কলার আইডি স্পুফিং : কিভাবে যেকোনো নাম্বার ব্যবহার করে কল করা হয়?

আপনি কাউকে কল করলে বা এসএমএস সেন্ড করলে আপনার নাম্বারও সাথে সেন্ড হয়ে যায়। আপনি কি কখনো ইচ্ছা করেছেন, আপনি কল করবেন কিন্তু আপনার নাম্বার সেন্ড হবে না? — ওয়েল, এই ব্যাপারে কলার আইডি স্পুফিং আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আপনার নাম্বার কোন স্ক্যামার পাবেনা, হ্যাকার আপনার সিম হাইজ্যাক করতে পারবে না, বা মার্কেটার’রা বিরক্তকর এসএমএস সেন্ড করতে পারবে না! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কলার আইডি স্পুফিং টেকনিক কিভাবে কাজ করে? এটা বৈধ নাকি অবৈধ? কিভাবে কলার আইডি স্পুফিং থেকে বাঁচা যেতে পারে? আপনি কিভাবে কলার আইডি স্পুফিং করবেন? সবকিছুই থাকছে এই আর্টিকেলে!


কলার আইডি স্পুফিং কি?

এক কথায় বলতে কলার আইডি স্পুফিং হচ্ছে সেই টেকনোলজি যেটা ব্যবহার করলে আপনার আসল কলার আইডি হাইড হয়ে যাবে এবং ফেক কলার আইডি প্রদর্শিত হবে। আপনি কাউকে কল করলে নিশ্চয় আপনার নাম্বার তার মোবাইল স্ক্রীনে শো করবে তাই না? কিন্তু কলার আইডি স্পুফিং করলে আপনার নাম্বার শো না করে আলাদা নাম্বার শো করবে। এখন আপনি যেকোনো নাম্বারই ব্যবহার করতে পারেন, তার মোবাইলে আপনার আসল নাম্বার শো না করে আপানর সেট করা ফেক নাম্বারটি শো করবে।

কলার আইডি স্পুফিং বিশেষ করে প্রাইভেসি রক্ষার খ্যাতিরে করা হতে পারে। আপনার নাম্বার ভুল ব্যাক্তির হাতে চলে গেলে নানান ভাবে আপনাকে প্রতারিত বা বিরক্ত করার চেষ্টা করতে পারে। যেমন- অনেকেই মেয়ে মানুষের নাম্বার পেলে সেখানে কল করে বারবার বিরক্ত করে। কলার আইডি হাইড করে আলাদা নাম্বার ব্যবহার করলে আপনার আসল নাম্বার কেউই জানবেই না আর বিরক্তও করতে পারবে না।

কিন্তু একইভাবে কলার আইডি স্পুফ করে স্ক্যামার বা হ্যাকার আপনাকে প্রতারিতও করতে পারে। ধরুন, আপনার ব্যাংকের হেল্পলাইন নাম্বার ১৬২৩০, স্ক্যামাররা সহজেই এই নাম্বার স্পুফ করে আপনাকে কল দিতে পারে, আপনার ফোনে শো করবে ১৬২৩০ থেকেই কল এসেছে, এখন আপনি যদি আপনার ব্যাংক পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন সহজেই আপনি কাঙ্গাল হয়ে যাবেন।

তবে স্ক্যামিং কল গুলো দেখতে আপনার ব্যাংকের নাম্বারের মতো হলেও সম্পূর্ণ আপনার ব্যাংক নাম্বার হয় না। যেমন- অনেকের কাছেই বিকাশের স্ক্যামিং কল আসে ১৬২৪৭ থেকে, কিন্তু স্ক্যামাররা যখন কল করে +১৬২৪৭ থেকে কল আসে, নাম্বারের আগে একটা + চিহ্ন যুক্ত থাকে। এরকম নাম্বারকে নেইবার স্পুফিং বলা হয়! মানে নাম্বারটি আসল নাম্বারের আশেপাশের নাম্বার হয় এবং দেখতে একনজরে একই রকমের মনে হতে পারে।

কল স্পুফিং কি বৈধ?

এক কথায়, ইয়েস! কল স্পুফিং করা বৈধ, মানে বেশিরভাগ কলার আইডি স্পুফ করা বৈধ ব্যাপার! শুধু তখনই এটা অবৈধ যখন এটা ব্যবহার করে কোন স্ক্যামিং করার চিন্তা করা হবে বা কারো কোন ক্ষতি করা হবে। যদি কোন স্ক্যামিং এ এটা ব্যবহৃত না হয় বা কারো কোন ক্ষতি সাধিত না হয়, তাহলে ইয়েস, কল স্পুফিং করা যেতে পারে!

ধরুন আপনি স্ক্যাইপ ক্রেডিট কিনেছেন বাইরের দেশে কল করার জন্য, এখন ডাইরেক্ট ফোন থেকে কল করার চাইতে স্ক্যাইপে খরচ কম আসে, তাই স্ক্যাইপ ব্যবহার করা স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনি যদি কলার আইডি সেট না করেন সেক্ষেত্রে যাকে কল করবেন তার ফোনে আজাইরা নাম্বার শো করবে বা “Private Number” লেখা আসতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো আপনার ফোন কল রিসিভ করবে না। কিন্তু আপনি চাইলে স্ক্যাইপের মাধ্যমে আপনার নিজের আসল ফোন নাম্বার স্পুফিং করতে পারেন, এতে আপনি কল করবেন স্ক্যাইপ ব্যবহার করেই কিন্তু অন্যদিকে আপনার আসল ফোন নাম্বার শো করবে, সহজেই আপনার প্রিয়জন আপনার কল চিনতে পারবে ও রিসিভ করবে! তো এক্ষেত্রে কল স্পুফিং তো সম্পূর্ণ বৈধ ব্যাপার হলো তাই না?

কল স্পুফিং কিভাবে কাজ করে?

অনেক টেকনিক ব্যবহার করে কলার আইডি স্পুফিং করা যেতে পারে, এর মধ্যে ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) টেকনোলজি ব্যবহার করে বেশিরভাগ কলার আইডি স্পুফিং করা হয়। এই টেকনোলজিতে ইন্টারনেট থেকে সেলফোন টাওয়ারে কলকে সেন্ড করা হয়, আর কলারকে ইচ্ছা মতো নাম্বার চয়েজ করার সুবিধা প্রদান করা হয় কলার আইডি হিসেবে।

  • প্রথমে আপনি ভিওআইপি সার্ভিস গ্রহণ করলেন, তাদের অ্যাপ ফোনে ইন্সটল করলেন বা ওয়েবসাইট থেকে ড্যাশবোর্ড পেয়ে গেলেন!
  • আপনাকে ইচ্ছা মতো এবার নাম্বার চয়েজ করতে দেবে, আপনি যেটা কলার আইডি হিসেবে দেখাতে চান। তবে নামী প্রভাইডাররা শুধু আপনার নিজের নাম্বার স্পুফ করতে সুবিধা দেয়, আপনি তাদের কাছে যেকোনো নাম্বার স্পুফ করতে পারবেন না।
  • এরপরে যাকে কল করবেন তার নাম্বার টাইপ করবেন, আর সেন্ড করে দেবেন!
  • আপনার স্পুফ করা নাম্বার অপরদিকের স্ক্রীনে প্রদর্শিত হবে!

কল স্পুফিং স্ক্যাম থেকে কিভাবে বাঁচা যেতে পারে?

কল স্পুফিং স্ক্যাম অনেক মারাত্মক এক জিনিস, এতে প্রত্যেক বছর লাখো টাকা ক্ষতি গুনতে হয় সাধারণ মানুষকে। স্ক্যামার’রা নানান ফন্দি বানিয়ে কল স্পুফ করে ফোন করে, এক ঝলকে নাম্বার দেখে আপনার আসল ব্যাংক বা সার্ভিস মনে হয়। তারপরে তারা কৌশলে আপনার থেকে গোপন তথ্য গুলো জেনে নেয় এবং অর্থ লোপাট করার ধান্দা করে।

এরকম জালিয়াতি থেকে বাঁচার জন্য আমি রেকোমেন্ড করবো পার্সোনাল নাম্বার যেখানে সেখানে শেয়ার না করা। আপনি সেকেন্ড নাম্বার রাখতে পারেন যেখানে বাকি বাইরের কল ও যাবতীয় কাজ সারবেন আর পার্সোনাল নাম্বার পার্সোনাল কাজ এবং ব্যাংক এ ব্যবহার করতে পারেন। স্ক্যামার আপনার ফোন নাম্বার না পেলে আপনাকে কল ও করতে পারবে না। মনে রাখবেন বেশিরভাগ স্ক্যামিং অ্যাটাক কাউকে টার্গেট করে করা হয় না, জাস্ট তারা একের পর এক র‍্যান্ডম পারসনকে কল করে, যারা কল ধরে আর তাদের ফাঁদে পা দেয় তারায় বিপদে পরে!

আরেকটি কথা মনে রাখবেন, আসল ব্যাংক থেকে কল করলে আপনাকে কখনোই আপনার পাসওয়ার্ড জিজ্ঞাস করবে না, যদি স্ক্যামাররা এখন আর সরাসরি পাসওয়ার্ড জিজ্ঞাস করে না, কিন্তু তারপরেও তারা নানান ট্রিক খাটিয়ে পাসওয়ার্ড নেওয়ার চেষ্টা করে বা পাসওয়ার্ড রিসেট করাতে চায়। তাদের থেকে সম্পূর্ণ সাবধান, এরকম কলে আপনাকে নানান লোভ দেখাতে পারে, জাস্ট সাথে সাথেই লোভে পরবেন না, প্রয়োজনে ব্যাংকের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন বা নিজে থেকেই তাদের কল ব্যাক করুন, মানে আপনার ব্যাংকের অফিসিয়াল নাম্বারে, তারপরে কথা বলে নিশ্চিত করুন!

আপনার কমন সেন্স চালু রাখতে হবে। সাথে আপনাকে প্রযুক্তি শিক্ষা নিতেই হবে। তবেই আপনি এমন জিনিস গুলো থেকে বাঁচতে পারবেন। বর্তমানে বিকাশ হাইজ্যাক হয়ে যাওয়া অনেক সাধারণ একটি ব্যাপার, তারা আপনাকে স্প্যাম কল করে তারপরে নানানভাবে ওটিপি বা পিন পাওয়ার চেষ্টা করে। আপনিই বলুন, ব্যাংক আপনাকে কল করে কেন আপনার থেকে এমন ডিটেইলস চাইবে যেটা অলরেডি তাদের সার্ভারেই মজুদ রয়েছে?


আপনি অনেক অ্যাপের মাধ্যমে ভিওআইপি সার্ভিস গ্রহণ করে সহজেই নাম্বার স্পুফিং করতে পারবেন। আপনি হয়তো নিজের নাম্বার প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না হতে পারে সেটা প্রাইভেসির জন্য বা সিকিউরিটির জন্য ও বটে, সেক্ষেত্রে এই টেকনিক আপনাকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে পারে। বাইরের দেশে কলার আইডি হাইড করার অপশন প্রদান করে, কিন্তু আমাদের দেশের অপারেটর গুলো তা সাপোর্ট করে না, তাই ভিওআইপি ই একমাত্র উপায়!

Image: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories