“4K” টিভি কি? আপনার কি ৪কে টিভি কেনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে?

রিসেন্টলি বাজারে নতুন টিভি কেনার জন্য ঘরাঘুরি করলে দেখতে পাবেন বিশাল সাইজের কিছু টিভির গায়ে “4K” লিখে স্টিকার লাগানো রয়েছে। একই সাইজের সাধারন এইচডি বা ফুল এইচডি টিভি থেকে দেখবেন এই 4K টিভি এর দাম প্রায় দিগুন —কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ৪কে টিভি বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে টা কি? সাধারণ 4K স্টিকার থেকে কিছুই আন্দাজ করা সম্ভব নয়।

অনেকেই রয়েছেন যারা ৪কে টিভি টার্মটি থেকে কনফিউশনের মধ্যে পরতে পারেন। আবার অনেকে মনে করেন বেশি দামী জিনিষ সর্বদায় ভালো, তাই প্রয়োজন না বুঝেই হয়তো ৪কে টিভি কিনে ফেলেন বেশি টাকা খরচ করে। এই আর্টিকেলে “4K” টিভি টার্মটি নিয়ে আলোচনা করবো, সাথে সহজেই বুঝানোর চেষ্টা করবো আপনার ৪কে টিভি কেনার দরকার রয়েছে কিনা!


4K বলতে কি বুঝায়?

আপনি যদি অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং করে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে নানান টাইপের ভিডিও রেজুলেশন সম্পর্কে অপশন প্রদান করা হয়। ইউটিউব ভিডিও প্লে করার সময় ১৪৪পি,২৪০পি, ৩৬০পি, ৪৮০পি, ৭২০পি — ইত্যাদি নানান রেজুলেশন সেট করা যায়। এই রেজুলেশন গুলো 480p বা 720p; আসলে ভিডিওতে কতো গুলো পিক্সেল রয়েছে তার নাম্বার রিপ্রেজেন্ট করে।

480p ভিডিও তে 858 x 480 পিক্সেল থাকে এবং 720p ভিডিওতে 1280 x 720 পিক্সেল থাকা, ঠিক এভাবেই ফুল এইচডি রেজুলেশন বা 1080p ভিডিওতে 1920 x 1080 পিক্সেল থাকে। এখন আপনার প্রশ্ন জাগতে পারে, বেশি নাম্বার সত্যিই কি কোন মূল্য রাখে? — হ্যাঁ মূল্য রাখে, যতোবেশি পিক্সেল থাকবে ভিডিওতে ততোবেশি ডেটেইলস আটানো সম্ভব হবে। যতোবেশি রেজুলেশন হবে পিকচার কোয়ালিটি ততো উন্নত হবে।

তো নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝেও গেছেন, এই ৪কে মানে আরেক রেজুলেশনকেই বুঝানো হচ্ছে, তাই না? যদি 480p ভিডিওতে অনুভূমিক ভাবে ৪৮০টি পিক্সেল থাকে এবং 1080p ভিডিওতে ১০৮০টি অনুভূমিক পিক্সেল থাকে তাহলে নিশ্চয় 4K টিভি তে ৪,০০০ পিক্সেল থাকবে তাই না? — আসলে ব্যাপারটি এতোটাও সহজ নয়।

ডিজিটাল সিনেমা উদ্যোক্তা গ্রুপ 4096 × 2160 রেজুলেশনকে ৪কে হিসেবে নির্ধারণ করেছে। কিন্তু আপনি স্টোর থেকে যে ৪কে টিভি টি কিনবেন সেখানে 3840 x 2160 রয়েছে।

আপনার কি 4K টিভি কেনার দরকার রয়েছে?

ওয়েল, উত্তরটা একটু ট্রিকি হতে পারে — ৪কে টিভি তখনই বেস্ট পারফর্ম করে যখন ভিডিও রেজুলেশন ও ৪কে হবে। আপনি ৪কে টিভি ১০৮০পি বা আরো কম রেজুলেশনের ভিডিও ও প্লে করতে পারবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে ৪কে টিভি থাকার কোন লাভ পাবেন না। একটা সাধারন উদাহরণ নিন; আপনার খাটের চাইতে ডাবল সাইজের বিছানার চাঁদর কিনে কোন লাভ আছে? ঐ তো ঘুরে ফিরে অর্ধেক ভাঁজ করে রাখতে হবে!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ৪কে কন্টেন্ট বর্তমানে তৈরি হচ্ছে এবং সৌভাগ্যবশত অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলো যেমন- নেটফ্লিক্স ৪কে কন্টেন্ট অফার করে, কিন্ত দেখার ব্যাপার হচ্ছে আপনি অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস গুলো ইউজ করেন কিনা। আপনার ইন্টারনেট স্পীড যদি ভালো না হয় সেক্ষেত্রে ৪কে কন্টেন্ট চাইলেও স্ট্রিম করতে পারবেন না। ৭২০পি বা ১০৮০পি কন্টেন্ট যতোটা বেশি লভ্য, ৪কে এখনো ধারে কাছেও ততোটা লভ্য হতে পারেনি। সাথে ৪কে কন্টেন্ট স্টোরড করার জন্য চাই হিউজ ডিস্ক স্পেস, যেটা আরেকটা অসুবিধার ব্যাপার হতে পারে।

যদি আপনার পছন্দের বেশিরভাগ ভিডিও গুলো ৪কে তে লভ্য হয়ে থাকে বা বাড়তি মাসিক খরচ করে যদি অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস + ফাস্ট ইন্টারনেট সাবস্ক্রাইব করে রাখেন সেক্ষেত্রে ৪কে টিভি কিনতে পারেন, এতে রিয়াল সুবিধা গুলো পাওয়া যাবে। কিন্তু ৪কে টিভি কিনে যদি শুধু ক্যাবল অপারেটরের লাইন ইউজ করে ক্যাবল টিভি দেখেন সেক্ষেত্রে ৪কে টিভি কেনার কোন যুক্তি নেই। আপনি ফুল এইচডি টিভি বা শুধু এইচডি টিভি দিয়েও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। যেহেতু 4K টিভি এর দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে।

তো আপনার যদি বর্তমানে কোন ৪কে টিভি না থাকে, সমস্যা নেই আপনি সামনের হয়তো আরো ৩-৪ বছরেও এর প্রয়োজনীয়তা ফিল করবেন না তেমন। সামনের দিনে ধীরেধীরে হয়তো ৪কে টিভির ডিম্যান্ড বৃদ্ধি পাবে, বিশেষ করে যখন দাম অনেক কমে আসবে তখন কিনলেও কিনতে পারেন। তবে আপনার ভিউইং এক্সপেরিয়েন্স যদি ইনস্ট্যান্ট পরিবর্তন করতে চান সেক্ষেত্রে ৪কে টিভি এখনই কিনতে পারেন, পাশাপাশি যদি আপনার কাছে ৪কে কন্টেন্ট মজুদ থাকে।


৪কে টিভিতে আপগ্রেড করার মাধ্যমে আরো বেটার কোয়ালিটি ভিউইং এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া সম্ভব, তবে সেটা এখনই আপগ্রেড করতে হবে এমনটা জরুরী নয়। মার্কেটে নতুন টিভি কিনতে গেলেন আর সেলস ম্যান ৪কে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো আর আপনি কিনেও ফেললেন এমনটাতে লস আপনারই হতে পারে। আগে উপরের ব্যাপার গুলো বিবেচনা করুন, তারপরে ঠিক লাগলে ৪কে টিভি কিনতে পারেন, আপনার ১০৮০পি টিভি কিন্তু রাতারাতিই এক্সপায়ার হয়ে যাবে না!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories