উবুন্টু ডেক্সটপ vs উবুন্টু সার্ভার : পার্থক্য কি?

যারা লিনাক্স ব্যবহার করেছেন বা লিনাক্স সম্পর্কে জানেন, তারা হয়তো জানেন যে লিনাক্স এর একটি অন্যতম ব্যবহার হচ্ছে সার্ভার সাইডে। পৃথিবীর প্রায় সব ওয়েব সার্ভারই রান করা হয় লিনাক্স ব্যবহার করে। পৃথিবীর অনেক হাই পারফরমেন্স লিনাক্স ওয়েব সার্ভার এতদিনে প্রায় বছরের পর বছর ধরে একটানা রানিং রয়েছে। আর লিনাক্সের সবথেকে জনপ্রিয় ডিস্ট্রোটি হচ্ছে উবুন্টু। উবুন্টুর আবার দুটি মেইনস্ট্রিম ভার্সন আছে। একটি হচ্ছে উবুন্টু ডেক্সটপ এবং আরেকটি হচ্ছে উবুন্টু সার্ভার। কোনটি কোন কাজে বা কোন এনভার্নমেন্টে ব্যবহার করা হয় তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই, যেহেতু এগুলোর নাম থেকেই পরিষ্কারভাবে তা বোঝা যায়। তবে যারা লিনাক্স এবং বিশেষ করে উবুন্টু নিয়ে ইন্টারেস্টেড, তাদের অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন আসে, তা হচ্ছে উবুন্টু ডেক্সটপ এবং উবুন্টু সার্ভারের মধ্যে পার্থক্য কি কি? চলুন জানা যাক!

গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস

অবশ্যই, এটাই উবুন্টু ডেস্কটপ এবং উবুন্টু সার্ভারের মধ্যে সবথেকে বড় ভিজুয়্যাল ডিফারেন্স। উবুন্টু ডেক্সটপ যেহেতু আপনার পারসোনাল কম্পিউটার বা ওয়ার্কস্টেশনে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে, তাই এতে আছে GNOME ডেক্সটপ এনভার্নমেন্ট, যার সাহায্যে আপনি উইন্ডোজের মতোই একটি ন্যাটিভ ডেস্কটপ এনভার্নমেন্টে সবকিছু দেখতে পারেন এবং GUI ব্যবহার করে ওএসের সব জায়গায় ন্যাভিগেট করতে পারেন এবং যেকোনো কাজ ইউজার ইন্টারফেস দেখে করতে পারেন। GUI রাখা হয়েছে যেহেতু এটি ইউজাররা তাদের পার্সোনাল কম্পিউটারে ডেইলি টাস্কগুলো করার জন্যই ব্যাবহার করবেন।

কিন্তু উবুন্টু সার্ভার যেহেতু আপনার পার্সোনাল কম্পিউটার নয়, বরং একটি রিমোট সার্ভারে রান করা হচ্ছে, তাই এখানে কোন গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের দরকার হয়না। উবুন্টু ডেক্সটপে কম্যান্ড লাইন ব্যবহার করে আপনি যত প্রোগ্রাম এবং সার্ভিস ইন্সটল করতে পারেন, তার অনেকগুলোই আপনি একইভাবে উবুন্টু সার্ভারেও ইন্সটল করতে পারবেন। তবে উবুন্টু সার্ভারে আপনাকে সব প্রোগ্রাম ইন্সটল করতে হবে SSH কনসোলে কম্যান্ড লিখে।

এক্ষেত্রে আপনি শুধু কম্যান্ড লাইন টুলটিই ব্যবহার করতে পারবেন, কোন ডেক্সটপ এনভার্নমেন্টে আপনার কাজের ফিডব্যাক দেখতে পারবেন না। তবে আপনি চাইলে উবুন্টু সার্ভারেও ম্যানুয়ালি GUI ইন্সটল করতে পারবেন, তবে তা রিকমেন্ডেড নয়। যেহেতু, উবুন্টু সার্ভারে ইচ্ছাকৃতভাবেই GUI রাখা হয়নি যাতে GUI টি রান করার জন্য যে পরিমান এক্সট্রা রিসোর্স দরকার হয়, সেই রিসোর্সটি GUI এর পরিবর্তে অন্য কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। আর অবশ্যই সার্ভার রান করার জন্য অধিকাংশ ইউজারেরই কোন GUI এর দরকার হবে না। কারণ, উবুন্টু সার্ভারগুলো একবার কনফিগার করার পরে প্রতিদিন বারবার ওপেন করার দরকার পড়েনা।

অ্যাপ্লিকেশনস

অ্যাপ্লিকেশন লাইব্রেরি হচ্ছে উবুন্টু ডেক্সটপ এবং উবুন্টু সার্ভারের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য। উবুন্টু ডেক্সটপে আপনি উইন্ডোজের মতোই অনেক উইন্ডোজ অ্যাপের লিনাক্স ভার্সন ইন্সটল করতে পারবেন এবং উইন্ডোজের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন। মূলত উবুন্টু ডেক্সটপে আপনি সব ধরনের লিনাক্স প্রোগ্রামই ইন্সটল করতে পারবেন। উবুন্টু সার্ভারের জন্য যেসব সার্ভার সাইড প্রোগ্রামস আছে, সেগুলোও আপনি চাইলে উবুন্টু ডেক্সটপে ইন্সটল করতে পারবেন এবং উবুন্টুর টার্মিনাল ব্যবহার করে রান করতে পারবেন। আবার আপনি সেসকল প্রোগ্রামও ইন্সটল করে ব্যবহার করতে পারবেন যেগুলোর গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস আছে। যেমন- গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফট এজ, লিব্রা অফিস ইত্যাদি প্রোগ্রামস।

তবে উবুন্টু সার্ভারে আপনি যেসব অ্যাপ গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসে কাজ করে, সেসব অ্যাপস ব্যাবহার করতে পারবেন না। আপনি ইন্সটল করতেই পারেন, তবে এসব প্রোগ্রাম আপনি ওপেন করতে পারবেন না। কারন, অবশ্যই, অ্যাপটির GUI দেখার জন্য যে ডেক্সটপ এনভার্নমেন্টের দরকার হয়, সেই এনভার্নমেন্টটি উবুন্টু সার্ভারে সাধারনত থাকেনা। তবে আপনি উবুন্টু সার্ভারে যেকোনো সার্ভার সাইড অ্যাপ্লিকেশন বা প্রোগ্রাম ইন্সটল করতে পারবেন, যেগুলো লিনাক্সের জন্য এভেইলেবল আছে। সার্ভার ম্যানেজ করার জন্য যেসব প্রোগ্রামস এবং টুলস আছে, তার প্রায় সবকিছুই লিনাক্সের জন্য এভেইলেবল আছে।

যেমন- ইমেইল সার্ভার, ফাইল সার্ভার, অ্যাপাচি বা লাইটস্পিড ওয়েব সার্ভার, ডাটাবেজ সার্ভার ইত্যাদি। এইসব প্রোগ্রামই আপনাকে উবুন্টু সার্ভারের কনসোল অর্থাৎ, SSH ব্যবহার করে রান করতে হবে, যেহেতু এগুলোর কোনো GUI নেই। সহজ কথায়, উবুন্টু ডেক্সটপের অ্যাপ্লিকেশনগুলো প্রোডাক্টিভিটি অরিয়েন্টেড, যেখানে উবুন্টু সার্ভারের অ্যাপ্লিকেশনগুলো সার্ভিস অরিয়েন্টেড।

ইন্সটলেশন প্রোসেস

উবুন্টু ডেক্সটপে যেহেতু আগে থেকেই বিল্ট-ইন ডেস্কটপ এনভার্নমেন্ট আছে, তাই উবুন্টু ডেক্সটপ ইন্সটল করে সেটাপ করার সময় আপনি সবকিছুই ইউআইতে দেখে দেখে সহজেই করে ফেলতে পারবেন। যেমন- ইউজার অ্যাকাউন্ট সেটাপ করা, ড্রাইভার ইন্সটল করা, নেটওয়ার্ক সেটিংস ম্যানেজ করা, সবকিছুর জন্যই আপনি সুন্দর একটি সেটাপ স্ক্রিন দেখতে পাবেন, যা অনেকটা উইন্ডোজের মতোই।

তবে আপনি উবুন্টু সার্ভার সেটাপ করার সময় এমন কোন সেটাপ স্ক্রিন বা কোন ইউজার ইন্টারফেস দেখতে পাবেন না, যেহেতু এতে কোন GUI নেই। উবুন্টু সার্ভার সেটাপ করার সময়ও আপনাকে কম্যান্ড লাইন টুলসের ব্যবহার করতে হবে। ফাইল সিস্টেম ঠিক করা, ফাইল ম্যানেজ করা, প্যাকেজ ইন্সটল করা সবকিছুর মতোই সার্ভার কোনফিগার এবং সেটাপ করার জন্যও আপনাকে SSH কনসোলে কম্যান্ড লিখেই কাজ করতে হবে।

সিমিলারিটি

এগুলোই মূলত ছিল উবুন্টু ডেক্সটপ এবং উবুন্টু সার্ভারের বেসিক কিছু ডিফারেন্স। এবার কথা বলা যাক উবুন্টু ডেক্সটপ এবং উবুন্টু সার্ভারে কি কি সিমিলারিটি আছে, তা নিয়ে। কিছু বছর আগে উবুন্টু ডেক্সটপ এবং সার্ভারের মধ্যে সিমিলারিটি খুবই কম ছিলো। তবে বর্তমানে এই দুটি ভার্সনের মধ্যে অনেক সিমিলারিটি আছে।

কার্নেল

উবুন্টু ১২.০৪ ভার্সনের আগে উবুন্টু ডেক্সটপ এবং উবুন্টু সার্ভার আলাদা কার্নেল ব্যবহার করতো। এর আপনি চাইলেই উবুন্টু ডেক্সটপের অ্যাপ উবুন্টু সার্ভারে কিংবা উবুন্টু সার্ভারের প্রোগ্রামগুলো উবুন্টুর ডেক্সটপ এনভার্নমেন্টে ইন্সটল করতে পারতেন না। তবে ভার্সন ১২.০৪ এর পর থেকে ডেক্সটপ এবং সার্ভার দুটিতেই একই কার্নেল ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে এখন আপনি চাইলেই সার্ভারের অ্যাপ ডেস্কটপে অথবা ডেক্সটপের অ্যাপ সার্ভারে ইন্সটল করতে পারেন।

যদিও ডিফল্ট ইন্সটলেশনে এখনো কিছু পার্থক্য আছে, তবে আপনি যদি চান, আপনি উবুন্টু ডেক্সটপ ইন্সটল করে সেটিকেই নিজের মতো করে কনফিগার করে সার্ভার হিসবে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি কিছু ডিফল্ট প্যাকেজও নিজের মতো করে ফিক্স করে নিয়ে আপনার উবুন্টু ডেক্সটপেও সার্ভার সাইড সার্ভিসেস এবং SSH ও ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে দুটির কার্নেল একই হওয়ায় দুটি ভার্সনের মধ্যে ফিচারস এবং ফাংশনালিটির গ্যাপ অনেকটাই কমে গিয়েছে।

সাপোর্ট

উবুন্টু ১২.০৪ রিলিজের পর দুটি ভার্সনের সাপোর্ট সাইকেলেও মিল রাখা হয়েছে। এর পূর্বে উবুন্টু ডেক্সটপে পাওয়া যেত থ্রি ইয়ার সাপোর্ট সাইকেল, আর উবুন্টু সার্ভারে পাওয়া যেত ফাইভ ইয়ার সাপোর্ট সাইকেল। তবে বর্তমানে ডেক্সটপ এবং সার্ভার দুটি ভার্সনের সাথেই থাকে স্ট্যান্ডার্ড লং টার্ম সাপোর্ট (LTS) রিলিজ, সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত।


About the author

সিয়াম

Add comment

Categories