IPv6 কি, কিভাবে আপনার ওয়েব সার্ভারে IPv6 যুক্ত করবেন?

I

ইন্টারনেট, ওয়েব সার্ভার, ডিএনএস — ইত্যাদি নিয়ে পড়া শেষ করে থাকলে অবশ্যই IPv6 (আইপিভি৬) টার্মটি শুনে থাকবেন। অথবা রাউটার সেটিং ঘাটতে গিয়েও এটি দেখে থাকবেন কিংবা কোন না কোনভাবে হয়তো শুনেছেন! আবার এমনো হতে পারে, আপনি IPv6 সম্পর্কে আগে কখনো কিছুই শোনেন নি। সাধারণ ইউজার হিসেবে আইপিভি৬ সম্পর্কে তেমন জ্ঞান না রাখলেও চলবে, কিন্তু আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে সেক্ষেত্রে এই টার্মটি যেনে রাখা ভালো!

তো আজকের আর্টিকেলে বিশেষ করে আইপিভি৬ নিয়ে বেসিক আলোচনা করবো, এবং আপনার ওয়েব সার্ভারে কিভাবে আইপিভি৬ এনাবল করা যেতে পারে সেই ব্যাপারে কথা বলবো! — তো আলচনা শুরু করা যাক…


IPv6 কি?

আইপিভি৬ নিয়ে আলোচনা করার আগে জানতে হবে আইপি অ্যাড্রেস কি জিনিষ, সেই সম্পর্কে। আইপি অ্যাড্রেস হচ্ছে নেটওয়ার্কের ঠিকানা, এটা সাধারণত নাম্বার আঁকারে দেখতে পাওয়া যায়। যখন কোন ডোমেইন নেম ব্রাউজারে প্রবেশ করে সেই সাইট ভিজিট করার জন্য, ব্রাউজার প্রথমে ডিএনএস সার্ভার চেক করে, সেখানে ডোমেইনের পেছনের সার্ভার আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে তারপরে সাইট’টি কানেক্ট করে। এখন সার্ভারে সাধারণত 123.45.67.89 — এই টাইপের আইপি অ্যাড্রেস ইউজ করতে দেখা যায়। যেটা ৩২-বিটের আইপি অ্যাড্রেস সিস্টেম বা একে IPv4 (আইপিভি৪) বলা হয়।

যদি আইপিভি৪ ই সব সার্ভারে ইউজ করা হয় তাহলে কেন আইপিভি৬ নিয়ে মাথা ঘামানো? আসলে ইন্টারনেট যখন আবিস্কার হয়, তখন কল্পনা ও করে দেখা হয়নি এটা এতোবেশি জনপ্রিয়তা লাভ করবে। তাই ৩২-বিটের সিস্টেমই ইউজ করা শুরু করা হয়। কিন্তু এতে খুব বেশি ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস জেনারেট করা সম্ভব নয়।

IPv4 অ্যাড্রেস 000.000.000.000 এবং 255.255.255.255 এই রেঞ্জের মধ্যে সিমাবদ্ধ। আসলে ব্যাপারটা আরেকটু ঝামেলার, বাট আশা করা যায় আপনি রাফ একটি আইডিয়া পেয়ে গেছেন। এখন হোম ইন্টারনেট ইউজ করার জন্য প্রত্যেকটি ডিভাইজে আলাদা আলাদা আইপি দরকার হয় না, রাউটার এক নিজস্ব সিস্টেম ইউজ করে সকল ডিভাইজ গুলোকে প্রাইভেট আইপি প্রদান করে কাজ চালিয়ে নেয়। কিন্তু কোটিকোটি ওয়েবসাইট রয়েছে অনলাইনে যেগুলো আক্সেস করার জন্য পাবলিক আইপি অ্যাড্রেস দরকার, আর আইপিভি৪ এর সাপ্লাই অনেক সীমিত!

আইপিভি৬ এখানেই কাজে লাগে!

এই সিমাবদ্ধতা কাটানোর জন্যই আইপিভি৬ এর আবিস্কার, এটি পূর্বের ৩২-বিট অ্যাড্রেস সিস্টেমের বদলে ১২৮-বিট সিস্টেম ইউজ করে। ফলে এই আইপি অ্যাড্রেস অনেক লম্বা, আর লম্বা মানে অনেক ইউনিক অ্যাড্রেস তৈরি করা সম্ভব, কিন্তু মনে রাখার ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি কঠিন! IPv6 অ্যাড্রেসিং সিস্টেমে ৮ গ্রুপ থাকে এবং প্রত্যেক গ্রুপে ৪টি করে ডিজিট থাকে।

আইপিভি৬ দেখতে কিছুটা এমন; 2606:4700:30::681b:935a — এটি হেক্সাডেসিমেল সাপোর্টেড ফলে প্রত্যেক সারিতে আরো বেশি ভেরিয়েশন সাপোর্ট করে।

ওয়েবসাইটে আইপিভি৬ সাপোর্ট

এমন নয় যে আপনাকে আইপিভি৪ এর বদলে আইপিভি৬ ইউজ করতে হবে, আইপিভি৬ দ্বারা ওয়েব সার্ভার রিপ্লেস করার দরকার নেই, এরা পাশাপাশি একসাথে কাজ করতে পারে। সার্ভার কনফিগারেশনে আইপিভি৪ এর পাশাপাশি আইপিভি৬ এর সাপোর্ট যুক্ত করা যেতে পারে।

প্রথমে আপনার ওয়েব সার্ভারকে কনফিগার করতে হবে যাতে সেটা আইপিভি৬ ট্র্যাফিক লিসেন করতে পারে। আপনি ওয়েব সার্ভার হিসেবে কোন সফটওয়্যার ইউজ করছেন সেই অনুসারে আপনার কনফিগারেশন আলাদা হতে পারে, আপনাকে জাস্ট ওয়েব সার্ভার ডকুমেন্টেশন পড়ে দেখতে হবে। যেমন- Nginx ওয়েব সার্ভারে ক্ষেত্রে কনফিগার ফাইলে নিচের কোডটি যুক্ত করে দিলেও হলো;

এখানে [::] এই কোডটি IPv6 কে রিপ্রেজেন্ট করছে!

এরপরে আপনার ডোমেইন প্যানেল থেকে একটি AAAA রেকর্ড তৈরি করতে হবে। IPv4 এ যেমন A রেকর্ড তৈরি করতে হয়, IPv6 এর জন্য AAAA রেকর্ড প্রয়োজন পরে। তবে আপনার A রেকর্ড এখনো IPv4 এই পয়েন্ট করা থাকতে হবে। এখন আগেই বলেছি, সার্ভার ভেদে আপনার কনফিগারেশন আলাদা হবে। অন্তত এতোটুকু হয়তো বুঝতে পেরেছেন, কোন পথে কিভাবে আইপিভি৬ এনাবল করতে হবে!

IPv6 এখনো বিস্তরভাবে ইউজ হওয়া শুরু হয়নি। অনেক হোস্টিং প্রভাইডার এখনো হয়তো IPv6 সাপোর্টই করে না, তবে বেশিরভাগ ক্লাউড হোস্টিং প্রভাইডার এটা সাপোর্ট করে। ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট আর ক্লায়েন্ট ডিভাইজের সংখ্যা যতোবশি বাড়বে আইপিভি৬ ততোবেশি জরুরী হয়ে উঠবে। তাই আগে থেকেই আপনার ওয়েবসাইটে আইপিভি৬ এনাবল করে রাখা বেস্ট, এতে পরে ঝামেলা করতে হবে না!

Feature Image: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories