কেন হোম রাউটারে 2.4GHz ব্যান্ড ডিসেবল করে রাখা উচিৎ?

নিঃসন্দেহে ওয়াইফাই এক অসাধারণ টেকনোলোজি! — টেকের সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটার জনপ্রিয়তা যতোবেশি বারে ততোবেশি সহজলভ্য হয়ে যায়। আজকের লাখ টাকার ডিভাইজ থেকে শুরু করে ৩-৪ শত টাকার ডিভাইজেও ওয়াইফাই থাকতে দেখতে পাওয়া যায়। আর এটাও একটি বড় কারণ, যার জন্য হোম নেটওয়ার্কে পুরাতন ওয়াইফাই 2.4GHz ব্যান্ড ডিসেবল করে নতুন দ্রুতগামী 5GHz ব্যান্ড এক্সক্লুসিভ ভাবে ইউজ করা!

কিন্তু কেন? মানে ওয়াইফাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে গেছে তাই পুরাতন ব্যান্ড অফ রাখতে হবে? 5G ব্যান্ড কতোবেশি সুবিধা প্রদান করছে, তাই নতুন ব্যান্ডে মুভ করবো? — এসব কিছুই আলোচনা করতে চলেছি এই আর্টিকেলে!


5GHz ওয়াইফাই ব্যান্ড নতুন স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হচ্ছে

আমরা পূর্বেই কিন্তু ওয়াইফাই ২.৪ গিগাহার্জ এবং ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করেছি, আপনি না জানলে আগে সেটা চেক করে আসুন!

আজকের বেশিরভাগ মডার্ন রাউটার গুলো বিশেষ করে ডুয়াল ব্যান্ড সাপোর্ট করে, মানে একসাথে 2.4GHz এবং 5GHz উভয় ব্যান্ডেই কাজ করতে পারে। আপনি বছর তিনেক আগেও যদি আপনার রাউটারটি কিনে থাকেন সেক্ষেত্রে সেটা ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড সাপোর্ট করার কথা। 802.11ac রাউটারে 5GHz ব্যান্ড সাপোর্ট থাকে, এটা অনেক হাই স্পীড ডাটা ট্র্যান্সফার করতে সক্ষম। এখন ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে কানেক্ট করার জন্য আপনার ডিভাইজেও ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড সাপোর্ট থাকতে হবে। আজকের বেশির ভাগ ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটে ওয়াইফাই AC সাপোর্ট থাকে, কেবল পুরাতন আর সস্তা ডিভাইজ গুলোতে ৫জি ওয়াইফাই সাপোর্ট করে না।

দিনে দিনে ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার ও ডিভাইজ উভয়েই অনেক সস্তায় পরিণত হয়েছে। আপনি মাত্র ৩-৪ হাজার টাকা খরচ করেই 5GHz সাপোর্টেড রাউটার কিনতে পারবেন। কিছু সস্তা রাউটার তো ২ হাজার টাকার মধ্যেই ডুয়াল ব্যান্ড সাপোর্ট ফিচার দিয়ে দেয়। আপনার যদি পুরাতন ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ থাকে যেটা ৫ গিগাহার্জ ওয়াইফাই সাপোর্ট করে না, সহজেই এক্সটার্নাল ওয়াইফাই রিসিভার কিনে লাগানোর মাধ্যমে ৫জি ওয়াইফাই এনাবল করা যেতে পারে!

2.4GHz এর সাথে সমস্যাটা কোথায়?

2.4GHz ব্যান্ড এতোবেশি ইউজ করা হয়ে গেছে যে মাঝেমাঝেই সিগন্যাল প্যাচ ব্যাধিয়ে ফেলে। পুরাতন ওয়াইফাই ডিভাইজ থেকে শুরু করে নন-ওয়াইফাই ডিভাইজ গুলো যেমন- ব্লুটুথ হেডসেট, ওয়্যারলেস মাউস/কীবোর্ড, গেমিং কনসোল কন্ট্রোলার, ওয়্যারলেস খেলনা গাড়ি, বেবি মনিটর — ইত্যাদি অনেক গ্যাজেটে ২.৪ গিগাহার্জ স্পেকট্রাম ইউজ করা হয়। আপনার বাসায় যদি সিঙ্গেল ভাবে ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড ইউজ হয় সেক্ষেত্রে কোনই সমস্যা হবার কথা নয়, কিন্তু নানান ডিভাইজ যদি একসাথে এই ব্যান্ড উইজ করেন সেক্ষেত্রে সিগন্যাল ও ব্যান্ডউইথে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

আপনার বাসা কোন ব্যাস্ত শহরে হয়ে থাকলে হতে পারে আপনার প্রতিবেশি ও নানান ২.৪ গিগাহার্জের গ্যাজেট ইউজ করছে, সেক্ষেত্রে আপনার হোম নেটওয়ার্কের সমস্যা তৈরি করতে পারে। আসলে ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড এতোটাই বেশি জনপ্রিয় যে, কেউ না কেউ কোথায় না কোথায় এটাকে ব্যাপক ইউজ করছেই, তাই সমস্যা তৈরি করা খুব স্বাভাবিক!

অপরদিকে 5GHz ব্যান্ড ওয়াইফাই ব্যান্ড অনেক কম ইউজ হওয়া হাই স্পীড স্পেকট্রাম। কিছু ডিভাইজ, গেমিং কনসোল কন্ট্রোলার, বা ভিডিও সার্ভেইলেন্স ডিভাইজে এই ব্যাবহৃত হয়, কিন্তু ২.৪ গিগাহার্জের তুলনায় এর ব্যাবহার অনেক কম। আপনি যদি একটি ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার ইউজ করেন সেক্ষেত্রে 5GHz ব্যান্ড ডিফল্টভাবে রান থাকবে কিন্তু পাশাপাশি 2.4GHz ব্যান্ড ও রানিং থাকে। আর এই ২.৪ গিগাহার্জ রানিং থাকার জন্য ল্যাগিং সমস্যা ঘটতে পারে, মাঝে মাঝে কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওয়াইফাই ডিস্কানেক্ট সমস্যা তৈরি করতে পারে। হতে পারে আপনার ওয়্যারলেস হোম ফোনের কানেকশন ড্রপ করতে পারে।

5GHz কি ভবিষ্যৎ?

৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড অনেক ফাস্ট একটি স্পেকট্রাম, কিন্তু এটার ও কিছু লিমিটেশন রয়েছে। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো বেশি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করতে পারে,কিন্তু লো ফ্রিকোয়েন্সির মতো বেশি রেঞ্জ প্রদান করতে পারে না। সাথে ২.৪ গিগাহার্জ ব্যান্ড অনেক বেশি মোটা দেওয়াল বা অবজেক্ট গুলো ভেদ করতে পারে। মানে ২.৪ গিগাহার্জ ডিসেবল করে দিলে কি রেঞ্জ খারাপ হয়ে যেতে পারে?

আসলে ব্যাপারটা এমন নেই আর; ইঞ্জিনিয়ার আর সফটওয়্যার ডিজাইনারা নতুন এক পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছে। ওয়াইফাই এন এবং ওয়াইফাই এসি ডিভাইজ গুলোতে ওয়াইফাই বীমফর্মিং সাপোর্ট করে, এর ফলে রেডিও সিগন্যালকে শক্তিশালী ভাবে নির্দিষ্ট এক দিকে সেন্ড করা যায়। পূর্বে ৩৬০ ডিগ্রীতে সিগন্যাল সেন্ড করা হতো, সিগন্যাল সবদিকে সমান দিকে ছড়িয়ে পড়তো, যেখানে ডিভাইজ নেই সেখানেও সিগন্যাল পৌঁছাত, এতে সিগন্যাল দুর্বল ও অকাজের হয়ে পড়তো।

Image: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories