ভিপিএস (VPS) নির্বাচন করার পূর্বে কোন কোন জিনিষ মাথায় রাখতে হবে?

ভিপিএস বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার গুলো ধীরেধীরে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। বর্তমানে ভিপিএস সেল করে এমন হোস্টিং কোম্পানির কোন অভাব নেই! একসাথে অনেক গুলো চয়েজ থাকা ভালো ব্যাপার, কিন্তু যতোবেশি চয়েজ সামনে চলে আসবে সঠিক ও কাজের জিনিষ নির্বাচন করা ততোই মুশকিল ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

তো ধরুন, আপনার কোন কারণে ভিপিএস দরকার পরল, হতে পারে সেটা কোন অ্যাপ রান করানোর জন্য, ওয়েব সাইট হোস্ট করার জন্য, বা ক্লাউড গেমিং করার জন্য — সেক্ষেত্রে ভিপিএস নির্বাচন করার পূর্বে কি কি জিনিষ মাথায় রাখতে হবে? — এই টপিকের উপরেই আজকের আর্টিকেল!


দাম

যেহেতু বর্তমানে অনেক প্রভাইডার ভিপিএস প্রভাইড করে থাকে তাই একই কনফিগারেশনের জন্য নানান টাইপের দাম চোখের সামনে আসতে পারে, আর এতে আপনি সহজেই কনফিউজড ও হয়ে যেতে পারেন। তবে ভিপিএস এর এভারেজ প্রাইসিং জানা থাকলে কনফিউশন অনেকটা দূর হতে পারে। এই আর্টিকেলটি লেখার সময় ৫$ দিয়ে ১ জিবি র‍্যাম ও ১ কোর সিপিইউ পাওয়া যায়, তেমনই ১০$ মাসিক চার্জে ২ জিবি র‍্যাম ও ২ কোর সিপিইউ মিলে। ব্যান্ডউইথ ও ডিস্ক স্পেস, একেক কোম্পানি কমবেশি একেক ভাবে অফার করে। মোটামুটি এই হচ্ছে ভিপিএস এর স্ট্যান্ডার্ড প্রাইসিং। হ্যাঁ, কোন কোন কোম্পানি একটু কমবেশি প্রদান করতে পারে, কিন্তু সেক্ষেত্রে কারো র‍্যাম কম তো সিপিইউ বেশি আবার স্পেস কম তো ব্যান্ডউইথ বেশি — এরকম হতে পারে।

বেস্ট ভিপিএস সার্ভার খুঁজে পাওয়া যেমন অনেক ট্রিকি ব্যাপার, অনেক জিনিষ মাথায় রাখতে হয়, ফালতু ভিপিএস সার্ভিস খুঁজে পাওয়া তেমনই সহজ! — সস্তায় ভিপিএস দিচ্ছে আর আপনি পানির দামে কিনেও ফেললেন, এতে ঠকার সুযোগই বেশি।

Linode, DigitalOcean, Vultr — এরা প্রত্যেকে প্রায় ৫$ মাসিক চার্জে ১ জিবি র‍্যাম ও ১ কোর সিপিইউ অফার করে থাকে। যদি কোন প্রভাইডার এই সেইম দামে আরো ৩-৪ গুন রিসোর্স অফার করে, তাদের থেকে দূরে থাকুন। অন্যদিকে একই রিসোর্স যদি কেউ ১$ মাসিক চার্জে দিতে চায়, তাদের ও আভোয়েড করুন। এখন আপনি বলবেন, কোন প্রভাইডার সস্তায় ভিপিএস দিচ্ছে এতে খারাপ কি? আমাদেরই তো লাভ তাই না?

আসলে ব্যাপারটা সব সময় এমন নয়। ভিপিএস এ আপনাকে যে রিসোর্স গুলো কনফিগ করে দেওয়া হয় সেই রিসোর্স ফিজিক্যাল ভাবেও যে মজুদ থাকতে হবে এমনটা নয়। ফিজিক্যাল সার্ভার রিসোর্স থেকে বিশেষ সফটওয়্যার ইউজ করে ভার্চুয়াল মেশিন তৈরি করা হয়। আপনাকে দেওয়া রিসোর্স গুলো ভার্চুয়ালভাবে তৈরি করা, যেগুলো নিজে থেকে ফিজিক্যাল মেশিনের মতোই আচরণ করে! কি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তো?

ধরুন, ফিজিক্যাল সার্ভারে ১ জিবি র‍্যাম আছে, এখন ভার্চুয়াল সার্ভার হোস্ট করে দুই জন ইউজার তৈরি করা হলো আর দুইজনকেই ১ জিবি ১ জিবি করে সেল করা হলো। সেক্ষেত্রে কিন্তু ২ জিবি র‍্যাম থাকার দরকার ছিল, কিন্তু এভাবে ১ জিবি র‍্যাম থেকেই ১০ জন ইউজারদের ও কনফিগ করে দেওয়া যাবে। যেখানে সকল ইউজার মনে করছে তারা ডেডিকেটেড র‍্যাম ইউজ করছে, কিন্তু আসলে সকলে ঐ মাত্র ১ জিবি র‍্যামই ইউজ করছে। এখন সকল ইউজার নিশ্চয় একই সময়ে সকল রিসোর্স খেয়ে নেবে না, তাই কেউ ভিপিএস ইউজ করার সময় আরেকজন ইউজ করে না, এভাবে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বজায় থাকে। বিশেষ করে যে কোম্পানি গুলো কমদামে সার্ভার সেল করে তারা তাদের সার্ভার ওভারলোড করে। এতে আপনার যতোটা পারফর্মেন্স পাওয়ার দরকার আপনি সেটা পাবেন না।

ভিপিএস এর প্রয়োজন অনুসারে সার্ভার কিনুন!

ভিপিএস এর একটি ভালো ব্যাপার হচ্ছে ইচ্ছা মতো রিসোর্স কাস্টমাইজেশন করা যায়, আপনার আরো র‍্যাম, সিপিইউ, বা স্টোরেজ লাগবে? জাস্ট কয়েক ক্লিকেই অ্যাড করা যাবে। ভিপিএস নানান কাজের জন্য হতে পারে, শুধু ওয়েবসাইট হোস্ট করায় এর একমাত্র কাজ নয়, যেহেতু এটি সম্পূর্ণ ফিজিক্যাল কম্পিউটারের মতোই আচরন করে। আপনি যদি সাধারণ কোন ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য ভিপিএস নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যান কিনলেন হবে।

কিন্তু আপনার হোস্ট করা অ্যাপলিকেশন হতে পারে অনেক সিপিইউ খেয়ে নেয়, সেক্ষেত্রে সিপিইউ অপ্টিমাইজড প্ল্যান কিনতে হবে। ডেডিকেটেড সিপিইউ প্ল্যান গুলোতে সাধারণত বেশি ফ্রিকোয়েন্সির সিপিইউ দেওয়া থাকে। তো ভালো পারফর্মেন্স পাওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার প্রয়োজন বুঝতে হবে এবং সেই অনুসারে ভিপিএস পারচেজ করতে হবে।

যদি আপনার ভিপিএসটি বিশেষ করে ফাইল ডাউনলোড করার জন্য তৈরি করে থাকেন সেক্ষেত্রে সবার পূর্বে দেখতে হবে আপনার ভিপিএস এর নেটওয়ার্ক কতোটা বেশি ফাস্ট। বেশিরভাগ স্ট্যান্ডার্ড প্ল্যানে কমপক্ষে ১ টেরাবিট নেটওয়ার্ক আউট পোর্ট থাকে, যেখানে মোটামুটি ~১০০ মেগাবাইট/সেকেন্ড স্পীড পাওয়া যেতে পারে। তবে আরো হাই ব্যান্ডউইথ দরকার পরলে সেই অনুসারে প্ল্যান কিনতে হবে, না হলে ইউজাররা অনেক স্লো ডাউনলোড স্পীড পাবে।

ম্যানেজড ভিপিএস Vs আনম্যানেজড ভিপিএস

সাধারণত বেশিরভাগ ভিপিএস কোম্পানি আপনাকে আনম্যানেজড ভিপিএস সেল করে, সেখানে আপনিই ১০০% সিস্টেম অ্যাডমিন। বেশিরভাগ প্রভাইডারের লাইব্রেরিতে আগে থেকেই অনেক লিনাক্স ডিস্ট্র গুলো থাকে, যেগুলো ১ ক্লিকে আপনার ভিপিএস এ ইন্সটল করা যেতে পারে। কিন্তু আপনার যদি স্পেশাল টাইপ ওএস দরকার যেমন- Arch Linux, OpenBSD, অথবা CoreOS — সেক্ষেত্রে পূর্বে চেক করে নিন, তাদের এই ওএস সাপোর্ট আছে কিনা। সকল প্রভাইডার কিন্তু উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ও সাপোর্ট করে না, সুতরাং সেটাও চেক করে নেবেন।

ভিপিএস সেটআপ এবং কনফিগারেশন আপনার উপরে নির্ভর করবে। শেয়ারড হোস্টিং প্রভাইডারের মতো সবকিছু ম্যানেজড পাবেন না এখানে। কিছু প্রভাইডার ম্যানেজড ভিপিএস ও সেল করে, কিন্তু সেগুলো দামে অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং অনেক লিমিটেড ফাংশন পাওয়া যায়। যদি আপনার টেকনিক্যাল নলেজ থাকে তো আনম্যানেজড ভিপিএস সবদিক থেকেই বেস্ট, যদি সার্ভার ম্যানেজ করতে সময় নষ্ট না করতে চান সেক্ষেত্রে বাড়তি টাকা দিয়ে ম্যানেজড ভিপিএস সার্ভিস নিতে পারে, তারা আপনার থেকে বেস্ট করে সেটআপ করে দেবে সবকিছু!


আমি বলবো মিডিয়াম বা বড় প্রভাইডার গুলো থেকেই ভিপিএস সার্ভিস নেওয়া বেস্ট — লিনোড, ডিজিটাল ওসেন, অ্যামাজন ইসি ২ — এরা অনেক রেপুটেড কোম্পানি! তবে অনেকেরই ইন্টারন্যাশনাল কার্ড নাই, ফলে অনেকেই হয়তো বাংলাদেশি কোম্পানি থেকে ভিপিএস পারচেজ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে দেখে শুনে রিভিউ দেখে, সাপোর্ট এর সাথে কন্টাক্ট করে তারপরেই কেনা ভালো হবে। আমাকে জিজ্ঞাস করলে এক্সেলনোড থেকে ভিপিএস (ExelNode.com) ট্র্যায় করে দেখতে বলবো। তারা এই পোস্ট করার জন্য আমাকে স্পন্সর করেনি। বাট আমি পার্সোনালি কিছু সাইট হোস্ট করার জন্য তাদের ভিপিএস ইউজ করেছি, আর সত্যিই অনেক ভালো পারফর্মেন্স পেয়েছি। আপনি চাইলে যেকোনো স্থান থেকেই পারচেজ করতে পারেন, কিন্তু উপরের ব্যাপার গুলো আগে মাথায় রাখবেন!

 

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories