ফোন/পিসি ফেক ভাইরাস আলার্ট স্ক্যাম থেকে বাঁচুন, বোকা বানবেন না!

যদিও ওয়্যারবিডিতে আমি পাইরেটেড সফটওয়্যার, মুভি এগুলো ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকতে বলি — কিন্তু আপনি হয়তো ঠিকই সেগুলো ডাউনলোড করে যাচ্ছেন! ওয়েল, আপনি একজন ইউজার আর আপনি যা ইচ্ছা করতে পারেন। কিন্তু এগুলো ওয়েবসাইটে নানান ধরনের ফাঁদ পাতা থাকে আর সেগুলো ফাঁদ সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া নিজের কর্তব্য মনে করেই আজকের এই আর্টিকেল লিখতে বসা!

আপনি কোন ডাউনলোড সাইটে প্রবেশ করেছেন তারপরে হঠাৎ করে ফোন ভাইব্রেশন দিয়ে উঠে, আর আপনার ফোনের মডেলের নাম দেখায় আর বলে আপনার ফোন এতগুলো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এক্ষুনি সেগুলোকে রিমুভ করার জন্য এখানে ক্লিক করুন। আপনি পিসি থেকেও এগুলো সাইটে প্রবেশ করলে শো করে ফেক অ্যান্টিভাইরাস আলার্ট, যেখানে আপনাকে বলবে আপনার পিসি এতো গুলো ভাইরাসে অ্যাক্রান্ত হয়েছে আর সেগুলোকে রিমুভ করতে এই সফটওয়ারটি ডাউনলোড করুন!

এখন বেশিরভাগ ইউজার কি করে? তারা কিছুই না বুঝে এই ফাঁদে পা রেখে দেয়। ফোনে ডাউনলোড করে ম্যালিসিয়াস অ্যাপ আর পিসিতে ডাউনলোড করে অ্যান্টিভাইরাসের নামে কোন ম্যালওয়্যার বা র‍্যানসমওয়্যার! যেগুলো আপনাকে বলেছিল তারা অ্যান্টিভাইরাস কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা আপনার সিস্টেমে প্রবেশ করার পরেই শুরু করে আসল নাশকতা, আর এগুলোকে আপনি নিজে খাল কেটে দেকে আনেন!

বিশেষভাবে টেক সাপোর্ট স্ক্যাম করার জন্য স্ক্যামাররা এরকম ফেক পপ-আপ ম্যাসেজ দেখিয়ে থাকে। অনেক সময় আপনি কোন ডাউনলোড ওয়েবসাইটে গেলেন বা যেকোনো অবৈধ ওয়েবসাইট প্রবেশ করার পরে মাইক্রোসফট থেকে ফেক অ্যালার্ট শো করে, বলে আপনার পিসিতে অমুক সমস্যা হয়েছে এক্ষুনি কল করুন এই নাম্বারে তাহলে আপনার পিসি ফিক্স করে দেওয়া হবে। আসলে এগুলো কোন মাইক্রোসফট থেকে নয় এগুলো স্ক্যামাররা সেট করে, আর এই নাম্বার গুলো ও স্ক্যামারদের তারা নিজেদের মাইক্রোসফট সাপোর্ট বলে দাবি করে। আপনি যদি তাদের কল করেন সেক্ষেত্রে নিচের এই কাজ গুলো তারা করার চেষ্টা করে;

  • প্রথমত তারা আপনার সিস্টেমে রিমোট এক্সেস টুল ডাউনলোড করিয়ে দেওয়ার মতলব করবে যাতে আপনার পিসি তারা কন্ট্রোল করতে পারে। সাধারণত তারা Ammyy, TeamViewer, অথবা LogMeIn এই জাতীয় সফটওয়্যার ইন্সটল করিয়ে দিতে চাইবে। আর একবার এগুলো ইন্সটল করার পরে আপনার থেকে ক্রেডিনশিয়াল চাইবে আর ব্যাস হয়ে গেলো তাদের অর্ধেক কাজ!
  • আপনার পিসির রিমোট এক্সেস নেওয়ার পরে তারা সাপোর্টের নামে অনেক অঝথা টাকা ডিম্যান্ড করবে আর বদলে ইন্সটল করিয়ে দেবে ফ্রি বা ট্রায়াল ভার্সন সফটওয়্যার, অনেক সময় তারা শুধু আজাইরা সব সফটওয়্যার ইন্সটল করিয়ে দিয়ে ৫০০ ডলারের উপরে চার্জ ডিম্যান্ড করতে পারে!
  • তারা উইন্ডোজ এর লেটেস্ট ভার্সনে আপডেট রাখতে বলবে, যদিও এটা সত্য কথা, কিন্তু আপনার পিসিতে যদি জেনুইন উইন্ডোজ না থাকে আর তাদের থেকে যদি উইন্ডোজ কেনেন আপনি পরবেন দ্বিগুণ বিপদে!
  • উপরে বললাম একটু ভাল স্ক্যামারদের গল্প, কিন্তু ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে হতে পারে, স্ক্যামাররা আপনার পিসি একবার এক্সেস করার পরে আপনার পিসিতে ইন্সটল করিয়ে দেবে ম্যালওয়্যার, ব্যাকডোর, অথবা আপনার হার্ডড্রাইভের সকল ডাটা লক করিয়ে দেবে তারপরে সগুলোকে ব্যাক করার জন্য চাইবে হাজারো ডলার!

যদি আপনি কোন টাকা না দেন, কল রাখার পরে স্ক্যামাররা আপনার পিসির সবকিছু ধ্বংস করে দেবে আপনার পিসির অপারেটিং সিস্টেমও হয়তো ঠিকমতো কাজ করবে না। তারা আপনার সিস্টেমে ট্রোজান ঢুকিয়ে দেবে, আর এর মাধ্যমে আপনার পিসিতে আরো নানান ম্যালওয়্যার প্রবেশ করবে। আপনার সবকিছুর উপরে নজরদারি চালানো হবে, আপনার ওয়েবক্যাম ও হ্যাক হয়ে যেতে পারে। এভাবে নানানভাবে আপনার ডাটা গুলো নিয়ে আপনাকে হয়রান করা হবে, হ্যাঁ, টেক সাপোর্ট স্ক্যাম এতোটাই ন্যাস্টি হতে পারে।


এই পপ-আপ গুলো আসলে আসে কই থেকে?

ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট গুলো নানানভাবে টাকা উপার্জন করে। কোন ওয়েবসাইট বাঁচিয়ে রাখা ফ্রিতে সম্ভব হয় না, আর কোন সাইটে যদি অনেক ট্রাফিক থাকে সেক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন থেকে অনেক অর্থ উপার্জন করা যেতে পারে। যে ওয়েবসাইট গুলো জেনুইন কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের প্রধানত গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করতে দেখতে পাওয়া যায়। অ্যাডসেন্স হচ্ছে গুগলের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক, এতে কোন ফেইক বিজ্ঞাপন দেখানোর সুযোগ নেই। তাই যে ওয়েবসাইট গুলো অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে, সে ওয়েবসাইট গুলো থেকে কোন হুমকি থাকে না!

কিন্তু পাইরেটেড ওয়েবসাইট গুলো গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পায় না, তারা নানান ম্যালিসিয়াস অ্যাডস নেটওয়ার্ক ইউজ করে যেগুলোতে কে কেউ যেকোনো টাইপের বিজ্ঞাপন দিতে পারে, আর সেই বিজ্ঞাপন গুলো সেই পাইরেটেড সাইটে শো করে। আপনার ফোনে বা পিসিতে যে ফেক অ্যালার্ট গুলো দেখানো হয় তা আর কিছু নয় বরং জাভা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে তৈরি করা ফেক পেজ। আপনি ডাউনলোড সাইট গুলোতে প্রবেশ করে এক লিঙ্কে ক্লিক করলে দেখা যায় অনেক অপ-আপ খুলে যায়, আর সেখানেই এরকম অ্যালার্ট দেখতে পাওয়া যায়!

অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজের ক্ষেত্রে আপনার ফোনে প্রথমে একটি অ্যাপ ইন্সটল করিয়ে দেবে তারপরে ওই অ্যাপ ফোনে নানান টাইপের ম্যালওয়্যার, অ্যাডওয়্যার এগুলোর জন্ম দিতে শুরু করবে। তাই মনে রাখবেন, ব্রাউজার থেকে কখনই ফোনের ভাইরাস স্ক্যান করা সম্ভব নয়, এগুলো যা কিছু দেখায় সবই ফেক নোটিফিকেশন। আপনি নোটিফিকেশনে ক্লিক করে তাদের সফটওয়ার ইন্সটল করার পরেই পরবেন আসল বিপাকে!

কিভাবে বাঁচবেন?

এদের এই কর্মকাণ্ড গুলো থেকে বাঁচতে হলে চলে যেতে হবে শুরুর দিকে; কীভাবে প্রথমত আপনি এদের শিকার হতে পারেন। বেশিরভাগ সময়ই আপনি এমন ধরনের ম্যালওয়্যার দ্বারা আকান্ত হন কোন ওয়েবসাইটের পপআপ অ্যাড থেকে। দেখা যায় ফ্রী ডাউনলোড সাইট গুলোতে গেলে বা কোন অ্যাডাল্ট সাইটে অনেক পপআপ খুলে যায়, এগুলোতে বিভিন্ন ম্যালিসিয়াস কনটেন্ট থাকে বা ম্যালিসিয়াস কুকিজ আপনার ব্রাউজারে ইন্সটল হয়ে যায়, এতে আপনার কম্পিউটারে ফেক ম্যাসেজ সহ আপনার সকল তথ্য গুলো চুরিও হয়ে যেতে পারে। অনেকে আজকাল পপআপ অ্যাড গুলোকে ব্লক করার জন্য ব্রাউজারে অ্যাড ব্লক এক্সটেনশন ব্যবহার করেন, কিন্তু কিছু কিছু শক্তিশালী পপআপ রয়েছে যেগুলোকে অ্যাড ব্লকার ফিল্টার করতে পারে না। তাহলে এগুলো থেকে বাঁচার উপায়টা কি?

প্রথমত আমি সাজেস্ট করবো, পাইরেসিং কন্টেন্ট ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন এমন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকুন যারা পেইড কনটেন্ট ফ্রী প্রদান করার অফার করে। অ্যাডাল্ট সাইট গুলো ভিজিট করা থেকে বিরত থাকুন। এরপরেও যদি আপনার এই সাইট গুলো ভিজিট করতেই হয় তবে ব্রাউজারে ইনকগ্নিটো উইন্ডো খুলে নিন, এতে পপআপ থেকে কোন কুকিজ ব্রাউজারে প্ল্যান্ট হতে পারবে না, এই মুডে ব্রাউজার উইন্ডো ক্লোজ করার সাথে সাথেই সকল ডাটা গুলো ব্রাউজার রিমুভ করে দেয়।

তাছাড়া বেশি সুক্ষিত থাকতে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করুন, এই ব্রাউজার সান্ড বক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে; অর্থাৎ কোন ভাইরাস যদি ব্রাউজারে লোড হয়েও যায় সেটি শুধু ঐ ট্যাবটি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে বাকী সিস্টেমে ঐ ভাইরাসটিকে আসতে দেয় না। তাছাড়া অনলাইন ম্যালওয়্যার গুলো থেকে বাঁচতে অবশ্যই ভালো মানের এন্টিভাইরাস বা এন্টিম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন এবং নিজের উপস্থিত বুদ্ধির ব্যবহার করুন। কিছু পপআপ অ্যাডে অনেক চালাকির সাথে আপনাকে আক্রান্ত করানোর চেষ্টা করানো হয়। সেখানে বলা থাকে, “আপনি জানেন কি, অ্যাডাল্ট সাইট ভিজিট করার পরে সেখান থেকে ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার আপনার সিস্টেমে চলে এসেছে? সেগুলো রিমুভ করতে অমুক টুল ইন্সটল করুন।” আর এই টুল গুলোই হলো আসল ভাইরাস।

আবার সবসময় এমনটা নাও হতে পারে, আগে আপনার সিস্টেমে স্ক্যামারদের নাম্বার শো করলো পরে আপনি তাদের কল করলেন; স্ক্যামাররা কোথা থেকে আপনার নাম্বার জোগাড় করে আপনাকেই আগে কল করতে পারে এবং মাইক্রোসফট থেকে কল করেছে বলে মিথ্যাচার করতে পারে। আপনার সিস্টেমে তারা সমস্যা দেখতে পেয়েছে বলে ফিক্স করার জন্য রিমোট অ্যাক্সেস পেতে চাইবে, তারপর তারা বিভিন্নভাবে আপনাকে প্রতারিত করবে এবং আপনার কাছ থেকে টাকা বা তথ্য চুরি করে নেবে। এরকম টেক সাপোর্ট থেকে আসা কল গুলোকে সরাসরি ইগনোর করে দিন। আর এভাবে মাইক্রোসফট থেকে কখনোই টেক সাপোর্ট দিয়ে কল করা হয় না, আর আপনি জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহার না করলে আপনার কাছে তো কিয়ামত পর্যন্ত মাইক্রোসফট কল করবেই না।

Feature Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories