যে ৫টি কারণে আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়!

ওয়েল, আপনার হয়তো কখনোই কোন ওয়েবসাইট ছিল না বা কোন ডোমেইন নেম কখনোই কিনে রাখেন নি, হতে পারে আপনি একজন সাধারণ ব্যাক্তি আর ওয়েবসাইট থাকা বা না থাকা নিয়ে আপনার মাথা ব্যাথা নেই! এই আর্টিকেলে এমন ৫টি কারণ নিয়ে আলোচনা করবো, যেগুলো হয়তো আপনাকে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা নিয়ে নতুন করে ভাবাতে পারে! তো আপনার বিজনেস থাকুক আর আপনি একেবারেই এভারেজ কোন ব্যাক্তি হোন, আজকের দিনে প্রত্যেকের ওয়েবসাইট থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার! কেন? ওয়েল, এই নিয়েই তো আলোচনা করবো এখন!


ওয়েবসাইট তৈরি এখন মারাত্মক সহজ ও স্বল্পমূল্যের কাজ!

২০০৯ সালের দিকে ফিরে গেলে আমার কাছে ওয়েবসাইট বানানো বেশ কঠিন কাজ ছিল, আমার কোন কোডিং জ্ঞান ছিলনা ভালো ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না, নিজের ওয়েবসাইট হোস্ট করে রাখার মতো যথেষ্ট অর্থ ছিল না এবং পেমেন্ট করার কোন উপায় ছিল না। পেছনের ১০ বছরে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে! অনেকে পূর্বে ওয়েবসাইট সেটআপ করা কঠিন কাজ এবং হোস্টিং বিল অনেক বেশি এই চিন্তা করে ওয়েবসাইট বানাতে পারেনি। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও আর তেমন নেই!

এখন ডোমেইন/হোস্টিং কেনা পানির মতো সস্তা আর সহজ! এখানে ব্যাক্তি ভেদে আমার দুই রকমের রেকোমেন্ডেশন থাকবে। আপনার কাছে যদি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট করার জন্য কোন কার্ড থাকে সেক্ষেত্রে ডোমেইন কেনার জন্য বেস্ট চয়েজ হবে ডায়নাডট (আমি এখানে রেফার লিঙ্ক ব্যবহার করেছি, এই লিঙ্ক থেকে ডোমেইন কিনলে আপনি ৫ ডলার বোনাস পাবেন আর আমিও) — এদের ডোমেইন প্রাইস সর্বদা হাতের নাগালে থাকে এবং ডোমেইন রিনিউ করার সময় ও কম খরচে করতে পারবেন, যেখানে অনেক কোম্পানি প্রথম বছরে অনেক সাশ্রয়ী ডোমেইন দেওয়ার পরে রিনিউ করার সময় ভিটেমাটি বিক্রি করানোর উপক্রম তৈরি করে!

আপনার কাছে যদি ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট করার জন্য কোন কার্ড না থাকে, আপনি যদি বিকাশ থেকে ডোমেইন কিনতে চান, সেক্ষেত্রে আমি রেকোমেন্ড করবো এক্সেলনোডকে — এরা দেশীয় কোম্পানি আর সস্তায় ডোমেইন বিক্রি করে থাকে। ফুল প্যানেল কন্ট্রোল ও সাথে রিনিউ প্রাইস ও সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। আর বড় কথা হচ্ছে বিকাশ পেমেন্ট করে আপনি সহজেই ডোমেইন কিনতে পারবেন! মাত্র ৪৯৯ টাকায় ডট কম ডোমেইন অফার চলছে, তাই সহজেই এক্সেলনোড থেকে কিনে ফেলতে পারেন!

হোস্টিং এর জন্য বেস্ট আমি এক্সেলনোডকেই রাখবো, আপনি যদি বিগেইনার হোন তো আপনার সমস্ত প্রয়োজন এক্সেলনোডই মেটাতে পারবে। তবে সাইট গ্রো করার সাথে আপনাকে ক্লাউডে মুভ করতে রেকোমেন্ড করবো কিন্তু সেটা আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু নয়! এক্সেলনোড হোস্টিং এর ব্যাস্তব সম্মত হোস্টিং প্রাইস, ২৪/৭ সাপোর্ট, ফাস্ট ওয়েবসার্ভার সত্যিই প্রশংসনীয়! তাদের সম্পূর্ণ হোস্টিং রিভিউটি এখানে পড়ুন!

তো মাত্র ১-২ হাজার টাকা খরচ করেই আপনার প্রথম ওয়েবসাইট আপনি রান করিয়ে ফেলতে পারবেন, ব্যাপারটা ইজি না? এখন আসুক ওয়েবসাইট সেটআপ করা নিয়ে, ওয়েল আপনি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে যেমন খুশি তেমন ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন আর মোজার ব্যাপার হচ্ছে আপনাকে ১ লাইন ও কোড জানতে হবে না। আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস টিউটোরিয়াল অনুসরণ করুন এখানে!

আপনার অনলাইন অস্তিত্ব

একটি ওয়েবসাইট আপনার অনলাইন অস্তিত্ব বজায় রাখবে। কোন ব্যাক্তি যদি আপনার নাম লিখে গুগল সার্চ করে, আর আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম যদি আপনার সম্পূর্ণ নামে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে প্রথম রেজাল্টে আপনার সাইটকেই খুঁজে পাবে! এখন আপনার সাইটে আপনি অনলাইন রেজ্যুমে সেটআপ করে রাখতে পারেন, আপনি “About Me” পেজ তৈরি করতে পারেন যেখানে সহজেই আপনার সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে!

অনেকেই বলবেন, অনলাইন সার্চ করলে তো আমার নিজের ফেসবুক আইডি ও আসবে বা লিঙ্কডইন পেজ ও খুঁজে পাওয়া যাবে, তাহলে আবার নিজের ওয়েবসাইট কেন? ওয়েল, ওয়েবসাইট হচ্ছে এমন জিনিস যেটাকে আপনি সম্পূর্ণ নিজের বলতে পারবেন! আপনার নামে ফেসবুকে হাজারো প্রোফাইল রয়েছে, লিঙ্কডইনে লাখো আইডি থাকতে পারে একই নামে, কিন্তু আপনার ওয়েবসাইট সম্পূর্ণ ইউনিক হবে, সেখানে যতোভাবে নিজের অস্তিত্ব তৈরি করতে পারবেন, তৃতীয়পক্ষ ওয়েবসাইট থেকে সেটা সম্ভব হবে না!

ফটো পোর্টফোলিও

হ্যাঁ, আজকের দিনে অনলাইনে ফটো আপলোড করা বলতে সবাই ফেসবুক বা ইন্সটাগ্রামই বোঝে! কিন্তু আপনি নিজের ওয়েবসাইটেও ফটো আপলোড করতে পারেন এবং সেটাকে ফটো পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে এমন ওয়েবসাইট মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব, চিন্তা করে দেখুন আপনার নিজের ওয়েবসাইটটি আপনার পার্সোনাল ব্রান্ড হিসেবে গড়ে উঠবে!

বেশিরভাগ হোস্টিং প্রভাইডার স্বয়ংক্রিয় ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করার সুবিধা প্রদান করে। তারপরে রেডিমেড ফ্রি টেম্পলেট ব্যবহার করে আপনার কল্পনার চাইতেও দ্রুত ওয়েবসাইট লাইভ হয়ে যাবে। আপনি যদি নিয়মিত ফটো আপলোড করেন সেক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করায় বেশি উপযুক্ত হবে। তবে সাধারণ HTML টেম্পলেট ব্যবহার করেও এই কাজ করতে পারেন!

নিজের ফাইল গুলো হোস্ট করা

নিজের একটি ওয়েবসাইট থাকার পেছনে সবচাইতে বড় কারণ হতে পারে নিজের ফাইল গুলো হোস্ট করে রাখার জন্য। হ্যাঁ, ফাইল হোস্ট করার জন্য আলাদা অনেক অপশন রয়েছে, যেমন- আপনি গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারেন বা ড্রপবক্সে যেকোনো ফাইল হোস্ট ও শেয়ার করতে পারেন। কিন্তু এমন হতে পারে আপনি কোন ফাইল বারবার এক্সেস করার দরকার পরে আপনি বাইরে থাকনে আর সর্বদা গুগল ড্রাইভ বা ড্রপবক্স লগইন করা সম্ভব হয় না, সেক্ষেত্রে নিজের সাইট থেকে যেকোনো সময় দ্রুত আপনার ফাইল এক্সেস করতে পারবেন!

আর তাছাড়া পাবলিক কম্পিউটার থেকে বা বন্ধুর কম্পিউটার থেকে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট লগইন না করায় ভালো। কিন্তু জাস্ট ব্রাউজার থেকে নিজের সাইট এক্সেস করে সহজেই ফাইল গুলো এক্সেস করে নিতে পারেন। তবে কোন ফাইল যদি প্রাইভেট হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে নিজের ওয়েবসাইটে সেটা আপলোড করে রাখা খারাপ আইডিয়া হবে। আপনার সাইটের ইউআরএল সকলের কাছে পাবলিক থাকবে তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু এভাবে আপলোড করে রাখা উচিৎ হবে না।

কিন্তু কোন ফাইল যদি পাবলিক ভাবে রাখলে সমস্যা না হয় সেক্ষেত্রে নিজের ওয়েবসাইটে এই কাজ সহজেই করা যেতে পারে। সকল হোস্টিং প্রভাইডারই ফাইল ম্যানেজার অপশন প্রদান করে থাকে যেখানে আপনি ফাইল আপলোড ও ম্যানেজ করতে পারবেন। যেকোনো ফাইল আপলোড করার পরে যে কাউকে লিঙ্ক সেন্ড করতে পারবেন। আর এই লিঙ্ক সহজেই মনে রাখা সম্ভব হয়, কেননা এটা ছোট ও মনে রাখার মতো হয়। আলাদা ফাইল শেয়ারিং সাইট গুলোর লিঙ্ক বিশাল ও নানান প্যাটার্নের হয়ে থাকে যেটা মনে রাখা অনেক কষ্টের!

প্রাইভেট ইমেইল

নিজের ডোমেইন ও হোস্টিং থাকার আরেকটি গুন হচ্ছে আপনি এতে প্রাইভেট মেইল সেটআপ করতে পারবেন। এক্সেলনোড তাদের শেয়ারড হোস্টিং প্ল্যানের সাথেও ফ্রি ওয়েব মেইল সার্ভার অফার করে, মানে আপনি সহজেই নিজের মেইল সেটআপ করে নিতে পারবেন!

অনেকেই বলবেন, জিমেইল বা ইয়াহু মেইল, বা হট মেইল থাকতে কেউ নিজের মেইল কেন নিজে হ্যান্ডেল করবে? ওয়েল, এর অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত এটা দেখতে অনেক কুল, সকলের মেইলের শেষে @gmail.com বা @yahoo.com থাকে, কিন্তু আপনার মেইলে @yourdomain.com থাকবে! যেমন আমার মেইল [email protected] – এটা দেখতে অনেক কুল না?

আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে আপনার মেইলের উপরে আপনার সম্পূর্ণ কন্ট্রোল থাকবে, কেননা ডোমেইনটি আপনার নিজস্ব! গুগল কোন কারণে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যান করলে আপনার জিমেইল এক্সেস ও হরিয়ে যাবে, কিন্তু আপনার নিজস্ব মেইল কেউ হারিয়ে দিতে পারবে না। আপনি চাইলে জিসুইট অ্যাকাউন্ট তৈরি করে জিমেইলের মতো ইন্টারফেসে নিজের প্রাইভেট মেইল ব্যবহার করতে পারবেন! তবে এগুলো কিভাবে সেটআপ করবেন তা এই আর্টিকেলে বলবো না, আলাদা আর্টিকেলে এগুলো কভার করবো!

প্রাইভেট মেইল বা ডোমেইন মেইল সম্পর্কে এখানে আরো বিস্তারিত জানতে পারেন!

তো পূর্বে হয়তো নিজের ডোমেইন বা ওয়েবসাইট তৈরি পেছনে কোন কারণ ছিল না, কিন্তু হতে পারে এই পোস্ট পড়ার পরে সেই কারণটি এখন দেখতে পাচ্ছেন। হয়তো এখনই ওয়েবসাইট তৈরি করবেন না, কিন্তু ভবিষ্যতে নিজের সাইট তৈরি করার কারণ গুলো এখন পরিষ্কার! আর হ্যাঁ এটা কোন স্পন্সরড পোস্ট ছিল না, এখানে যে সার্ভিস গুলো উল্লেখ্য করেছি সেগুলো সম্পূর্ণই আমি নিজে ব্যবহার করেছি এবং আমার অভিজ্ঞতা থেকেই রেকোমেন্ড করেছি! তবে আমি আপনাকে চোখ বন্ধ করেও কিনে ফেলতে বলবো না, আপনি যেকোনো কিছু কেনার আগে অবশ্যই মার্কেট যাচায় করে দেখবেন!

Image: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories