লেন্স কেনার কোনই দরকার নেই!
ব্লুটুথ বিহীন স্পিকার
মনে পরে গেলো ২০১৭ সালের কথা, আমার এক বড় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দেখি তিনি বড়সড় এক সাউন্ড সিস্টেম কিনেছেন যেটা টেস্ট করে আমি বেশ সাটিস্ফাইডও হয়েছিলাম। Bass কোয়ালিটি বেশ ভালো ছিল, আর দামেও সস্তা, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বেচারা ঐ দামে ইজি ব্লুটুথ সাপোর্ট ও পেয়ে যেতেন কিন্তু তার সাউন্ড সিস্টেমে ব্লুটুথ সাপোর্ট ছিল না। আমি বললাম, এখনকার স্পিকারে ব্লুটুথ না থাকলে কি হয়? তখন সে আমার কথা তোয়াক্কা দেয়নি।
কিন্তু পরে সে শাওমি মি এ২ ডিভাইজ কেনেন এবং তাতে হেডফোন জ্যাক ছিল না, আর বড় ভাই আমার পরে গেলেন এক গ্যাঁড়াকলে। এবার আপনাকে বলছি, আপনি হোম সাউন্ড সিস্টেম কিনুন আর পোর্টেবল স্পিকার, যে সাউন্ড সিস্টেমে ব্লুটুথ নেই সেটা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবেন, স্পিকারে এখন ব্লুটুথ সাপোর্ট থাকা অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খেয়ে কাজ নেই আপনি তারের সাথে ফোন লাগিয়ে রাখবেন? কি দরকার এতো প্যারা নেওয়ার? ব্লুটুথ ছাড়া স্পিকার কিনে কি আপনি গুহায় গিয়ে গান শুনবেন? তো এই যুগে এসে ভুলে এই কাজ করবেন না!
তো এই ছিল আজকের ৫টি এমন টেক গ্যাজেট যা ২০২০ সালে আপনার মোটেও কেনা উচিৎ নয়। এরকম আরো অনেক টেক ও টেক গ্যাজেট রয়েছে যেগুলো বর্তমানে ডেড কিন্তু এখনো অনেকেই কিনে টাকা নষ্ট করে, সামনের পর্বে আবারো এমন ৫টি আলাদা গ্যাজেট নিয়ে আলোচনা করবো। এমন গ্যাজেট সম্পর্কে আপনার জানা থাকলে নিচে কমেন্ট করে ফেলুন আর হতে পারে নেক্সট আর্টিকেলে আপনার কমেন্ট করা গ্যাজেট নিয়েই পোস্ট সাজিয়ে ফেলবো!
Image: Shutterstock.com
No Comment! Be the first one.